মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩১৭- ৫টা বেজে ১৩মিনিট

লেখা: নিঃশেষিত শুকতারা

.
তাড়াহুড়া করে রেডি হতে গিয়ে উল্টো করে শার্ট টা পরেছে বুঝতেই পারেনি ৷ আসলে আজ দু মিনট দেরি হয়েছে তো তাই খেয়ালই ছিল না অন্য কিছুর ৷
.
লেকের পাশের আম গাছটার ছায়ায় বসে আছে হিমেল ৷ প্রতিদিন এখানে আসে ৷ ঠিক ৫টা বেজে ১৩ মিনিটে ৷
.
সময়টা একটু ভিন্ন টাইপের মনে হচ্ছে তাইনা?
আসলে নীরের সাথে প্রথম দেখা হয় এখানে বিকেল ৫টা ১৩মিনিটে ৷
.
৫টায় আসার কথা ছিল, কিন্তু ১৩মিনিট লেট করে ফেলেছিল ৷ শাস্তি স্বরুপ ১৩বার কান ধরে উঠবস করতে হয়েছে এই লেকের পাশের আম গাছটার নিচে ৷ তাও আবার কত মানুষের সামনে ৷
.
আসলে প্রায় ছেলেকেই এভাবে কান ধরে উঠবস করতে দেখতে হয় প্রতিদিন ৷ কারন একটাই, সেটা হল লেট করে আসায় ৷
.
এ সময়টাতে প্রথম দেখা হয় বলে নীর বলেছিল এখন থেকে ৫টা ১৩মিনিটেই আমরা দেখা করবো ৷ যদি দেরি কর তাহলে খবর আছে ৷
সেদিনের পর থেকে রোজ ৫টা ১৩মিনিটে দেখা করতো ৷
.
আজো এসেছে ঠিক এ জায়গা তে ৷ তবে আজ দু মিনিট দেরি করে ফেলেছে ৷ একা একা বসে ভাবছিল হিমেল ৷ আজ বোধহয় দুজনকেই কান ধরে উঠবস করতে হয় ৷ কেননা দুজনেরই তো লেট হবে ৷৷
.
হঠাৎ কারো ডাকে বাস্তবতায় ফিরে এল ৷
.
দুজন কাপল কে দেখতে পেল ৷ খুব চেনা চেনা লাগছিল ৷
.
ছেলেটা বললো,
ভাইয়া একটা কথা বলবো?
.
হিমেল বলল, নীর আসবে এখন তাই সংক্ষেপে শেষ করো ৷
.
ছেলেটা বললো,
আসলে গত ২বছর যাবৎ ঠিক ৫টা ১৩মিনিটে আপ্নাকে এই আম গাছটার ছায়ায় এসে বসে থাকতে দেখি ৷ কারো জন্য কী অপেক্ষা করেন?
.
হিমেল বলল,
নীর আসবে তো ৫টা ১৩মিনিটে ৷ ও বলেছে ৫টা ১৩তে আমরা প্রতিদিন দেখা করবো ৷ ও এখুনি চলে আসবে তো ৷
.
ছেলেটা বললো,
২বছর এখানে অপেক্ষা করতে দেখলাম কই কেউ তো আসে নি ৷ আজ আসবে তো?
.
বলল,
হুম আসবে ৷ আর আসলেই দুজন কান ধরে উঠবস করবো কারন দুজনই লেট করে ফেলেছি ৷
.
ছেলেটা বললো,
যে নীরের কথা বলছেন তাকে তো ২বছর আসতে দেখিনি তাহলে আজ আসবে কেন?
.
বলল,
আজ আসবেই যে ৷ কারন আজ ওর বার্থডে ৷ পকেট থেকে মোম বের করে দেখাল ৷ বলল এইতো মোম জ্বালাবো আর কেক এইতো ব্যাগে আছে ৷
আচ্ছা তোমরাও থাকো না, একসাথে নাহয় সেলিব্রেট করবো ৷
.
ছেলেটা বললো,
ঠিক আছে ভাইয়া, আমরাও থাকবো ৷
.
ব্যাগ থেকে কেক বের করল, মোম ছুরি রেডি করল ৷
.
বিরক্ত লাগছিল ওর ৷ কেন যে পাগলী টা দেরি করছে ৷ তবে ও তো এমন দেরি করে না ৷
.
আসলে হিমেল মানসিক ভারসম্যহীন ৷
কীভাবে এমন হল সেটা বলছি,,,
.
হিমেল আর নীর, দুজন দুজনকে ভালবাসতো ৷ এরখন যে বাসে না তা নয় ৷ এখোনো বাসে ৷
.
কলেজ লাইফ থেকে একটা ছোট্ট ঝগড়া থেকে একসময় বন্ধুত্ব তারপর পাশাপাশি পথচলা ৷
.
সীমাহীন ভালবাসা জড়িয়ে ছিল তাদের বন্ধনটা জুড়ে ৷ দুজন দুজনকে পাল্লা দিয়ে ভালবাসত ৷ কে কাকে কত বেশী ভালবাসতে পারে সে প্রতিযোগীতা চলতো তাদের মাঝে ৷
.
একসাথে বৃষ্টির মাঝে হারিয়ে যাওয়া, সন্ধাবেলায় পিচঢালা পথ ধরে বহুদূর হেঁটে আসা, কিছু সোনালি বিকেল তাদের পথচলাটাকে রাঙিয়ে দিত নতুন রঙে ৷
.
দুজনের মাঝে দুজন দুজনকে খুঁজে পেত ৷
.
একটা দমকা হাওয়া দুজনকে দু প্রান্তে টেনে নিয়ে যায় ৷
.
একটা এক্সিডেন্টে হিমেল তার একটা চোখ হারায়, হাত দুটো মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ সবকিছু মিলে তার চেহারা বিকৃত রুপ নেয় ৷
.
এর মাঝে নীরের বাবার চাকুরীর ট্রান্সফার হয় ৷ নীর আর কন্টাক্ট রাখেনি হিমেলের সাথে ৷
.
এত সমস্যা জড়িত মানুষের পাশে পুরোটা জীবন চলা অসম্ভব ভেবে সীমাহীন ভালবাসার চাদরে ঢেকে রাখা মানুষটিকে ফেলে যেতে একবারো বাধে না তার ৷
যদিও নীর ও হিমেলের মাঝে চুক্তি ছিল কেউ কাউকে কখোনো ছেড়ে যাবে না ৷
.
হিমেল বলতো আমি যদি কখোনো দূর্ঘটনায় আমার কোনো অঙ্গ হারিয়ে ফেলি তবে কী পাশে থাকবে?
নীর থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ৷ তবে পারেনি পাশে থাকতে ৷
.
তারা বাসা বদলিয়ে অনত্র চলে যায় এবং নীর আর কন্টাক্ট করেনি হিমেলের সাথে ৷ এই শোকে ছেলেটা ধীরে ধীরে মানসিক ভারসম্যহীন হয়ে পড়ে ৷
.
পূর্বের মত রুটিন মাফিক লেকের পাশের আম গাছটার নিচে ৫ টা ১৩মিনিটে আসে আর নীরের অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে ৷
.
এভাবেই হয়তো রুটিন মাফিক তার অপেক্ষার প্রহর গুনে যাওযার দিন বেড়েই যাবে ৷
নীর জানতেও পারবে না হয়তো এখোনো তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে, তার ফিরে আসার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে পথ চেয়ে থাকে ৷৷৷
.
হয়তো নতুন কাউকে নিয়ে সে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত ৷ মনেই পড়েনা হয়তো ঘুনেধরা সেই সোনালি বিকেল, রংচটা স্মৃতির কথা ৷
.
হয়তো কেক,ছুরি,মোম নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে হিমেল অভিমান করে আর আসবে না সেই লেকের পাশের আম গাছটার নিচে ৷ যে জায়গার সাথে বহু স্মৃতি বিজড়িত ছিল ৷৷৷৷৷৷