মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩১৮- সুখের ছায়া

লেখাঃ অনিক হাসান


মিমির সাথে ব্রেকআপ হওয়ায় মন টা
অনেক খারাপ ছিলো,তাই রাস্তার
একপাশে আনমনে দাড়িয়ে আছি ।হঠাৎ
কে যেনো হাতটি ধরে ভাইয়া বলে
ডাকলো।
পিছন ফিরে তাকাতেই
দেখি,৮থেকে ৯বছরের একটি ছেলে
,তাও আবার সামনের দুইটা দাঁত নেই ।

ছোট্ট ছেলেকে বললাম -কি হয়েছে তোমার ছোট ভাই ডাকছো ক্যানো.?

এই কথা বলতেই ছেলেটি বলে উঠলো
-ভাইয়া আজ দুইদিন ভাত খাই না ,যদি
৫টা টাকা দিতেন তাহলে কিছু
কিনে খেতাম ।
ছেলেটি কে দেখে বড্ড মায়া লাগলো আমার ।ছেলেটি কে বললাম এই ৫টাকা দিয়ে কি আর ভাত খাওয়া যায় ।

সেই ছোট্ট ছেলেটি বলে উঠলো
-কয়েক টাকা ভিক্ষা করে পেয়েছি ,এখন আপনি কিছু দিলেই কিছু খেতে পারবো ।

আচ্ছা চলো তোমাকে আজ আমি খাওয়াবো ।

খাওয়া শেষে সেই ছেলেটি কাঁদতে
লাগলো আর বলতে লাগলো ।ভাইয়া
আপনি অনেক ভালো ,আপনার মত কেউ আমাকে পেট ভরে খেতে দেই নি ।
ছেলেটির মুখে এই কথা শুনে মন টা
আমার ভালো হয়ে গেলো ।অবশেষে
ছেলেটির হাতে কিছু টাকা দিলাম
,খিদে লাগলে পরে যেনো কিছু
খেয়ে নেয় ।ছেলেটির চোখের
কোনে জল চলে এলো এবং গড়িয়ে
পরলো ।আমি সেই ছেলেটির চোখের
পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমা
দিয়ে তাকে বিদায় জানিয়ে আমার
গন্তব্যের দিকে ফিরে এলাম ।
ছেলেটিকে খেতে দিয়ে আর তার
মুখের প্রশংসা শুনে খুব ভালো
লাগলো. . . . .
..
..
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায়
এপাশ ওপাশ করছিলাম ।মিমির কথা খুব মনে পরছে ,মিমি ক্যানো আমার
সাথে এইরকম করলো ।কি দোষ ছিলো
আমার ,কি দোষ ছিলো আমার
ভালোবাসার ।আমার ভালোবাসা
তো মিথ্যে ছিলো নাহ ।ক্যানো সে
মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করলো ।
ক্যানো আমার মন টা ভেঙ্গে দিলো ।
মিমির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে
ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতেই পারি নি ।
রাতে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আমার . . . .
..
..
কিরে মন খারাপ নাকি বাবু।
___না মা,এমনি শুয়ে ছিলাম ,তারপর ঘুমিয়ে পরেছিলাম ।
___এ কি তোর কন্ঠ কেমন জানি লাগছে ।
___কই না তো কেমন লাগবে ,তুমি অযথা টেনশন করছো ,তুমি যাও আমি খেতে আসছি ।
___এই তোর তো জ্বর ও চলে আসছে দেখছি,ঔষধ খেয়েছিস(কপালে হাত দিয়ে)।
___না মা পরে খেয়ে নিবো যাও খাবার
নিয়ে আসো. . . . . .
..
..
রাতে শুধু মিমির কথা ভাবতে ভাবতে
কেটে গেছে মায়াবী একটা রাত ।
আমি তো মিমি কে আমার মন থেকেই
ভালোবাসতাম ,কিন্তু মিমি আমাকে
ভালোবাসলো না ।কি কারনে আমার
ভালোবাসা নিয়ে খেলা করলো ।
মিমির সাথে কাটানো প্রত্যেক টা
মুহুর্ত্য আমার চোখে ভাসছে ।মনে হচ্ছে
দূর থেকে মিমি আমাকে আগের মত
বাবুটা বলে ডাকছে ।কিন্তু এই ডাক টা
চিরদিনের জন্য মিশে গেছে ।কেউ আর
বলবে না আমার বাবু টা আজ কি
খেয়েছো ,কি করছো ,কেমন আছো ।
..
..
সাত দিন পর আবার সেই ছেলেটির
সাথে আবার দেখা ।ছেলেটি আমাকে দেখেই ভাইয়া ভাইয়া বলে
ডেকে উঠলোঃ
___কেমন আছেন ভাইয়া।
___এই তো ভাই তুমি কেমন আছো ।
___আমাগো ভিখারীর ভালো থাকা।
___ক্যানো ভাইয়া আজ কে ভিক্ষা পাও নি ।
___না ভাইয়া ,আজ কে পাই
না।
___তার মানে আজ কে কিছু খাও নি ।

___না ভাইয়া এখনো কিছু খাই নি ,শুধু পানি খেয়ে আছি।
___ওকে চলো আমি তোমাকে আজ কেও খাওয়াবো।
___না ভাইয়া আমি একজন পথ শিশু আমার সাথে আপনাকে কেউ দেখলে তাকিয়ে থাকবে ।
___আরে চলো ,তুমি কি মানুষ না নাকি ,আর আমার টাকা দিয়ে আমি খাওয়াবো মানুষের কি.? ,তুমি চলো আমার ও খিদা লাগছে ।
___আপনি খুব ভালো ভাইয়া ,আপনার মত মানুষ এই পৃথিবীতে খুব কম ই আছে যারা পথশিশুদের কে খেতে দেয়।
___হাহা ,তুমি তো খুব ভালো কথা বলো ,কি নাম তোমার .?
___মায়ে একটা নাম রেখেছিলো সবুজ ।
___ওহ খুব সুন্দর নাম ,তা তুমি ভিক্ষা করো ক্যানো ,তোমার বাবা মা নেই ।
___বাবা আছে
কিন্তু মা নেই ,মা মারা যাবার পর
বাবা একটা বিয়ে করছিলো ,সেই সতালো মা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে ।
___তোমার বাসা কোথায় ।
___আমার বাসা এখন রাস্তার কোনো
পাশে ,অথবা কোনো স্কুল কলেজের বারান্দা ।
___তোমাকে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে ,তুমি খুব ভালো করে কথা বলতে পারো ।
___আপনাকেওআমার অনেক ভালো লাগে ।
___তুমি কাজ করো না ক্যানো ।
___ছোট বলে কেউ আমাকে কাজ দেয় না ,সবাই তাড়িয়ে দেয় ।
___আচ্ছা আমি তোমাকে একটা কাজ জোগাড় করে দিবো . . . . . ।
..
..
অবশেষে ছেলেটির মুখে হাসি দেখে
আমার ও অনেক ভালো লাগলো।এই
ছেলেটিকে দেখে আমার বড্ড মায়া
লাগতো ,যদি আমার অবস্তা এইরকম হতো তাহলে নিশ্চয় আমাকেও এই পথের পাশে অথবা স্কুলের বারান্দায়
থাকতে হতো ।আবার সকালে ভিক্ষা
চাইতে হতো ।আল্লাহ আসলেই
পৃথিবীতে কিছু অদ্ভুদ রকম সঙ্গ
পাঠিয়েছেন ।জন্মের পর থেকে কারো
মুখে সোনার চামুচ ।আবার কেউ অনাহারে চিৎকার করে।
..
..
পৃথিবীতে যদি সুখ নামক কিছু থেকে
থাকে তাহলে এর মধ্যেই আছে । ভিখারী কে পেট ভরে খেতে দেওয়া
,এবং অন্যজন কে রক্ত দান করা ।
কারন এই দুইজন ই আমাদের মত একজন মানুষ ।আর এর মাঝেই প্রকৃত সুখ কে খুজে পাওয়া যায়.