মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩১৬- ॥দূরের মেঘ ॥

- - - -
একটা গল্পের গ্রুপে ওর সাথে পরিচয় । পরিচয় বলতে
কমেন্ট বিনিময় . . . এই যা ।
"দূরের মেঘ" . . . কেমন যেন একটা সম্মোহনী শক্তি
ছিল ঐ নামটায় । প্রোফাইল পিকে শোভা পাচ্ছিল
রোদ্রৌজ্জ্বল আকাশে একগুচ্ছ সাদা মেঘ . . .
শরতের সাদা মেঘ ।
মেঘতো অনেক দেখেছি । কিন্তু এতটা শুভ্র , এতটা
মোহনীয় আগে কখনোই লাগেনি ।
- -
এমনিতে আমি খুবই চুপচাপ মানুষ । ফেবুতেও খুব
একটা কথা হয় না কারো সাথে । নিজের মত করে এক
কোনায় পড়ে থাকি বিশাল এই নীল-সাদার জগতে ।
বিভিন্ন পেজ/গ্রুপ ঘুরে ঘুরে গল্প পড়ি । আর গল্প
খুব ভাল হলে মাঝেমাঝে কমেন্ট করি এই যা . . ।
আমার একটা সমস্যা হল , নিজ থেকে কাউকে রিকু
দিই না । কারন এক্সেপ্ট না করলে নিজেকে খুব ছোট
মনেহয় । আর তাই ফেবুতে আমার বন্ধু সংখ্যাও হাতে
গোনা কয়েকজন , অবশ্য বাস্তবেও তাই । আমি খুবই
সল্পভাষী । সবসময় নিজের মধ্যে ডুবে থাকি । কে
চাইবে এ ধরনের মানুষের বন্ধু হতে ?
যদিও আগে এমনটা ছিলাম না । যাই হোক . . . সেটা
ভিন্ন গল্প ।
- -
গ্রুপে পরিচয়ের কয়েক দিন পর অপ্রত্যাশিত ভাবে সে
আমাকে রিকু দেয় । সাথে ছোট্ট করে একটা ম্যাসেজ
। সাত-পাঁচ না ভেবে রিকুটা গ্রহন করে ফেললাম ।
"থ্যাংকস , রিকুটা গ্রহন করার জন্য ।"
"ওয়েলকাম । আপনার নামটা কিন্তু খুব সুন্দর ,
"দূরের মেঘ" । আর প্রোফাইল পিকটাও । "
"হুম , কিন্তু আপনার প্রোফাইল পিকটা মোটেই
ভাল না । "
"কেন ? সমস্যা কি ?"
"চাঁদনী রাতে খোলা প্রান্তরে একা একটা মানুষ
দাঁড়িয়ে আছে । কেমন যেন মন খারাপ হয়ে যায় ছবিটা
দেখলে ।"
"আমিতো একাই । আর চাঁদনী রাত আমার খুব ভাল
লাগে ।"
এভাবেই শুরুটা হয়েছিল আমাদের । ধীরে ধীরে আমরা
নিজেদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম ।
পারসোনাল বিষয়গুলো শেয়ার করা শুরু করলাম ।
অল্প ক'দিনেই একটা আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক
তৈরি হয়ে গেল আমাদের মাঝে । বিশ্বাসের সম্পর্ক
বলছি , কারন ওর সাথে কথা বলে মনে হয়েছিল ওকে
সত্যিই বিশ্বাস করা যায় ।
প্রতিদিন কি করছি , কি খাচ্ছি , কোথায় যাচ্ছি . . .
সবকিছু ওর সাথে শেয়ার করতাম ।
- -
মানুষ চিরকালই ভালবাসার কাঙাল । আমিইবা কি করে
তার ব্যাতিক্রম হই ? ওর কেয়ারিং-শেয়ারিং এমন
একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল . . . আমি পুরোপুরো
ওর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম ।
কখন ঘুম থেকে উঠতে হবে , কখন খেতে হবে , কি করা
যাবে , কি করা যাবে না . . . সব "ও"ই ঠিক করে দিত ।
মাত্র কয়েক মাসের ব্যাবধানে আমি কেমন যেন আমূল
বদলে গেলাম । অতীতের কিছু দুঃস্মৃতি ভুলে গিয়ে
আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম ।
অবশেষে এল সেই কাংখিত মুহুর্ত . . . যেদিন ওকে
আমি প্রপোজ করলাম । কিন্তু . . .
- -
অনেকদিন হয়ে গেল ওর আইডি ডিএক্টিভ । ঐ দিনের
পর থেকে সে আর একটি বারের জন্যও ফেসবুকে
আসেনি । ফোনটাও অফ থাকতো সারাক্ষন ।
কি যে কঠিন সময়ের ভিতর দিয়ে দিনগুলো যাচ্ছিল ।
কারো সাথে কিছু শেয়ারও করতে পারছিলাম না । কার
সাথে শেয়ার করবো ? যার সাথে সব কিছু শেয়ার
করতাম সে ই তো আমাকে ভুলে গেছে ।
অবশেষে ঠিক এগারো দিনের মাথায় "ও" আবার
ফেবুতে আসলো । মেজাজ প্রচন্ড খারাপ ছিল । মুখে
যা আসলো তাই বললাম ।
"সরি"
"কিসের সরি ? গত এগারোটা দিন আমি কিভাবে পার
করেছি সেটা তুমি জানো ? এভাবে যোগাযোগ অফ
করে দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না । আমাকে
তোমার ভাল লাগে না . . . কথাটা সরাসরি বলে
দিলেই হত ।"
"তোমাকে কিছু কথা বলা দরকার । তাতে আমাদের
দু'জনেরই মঙ্গল ।"
তারপর ওর মুখ থেকে যা শুনলাম , সেটা আমার
কল্পনারও অতীত ছিল । এতদিন পর্যন্ত সে আমাকে
যা যা বলেছে সব মিথ্যে . . . সব ।
ওর স্বামী আছে , সংসার আছে । অথচ "ও" কিনা . . ।
মানুষ এতটা জঘন্য হয় কি করে ? ওর স্বামী ওকে
অবহেলা করে , এটা কি আমার দোষ ?
ওর স্বামী ওর ইমোশনের মূল্য দেয় না , এটা কি
আমার দোষ ?
আমার সাথে কেন এমনটা করলো ?
মিলির সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিলাম সেদিন ।
"ও" ফোনে অনেক কান্না-কাটি করেছিল । বারবার
শুধু সরি সরি বলছিল । কিন্তু মিলি জানে না সে
আমার কত বড় ক্ষতি করেছে ।
মানুষের বিশ্বাস যখন ভাঙে তখন কেবল বিশ্বাসই
ভাঙে না , সাথে সাথে মনটাও টুকরো-টুকরো হয়ে
যায় ।
- -
চার বছর আগে টুসি নামের মেয়েটার কারনে মেয়েদের
প্রতি যে ঘৃনা জন্মে ছিল বুকের ভিতর , ভেবেছিলাম
মিলি হয়ত সেটা ধীরে ধীরে মুছে দেবে । কিন্তু হায় !
মিলি বরং তা বাড়িয়ে দিয়ে গেল কয়েক গুন । এখন
আমি আর কোন মেয়েকেই বিশ্বাস করতে পারি না ।
সবাইকে প্রতারক মনে হয় । প্রত্যেককেই মনে হয়
মিলি কিংবা টুসি ।