রাত ১২টা,
মেসেজ টাইপ করা শেষ,আর ১ মিনিট পরই
বেস্ট ফ্রেন্ড এর মোবাইলে মেসেজ পাঠাব।
ভয় হচ্ছে খুব,
একমিনিট পর ওর জন্মদিন,
জন্মদিনে বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে উইশ
করতেই পারি তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি অন্য
কারণে,কারণটা একটু গোলমেলে টাইপের
ভিষণ সহজ।
পরিচয় টা দেই,
নিজের সম্পর্কে বলার কিছুই নেই,
গার্লফ্রেন্ড নামক
বস্তুটা জীবনে আসবে আসবে করেও আসেনি।
ভালবাসা আসার আগেই
কালো মেঘে ঢেকে গেছে ইত্যাদি এমন
হরেক রকম উপমা দেওয়া যেতেই
পারে নিজেকে নিয়ে।
আরেকটা কথা বলতে পারি,আমি খুব
গোছানো টাইপের,অগোছালো একদমই পছন্দ
না তবে মাঝে মাঝে অগোছালো জীবনটা ভাল
লাগে।
অনীলা মানে নীলা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
ওর নাম নীলা হলেও আমি ওকে অনীলা বলেই
ডাকি।
এর পিছনে অবশ্য লজিক আছে, আমি আবার
লজিক ছাড়া কিছু করি না। অবশ্য সবসময়
না কারণ সবসময় লজিক মেনে চললে অনেক
কিছু মিস করতে হয়।
নীলার চোখ দুটো নীল রং এর না আর ওর
নীল রং একদম পছন্দ না,তাই যেহেতু ওর
সাথে নীল রং এর কোন সম্পর্ক নেই
ওকে নীলা বলা যাবে না।
আর তাই তো নীলার আগে অ লাগিয়ে ওর নাম
অনীলা।
আমারও এমন একটা নাম আছে বেমন।
অনীলার ধারণা আমার মধ্যে মন বলতে কিছু
নেই তাই ইমন এর ই কেটে সেই
স্থলে বে লাগিয়ে এমন জগন্য নাম
বানিয়েছে।
যাই হোক ভয় পাওয়ার মূল কারণ আজ ওর
জন্মদিনে ওকে গিফট
হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি,
মানে ওকে যে ভালবাসি সেটা বলতে যাচ্ছি আর
ওর পক্ষ থেকে হ্যা হলে ও আমার জি এফ।
ব্যাপারটা যতটা সহজ
ভাবে নিচ্ছি ততটা না,
অনীলা যে আমাকে ভালবাসে সে ব্যাপারে কিঞ্চিত
সন্দেহ আছে।
আর তাই হ্যা বলতেও পারে আবার
না বলতে পারে।
যদি না বলে তবে আরেকটি অনাকাক্ষিত
ঘটনা ঘটতে পারে, আর তা হল ফ্রেন্ডশিপ
এর ইতি।
এমন হাজারো আকাঙ্খা নিয়েই ওকে প্রপোজ
করছি জানিনা পরে কি হবে।
সেন্ড অপশানে ক্লিক করব নাকি করব
না এমন করতে করতে ৩ মিনিট পার
হয়ে গেল,
তারপর চোখ বুজে করেই ফেললামা যা হবার
হবে।
দুমিনিট অপেক্ষা করলাম কিন্তু
মেসেজটা ডেলিভার হল না।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল,
হওয়ারই কথা।
ভয়ে ভয়ে কল দিলাম,
নাম্বার বিজি।
ভাবলাম কেউ হয়ত ওকে উইশ করছে,
একটু পর মেসেজ ডেলিভার হল, ভাবলাম হয়ত
কথা বলা শেষ হইছে।
রিপ্লাই পাচ্ছি না দেখে কল দিলাম
নাম্বার বিজি বুজলাম কথা বলা অবস্থায়ই
মেসেজ ডেলিভার হয়েছে,তারপর থেকে একটু
পর পর ওকে ট্রাই করছি কিন্তু প্রতিবার
নাম্বার বিজি।
আমার শুধুমাত্র একজন বেস্ট ফ্রেন্ড আর
সে হল অনীলা।
অনীলার অবশ্য একটু ব্যাতিক্রম,ওর মোট
৫টা বেস্ট ফ্রেন্ড।
বেস্ট ফ্রেন্ড ৫ জন কিভাবে হয় তার উত্তর
একমাত্র অনীলা জানে,
৫ জনের মধ্যে তিনজন ছেলে আর দুজন মেয়ে।
প্রিতি,অনন্যা,শুভ,অনি আর আমি।
বলতে গেলে অনীলা সহ আমরা ছয়জন
একটা গ্রুফ,এদের মাঝে অনীলা আর আমার
লাভার নেই ইতিমধ্যে অবশ্য শুভর ব্রেক আপ
হয়ে গেছে।
আমরা সবাই ক্লাসমেট।
দেখতে দেখতে ৫০ মিনিট কাটল
ওর মোবাইলে কল ঢুকল,
-হ্যাপি বার্থডে অনীলা
-থ্যাংকু দোস্ত
-এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলি?
-শুভর সাথে
-ও এতক্ষণ কথা বলতে হয়?
-আজ আমি অনেক হ্যাপি অনেক
-ওয়াও!তাই নাকি?কেন রে এত হ্যাপি?
-শুভ আমাকে প্রপোজ করেছে
(কথাটা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল,
চুপ করে রইলাম)
-হ্যালো
-হ্যা,ও বল?
-বলছি শুভ প্রপোজ করেছে
-তাই?ভাল,কিন্তু শুভর তো লাভার আছে?
-এখন তো নেই,জানিসনা কিছুদিন আগে ব্রেক
আপ হয়ে গেছে।
-ও তাহলে ওর সাথে প্রেম করবি?
-হুম
-ওকে হ্যা বলেছিস?
-হ্যা বলেছি
-ও
-আমার জন্মদিনের সেরা উপহার,কি বলিস?
-হুম,ঘুম পাচ্ছেরে ঘুমাব
-আরেকটু কথা বলি?
-নারে ঘুমাব
-আচ্ছা বাই গুড নাইট
কলটা কেটে ভিষণ কষ্ট হল, নিজের জন্য
কিছুটা আর কিছুটা অনীলার জন্য।
ও বোধহয় আমার দ্বিতীয়
মেসেজটা পড়েনি পড়লে বোধহয় কষ্ট
পাবে,ওকে দুটা মেসেজ
করেছি একটাতে হ্যাপি বার্থডে আরেকটা তে প্রপোজ।
কষ্ট হচ্ছিল আর ছটপট করতে করতে একসময়
ঘুম চলে আসে,
সকালে ঘুম ভাঙে প্রিতির কল পেয়ে,
-কিরে কই তুই তোর জন্য বসে আছি
-ঘুমাচ্ছি
-কি বলিস?উঠ তাড়াতাড়ি নীলার
সাথে শপিং এ যাওয়ার কথা না?
-আর কে আছে?
-শুভ,অনি,আমি,নীলা,অনন্যা
-ও তোরা যা,আমি আসব না রে
-কি হইছে?আরে আজ তো বেস্ট ডে যতই হোক
শুভ আর নীলার প্রেমের প্রথম দিন
-জানি তোরা যা ভাল লাগছে না
অনীলা ফোনটা নিল,
-ঐ বেমন তাড়াতাড়ি আয় আমি না তোর বেস্ট
ফ্রেন্ড...
অনীলার কথা শুনে মনে হল আমার মেসেজ
পড়েনি,আসলে অনেকেই ত মেসেজ
করেছে তার মাঝে আমার মেসেজ
পড়াটা হয়ত প্রয়োজন মনে করেনি নয়ত
খেয়াল করেনি।
যাই হোক বের হলাম যেতেই সবাই
ঝাড়ি মারল,
শপিং মলে সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত।
অনীলা আজ অনেক
খুশি আমাকে একটা গেন্জি কিনতে বলল
নিলাম না।
অনীলাকে বললাম,
-তোর মোবাইলটা দে ত
-কেন?
-একটু দে
মোবাইলটা দিয়ে ও আবার কেনাকাটায় মন
দিল,
মোবাইল থেকে ওকে করা মেসেজটা ডিলিট
করে দিলাম,
অনন্যা ডিলিট করছি যে দেখল।
-ঐ কি ডিলিট করছ
-কিছুনা
-আমি তো দেখছি
-আরে ওকে একটা ভুল মেসেজ পাঠাইছিলাম
সেটা
-ও আচ্ছা
আজ সবাই খুশি,শুধু আমি ছাড়া তবুও
মুখে হাসি নিয়ে আছি।
অনীলা সন্ধ্যার
অনুষ্ঠানে পড়বে বলে একটা নীল
জামা কিনেছে,শুভ পছন্দ
করে দিয়েছে অনীলা ও অনেক খুশি।
হয়ত আজ থেকে শুভর ভালবাসায়
অনীলা নীলা হয়ে যাবে,আমার কাছে আগের
অনীলাই থাকবে।তবে মনে...আর
ভালবাসা,দূর থেকে.........