মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৭৬- ময়না পাখি- মহাকালের সৈনিক

অদ্রির ফোনটা বেজেই চলেছে ।
ফোনে জ্বলজ্বল করছে আম্মু
নামে সেভ করা নামটি...
~হ্যালো ,নোটটা তোলা শেষ করেই
আসছি আম্মু ।
~ঐ কুত্তা ,আমি তোর আম্মু না ।
আমি ময়না পাখি ।
~ও আচ্ছা ,কেন ফোন দিয়েছিস ।
নোট করছি ডিস্টার্ব করিস না ।
~তাই নাকি ?আমার ভাইটা এত ভাল
হল কবে থেকে ??
~ওই ছেমড়ি আমি খারাপ ছিলাম
কবে রে...
~না তুই তো অনেক ভাল ।কি নোট
করছিস রে ?
~কেমিস্ট্রি ।তনয়দের বাসায় ।
~ওহ আচ্ছা ।তনয় ভাইয়াদের
বাসাটা চা স্টল হল কবে থেকে রে ?
~মানে ?কি বলতে চাচ্ছিস !
~তেমন কিছু না ।চা বানানোর ঘটঘট
শব্দ হচ্ছে তো ,আর আশপাশ
থেকে চায়ের অর্ডার দিচ্ছে মানুষ
তা বলতে চাচ্ছি ।
~এত বেশি শুনিস কেন তুই ?
~প্রতিদিন গোসলের সময়
ভালভাবে কান পরিষ্কার
করি তো তাই !!
~হয়েছে , হয়েছে ।আর
পাকামো করতে হবে না ।এখন রাখ..
~শুন শুন শুন
~আবার কি ?
~বাসায় আসার সময় আমার জন্য
২টা সাফারি আনবি আর
কোনো ভাইয়ার খাতা আনবি ।
~সাফারি আনতে বললি ঠিক আছে ।
কিন্তু খাতা আনতে বললি কেন ?
~আরে বুদ্ধু ,আব্বু যদি বলে কেন
গিয়েছিলি তনয়দের বাসায় তখন
কি বলবি ??
~ওরে আমার মিষ্টি বোনটারে ।
ধন্যবাদ ।লাভ য়ু..
~ভালবাসা অর্পিতা আপু দিস ।আমার
জন্য চকলেট আনলেই চলবে.....
.
.
অথৈ ,অদ্রির ছোট বোন ।
অদ্রি এইবার ভার্সিটিতে ভর্তি হল
আর অথৈ ক্লাস নাইনে উঠলো ।
অথৈকে অদ্রি ময়নাপাখি বলেই
ডাকে ।কারণ ছোটকালে অদ্রির
একটা ময়নাপাখি ছিল ।অনেক সুন্দর
করে কথা বলতে পারতো ।কিন্তু
অথৈ যখন ক্লাস ৩ এ পড়ে তখন
অদ্রির এই অতিপ্রিয়
ময়নাপাখিটি বার্ধক্যজনিত
কারণে মারা যায়া ।এতে অদ্রি অনেক
কান্না করে ।ময়নাপাখির
শোকে সে দুবেলা খায়নি পর্যন্ত ।
একসময় অথৈ বলল ,"ভাইয়া তোমার
ময়নাপাখিটা বুড়ো হয়ে গিয়েছিল
বলে মারা গিয়েছে ।কিন্তু
আমি তো বুড়ো হয়ে যায় নি ,মারাও
যাচ্ছি না ।আর আমি ময়নাপাখির
চেয়েও সুন্দর করে কথা বলতে পারি ।
আজ থেকে আমিই তোমার
ময়না পাখি..."
.
তারা দুজন সারাদিন দুজনের
পিছনে লেগেই থাকে ।টম এন্ড জেরির
মানুষ ভার্ষন আর কি ।কিন্তু
অথৈ কোন
বিপদে পড়লে অদ্রি তাকে বাচায় আর
অদ্রি যখন বাসায় বাঁশ খায় তখন
সেই
বাঁশ থেকে অথৈ তাকে উদ্ধার
করতে না পারলেও বাঁশের মাথায় তেল
মেখে দেয়....
.
.
অদ্রির বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত
আট টা বেজে গেল ।বাসায়
ফিরে অদ্রি দেখল বাবা মা সবাই
কয়লার আগুনের মত হয়ে রয়েছে ।
কয়লার আগুন দেখে বোঝা যায়
না ,কিন্তু স্পর্শ করলে বোঝা যায়
কয়লার আগুনের উত্তাপ কতটুকু...
>এত দেরি করে বাসায় ফিরলি কেন ?
>না মানে ,তনয়দের
বাসা থেকে কেমিস্ট্রি নোটটা আনতে গিয়েছিলাম

>ভাল কথা ,তাহলে এত দেরি হল
কেন ?
এমন সময় তারার মত মিটমিট
করে হাসতে হাসতে অদ্রির বাঁশ
প্রদানকারি রুমে অথৈ এর প্রবেশ...
>ভাইয়া ,আমার
ড্রয়িং খাতাটা যে আনিকাদের বাসায়
দিয়ে আসতে বলেছিলাম
তা কি দিয়েছো ??
>মানে ?
অতঃপর অথৈ এর ঐশ্বরিয়া রাই
মার্কা চোখ টিপের
ফলে অদ্রি বুঝতে পারলো কাহিনী কি !
>ওহ হ্যা ।আর বলিস না ।একবার
এসে পড়ছি বাসার কাছাকাছি তখন
তোর কথা মনে হল পরে আবার
আনিকাদের বাসায় গিয়েছি..
তারপর আর কি !নিশ্চিত বাঁশ
হতে রক্ষা..
>দেরি হবে তা একটু
বলে যেতে পারলি না ,তাহলে তো আর
এত টেনশন করি না আমরা ।
>সরি আম্মু ,ভুল হয়ে গিয়েছে ।
>যা ,হাতমুখ ধুঁয়ে কিছু
খেয়ে পড়তে বস...
.
.
.
অদ্রির জান্টুস অর্পিতার সাথে যখন
কোনো ঝগড়া লাগতো তখন
অর্পিতার ননদিনীই তাদের
মাঝে আবার সব কিছু ঠিকঠাক
করে দিত ।এমনই একদিন ঝগড়ার পর
ছাদের এক কোনায়
দাড়িয়ে নিকোটিন
পোড়াচ্ছিলো অদ্রি ।তখন
অথৈ এসে দেখে ফেলে অদ্রির এত
ভাল একটি কাজ ।ভাল কাজের
কথা গোপন করতে নেই ।সেই
উদ্দেশ্যেই অথৈ চিৎকার দিয়ে ডাক
দিলো ,আমম....এতটুক বলতেই
অদ্রি মুখ চেপে ধরলো অথৈ এর ।
>লক্ষী বোন আমার ,আমার
ময়না পাখি কাউকে বলিস না...
>এত ভাল একটা কাজ করছো আর
আমি সবাইকে জানাবো না তা কি করে হয় ,তুমিই
বলো ।
>ভাই আমার কথাটা শোন ,অর্পিতার
সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই খাচ্ছি ।
আজই প্রথম ,আজই শেষ ।প্লিজ
মাফ করে দে ,এই নাক মলছি কান
মলছি আর কখনো এমন হবে না ।
>তাহলে আমার
একটি কথা রাখতে হবে ।এখন
তুমি কান ধরে দশবার উঠ বস করো ।
আমি ভিডিও করবো ?
>এখন ,এখানে ।
>জি এই মুহূর্তেই...
.
তারপর আর কি ?কান ধরে উঠবস
করতেই হল ।ভিডিও করা হল ।
অতঃপর অথৈ নিচে গেল
এবং অর্পিতার ফোন...
>হা হা হা ,এত ভালবাস আমাকে ?
সরি ,আমাকে মাফ করে দেও ।
আমি না বুঝে ঝগড়া করেছি ।আমি ভুল
করেছি আর
তুমি আমাকে কানধরে উঠবস করার
MMS পাঠালে অথৈ কে দিয়ে ।
সরি অদ্রি ,আমি অনেক সরি ।আর
কখনো আমি এমন করবো না..
অর্পিতার
কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে অদ্রি ।
পাঁচতালার উপরে মশা কম
তা নাহলে এতক্ষণে প্রোটিন সমৃদ্ধ
কতকগুলো মশা গলাধঃকরণ
হয়ে যেত....
.
.
একদিন বিকেলে অর্পিতা আর
অদ্রি বসে আছে নদীর পাড়ে ।এমন
সময় অদ্রির বাবার ফোন...
>অদ্রি ,এক্ষুণি স্বদেশ হাসপাতাল
আয় ।অথৈ কেমন যেনো করছে ।
তোকে বার বার
ডাকছে ,আমরা রওনা দিয়েছি....
.
.
কিছুক্ষণ পর ,অর্পিতা আর অদ্রির
ঝড়ের বেগে হাসপাতালে প্রবেশ ।
কেবিনের বেডে শুয়ে আছে অথৈ ।
শীতের সময় মেহগনি গাছকে যেমন
নির্জীব দেখায় তেমনই
দেখাচ্ছে অথৈকে ।অথচ
দু'ঘন্টা আগেই কত প্রাণোচ্ছল ছিল
ময়নাপাখিটা...
.
.
ডাক্তাররা জানালো ,অথৈ স্ট্রোক
করেছে ।এত ছোট বয়সে এই ধরনের
স্ট্রোক খুব রেয়ার ।এর
থেকে বাঁচানো সম্ভব না অথৈকে...
.
.
>ভাইয়া ,আমি চলে যাচ্ছি ।এখনও
কিন্তু তোমার কাছে আমার
চারটা সাফারি পাওনা রয়ে গিয়েছে ।
>না না ময়নাপাখি ,তোর কিচ্ছু
হবে না ।
আমি তোকে একবস্তা সাফারি কিনে দেব

>না ভাইয়া ,আমি জানি আমি মারা যাচ্ছি ।
তুমি কষ্ট পেও না ।
আমি তারা হয়ে তোমার সাথে মিটমিট
করে কথা বলবো ।
>ময়না আমার চুপ কর ।
>ভাইয়া ,আমি তো ময়নাপাখিটার মত
বুড়ো হয়ে যায় নি ।আমি কেন
মারা যাচ্ছি ?
তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার অনেক
কষ্ট হবে ভাইয়া ।
একটা অনুরোধ ,তুমি কাউকে ময়নাপাখি বলো না ।
কারণ তোমার ময়নাপাখি গুলো সবাই
ঐ দূরে চলে যায়...তোমার কাছে শেষ
চাওয়া ।আমার কপালে শেষ
একটি চুমো দিবে তুমি ?
অদ্রি যখনই তার
ঠোঁটগুলো ছোঁয়ালো তখনই
অথৈ এর আত্মার
ময়নাপাখিটা উড়ে চলে গেল ঐ দূররর
বনের উদ্দেশ্যে ।কেউ কি এই বনের
খোঁজটা দিতে পারবে অদ্রিকে.....