-কিরে স্নেহা!তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছো?
তাড়াতাড়ি চল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।
-আমি যাবো নাহ,তুই চলে যাহ।রাতুল
আসবে আর
এসে যদি আমাকে না পায়,তবেঁ ভীষন রাগ
করবে।
-আরে রাতুল আর কোনো দিন আসবে না।এই
ফালতু কথাবার্তা বাদ দিয়ে আমার
সাথে পরীক্ষা দিতে চল।
-(চেঁচিয়ে বললো)তোর কানে কি কথা যায়
না। তোকে বললাম তো আমি যাবো নাহ।
আজ স্নেহা যেই খানে দাঁড়িয়ে রাতুলের
অপেক্ষা করছে সেই খানে প্রায় এক বছর
আগে রাতুল দাঁড়িয়ে থাকতো ওর জন্য।
-ভার্সিটির
উদ্দেশ্যে যথাসময়ে বাসা থেকে বের
হয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষায় করছে স্নেহা।
রাস্তাটা একেবারে ফাঁকা।রাস্তার
ওপারে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার
জন্য।হঠাৎ একটা রিক্সা তাদের পথের
মাঝে উকি দেয়।
-এই রিক্সা
বলে স্নেহা আগে ডাক দেয়।
স্নেহার মধুর কন্ঠের ডাক রাতুলকে তার
দিকে তাঁকাতে বাধ্য করে।
মেয়েটিকে দেখে রাতুল যেন স্বর্গের
দেশে চলে গেলো।সাত রঙের
ডানা কাঁটা পরী নেমে এসেছে।
সামনে থেকে স্নেহা রিক্সা নিয়ে চলে যায়।
রাতুল রিক্সার দিকে যতদূর পর্যন্ত চোখ
যায়,ততদূর তাঁকিয়ে রইলো।
মেয়েটাকে প্রথম দেখায়
ভালো লেগে গেলো।
পরেরদিন থেকে রাতুল রাস্তার
মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো স্নেহাকে দেখার
জন্য।ওর পিছন পিছন যেতো।সারাটা দিন
স্নেহাকে ঘিরে কাঁটতো।ফ্রেন্ডদ ের কাছ
থেকে স্নেহার ফোন নাম্বার আর ফেইসবুক
আইডি খুঁজে বের করে রাতুল।প্রায়
রাতে অজানা নাম্বার থেকে কল
আসে স্নেহার মোবাইলে।কল
দেয়া ব্যক্তি রাতুল।স্নেহার মধুর কন্ঠ
শোনার জন্য প্রতি রাতে ফোন দেয়,ওর কন্ঠ
না শুনলে ঘুম আসে না রাতুলের।
রাত প্রায় তিনটা। স্নেহা গভীর নিদ্রায়।
হঠাৎ বালিশের পাশে রাখা মুটোফোন টা বেজে উঠলো।
আধ ঘুমের ঘোরে বলে,
-হ্যালো কে?
-চুপ
-(মেজাজ গরম হয়ে গেলো)আশ্চর্য তো!
আপনি কে? দয়া করে একটু বলবেন।
প্রতি রাতে আমাকে ডিস্টার্ব করেন কেন?
মেয়েদের কন্ঠ শুনতো ভালো লাগে তাই।
-চুপ
-কিহলো কথা বলেন।এই
নিয়ে চারটে নাম্বার চেইঞ্জ
করলাম,তারপর ও আমার নাম্বার
আপনি কিভাবে জানেন?দেখুন
দয়া করে আমাকে আর ফোন দিবেন নাহ।
এই বলে স্নেহা ফোন টা কেটে দিয়ে ওই
নাম্বার টা ব্লাকলিস্টে এড করে।
পরের দিন নতুন নাম্বার নেয়।এবার খুব
কাছের মানুষ ছাড়া আর কাউকে নাম্বার
দিবে নাহ,যাকে প্রয়োজন পরে শুধু তাকেই
দিবে বলে ঠিক করছে সে।
কয়েকদিন থেকে রাতুলকে প্রায় সব জায়গায়
দেখা যেতো যেখানে স্নেহার
দেখা পাওয়া যেতো।দুইতিন দিন
থেকে আননোন নাম্বার দিয়ে কল আসে নাহ
স্নেহার মোবাইলে।রাতুলের মনের
মাঝে কেমন যেন একটা অস্থিরতা শুরু
হয়ে গেলো।কিছু না ভেবে স্নেহার
সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,
-তুমি আবার তোমার ফোন নাম্বার
টা চেইঞ্জ করছো।
-আচ্ছা আপনাকে তো চিনলাম নাহ।আর
আপনি আমার ফোন নাম্বার
কি ভাবে জানতেন।
প্রথমে স্নেহা কিছু বুঝে উঠতে পারে নি।
কয়েকমিনিট পর সব বুঝে গেলো।এই সেই
ছেলে যে আমাকে প্রতিরাতে ডিস্টার্ব
করে।কোনো কিছু না বলেই সবার
সামনে কষে এক চড় গালে বসিয়ে দেয়
রাতুলের।রাতুল মাথা নিঁচু করে ওখান
থেকে চলে আসে।
স্নেহা রাগের মাথায় বাসায় চলে আসে।
নিজের রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ বিড়বিড়
করতে লাগলো।বিকেল গড়িয়ে রাত এলো।
স্নেহা জানলায় উকি দিলো।জানালার রডের
ফাঁক দিয়ে দেখে রাতুল ল্যাম্পপোস্টের
নিচে বসে আছে ওর দিকে তাঁকিয়ে।রাতুলকে
দেখে স্নেহা ভিতরে চলে আসে।স্নেহার
একটু খারাপ লাগছিলো রাতুলের জন্য।
স্নেহার মনে একটু কষ্টের ছোঁয়া লাগলো।
পরদিন সকালে রাতুল আর রাস্তার
মোড়ে নেই।স্নেহার দুইচোখ শুধু
রাতুলকে খুঁজতে ছিলো।
হয়তো রাতুলকে সরি বলবে।কিছুক্ষণ
দাঁড়িয়ে থাকার পর রাতুলের সন্ধান
না পেয়ে রিক্সা নিয়ে চলে যাওয়ার সময়
দেখে রাতুল চোখ
ডলতে ডলতে মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
স্নেহা রিক্সা থামিয়ে রাতুলকে 'সরি'
বলে।রাতুল চুপ করে ওর চোখের
দিকে তাঁকিয়ে আছে,চোখ টা যে কত
মায়াবী,ওর ঠোটের কোনে তিলটা আজ খুব
কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে রাতুল।
'সরি'বলে স্নেহা চলে যায়।আগের মত
সবাইকে তার ফোন নাম্বার দিয়ে দেয়।
রাতে অপেক্ষায় থাকে সেই অজানা নাম্বার
থেকে কল আসার।দুই রাত অপেক্ষা করে ফোন
টার।কিন্তু কোনো ফোন আসে নি স্নেহার
মোবাইলে।
স্নেহ হয়তো রাতুলকে ভালবেসে ফেলেছে।
রাতুলের সেই পিছন পথচলা,সারাদিন
অপেক্ষায় থাকা,বিকেল
শেষে সন্ধ্যা এলে ল্যাম্পপোস্টের সেই
আলোর নিচে দাঁড়িয়ে থাকা,অজানা নাম্বার
থেকে কল আসা, এই সবই যা আগে খুব
বিরক্তিকর ছিলো এখন তা খুব পছন্দের
হয়ে গেলো।রাতে অজানা নাম্বার থেকে কল
আসা না পর্যন্ত ঘুম আসতো নাহ ওর।
পরদিন সকালে স্নেহা রাতুলের
সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
-আপনি নিজেকে কি মনে করেন।আমাকে আর
ফোন দিচ্ছেন না কেন?
-আপনিই তো নিষেধ করছেন।
-এই নিন আমার নতুন নাম্বার কল দিয়েন।
-কিছু বুঝলাম নাহ
-আরে বোকা সব কি বুঝিয়ে বলতে হয়।নিজের
থেকে কিছু বুঝে নাও।ঠিক সময় মত কল দিও।
এই বলে স্নেহা রাতুলের
দিকে তাঁকিয়ে পিছনে হাঠতে শুরু করে।
পিছন থেকে মিনি বাস আসতে ছিলো।রাতুল
স্নেহাকে সরিয়ে নিজে মৃত্যুর
সামনে দাঁড়িয়ে পরে। কয়েকমিনিটের জন্য
পরিবেশ টা অন্য রূপ নেয়।
স্নেহা রাতুলকে নিয়ে হস্পিটালে যায়।
মাথার পিছন দিকে প্রচুর পরিমান আঘাত
লাগে।লাল রঙের ছোট লাইটি জ্বলছে।
ভিতরে অপারেশন চলছে।
স্নেহা বাইরে বসে কাঁদছে আর আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা করছে।কিছুক্ষণ পর লাল
বাতিটা নিভে গেলো।
স্নেহাকে বাইরে বসা দেখে ডাক্তার তার
কাছে বলে
-অপারেশন সাকসেসফুল।কিন্ত ু উনি আর
প্রায় তিন মাসের মত
বেঁচে থাকতে পারবে।
স্নেহা বাকরুদ্ধ।ভালবাস ার
মানুষটিকে সে কয়েকমাসের
মধ্যে হারিয়ে ফেলবে।রাতুল এক
মেসেজে স্নেহাকে বলেছিলো ,
-ওগো প্রিয়সী,তোমায় নিয়ে স্বপ্নের
সংসার সাজাবো কল্পানার ক্যানভাসে।
কয়েকদিনের মধ্যেই রাতুল মোটামুটি সুস্থ
হয়ে উঠে।বাসায় চলে আসে।
স্নেহা রাতুলকে কিছু জানায় নাহ।
রাতুলের সেই অপূর্ণ স্বপ্ন স্নেহা পূরন
করবে বলে ঠিক করছে।
গভীর রাতে দুইজন ফোনে প্রেমালাপ
করতেছিলো হঠাৎ স্নেহা জিজ্ঞেস করে বসে
-Will you marry me?
-Yes Of course.
মা-বাবা'র আশীর্বাদ
নিয়ে তারা বিয়ে করে।ছোট্টো সংসার
দুইজন মিলে ভালোই কাটাচ্ছে।তাদের
সংসার টা ভালবাসার সুখে পরিপূর্ণ ।
ভালবাসার কিছু ইট দিয়ে তারা ঘর
বাঁধছে।গোধূলির বৃষ্টিতে দুইজন ভিজে।
আমাবস্যার রাতে জোনাকি পোকার আলোর
ভিড়ে দুইজন হারিয়ে গেছে।তাদের
ভালবাসা আকাশে রংধনুর রঙ গাঢ় করছে।
কিন্তু স্নেহার মনের ভিতর
রাতুলকে নিয়ে ভয় টা কম হয়নি।
সেদিন ছিলো রবিবার।
স্নেহা ঘুম
থেকে তাড়াতাড়ি উঠে পুরো ঘরটা ভালো করে সাজাই
কারন আজ রাতুলের জন্মদিন।রাতুলকে
সারপ্রাইজ দিবে।
কিন্তু রাতুল আর ঘুম থেকে জাগলো নাহ।
সে গভীর ঘুমে হারিয়ে গেছে।।তার ঘুম আর
কখনো ভাঙবে না।পারী দিলো না ফেরার
দেশে।হারিয়ে গেলো ভালবাসার
মানুষটি অজানা রাজ্যে। কিছুক্ষনের মধ্য
এইটা বুঝতে পারে স্নেহা।
মনের অজান্তে চোখের পানি নরম গাল
বেয়ে রাতুলের শরীর কে স্পর্শ করলো।
স্নেহা তার ভালবাসার
মানুষটিকে হারিয়ে ফেলছে।