মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৩- তোমার হাসিতে আমার সুখ -মহাকাব্য'র কাব্যিক

রোজ সকালে ছেলেটিকে রাস্তার মোড়ে দেখা যেতো।
ছেলেটি কিসের জন্য দাঁড়ায় হয়তো খুব কম মানুষ তা জানে।নীল-সাদা ড্রেস পরা মেয়েটি প্রতিদিন ঔ রাস্তা ধরে কলেজে যায়।আর ছেলেটি মেয়েটিকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।
ছেলেটির নাম সাব্বির। মেয়েটির নাম অর্পা।
তাদের কলেজ ভিন্ন।ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে দুইজনই পড়াশুনা করে।অর্পা ওর কলেজের
ফার্স্ট গার্ল,আর, সাব্বির ওর কলেজের ফার্স্ট বয়।দুই কলেজের ভিতর ভীষন কম্পিটিশন।একজন অপরজন কে সবসময় হারানো চেষ্টা করতো। সাব্বিরে আর অর্পা পাশাপাশি এলাকায় থাকে। তাদের মধ্যে সবসময় যুদ্ধ চলতো।রাত একটু
গভীর।চাঁদ টা মেঘের ছায়ায় ঢাকা পরেছে।চাঁদ মামা নিভু আলো দিচ্ছে।।
অর্পা টেবিলে বসে পড়ছে,কাল পরীক্ষা।সাব্বির আর কয়েকজন বন্ধু মিলে অর্পাকে ভয় দেখাবে এই প্লান করে।

রাত তিনটা বেজে একমিনিট। পরিবেশে একবারে নিরব।হঠাৎ অর্পার টেবিলের
পাশে জানালায় কে যেনো ধাক্কা দিলো,জোরে জোরে শব্দ
করতে লাগলো।অর্পা ভয়ে চিৎকার শুরু করলো। অর্পার চিৎকার শুনে বাবা-মা দৌড়ে অর্পার রুমে আসে। পরেরদিনের পরীক্ষাটা ভালো হয়নি।
বোধহয় ফেল করবে।ঠিকই রেজাল্টে এক বিষয় ফেল আসে।খুব মন খারাপ।ছাদে এক কোনে চুপ করে বসে আছে।হঠাৎ সেইদিনের কথা মনে পরে গেলো,কে ভয় দেখিয়েছে।অনেক খোঁজা খুঁজির পর জানতে পারলো,সেদিন সাব্বির জানালায় ধাক্কা দিয়েছিলো।

অর্পা প্রচুর রাগ। চোখে আগুন চলছে।মনে হয় আজ সাব্বির কে মেরেই
ফেলবে।সাব্বির ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এমন সময় টাস টুস করে চারপাচঁটে চড় বসিয়ে দেয় সাব্বিরের গালে।পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে একটা নিস্তব্দ বিরাজ করলো।সাব্বির কিছু বুঝতে পারছে নাহ।অর্পা চুপ করে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে।
সাব্বির পরে সব ঘটনা জানতে পারে।সাব্বিরের প্রচুর খারাপ লাগলো ওর জন্য।সাব্বির অর্পার কাছে ক্ষমা চাইলো।কিন্তু অর্পা ওকে ক্ষমা করেনি।বারবার
ক্ষমা চাইতো ওর কাছে,কিন্তু ও ক্ষমা করতো নাহ।অর্পার কাছে বারবার
ক্ষমা চাওয়া,আর,মাফ না করা ধীরে ধীরে সাব্বিরের কাছে খুব
ভালো লাগতে লেগেছিলো। হয়তো অর্পার প্রতি এক ভালবাসার মায়া সৃষ্টি হলো।

অর্পা যে বিষয়ে ফেল করেছিলো সাব্বির ও
সে বিষয়ে ফেল করলো ইচ্ছে করে।ইদানীং প্রায়
সময় সাব্বিরকে অর্পার বাসার সামনে দেখা যেতো,হাতে নিয়ে সরি'র কার্ড। সাব্বিরের এই কাজগুলো খুব পছন্দের হয়ে গেলো। কলেজের যাওয়ার সময় অর্পার পিছন পিছন যেতো,সরি বলতে বলতে।দুই চারটে রাত অর্পার বাসার সামনে কাঁটিয়ে দেয়।বিভিন্ন মাধ্যমে অর্পাকে সরি বলার চেষ্টা করে সাব্বির।
কলেজে ক্লাস করছে সাব্বির।বন্ধুর কাছ থেকে শুনতে পায় অর্পার বাবা'র আজ অপারেশন
দুই ব্যাগ B- রক্ত লাগবে।স্যারের কাছ থেকে অনুমিত নিয়ে দৌড়ে হাসপাতালে পৌঁছায়।
নিজের রক্তের গ্রুপের সাথে মিলে যাওয়ায় সাব্বির একাই দুই ব্যাগ রক্ত দেয়।আল্লাহর
রহমাতে অর্পার বাবা'র অপারেশন সাকসেসফুল হয়। অর্পার খুশি দেখে সাব্বির সব
ব্যথা ভুলে গেলো, বাসায় চলে এলো।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে অর্পা বাসায়
বসে আছে।নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলো নাহ।
নাক মুখ ধুয়ে এসে আবার দেখলো,না ভুল
দেখছে নাহ, ঠিকই অর্পা বসে আছে।ভিতু গলায়
বললো,
সাব্বির:- অর্পা তুমি।
অর্পা:- তোমাকে ক্ষমা করতে এসেছি।
সাব্বির:- তাহলে ক্ষমা করেছো।
অর্পা:- যাও তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।

ফ্রেন্ড বলে হাত সামনে বাড়িয়ে দেয়।
দুইজন বন্ধু হয়ে গেলো।ভালো ভাবে কলেজ জীবন পাড় করে ইউভার্সিটিতে পা দিলো।সেইম ইউভার্সিটি দুইজন একসাথে চান্স পায়। বন্ধুত্বোটা আরো গভীর হয়ে গেলো। একসাথে ক্লাস করতে যায় একে ওপরের সাথে সবকিছু সেয়ার করতো। ফেইসবুকে মেসেজিং,আর,রাত ভরে ফোনে গল্প করতো দুই বন্ধু।দেখতে দেখতে চারটি বছর পাড় হয়ে গেলো। সাব্বির তার ভালবাসার মানুষটিকে আজও শুনাতে পারে নি,তার ভালবাসার গল্প।

ভার্সিটি শেষ করে,দুইজন জবের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।সাব্বির জবের ভালো অফার
পেয়ে বিদেশে চলে যায়।অর্পা ছোটখাটো একটা জব করে।সাব্বির বিদেশে গিয়েও
অর্পা সাথে ফেইসবুকে কথা বলতো,মেসেজিং করতো,ভয়েস মেসেজ পাঠাতো।সাব্বিরে র কাছে সবচেয়ে প্রিয় কন্ঠ ছিলো, অর্পার।অর্পার ভয়েস মেসেজ
শুনে মাঝেমধ্যে হাসতো,আবার নিজের মনের অজান্তে কাঁদতো।
প্রায় তিনমাস পর
সাব্বিরের ফোন বেজে উঠে তখন ঔখানে রাত।কল
দেয়া ব্যক্তি টি অর্পা।
সাব্বির:- 'হ্যালো' অর্পা।
অর্পা:- হুম আমি!তুই কি সারাদিনই আমার
ফোনের অপেক্ষায় থাকো।ফোন দেয়ার
সাথে সাথে রিসিভ করো।
সাব্বির:- (মনে মনে হ্যাঁ সূচক)।আরে নাহ,
আমি আর তোর ফোনের অপেক্ষায় থাকবো
ইহা অসম্ভব।
অর্পা:- যাইহোক, যে কথার জন্য ফোন দিলাম।
দেশে আসবি কবে?
সাব্বির:- জানি নাহ। কেন?
অর্পা:- দুইএক সপ্তাহের মধ্যে আসতে পারবি।
তোকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।
সাব্বির:- মনে হয় পারবো নাহ।কি সারপ্রাইজ
বল?
অর্পা:- তুই দেশে আসলে বললো।দেখ
আসতে পারো কি না।।
ঠিক আছে,ভালো থাকিস।

সাতদিন পর,
সাব্বিরে কাছে একটা বিয়ের কার্ড আসে। তাতে কনে ছিলো অর্পা,আর,বর ছিলো ইভান।
কার্ড হাতে পেয়ে সাব্বির কয়েকমিনিটের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।তার ভালবাসা তার কাছ থেকে ছুটে যাবে।পরদিন সকালে সে দেশে ফেরে।
দেশে এসেই অর্পার বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে দেখে ধুমধামছে বিয়ের কাজকর্ম
চলছে।সাব্বিরকে দেখে অর্পার খুশি দ্বিগুণ হয়ে গেলো।সাব্বিরের সাথে ইভানের পরিচয় হয়। ইভান এক ব্যাংকে মেনেজার পদে চাকরি, দেখতে ভালো। অর্পা কে দেখে সাব্বির অবাক। অর্পা ইভান কে অনেক ভালবাসে।অর্পা ভীষন খুশি ইভান কে পেয়ে।এই
কথা জানতে পেরে সাব্বিরের চোখের বাঁধ ভেঙে অশ্রু বাইতে লাগলো।নিরবে এক
কোনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো,কারন,তার ভালবাসার মানুষটি আর কখনো তার হবে নাহ।ইভানের সাথে অর্পা খুব ভালো থাকব,সুখে থাকবে এই কথা সাব্বির মনে সারা দিতে লাগলো। অর্পার খুশিতে সাব্বির খুশি। নিজের ভালবাসা লুকিয়ে রেখে, অর্পাকে ইভানের হাতে তুলে দেয়।

এই প্রেমিক
তার ভালবাসার মানুষটিকে সুখি দেখতে চায়
তবেঁ সে যার সাথে থাকুক।