মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১০৪- শেষ বিকেলের পাওয়া

লিখা : Nz Bhuiyan Zaman
-----------------------
বিকেলের সূর্যটা পশ্চিম আকাশের গায়ে হেলান
দিয়ে আছে । সূর্যের আলোটা তাই ক্ষিণ
আভা চড়িয়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে । শীতের
বিকেল হওয়ায় মানব-মানবীদের
আড্ডাটা জমে ওঠে কলেজের ঐই প্রিয় মাঠ টার
এক কোনে অবস্থিত শহীদ মিনারটার প্রাঙ্গণে ।
প্রতিদিন কিছু যান্ত্রিক মানুষের
ব্যস্ততা সেড়ে এই স্তানটা হয়ে উঠে শহরের
সবচেয়ে ব্যস্ত ভালবাসার বিনিময় কেন্দ্র ।
প্রতিদিন শত শত কাব্য রচনাও হয় প্রেমিক-
প্রেমিকা যোগলের কথোপকথনে । তাই এর আর
একটা নাম আছে "প্রেম চত্বর" ! কিছু ব্যস্ত
যান্ত্রিক মানুষের ভীড়ে কিছু কর্মহীন
নাগরিকের উপস্তিতিও লক্ষ্যণীয় । তাদের মধ্যেই
একজন কর্মহীন যুবক "শুভ" । তার কাব্য
রচনা হয় "তন্দ্রা"র সাথে ।
পড়ালেখা শেষ করে প্রতিদিন রাতে একটা কিছু
করার স্বপ্ন দেখে যার ঘুম হয়, সকালটা হয়
একবুক আশা নিয়ে । আবার দিনশেষে স্বপ্ন ভঙ্গের
কষ্ট নিয়ে ঘরে ফেরা ।রাতে আবার সেই
ভাঙ্গাটা মিলাতে না মিলাতেই
সকালটা আসে ।
টিউশনির সামান্য অর্থ দিয়ে তার বেকার
জীবনটা চলতে থাকলেও ভবিষত্ নিয়ে তার
অনেক দুশ্চিন্তায় সে । তাই বিভিন্ন ইন্টারভিউ
বোর্ডে তাকে প্রায়ই দেখা যায় ।
ছেলেটা পড়ালেখায় ভাল ছিল কিন্তু আজকাল
মামার জোর না থাকার
কারণে প্রতিটা বাইভা বোর্ড
থেকে তাকে বিদায়ী বাক্যটাই শুনতে হয় । এই
পর্যন্ত কতটা বোর্ডে যে সাক্ষাতকার
দেওয়া হয়েছে সে সংখ্যাটাই ভূলেই গেছে ।
আজও একটা বাইভা বোর্ড
থেকে উঠে এসেছে সে ! শহীদ মিনারটার পশ্চিম
কিনারায় বসে চিন্তারত শুভ ! একটু পরে তার
রেজাল্ট দিবে । মোবাইলটা বেজে উঠলো তন্দ্রার
ফোন । রিসিভ করলো !
-কোথায় আছ ?
~প্রেম চত্তরে ।
-তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে !
তুমি থাকো আমি আসছি । এই বলে ফোনটা কেটে দেয়
তন্দ্রা ।
শহরের একটা শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে তন্দ্রা ।
একই ক্লাসে পড়ার সুবাধে তাদের
পরিচয়টা অনেক দিনের । কিন্তু প্রেম করার
সময়টা বেশী দিন হয়নি । তাদের সম্পর্ক মাত্র
ছ'মাস পেরোল ।
প্রথম দিনের পরিচয়েই তন্দ্রাকে শুভর অনেক ভাল
লেগে যায় । বেচারা তার জন্য
হৃদয়ে একটা ভালবাসার পাহাড় গড়ে তোলে ।
কিন্তু মুখফোঁটে কোনদিন বলতে পারতোনা ।
তন্দ্রাকে দেখলেই কেমন নার্ভাস ফিল করত শুভ ।
অনেকদিন যাবত্ শুভর এরুপ আচরণে তন্দ্রাও
বুঝে যায় যে শুভ তাকে ভালবাসার কথা ।
তখন থেকে তন্দ্রা শুভকে অনেক সুযোগ দিত
ভাললাগার কথাটা বলে দেওয়ার জন্য । কিন্তু
শুভ কোনদিন বলতে পারেনি ।
একদিন তন্দ্রা শুভকে একা ডাকল !
-এই শুভ তুমি কি কারো প্রেমে পড়েছ ?
শুভর মুখটা তখন লজ্জায় লাল হয়ে যায় ।
বেচারা উত্তর দেয় !
~তোমার প্রেমে পড়েছি !
তন্দ্রা শুভর লজ্জাটা ভাঙ্গানোর জন্য সহজ
ভাবেই কথাগুলো বলতে থাকল ।
- তো এতদিন বলনি কেন ?
~জানিনা ।
শুভ একটা অভ্যাস ছিল সে মেয়েদের সামনে কোন
কথা বলতে পারতোনা । আবার ফোনে সে অনেক
গুছিয়ে কথা বলতে পারে ।
সেই মুহুর্তে আর কথা হয়নি । রাতে ফোনে তাদের
ভাললাগার অনেক কথাবার্তা হয় ।
সেদিন থেকে চলতে থাকে শুভ আর তন্দ্রা যোগলের
প্রেমকাব্য রচনা ।
-কি তোমার মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন ?
~বাসা থেকে খুব চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য !
কিছুটা নিচুস্বরে উত্তর দেয় তন্দ্রা । আজ
না একটা ইন্টারভিউ ছিল কেমন দিলে ?
-হুম ভালোই দিয়েছি ! প্রত্যেক বারই তো ভাল দিই
কিন্তু কখনো রেজাল্ট তো ভাল হয়না ।
~ওকে এবার হয়ে যাবে ।
একটা চিন্তা উতপেতে আছে তন্দ্রার চোঁখে মুখে ।
কিন্তু শুভ কষ্ট পাবে ভেবে তন্দ্রা কোনদিন
মুখফোঁটে বলেনি ।
-খুব বেশী চাপ দিচ্ছে ?
তাহলে বিয়েতে রাজী হয়ে যাও ।
~ছিঃ শুভ তুমি আমাকে এইরকম ভাবলে । তুমি কষ্ট
পাবে বলে আমি তোমাকে চাপ দেয়নি । প্রতিদিন
আমাকে বিয়ের জন্য এনেক কথা শুনতে হয় ।অনেক
অভিমানে কথাগুলো বলে কাঁদতে লাগল তন্দ্রা ।
শুভ মুখটা নিচু করে নিরব হয়ে থাকল । কিছুই
বুজে উঠতে পারছেনা কি করবে ? আর
মিছে আশা দিয়েই কি লাভ ? কোন দিন ঘোষ
ছাড়াও তো চাকরি টা হবেনা ।
তন্দ্রা অনেক
অভিমানে ব্যগটা নিয়ে চলে যেতে লাগল । শুভ শুধু
চোঁখ মেলে থাকিয়ে আছে তন্দ্রার চলে যাওয়ার
পথ পানে । একটা কথাও বলল না । চোঁখ
দিয়ে অনরবত অশ্রু ঝরতে লাগল ।
সেই সময় ফোনটা বেজে উঠলো ! অনিচ্ছা সত্ত্বেও
ফোনটা রিসিভ করলো ।
-হ্যালো !
~শুভ সাহেব বলছেন ?
-জ্বি বলুন !
~কনগ্রেচুলেশন আপনি সিনিয়র অফিসার
পদে নির্বাচিত হয়েছেন । আপনি আগামীকাল
আমাদের
অফিসে এসে জয়েনিং লেটারটা নিয়ে যাবেন ।
~ওকে থ্যাংকস এলট ।
চোঁখে-মুখে রাজ্য জয়ের
আনন্দে আত্নহারা হয়ে দৌড় দেয় তন্দ্রার পিছনে ।
হাঁপাতে হাঁপাতে তন্দ্রার
পথটা আটকে দেয় । কোথায় যাচ্ছ ?
তোমাকে আমি যেতে দেবনা এসো .. !
তখনো অভিমানটা ভাঙ্গেনি তন্দ্রার ।
আমি চাকরিটা পেয়ে গেছি ! শুভর কথা শুনে
তন্দ্রা খুশীতে জড়িয়ে ধরে শুভকে ।
চল প্রেম চত্তরে ।এখনতো আর বাধা নেই প্রেম
করতে ! একটা হাসিমাখা মুখ নিয়ে বলে শুভ ।
মনে একটা আনন্দ
নিরবে মাথা ঝাকাতে লাগল তন্দ্রা । আর শুভ
খুশীতে গাইতে থাকে "চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি তন্দ্রা সত্যি ;
এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা ।
সম্মন্ধটা এইবার তুমি বেচতে দিতে পারো ,
মাকে বলে দাও বিয়ে তুমি করছোনা" ।
শেষ বিকেলের আলোটার সেদিন এর
চেয়ে বেশী পাওয়ার আর কিছুই ছিলনা তাদের ।