মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৮৫- মায়াবী আঁখি

লেখা - মহাকালের সৈনিক


>শাহেদ ,তুমি পারবে না আমার
অঞ্জলিকে দেখে রাখতে ?
পারবে না তাকে আমার মত
করে গড়ে তুলতে !
>লক্ষীসোনা , প্লিজ এসব বলে না ।
তোমার কিচ্ছু হবে না ।একটু ধৈর্য্য
ধরো...
>আমাকে কেন মিথ্যে আশ্বাস
দিচ্ছো তুমি ?
>না ,দেখো তোমার কিচ্ছু হবে না ।
>শাহেদ ,আমি মারা যাওয়ার পর
তুমি অঞ্জলিকে মানুষ করার জন্য অন্তত
একটা বিয়ে করো ।আমি জানি আমার
জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে তোমার
অনেক কষ্ট হবে ।তবু কি করার আছে বলো !
আমার কি ইচ্ছে হচ্ছে তোমাদের
ছেড়ে চলে যেতে ?
>না ,আমি এ কিছুতেই পারবো না ।
>পারতে তোমাকে হবেই মানিক ।
আমি জানি কষ্ট হলেও
তুমি পারবে শাহেদ ।তবে লক্ষ্য
রেখো আমার অঞ্জলির যেন কোন
অসুবিধা না হয়...
>হুম ,এবার একটু শান্ত হও ।
>শাহেদ একটা কথা রাখবে ?
>কি সোনা ,বলো...
>আমার না খুব খেজুরের গুড়
খেতে ইচ্ছে করছে ,একটু খেজুরের গুড়
খাওয়াবা ?
>আচ্ছা ,আমি দোকানে যাচ্ছি আর
আসছি ।অঞ্জলি ,তাসনিম আর বাবা মার
সাথে থাকো তুমি ,আমি আসছি...
.
শাহেদ দরজায় অপেক্ষারত
সকলকে ভিতরে যেতে বলে বেরিয়ে পড়লো খেজুরের
গুড়ের উদ্দেশ্যে ।রাত
বাজে তিনটা ,সে জানে এখন কোথাও
খেজুরের গুড় পাওয়া যাবে না ।তবু
সে মৃত্যু পথযাত্রী স্ত্রীর জন্য এক
টুকরো খেজুরের গুড়ের
উদ্দেশ্যে হন্যে হয়ে ছুটতে লাগলো....
.
.
¤¤¤আজকের দিন সহ সাতাশ মাস বার
দিনের বৈবাহিক সম্পর্ক শাহেদ আর
নোভার ।তাদের সংসারে আরও দুজন
সদস্য আছে ।একজন অঞ্জলি ,শাহেদ আর
নোভার সফল বিক্রিয়ার ফসল ।আর এক জন
তাসনিম ,নোভার ছোট বোন ।তাসনিম
ভার্সিটিতে পড়ে ।থাকে শাহেদদের
বাসাতেই কারণ শাহেদের শশুড়
বাড়ি খুলনা ।তাছাড়া শাহেদের আপন
কেউ নেই ।শাহেদের আপন বলতে সবাই
তার শশুড় বাড়ির লোকজন
কেননা নিজের পরিবারের সবাই
যে যার মত
করে চলে গিয়েছে পরপারে....
.
.
নোভাও হয়ত চলে যাবে না ফেরার
দেশে ।কারণ নোভার
মরণব্যাধি ক্যান্সার হয়েছে ।
প্রথমে কেউ বুঝতে না পারলেও সেই
রোগটা ঠিকই সবার অন্তরালে নোভার
শরীরে বিস্তার লাভ করেছে ।যেদিন
সবাই বুঝতে পারলো সেদিন অনেক
দেরি হয়ে গিয়েছে....
.
.
¤¤¤শীতের রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির
মাঝে ছুটে চলেছে শাহেদ ।কোথাও
কোন দোকানপাট খোলা নেই ।এক
টুকরো খেজুরের গুড়ের আশায়
হাসপাতালের আশেপাশের
প্রতিটি রাস্তায় দৌড়াচ্ছে সে...
অবশেষে একটা দোকানে খেজুরের গুড়
পেলো ।তা নিয়ে পাগলের মত
দৌড়াচ্ছে আর মনে মনে বলে চলেছে ~
হে আল্লাহ ।তুমি দয়াময় ।
আমি জানি আমার স্ত্রী আর
বাঁচবে না ।তবু আমাকে তার শেষ
ইচ্ছেটা পূরণ করার সুযোগ দেও....
.
.
¤¤¤হাসপাতালে পৌছে দেখলো তার
স্ত্রী এখনও বেঁচে আছে...তবে যায় যায়
অবস্থা ।শাহেদ দৌড়ে গিয়ে এক
টুকরো খেজুরের গুড় পরম যত্নে তার স্ত্রীর
মুখে তুলে দিল...
কিছুক্ষণ পর নোভা সত্যিই এই পৃথিবীর
সকল মায়া ত্যাগ করে চলে গেল এই
পৃথিবী থেকে..
.
.
.
¤¤¤নোভা মারা যাওয়ার পর
থেকে তাসনিম আর তাসনিমের
বাবা মা তথা শাহেদের শশুড়
শাশুড়ি থাকে শাহেদদের বাসায় ।
তাসনিমকে আম্মু বলে ডাকে ১৫ মাসের
ছোট্ট অঞ্জলি ।ছোট বলে কেউ
তাকে বাধাও দেয় না...
.
নোভার বাবা মা নানাভাবে অনুরোধ
করতো শাহেদকে বিয়ে করার জন্য তবু
শাহেদের একমত ।সে নোভার জায়গায়
অন্য কাউকে বসাতে পারবে না ।
তাসনিমও বলতো তার দুলাভাইকে ।
কিন্তু রাজি হতো না শাহেদ...
তেমনই একদিন..
>দুলাভাই ,আমারও তো বয়স
হয়েছে নাকি !
>হুম ।হয়েছে তো ।তবে কি হয়েছে ।
>না মানে আমারও
তো বিয়ে শাদী করতে হবে নাকি ।
আপনার দেখাশোনার জন্য
তো কাউকে না কাউকে দরকার আপনার
।এভাবে আর কতদিন....
>আমার চিন্তা আমি করবো ।তোমার এসব
নিয়ে চিন্তা করতে হবে না...
>কিন্তু অঞ্জলি ?অঞ্জলির কি হবে !
>সে আমি দেখে নিবো...
>দুলাভাই ,আমি কি নোভা আপুর
চেয়ে খুব খারাপ ?
আমাকে কি নোভা আপুর জায়গায়
আপনি নিতে পারেন না ?
....তাসনিমের দিকে কিছুক্ষণ
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো শাহেদ ।
তারপর...তারপর ঠাস করে একটা চড়
বসিয়ে দিলো তাসনিমের গালে....
.
.
¤¤¤চড় খাওয়ার পর থেকে কেমন যেন
পাল্টে গেল তাসনিম ।শাহেদের
সাথে কথা বলে না তবে কিভাবে যেন
তাসনিমের ডাগর
ডাগর ,মায়াবী দুটি চোখ দিয়ে করুণ
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার
দুলাভাইয়ের দিকে ।শাহেদও
বুঝতে পারে কিন্তু সে চায়
না তাসনিমের মায়াবী আঁখির
মাঝে আটকে পড়তে...
.
.
.
***চোখ শরীরের এমন একটি অঙ্গ যে অঙ্গ
দিয়ে শরীরের এবং মনের সকল কিছু
প্রকাশ করা যায় ।এই চোখের মায়ায়
যে একবার পড়ে সে কোনদিন এ
মায়া কাটিয়ে উঠতে পারে না ।
প্রেমে মানুষ একবারই পড়ে তবে হুমায়ন
আহমেদের মতে ,মানুষের
জীবনে প্রতিটি প্রেমই তার কাছে নতুন
প্রেম ।সত্যিই তাই ,কারণ কেউ তার
পুরনো প্রেমের কথা স্বীকার
করে না নতুন প্রেমে পড়ার পর ।কিন্তু
চোখের মায়ায় যে একবার পড়ে ,
সে সারাজীবন সেই চোখের
গভীরতা দড়ি দিয়ে মেপেও শেষ
করতে পারে না ।হারিয়ে যায়
সে চোখের মায়ার মহাসাগরে...
.
.
¤¤¤ছাদে দোলনায় বসে আছে শাহেদ ।
তাসনিমের অনিন্দ্য সুন্দর চোখের
মায়ায় সে হয়ত
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে ।
আগে কোনদিন তাসনিমের চোখের
ভাষা বুঝতে পারতো না সে কারণ
কারও চোখকে বোঝার জন্য চোখের মত
চোখ থাকতে হয়...আজ পারছে শাহেদ ।
হ্যা সে তাসনিমের
মায়াবী আঁখিযুগলে হারিয়ে গিয়েছে...
.
.
শাহেদ যখন দোলনায় দোল খাচ্ছিল তখন
সে স্পষ্ট দেখতে পেলো তার
সামনে দাড়িয়ে আছে নোভা ।
সে বলছে...
>আমি জানি তাসনিমের চোখের
মাঝে তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছো ।
আমিও চাই
তুমি তাসনিমকে বিয়ে করো ।
আমি নিশ্চিত আমার পর কেউ
তোমাকে ভালবাসলে সে এই তাসনিম
।আর তাসনিমের কাছেই
অঞ্জলি সবচাইতে নিরাপদ ।ভাল
থাকো তোমরা ,আমি চললাম...
হঠাৎ যেভাবে এলো সেভাবেই হঠাৎই
বাতাসে মিলিয়ে গেল নোভা ।অনেক
ডাকলো শাহেদ তবুও আর সাড়া দিল
না নোভা...
.
.
.
¤¤¤ফোনে...
~তাসনিম ,একটু ছাদে আসো তো...
~কেন কোন সমস্যা ,দুলাভাই ?
~আসো আগে..
.
দু মিনিট পর ,ছাদে :
.
~দুলাভাই কি হয়েছে ?
~তাসনিম ,তোমার
মায়াবী আঁখিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি আমি ।
তোমার ঐ
চোখদুটোতে আমি নোভাকে ,নোভার
ভালবাসাকে খুঁজে পেয়েছি আমি....
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই তাসনিম
জড়িয়ে ধরলো শাহেদকে ।তারার
দেশে যেখানে নোভার অবস্থান
সেখানে শাহেদ দেখতে পেলো সকল
তারা তাদের এই মায়াবী আঁখির
বন্ধনটা মিটমিট করে স্বাগত
জানাচ্ছে....