লিখা: বিস্কুট পাগলা (ধূসর কাব্য)
-বাবা চল।দেরি হয়ে যাচ্ছে যে।
-আসছি দাড়া।
-জলদি জলদি জলদি করো বাবা
-এই নে চল চল।
-কত দেরি করে ফেললে তুমি দেখেছো!আজ রিকশা পাব কি কোরে বলোতো!
-চল চল এগোই।
-এখনতো বোলবেই চল্৷আগে বেরুলে কি হোতো?
-আচ্ছা ভুল হয়েছে যা।এবার চল।
রিয়া আর তার বাবা!বাবা আর মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ত্বপূর্নো সম্পর্কো।রিয়া মেয়েটা কিছুটা ক্লাসি৷রিয়ার মা নেই।মারা গেছেন রিয়া যখন সেই ছট্টোটি।রিয়াকে তার বাবা একাই মানুষ করেছেন।আজ রিয়ার ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা।বাবা তাকে নিয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষার হলে।বাবা এক্তু দেরি করে ফেলেছেন জন্যে রিয়াতো রেগে একেবারে যেনো আগুন।রিয়া রাগটা খুব ভাল করতে পারে।তার বাবা অনেক বড়লোক।তাদের কোন অভাব নেই।রিয়ার কোনো চাহিদা বাবা হিসেবে কখোন অপুর্ন রাখেননি রিয়ার বাবা।বলতে গেলে তারা অনেক সুখেই আছে।
-বাবা এবার তুমি আমাকে নিয়ে যাবা পরিক্ষার হলে।আমি কিছু জানিনা।যেভাবে পার নিয়ে যাবা।
-আহারে পাগলী ঘড়ি দেখ আরো প্রায় ৪৫ মিনিট আছে।চল এগোই।
-এই বাবা দারাও দারাও একটু!
-কেনোরে কি হল?
-ওইদিকটায় একবার দেখ বাবা তাকিয়ে!
-কি ওখানে?
-আহা একবার দেখোইতো চেয়ে।
-কোথায় কি!
-দেখ ওখানে ছোট একটা বড়ালেয় বাচ্চা ব্যাথা পেয়ে পড়ে আছে!
রিয়া ক্লাসি মেয়ে হলেও তার মাঝে দয়া মায়া আছে অনেক।পশু পাখিদের প্রতি তার অনেক মমতা।ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাবার সময় রাস্তায় একটি ছোট বিড়ালের বাচ্চা পড়ে থাকতে দেখে রিয়া।বাচ্চাটা ব্যাথায় খুব ডাকাডাকি করছিলো।রাস্তার ডান পাশে বাচ্চাটা ছিলো আর বাম পাশে ছিল বাচ্চাটির মা।মা বিড়ালটা যানবাহনের জন্য বাচ্চাটাকে দেখতে পাচ্ছিলো না।খুব চেষ্টা করছিলো রাস্তার ওপারে যেতে।কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছিলো।তারপর একবার অনেক কস্টে রাস্তা পার হতে পারলো সে।পার হয়ে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে তার জিভ দিয়ে বাচ্চাটিকে আদর করতে লাগলো।রিয়া এগুলো খেয়াল করছিলো কারন তারা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলো।রিয়া তার বাবার কথা শোনার পর প্রতিবাদ করে উঠলো।
-তাতে আমার কি মানে?বাবা ও একটা ছোটো প্রানি!ব্যথা পেয়ে পরে আছে!মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য ওকে সাহায্য করা!
-কি বলছিস এসব।আজ তোর পরীক্ষা তুই কি ভুলে গেছিস?
-না বাবা।ভুলিনি।সংগে এটাও ভুলিনি যে আমি মানুষ।আমার বিবেক আমাকে বলছে বাচ্চাতাকে এবার সাহায্য করতে৷আর আমি তা করবো৷
-তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি।মাথা কি থিকাছে তোর?উল্টোপাল্টা বকিসনা৷
-বাবা তুমি জানো আমি ভুল কিছু করছি না৷আমার পরীক্ষা থেকে একটি প্রাণ আগে৷
-তুই এসব কি বলছিস?
-দেখো বাবা তুমি আমাক হেল্প করলে করো নোইলে আমাকে আমার কাজ করতে বাধা দিয়োনা
-আর তোর পরীক্ষা?
-বাবা মিস হলে নাহয় এই একটা ভার্সিটি মিস হবে।আরো তো পরীক্ষা আছে নাকি
-তোর মতো মেয়ে আমি কখনো দেখিনি।তুই কেনো এমোন করিস?
-পরে কথা বলার সময় পাব।আগে বিড়ালটাকে বাঁচাই
এ কথা বলে রিয়া বিড়ালের বাচ্চাটির কাছে যায়।বাচ্চাটির মা ভয় পেয়ে একটু দুরে গিয়ে ডাকতে থাকে।মা বিড়ালটির সংগে আরো একটি ছোটো বাচ্চা ছিল।ওই ছোটো বাচ্চাটি আহত বাচ্চাটির গা ঘেষে বসে থাকে।রিয়া কে দেখে অনেক জোরে ডাকতে থাকে।রিয়ার অনেক মায়া হয়।চোখে তার পানি এসে যায়।পরম মমতায় রিয়া আহত বাচ্চাটিকে হাতে তুলে নেয়।বাচ্চাটি খুব ছোটো ছিল।পেছনের পা অনেকটুকু ছিলে গেছে বাচ্চাটির।রক্ত পরছে।রিয়া তার ওরনার কাপড় সামান্য ছিড়ে বাচ্চাটির পায়ে বেধে দিলো যেন রক্ত পরা বন্ধ হয়ে যায়।আশেপাশের কয়েকজন মানুষ দাড়িয়ে দেখছে এসব।কেও কেও রিয়াকে পাগল বলছে।সব শুনছে রিয়া।কিন্তু কিছু বলছেনা।বাচ্চাটির কথাই ভাবছে রিয়া।বাচ্চাটিকে নিয়ে দ্রুতো পশু হাসপাতালে চলে গেল সে!রিয়ার বাবা দাড়িয়ে রইলেন সেখানেই৷তারও এবার টনক নড়লো৷মেয়ের কাজে হঠাৎ গর্ববোধ হতে লাগল তার৷
এবার রিয়ার বাবা মুখ খুললেন তাদের বিরুদ্ধে যারা তার মেয়েটিকে এতখন পাগল বলছিল।মেয়ের এমোন কাজে গর্বিত বাবা মেয়ের অপমানের কড়া জবাব দিলেন এবার।
-ভাই একবার শুনুন?
-জি বলুন?
-ওই মেয়েতাকে পাগল বললেন কেন ভাই?
-আরে মিয় পাগলই তো ঐ মেয়ে।একটা বিড়ালের বাচ্চার জন্য পরীক্ষা বাদ দিলো।পাগল নাতো কি?
- যদি ও পাগল হয় তাহলে এমন পাগল এ দুনিয়ায় দরকার।
-কেন ভাই?
-কারন এই পাগল মেয়েটার কাছে শুধু মানুষর না পশুর প্রানের ও অনেক দাম আছে।একবীর ভেবে দেখুন ভাই!আজ আপনিও অই ছোটো বিড়ালটার যায়গায় থাকতে পারতেন।আল্লাহ আপনাকে মানুষ বানিয়েছেন তার জন্য আপনি শুকরিঅ আদায় করুন ভাই।আল্লাহর সকল সৃষ্টিকেই ভালোবাসতে হয় ভাই।একটু আগে যে মেয়েটাকে পাগল বললেন এখন ভেবে দেখুনতো আপনি কি ঠিক করলেন কাজটা?ভাবুনতো মেয়েতা কতটা ভালো যে নিজের পরীক্ষা রেখে একটা ছোটো প্রানিকে হেল্প করতে গেল।মেয়েটার মনুষত্ত্ব দেখুন।নিজেকে প্রশ্ন করুন ভাই।
-আপনি ঠিক বলেছেন ভাই।আপনার কথা শুনে আমার চোখ খুলে গেছে ভাই৷
-দেখুন ভাই ওর মতন যদি প্রতিটি মানুষ হতো তাহলে কিন্তু পৃথিবীটাই বদলে যেত।
-হ্যা ভাই!
রিয়ার বাবাও এবার হাসপাতালে চলে যান৷
গিয়ে দেখেন তার মেয়ে বিড়ালটির সাথে খেলছে।উনি আসার আগের আরকটি বিড়ালকে নিয়ে আসেন।পরে রিয়ার কাছে গিয়ে বিড়াল দুটি দিয়ে বলেন-
-তুই মেয়ে হয়ে আজ আমাকে অনেক কিছু শিখালিরে মা।এই বিড়ালিকেও নিয়ে এলাম।আমরা এই দুটি বিড়াল পালবো।এদের নিয়ে খেলবো।
-তাই বাবা?সত্যি?
-সত্যিরে মা।
রিয়া প্রচন্ড খুশি হয়েছিল সেদিন।খুশি হয়েছিল একটি প্রাণ বাঁচাতে পেরে৷
আজ রিয়া ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ৩য় বর্ষে পড়ছে।বেড়াল দুটি আজও আছে তার কাছে।একটির নাম দিয়েছে জ্যাক অন্যটির নাম জন।বেড়ালুটি আজও তার সাথে খেলা করে।
রিয়ার মত মেয়ে আসলেই সমাজে খুব দরকীর।যারা আমাদের সবাইকে প্রানের গুরুত্ত্ব বুঝিয়ে একটি শিক্ষা দেবে।মনুষত্ত্বের শিক্ষা...