মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১২৮- মধ্যদুপুরের ভালবাসা

লিখাঃ - ছায়া মানব

আক্ষরিক অরথে আমি এতিম,,,,,,,যখন আমি বেশ ছোট তখন আমার
বাবা মা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর থেকেই আমি কাকা কাকির
দায়িত্বএ মানুষ হচ্ছি।অবশ্য বাবা মা থাকাকালীন ও
আমরা একসাথে যোউথ পরিবার হিসেবে বাস করতাম। যাই হোক এখন
বাড়িতে থাকি আমি,কাকা- কাকী,দুই কাকাত ভাই আর রাত্রি।
রাত্রি ও আমার কাকাত বোন কিন্তু একটু স্পেশাল।আসলে ঠিক
রাত্রি আমার জন্য স্পেশাল না, আমি রাত্রির জন্য স্পেশাল।
আমি নীল আর ও রাত্রি, দুইজন মিলে নীল রাত্রি। এজন্যই
হয়তো রাত্রি ওর প্রতিটি রাতকেই নীল বালবের আলোতে রাঙিয়ে নিত।
কখনো কখনো তো বাড়ির বাইরে নীল স্পটল্যম্প জালানোর মত পাগলামিও
করত।আর আত্মকেন্দ্রিক আমি হাইপাওয়ারের বালব দিয়ে রাতকে দিনে পরিণত
করে বইয়ের মধ্যে মুখ গুজে বসে থাকতাম।আমি সবসময় ই আত্মকেন্দ্রিক ছিলাম, কিন্তু কখনই একা ছিলাম না।আমার প্রচুর বন্ধু ছিল,কিন্তু কখনই কোন বন্ধুর জন্য একটুও
ভালবাসা বা মায়া অনুভব করিনি। সবাই ছিল আমার কাছে শুধুই প্রয়োজন
মেটানোর যন্ত্রের মত। আর কোন এক অজানা কারণে আমি রাত্রিকে কষ্ট
দিয়ে খুবই আনন্দ পেতাম। হয়তোবা আমার দেয়া কষ্টগুলো ওর
বুকেই সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ করত বলে,অথবা এটাই ছিল আমার পক্ষ থেকে ওর ভালোবাসার প্রতিদান।
-এই নীল
=হমমম
-এইইইইইইইইই
=কিইইই বল
-এইদিকে তাকা
=পারব না
-কেন পারবিনা??
=এমনি,,,তোকে দেখতে ইচ্ছা করেনা ,,যা এখান থেকে।।।
-তুই সবসময় আমার সাথে এইরকম করিস ক্যন??
=দেখ রাত্রি আমি জানি তুই কিজন্য এসেছিস???
-সত্যি জানিস??? তাহলে তারাতারি রেডি হয়ে নে, আমি তোর ব্যগ গুছিয়ে দিচ্ছি।আর হ্য,তুই যখন ড্রাইভ করবি আমি কিন্তু তোর পাশের
সিটে বসব,তুই কিন্তু গতবারের মত তোর পাশের সিট তোর জিনিসপত্র
দিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারবিনা,,, প্লিইইইজজজ,,,,ওকে??
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসএ বলে ফেলল রাত্রি। ওর কন্ঠে আনন্দ ও উত্তেজনা দুটোই
বাড়াবাড়ি রকমে বিদ্যমান।
=দেখ,,,,আমি যাবোনা,তোরা যা। মূহুরতেই ও যেন হটাত নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
-কেন??
=তুই যাবি তাই,তোর সাথে কোথাও যেতে ইচ্ছা করেনা। রাত্রি আর কোন কথা বলল না।
নিঃশব্দে বের হয়ে গেল রুম থেকে। একটুপরে আমি উঠলাম,ব্যগ
গোছালাম,রেডি হলাম এবং একপর্যায়ে শুনতে পেলাম,,,,
রাত্রি অসুস্থ ও যেতে পারবেনা।আমার ঠোঁটের কোণে বাকাহাসির
রেখা ফূটে উঠল। অবশেষে আমরা চারজন যাচ্ছি। আমি কাকা আর দুই কাকাত ভাই।
যাচ্ছি দূরগাপূর।ওইখানে আমাদের এক ফ্যাক্টরিতে কিছুটা গোলমাল
হচ্ছে। কাকা আর কাকাত ভাইরা যাচ্ছে সমস্যা সঅমাধানের
জন্য আর আমি যাচ্ছি নতুন যায়গা উপভোগ করতে। কাজকর্ম শেষ করে সন্ধ্যার একটু
পরে ফেরার জন্য রওনা হলাম।এখন আমাদের সাথে কোম্পানির রাজু
নামের এক কর্মচারী কে ও নেওয়া হল। এই ব্যটাই ছিল ঝামেলার গোরা।তাই
একে ট্রেনিং এর নাম করে কিছুদিনের জন্য অন্যত্র
পাঠিয়ে দেওয়াই প্ল্যন।প্ল্যনটা অবশ্য আমারই। জনমানবহীন রাস্তায় আমাদের গারিটা থেমে গেল,,,,তেল শেষ। মাত্র দুই কিলোমিটার আগে পাম্প দেখে এসেছি।সেখান থেকে তেল
না নেয়ার জন্য যথারীতি ঝারি খেলাম আর ভুলের
মাশুল হিসেবে গারিতে থাকা সাইকেল নিয়ে নিজেই বেরিয়ে পরলাম তেল
আনতে। একটুপরে রাস্তা যেখানে মোর নিয়েছে সেখানে মোর ঘুরার পর আমি সাইকেল থেকে নামলাম। তারপর রাস্তার নিচ দিয়ে আবার আমাদের গাড়ির কাছে চলে এলাম। রাস্তার পাশের একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড়ালাম। আমার চোখের
সামনেই রাজু তার কাজ সম্পন্ন করল। তারপর গাড়িতে বসে আয়েশ
করে সিগারেট ধরাল।আমি পকেট থেকে পিস্তলটা বের করলাম।পরপর
দুইটা গুলি করলাম।রাজু রাস্তায় পরে গেল।আমি ঝোপের আড়াল
থেকে বের হলাম।কাকা ও ভাইদের লাশগুলো গাড়ির
পেছনে শুইয়ে দিলাম।তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট
করলাম।হটাত আমার মনে একটা চিন্তা এল।
আমি রাত্রিকে ভালোবাসি আর নাই বাসি,রাত্রি অসম্ভব রকম সুন্দরী।
আর বিয়ে যখন কাওকে না কাওকে করতেই হবে অতএব,,,,,,,,,।কিন্তু রিফাত
তো মনে হয় বাড়ির বাকি কাজটুকুও শুরু করে দিয়েছে।যে করেই হোক
রাত্রিকে বাঁচাতে হবে। আমি এক্সেলেটরে চাপ বাড়ালাম। বাড়ি আর বেশি দূরে ছিল
না,তারাতারিই পোউছে গেলাম। বাড়িতে ঢুকে দরজার কাছেই
রিফাতকে পেয়ে গেলাম।এক মূহুরত দেরি না করে শেষ করে দিলাম।
কিন্তু তারপর বুঝলাম একটু বেশিই তারাতারি করে ফেলেছি।রিফাত
কাকীর দিকে টার্গেট করেছিল ঠিকই কিন্তু কাজটা শেষ
করতে পারেনি।কি আর করা আমাকেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ
করতে হল।ট্রিগার টানার সময় আমার হাত একবারো কাঁপেনি,বরং সকল
সম্পত্তির মালিক হয়ে যে বিএমডাব্লিউ কিনব সেই স্বপ্নে বিভোর ছিলাম।রাত্রিও
ততক্ষনে চলে এসেছিল।এবং এই দৃশ্য দেখে এতদিনের
মায়া কাটিয়ে হিংস্রভাবে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল।পাগল
মেয়ে,শুধু শুধুই মরার আগে আমার কাপড়েও রক্ত লাগিয়ে গেল।।।।।
তারপর অনেকদিন চলে গেছে।।। টাকার জোরে পুরোঘটনাকে পরিবারের
ওপর আততায়ীর হামলা বলে চালিয়ে দিয়েছি।। উচ্চশীক্ষা নিয়ে দেশের প্রখ্যাত মানুষদের লিস্টে নাম লিখিয়েছি।। প্রায় পুরোটা জীবন নিঃসঙ্গ কাটিয়ে অবশেষে এক বর্ষণমুখর
অন্ধকার সন্ধ্যায় আবার এই বাড়িতে ফিরে এসেছি।।।।।।।।।।
**************************************
মধ্যদুপুর একটা খুবই বাজে সময়।এই সময় কারণ ছাড়াই বিষণ্ণতা ভর করে।কঠিন
থেকে কঠিনতম মানুষের মনও এই সময় কোমল হয়ে ওঠে।এইরকম এক
বাজে সময়ে আমি রাত্রির একটি সাদাকালো ছবি নিয়ে
বসেছি। রাত্রি ওর রাতগুলোকে নীল বানাতে পারছিল কিনা জানিনা, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে আমার দিনগুলোকে ও ঠিকই রাত এ পরিণত করে দিয়ে গেছে।আজ হটাতকরে খুব
কান্না করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় দিলাম না।সবার সব
ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিতে নেই।আজ হটাতই মনে হচ্ছে আমি মনে হয়
রাত্রিকে ভালোবাসি। এইটাকে আসলে ঠিক ভালোবাসা বলা যায় না, এটা হল
মধ্যদুপুরের ভালোবাসা।যখন মধ্যদুপুর থাকবেনা তখন এই ভালোবাসাও
থাকবে না।.