লিখা:- রুপকথার মেঘবালক
কি হলো? এখনো ঘুম থেকে উঠলে না?
তাড়াতাড়ি উঠো....
.
এই মেয়েটির যন্ত্রণায় সকাল বেলায় একটু
শান্তিতে ঘুমানো দায়। খালি চিৎকার
চেঁচামেচি। বিরক্ত হয়ে চোখ
খুলে তাকালো অভি। মেয়েটি আর কেউ
নয় অভির বিয়ে করা বউ তিথি। তাদের
বিয়ে হয়েছে দু' মাস হলো। তিন বছরের
প্রেমের পর বিয়ে।
.
*** তিথির সাথে অভির সম্পর্কটা একটু
ভিন্ন ভাবেই শুরু হয়েছিল। অভির
ছাত্রী ছিল তিথি। ভাবনার মধ্যে সেই
অতীতে ফিরে গেল অভি......।
.
আজকাল তিথির স্বভাবে কেমন
জানি পরিবর্তন আসছে।
কারণে অকারণে অভিকে ফোন দেয়।
পড়া দেখে নেওয়ার নামে ছুয়ে দেয়।
অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে। অভি এসব
দেখে কিছু একটা আন্দাজ
করতে পারছিল। কিন্তু সে নির্বাক
হয়ে দেখছিল কি ঘটে!!
.
: আচ্ছা স্যার, আপনি কি কাউকে পছন্দ
করেন?
.
অভি কিছুটা থতমত খেয়ে বলল, " কেন?"
: স্যার, বলেন না.......
-- চুপ করো। খালি আজেবাজে কথা।( ধমক
দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় অভি)
.
একটু পরে তিথি আবার শুরু করে......
: আচ্ছা স্যার, আপনি কালো শার্ট
পড়তে পারেন না?? আর এত মুড দেখান
কেন?
-- তোমার সমস্যা কি? এত কথা বলো কেন?
পড়ো....
.
এভাবেই চলছিল...অভি যে তিথিকে পছন্দ
করে না তা না। তারপরও
ছাত্রী বলে কথা। তাই নিজ থেকে কোন
সম্পর্কে যেতে চায় না।
.
হঠাৎ একদিন রাতে তিথির ফোন আসল.......
: হ্যালো.....
-- হুম বলো।
: একটা কথা বলবো, স্যার?
-- বলো........
: আমি আপনাকে ভালোবাসি।
আমি আপনার মত
ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না।
ভালোবাসি আপনাকে। কেন
ভালোবাসি জিজ্ঞেস করবেন না।
.
-- আমাকে ভালোবাসার কিছু নাই...
: না থাকুক। তারপরও
আমি আপনাকে ভালোবাসি।
আপনি বাসেন কিনা সেটা বলেন?
-- হুম, ঠিক আছে।
.
এভাবেই শুরু তাদের ভালোবাসায়
পথচলা। সময়ে অসময়ে ঝগড়া, আবার
কারণে অকারণে মিটে যাওয়া।
সবশেষে পরিবারের
সম্মতিতে বিয়েটা হয়ে যাওয়া।***
.
: কি হলো? কথা কানে যায় না?
উঠবে নাকি গরম পানি ঢেলে দিব??
.
তিথির চিৎকারে ভাবনার জগৎ
থেকে ফিরে আসল অভি।
বিড়বিড় করে বললো, " জল্লাদ
মেয়ে একটা। কেন যে বিয়ে করলাম??
জীবনটাই তেজপাতা হয়ে গেল।"
.
: কি বললে তুমি? আমি জল্লাদ?
-- কই না তো!! জল্লাদ বলিনি তো?
মেয়ে আবার জল্লাদ হয় কেমনে?
মেয়ে তো হবে জল্লাদনী?
: আর তুমি তো একটা বদ্, তেলাপোকা,
শয়তান একটা।
-- হ্যাঁ, আমি শয়তানই তো। ভালো মানুষ
হলে তোমার সাথে সংসার করে......??
.
এরপর কিছু না বলে হুট করে রুম
থেকে বেরিয়ে গেল তিথি।
রেগে গেছে হয়তো। একটু পর পাশের
রুমে গিয়ে দেখলাম ব্যাগ গোছাচ্ছে।
.
-- একি!! ব্যাগ গোছাচ্ছো কেন? কোথায়
যাবে?
: জাহান্নামে, সামনে থেকে যাও
বলছি। আমার সাথে তো ভালো মানুষ
থাকতে পারে না। তাই তো?
থাকো তুমি, আমাকে আর সহ্য
করতে হবে না।
.
মেয়েটার এই এক সমস্যা কিছু বললেই
অমনি রাগ করে ব্যাগ গুছিয়ে বাপের
বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে। আর
জাহান্নাম বলতে তার বাপের
বাড়িকেই বুঝায়।
.
বুঝলাম রাগের পরিমাণটা বেশী তাই
অভিনয়টাও যথাযথ হতে হবে। চোখে জল
আনা দরকার তাই একটু
পানি ছিটিয়ে দিলাম।
তিথিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
-- প্লীজ মাফ করে দাও।
আমার কান্না দেখে তিথি একটু
দমে গেল। জাহান্নামে যাওয়ার Plan
বাতিল করে আমায়
শান্তনা দিতে লাগল।
.
আমায় জড়িয়ে ধরে বলল, " ধুর পাগল,
কোথাও যাবনা আমি।"
.
আমার চোখের পানির স্টকও শেষ হয়ে এল।
বিড়বিড় করে বললাম, " যাক Emotional
blackmail কাজে দিল। মেয়ে তোমার
স্বামী হওয়ার আগে শিক্ষক ছিলাম
এটা ভুললে কি চলে? কৌশল তুমি কি আর
আমায় শেখাবে? আমি যে তোমার গুরু।"
: কি বললে তুমি?
.
এই যা আবার শুনে ফেলল!! মেয়েদের শ্রবণ
শক্তি এত প্রখর হয় কেমনে? এজন্যই বোধহয়
মেয়েরা কানা-কানিতে দক্ষ বেশি।
.
আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, " কই?
কিছুই তো বলিনি!!"
: তাই না? যাও অসভ্য কোথাকার!
.
আমি তিথিকে আরেকটু
কাছে টেনে নিয়ে বললাম, "
সভ্যতা গড়তে তো একটু অসভ্য হতে হয়।"