লেখা : Cloudy sky (এফ এ তারেক )
রাত তিনটা , কে যেন দরজায় কড়া নাড়ছে ।
ঠক ঠক . . . ঠক ঠক . . .
.
কে ? ?
.
মাশুক ভাই আমি ছগির ( কেয়ারটেকার ) ।
.
এত রাতে কি চাও ? ?
.
একটা উপহার আছে আপনার জন্য !
দরজা খুললেই দেখতে পাবেন !
(মাশুকের মেজাজ একদম বিগড়ে গেছে !
দরজা খুলেই ছগির ব্যাটাকে কষে একটা চড়
লাগাতে হবে ! ব্যাটা এই রাত-
দুপুরে ফাইজলামি শুরু করছে )
.
দরজা খুলে মাশুক হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছে ।
ছগির যেন উল্টো তার গালেই চপেটাঘাত
করলো ! ছগিরের পাশে এটা কে ! !
.
ফেসবুকের একটা জনপ্রিয় পেজে মাত্রই
একটা গল্প শেয়ার হল । গল্পটা মাশুকের
খুবই ভাল লাগল , তাই
সে কমেন্টে লেখককে ধন্যবাদ জানাল ।
লেখকও সাথে-সাথে কমেন্টের রিপ্লাই
দিলেন । কয়েক মিনিটের মধ্য
আরো কয়েকজন পাঠক যোগ দিলেন সেখানে ।
জমে উঠলো কমেন্ট পাল্টা-কমেন্ট খেলা ।
এক পর্যায়ে মাশুক খেয়াল করলো "গোধূলির
আলো " নামে কেউ একজন তাকে ম্যানশন
করেছে । মাশুকও পাল্টা ম্যানশন করলো ,
এবং এক ফাঁকে আইডিটা ঘুরে আসলো ।
ছবি দেখে মেয়েটাকে ভালই
লাগলো মাশুকের , তাই কোন কিছু না ভেবেই
রিকু দিয়ে দিল । মেয়েটাও
সাথে সাথে রিকুটা এক্সেপ্ট করে ফেললো ।
.
দিন যায় , সপ্তাহ যায় , মাস যায় ।
ধীরে ধীরে একে অন্যের সম্পর্কে সব কিছুই
জানা হয়ে যায় । মেয়েটির নাম ফ্লোরা ,
বাড়ি চট্টগ্রাম ।
নামকরা একটা কলেজে অনার্স করছে ।
মাশুক ঢাকায় থাকে ।
একটা বেসরকারী ভার্সিটিতে এমবিএ
করছে ।
.
মাশুকের দিক থেকে এই সম্পর্কটা ছিল
কেবলই বন্ধুত্ব । একটা সময় পর্যন্ত
ফ্লোরার কাছেও ব্যাপারটা তাই ছিল ।
কিন্তু ধীরে ধীরে ফ্লোরা নিজের উপর
নিয়ন্ত্রন হারায় , মাশুককে ভালবাসতে শুরু
করে ।
.
মাশুক পরিবারের বড় ছেলে । মা-
বাবা অনেক বিশ্বাস করে তাকে । ছোট
বেলা থেকে সে কখনোই তাদের অবাধ্য
হয়নি । মাশুক জানে তার মা-বাবা কখনোই
এ ধরনের সম্পর্ক মেনে নেবেন না । তাই
সে ফ্লোরার আবেগতাড়িত
কথাগুলো কৌশলে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করত
।
ফ্লোরা প্রায়ই অভিমান করে গাল
ফুলিয়ে বসে থাকতো । আর মাশুক নাওয়া-
খাওয়া ভুলে ঘন্টার পর ঘন্টা সেই
অভিমানের বরফ গলাতে চেষ্টা করে যেত ।
ফ্লোরা ভাবত , হয়ত এবার
সে পেয়ে গেছে মাশুককে । কিন্তু না ,
আবেগঘন কোন প্রসংগ এলেই মাশুক আবার
এড়িয়ে যেত । এভাবে টানাপোড়নের ভিতর
দিয়েই চলছিল তাদের শেষের দিনগুলি . .
.
ফ্লোরাকে এভাবে দেখে মাশুক ভয়
পেয়ে গেল । ফ্লোরার বিয়ের সব ঠিকঠাক
করে রেখেছিল তার মা-বাবা , এর মাঝেই
সে ব্যাগ গুছিয়ে মাশুকের কাছে ঢাকায়
চলে এসেছে । মাশুকের মাথায় কিছুই
খেলছে না , সে কোন সিদ্ধান্তই
নিতে পারছে না ।
.
নাজমা আক্তার , মাশুকের বড় খালা ।
ঢাকাতে নিজেদের বাড়ি আছে , অনেক
টাকা পয়সার মালিক । মাশুক ঐ রাতেই
ফ্লোরাকে নাজমা খালার বাসায় পৌঁছে দিল
। ততক্ষনে ঘটনাটা মাশুকের মা-বাবার
কানে পৌঁছে গেছে ।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেল ফ্লোরাদের
আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না । তাই
তারা এই ব্যাপারে কোন আগ্রহই দেখালেন
না । বরং কড়া ভাষায় মাশুককে তাদের
সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন । মাশুক
যদি ফ্লোরাকে গ্রহন করে , তবে চিরদিনের
জন্য নিজের মা-বাবাকে হারাতে হবে ।
.
মাশুক ফ্লোরাকে কিছুতেই গ্রহন করবে না ।
আর ফ্লোরারও বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ
। নাজমা খালা এই সুযোগটি খুব ভাল ভাবেই
লুফে নিলেন । তিনি তার মানসিক
প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে ফ্লোরার
বিয়ে দিয়ে দিলেন । বিয়েটা কিন্তু অনেক
ধুমধাম করেই হয়েছে । ব্যান্ডপার্টি ,
আলোকসজ্জা কোন কিছুরই কমতি ছিল না ।
ফ্লোরার চোখের জলেরও কমতি ছিল
না সেদিন ।
.
এর মাঝে চারটি মাস কেটে গেল । কিন্তু
ফ্লোরার কাছে মনে হচ্ছিল যেন চার জনম
কেটে গেছে ! কিছুতেই
নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিল না সে ,
পারার কথাও না ।
.
এই চার
মাসে ফ্লোরা নানাভাবে মাশুককে কনভিন্স
করার চেষ্টা করেছে । কিন্ত মাশুকের
কথা একটাই . .
তুমি এখন অন্যের বউ , নিজের
সংসারে মনোযোগ দাও । আমাদের
সম্পর্কটা এখন অতীত ।
তাচাড়া আমিতো তোমাকে কোন
কথা দিইনি । তুমি আমাকে না জানিয়েই
এখানে এসেছ , তাই দায়-দায়িত্ব সব
তোমার ।
.
না , ফ্লোরার
পক্ষে সংসারটা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব
হল না । শেষ পর্যন্ত ফ্লোরা নিজেই ঐ
ছেলেকে ডিভোর্স দেয় । তারপর ঐ দিনই
চট্টগ্রাম চলে যায় মা-বাবার কাছে ।
যাবার আগে শেষবারের মত মাশুকের
সাথে দেখা হয় তার . .
.
কেন তুমি আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট
করে দিলে ?
.
সরি ফ্লোরা । এই
মুহুর্তে তোমাকে সরি বলা চাড়া আমার
আসলে কিছুই করার নেই । কিন্তু একবার
ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ , এর জন্য তুমিই
দায়ী ।
.
সব দোষ এখন আমার ? তোমার কি কিছুই
করার ছিল না ?
.
দেখ ফ্লোরা , এটা ঠিক যে তোমার
সাথে আমার একটা সুন্দর সম্পর্ক ছিল ।
কিন্তু সেটা কোনভাবেই ভালবাসা ছিল
না ।
আমি কি কখনো বলেছি তোমাকে ভালবাসি ?
.
তা হয়ত বলনি । কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল
তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে না ।
.
দিতাম না , কখনোই
তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না । মা-
বাবা যদি তোমাকে মেনে নিতেন
তাহলে আমি কখনোই
তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না ।
.
একদিকে ফ্লোরা মাশুকের উপর বিশ্বাস
রেখে ঘর ছেড়েছিল , কিন্তু যে কারনেই
হোক মাশুক সেই বিশ্বাসের মূল্য
দিতে পারেনি ।
অন্যদিকে যে মা-বাবার মনে ফ্লোরা এত
বড় আঘাত দিল . . তাদের মান-সম্মান ধূলোয়
মিশিয়ে দিল । সেই মা-বাবা কিন্তু ঠিকই
আবার তাদের সন্তানকে বুকে টেনে নিলেন
।
.
গত চার মাসে ফ্লোরা অনেক বদলে গেছে ।
এক সময়ের হাসি-খুশি আর চষ্ণল
মেয়েটা এখন ঘর থেকে বের হয় না একদমই
। ঠিকমত কারো সাথে কথাও বলে না ।
সারাক্ষন জানালার পাশে বসে থাকে ।
একা একা বিড়বিড় করে . . হাসে . . কাঁদে . .
.
মানুষের জীবনে এমন কিছু ভুল থাকে , যার
কোন প্রায়শ্চিত্ত হয় না ।
অনেকে সারাজীবন সেই ভুলের
গ্লানি বয়ে বেড়ায় ।
অনেকে জীবন দিয়ে তার মাশুল দিয়ে যায় ,
মৃত্যুতেই খুঁজে নেয় মুক্তির স্বাদ । কিন্তু
তাতেও কি মুক্তি মেলে ? ?
.
বর্তমানে ফ্লোরা কি অবস্থায়
আছে তা আমার জানা নেই ।
আমি চাই না আর কোন ফ্লোরার এমন করুন
পরিনণতি হোক । একজন ফ্লোরাও যদি আমার
এই গল্প পড়ে সতর্ক হয় , তবেই আমার
স্বার্থকতা ।