মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৮৬- নীল

১৪ই ফেব্রুয়ারি। মোবাইলের আওয়াজে ঘুম ভাঙল নীলের।
-হ্যালো।
-নীল। তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস??
-না, এইতো আমি বাসা থেকে বের হচ্ছি।
-মিথ্যুক কোথাকার। জলদি আয়।
ফোনের মেয়েটি নীলিমা। নীলের বেস্ট ফ্রেন্ড। গত ২ বছর যাবৎ ভালোবেসেই আসছে। কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি। বলবেই বা কিভাবে? ফ্রেন্ড বলে কথা! হিতে বিপরীত হতে পারে। এইভাবেই ভালোবাসা সুপ্ত থেকেই বেড়ে যাচ্ছে।
১০ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়ল নীল, উদ্দেশ্য নীলিমার সাথে দেখা করা।
যেতে যেতে ভাবতে লাগল, 'আজ নাহয় বলেই ফেলি। '
অনেক সাহস জোগাড় করে বলার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল। ভয়ে ভয়ে গেলো নীলিমার সামনে।
-এত দেরী করলি ক্যান নীল?
-সরি, আসলে ঘুম থেকেই উঠতে দেরী হয়ে গেছে।
-ওমা! সবসময়ই তো জ্যামের কথা বলিস। আজ কিভাবে স্বীকার করলি তুই?
বলেই হেসে ফেলল নীলিমা। হাসলে তাকে অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগে। smile emoticon
-নীলিমা। তোকে একটা কথা বলার ছিল।।
-আরে দাঁড়া। তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে আগে। অনেক্ষন অপেক্ষা করিয়েছিস তুই। আর না, এবার তুই অপেক্ষা কর।।
এই বলেই নীলিমা ডাক দিল, 'আকাশ!'
সাথেসাথেই জলজ্যান্ত এক জীব হাজির।
পরিচয় করালো।
আকাশ। আমেরিকা থাকে। ওর বয়ফ্রেন্ড।!!
আকাশ ভেঙে পড়ল নীলের মাথায়; জীব আকাশ নয়, উপরের আকাশটা!
-নীলিমা। আগে বলিস নি কেনো আমাকে?
নীলিমা হাসতে হাসতে বলল, 'সারপ্রাইজ'...
-আচ্ছা। এবার তোর কথা বল। কি যেন বলতে চাইলি। অনেক্ষন দেরী করিয়েছি তোকে। বল এইবার।
-দেরী তুই করিস নি নীলিমা। দেরী আমিই করেছি। সরি রে, আমি যাই আজ। আম্মুকে নিয়ে বেরুতে হবে।
নীলের কথা কিছুই বুঝেনি নীলিমা। শুধু হাত নেড়ে বিদায় জানালো নীল কে।
বাসায় এসে বিষন্ন মনে বসে আছে নীল। কাঁদতে পারছে না। ছেলেদের কাঁদতে নেই, অদ্ভুত রীতি। তবে সেই রীতি সবসময় টিকে কই??
পরের দিন নীলিমা আর আকাশের সাথে বেরুতে বলল নীলকে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হল। কারন, নীলিমা মানবেনা। কাছের মানুষ কি না, তাই হয়ত তাকে রেখে যেতে চাইছে না!
তাদের সাথে ঘুরতে গেলো, নীলিমাকে খুব খুশি দেখাচ্ছে। নীলিমার খুশিই নীলের কাছে বড়, হোক না কারনটা অন্য কেউ! তাই নীলিমাকে কিছু বুঝতে দেবে না সিদ্ধান্ত নিল।
নীলও তাদের সাথে হাসছে, খেলছে.. কিন্তু এর মাঝের শুণ্যতাটা আরো নজরে আসতে দেয়নি।।
বাড়ি ফিরে সেই নীল, জগতের সেই অদ্ভুত রীতি ভাঙতে ব্যস্ত। এভাবে কেটে গেলো বছর। ভার্সিটিও শেষ, এরপর ইচ্ছে করেই নীলিমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি নীল। হয়ত, কখনো নীলিমা বুঝে ফেলবে বলে। যদিও বুঝত না, কারণ স্পষ্ট দর্শনের জন্য অন্তত ২৫ সেন্টিমিটার দুরত্ব লাগে, নীলিমা তো এর চেয়েও কাছে!
এভাবেই গল্পটা শেষ হতে পারত। কিন্তু না, আজ প্রায় ৫ বছর পর নীলিমা-আকাশের সাথে দেখা। তাদের সুন্দর একটা ছেলেও আছে। দেখতে মিষ্টি হয়েছে খুব!
নীলিমা কেঁদে কেঁদে বলেই ফেলল, 'কুত্তা! কই ছিলি এতদিন? কেমন আছিস তুই? কোন মেয়ে তুই হতভাগার কাছে পড়েছে নাকি?'
মিষ্টি ঝগড়ার সময় নীলিমাকে খুব সুন্দর দেখায়।। সেই কান্না মাখা হাসি আজও পাল্টায়নি।
নীলিমার কথার জবাব না দিয়েই, 'তুই এখনো পাগলীই রয়ে গেলি'
হেসে ফেলল নীলিমা। অনেক্ষন গল্প করার পর নীলের সাথে যোগাযোগের সব রাস্তাই পাকা করে নিল নীলিমা।
-আসিরে নীলিমা। যেতে হবে আমার।
এই বলে বিদায় নিল নীল।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগল নীল, 'ভালোবাসা মানেই তো কাছে পাওয়া নয়। কাউকে খুশি রাখা, কারো খুশি দেখে খুশি থাকতে পারাটাই তো ভালোবাসা। '
তাও কাছে পাওয়ার ইচ্ছা তো থেকেই যায়। হয়ত আজ আবার সামনে এসে সে কথাটাই মনে করিয়ে দিয়ে গেলো: মানুষ বলে কথা! বাসায় আসার পর আবার নীলিমার ফোন.... থাক.. আর না!
গল্পটা কখনো শেষ হবেনা!