লেখকঃ ওয়াহাব বাদশা
আমাদের হলের কাছের স্টাফ কোয়ার্টারের একটা মেয়ে গায়ে আগুন দিয়েছে। আত্মহত্যা করার জন্য! দেহের প্রায় ষাটভাগের মতো পুড়ে গিয়েছিলো। তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়! লাভ হয় নি। মেয়েটা আজকে মারা গেছে।
মেয়ে একটা ছেলেকে ভালোবাসতো। পরিবার থেকে মেনে নেয় নি। তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। মেয়েটা বিয়ে মেনে নিতে পারে নি। তাই গায়ে আগুন দেয়। প্রথমবার বেঁচে যায়। এটা তার দ্বিতীয় চেষ্টা ছিলো।
এবার সে সফল। সে মারা গেছে!তার বয়স কতো জানেন?
মাত্র ১৭/১৮!
....১৬/১৭/১৮ বছরের মেয়েরা রক্ত বা মাংস দুটোর কোনটাই দিয়ে তৈরী না। এরা একটা হৃত্পিন্ড আর আবেগ দিয়ে তৈরী,ইমোশন দিয়ে তৈরী। আর কিচ্ছু না!
এদের জীবনের গ্রাফ থাকে
ইমোশন....ইমোশন....ইমোশন....ইমোশন
দুই ইমোশনের মাঝের অংশে যে বোধশক্তি,চিন্তাশক্তি থাকা দরকার সেটা এদের তৈরী হয় নি। শুধু ইমোশনটাই থাকে। ইমোশন খুব খারাপ জিনিস। ইমোশন শুধু তীব্র কষ্টই দেয় ।তীব্র কষ্ট আত্মহত্যা
করতে আগ্রহ জাগায়।
মেয়েটা প্রথমবার যখন সুইসাইড করার চেষ্টা করার পরেও মারা যায় নি ।তারপরেও তার বাবা মা ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয় নি!
একটু 'গুরুত্ব' দিলেই মেয়েটা আর সুইসাইড করতে যেতো না। একটু 'গুরুত্ব' দিলেই হয়তো মরতো না!
১৭/১৮ বছরের মেয়েদের ইমোশনের গুরুত্ব দিতে হয়। গুরুত্ব না দিলেই এরা নিজেদের একা ভাবা শুরু করে। অভিমান করে ।তীব্র অভিমান করে। এই তীব্র অভিমান থেকে সবকিছু করা সম্ভব!
আমি মরে সবাইকে কষ্ট দিবো । সবাইকে কাঁদাবো। এসব ভাবা বোকামী। কষ্ট পাবে সত্য। কাঁদবে সত্য। কিন্তু এগুলো সব সাময়িক। একসপ্তাহ দুসপ্তাহ পর সবাই তোমার অস্তিত্ব ভুলে যাবে! এটা যে কেন মানুষ বোঝে না!
জীবন আল্লাহর দেয়া একটা উপহার। এটাকে ভালোবাসতে হয়। এটার যত্ম নিতে হয়। হঠাত করে আসা আবেগের জন্য,অভিমানীর জন্য এটাকে শেষ করে ফেলার কোন মানে নাই!
একটা জীবনের চারপাশে অনেক ভালোবাসা জড়িয়ে থাকে। প্রকৃতি থাকে,জোত্স্না থাকে,রাতভর বৃষ্টির শব্দ থাকে,ভোর থাকে,সন্ধ্যা থাকে,দুপুর মাখানো রাত থাকে,হাসি থাকে,আনন্দ থাকে! পিংক ফ্লয়েডের গান থাকে,বন্ধু থাকে,নাটক থাকে,শরতের উপন্যাস থাকে। কোন একটা মানুষকে না পাওয়ার জন্য,তীব্র অভিমানের জন্য এতো সুন্দর একটা জীবনকে নষ্ট করাটা বোকামী।
জীবন দেয়া হয় একটা চিহ্ন রেখে যাওয়ার জন্য ...নিজের সব চিহ্ন মুছে আত্মহত্যা করার জন্য না!