মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

বৈশাখ ঘিরে কমেছে ইলিশ উন্মাদনা

দুটি ইলিশ এক হাতে উঁচু করে দেখিয়ে কামরুজ্জামান বললেন, ‘বিক্রি কইমা গেছে, দামও কম।’ গলায় ছিল হতাশার সুর। তাঁর ভাষায়, এখন আর কেউ আগের মতো পয়লা বৈশাখে ‘দৌড়াইয়া’ ইলিশ কেনে না। তবে এ ঘটনাকে কিছুটা স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন ইলিশ উৎপাদন ও গবেষণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও সচেতন লোকজন। তাঁদের মতে, দু-তিন বছর ধরে বৈশাখে ইলিশবিরোধী প্রচার ধীরে ধীরে হলেও সফলতা পাচ্ছে। ইলিশ রক্ষার প্রয়োজনে সচেতন অনেকে এখন বৈশাখে ইলিশ মাছ কেনা থেকে বিরত থাকছেন। বৈশাখ ঘিরে আগের চেয়ে ইলিশের উন্মাদনা কমলেও একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে বাজারে ইলিশ উঠছে, বিক্রি হচ্ছে, অভিযানে ধরা পড়ছে নিষিদ্ধ জাটকাও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আশির দশকে হঠাৎ করেই পান্তা-ইলিশ খাওয়ার চল শুরু হয়। শহুরে ‘এলিট শ্রেণি’ ছিলেন এই চল শুরুর পেছনে। পরে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর আগে পান্তার সঙ্গে ডিম ভাজার প্রচলন ছিল বেশি।

পরে ডিমের জায়গায় জাতীয় মাছ ইলিশকে স্থান দিলে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে। এই শ্রেণি পয়লা বৈশাখের দিন রমনায় পান্তা-ভাত, কাঁচা মরিচ, শুকনা মরিচ ভাজা, ইলিশ আর পেঁয়াজ ভাজা নিয়ে হাজির হন ভোরবেলা। মাটির সানকিতে করে তা খাওয়া শুরু হয়। পরের বছরগুলোতে এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পয়লা বৈশাখে রমনায় শিক্ষার্থীরা পান্তা-ইলিশ দেদার বিক্রি করেন। ক্রমেই তা মধ্যবিত্তের পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনে ‘অপরিহার্য’ হয়ে দাঁড়ায়। স্থান পায় পাঁচতারকা হোটেলের বৈশাখ মেন্যুতেও। এই সময়ে ইলিশের উৎপাদন কম থাকলেও চাহিদা বেশি থাকায় অস্বাভাবিকভাবেই দাম চড়তে থাকে।

সংকলন ৩৫৮- সাহস

লিখাঃশাকিল বখতিয়ার
সাহসী মেয়ের গল্প
..................
মাহমুদ স্যার ক্লাসে ঢুকে হঠাৎ
থমকে দাঁড়ালেন। সামনের বেঞ্চ
পুরোটাই ফাঁকা। পুরো ক্লাসে
স্যার একবার চোখ ঘোরালেন।
সুমা আর রিমা একেবারে
পেছনের টেবিলে। কিন্তু
রিতাকে আজ ক্লাসে দেখা
যাচ্ছে না। স্যারের মাথা চক্কর
দিতে লাগল। যে মেয়ে কিনা
আট বছরের স্টুডেন্ট লাইফে আট
মিনিট ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল
না, সে কিনা আজ স্কুলেই
আসেনি। রিমার মুখ থেকে যখন
স্যার শুনলেন যে, রিতার বিয়ে
ঠিক হয়ে গেছে। তখনতো
স্যারের মাথা আরো হেঁট হয়ে
গেল। সেদিন ক্লাস না নিয়েই
স্যার চলে গেলেন।
গরিব বাবা-মায়ের বড় মেয়ে
রিতা। অসম্ভব মেধাবী।
প্রাইমারি থেকে শুরু করে এই
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের কেউ
তার থেকে প্রথম স্থান নামক
পদটি কেড়ে নিতে পারেনি।
এমনকি তার কাছাকাছিও
যেতে পারেনি। যারা
দ্বিতীয়-তৃতীয় হয়েছে তাদের
থেকেও সে সবসময় দশ-বারো
মার্কস বেশি পেত। পঞ্চম
শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
এবং উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয়
স্থান অর্জন করেও সে চমক
লাগিয়েছে।
যেভাবে সে কৃতিত্ব অর্জন করছে
সেভাবে কিন্তু সে সমাজ
থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না।
অথচ সমাজের লোকদের উচিত
ছিল দরিদ্র ও মেধাবী
ছাত্রীটির পড়ালেখার খরচের
সম্পূর্ণ ভার তাদের ঘাড়ে টেনে
নেয়া। মেয়ে মানুষ, পড়ালেখা
করে কী করবেÑ এই হীনমন্যতার
কারণেই সমাজের লোক নিশ্চিত
অধঃপতনে যাচ্ছে। মূলত মেয়ে
মানুষ নয়, দরিদ্র পরিবারে জন্ম
হওয়াই তার প্রতি সমাজের এই
হীনমন্যতা।
যে দিন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
পেয়ে গোটা উপজেলায়
সেকেন্ড হয়েছিল সে, সেদিন
মাহমুদ স্যারইতো তাকে ডাক্তার
হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর
সেদিন থেকেই সে তার হৃদয়ে
সেই স্বপ্নটুকু লালন করতে লাগল।
কিন্তু শুধুমাত্র গরিব হওয়ার দরুন
তার সে স্বপ্ন ভেঙে খানখান
হয়ে যাচ্ছে? সে ভাবে, মেয়ে
হওয়ায় কি সে বাকহীন হয়ে
পড়েছে? তার কি কিছু করার
ক্ষমতা নেই? এমনকি তার মতেরও
কি প্রয়োজন নেই।
সত্যি তাই, আজ বেশির ভাগ
মুসলিম পরিবারে মেয়েদের
মতামতকে হীন করে দেখা হয়।
বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের
মুসলিম পরিবারে। শুধু মুসলিম নয়,
হিন্দুদের অবস্থাও তদ্রƒপ।
আমাদের সমাজের লোকদের
কথা কী বলব? তাদের নিজেদের
যোগ্যতা নেই, আবার অন্য কারও
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে
সহযোগিতা করে না বরং তার
স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে
দাঁড়ায়। রিতার ক্ষেত্রেও তার
ভিন্ন কিছু ঘটছে না।
হারিকেনটা একটু ঢিম করে
রেখে সে তার বিছানায় শুয়ে
পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘুম
এসে গেল। সে হারিয়ে গেল
অন্য এক রাজ্যে। ঘুমের ভেতর সে
দেখতে লাগলো সে এক সুন্দর
অট্টালিকার একটা খাটের ওপর
শুয়ে আছে।
আর তার চার পাশে কয়েকজন
নারী দাঁড়িয়ে আছে। সে
শোয়া থেকে আস্তে আস্তে
উঠে বসলো। এবং জিজ্ঞেস
করলো ‘আমি এখানে কেন,
তোমরা কারা?
তাদের মধ্যে একজন মুখ খুলেন,
‘আমি তোমাদের মা।
তোমাদের বাবা আদমের (আ)
প্রিয় সঙ্গিনী, হাওয়া (আ)। আর
এরা হচ্ছে তোমার
হিতাকাক্সক্ষী। এখন তাদের
সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে
দিচ্ছি।
ইনি হলেন, খাদিজা (রা), যিনি
ছিলেন মক্কার ব্যবসায়ীদের
মধ্যে বিশিষ্ট জনদের একজন।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে
যাকে আরবের লোকেরা তাকে
তাহেরা উপাধি দিয়েছিল
যেমনি সত্য বলার কারণে
তোমাদের রাসূল মুহাম্মদ (সা)কে
আল আমিন উপাধি দিয়েছিল।
ইনি সেই মহিলা যে সবার আগে
ইসলাম গ্রহণ করেছেন আর ইসলাম
প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যার কৃতিত্ব
অসামান্য।
তার পরের জন হলেন হযরত আয়েশা
সিদ্দিকা (রা), যিনি ছিলেন
তোমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি
মেধাবী ও বুদ্ধিমান। হাদিস
বর্ণনাকারী সাহাবীদের মধ্যে
যিনি ছিলেন দ্বিতীয় স্থান
অর্জনকারী। রাসূলের মৃত্যুর পর
সাহাবীগণ (রা) যার কাছে
ফতোয়া, পরামর্শ নিতে আসতেন
এবং তিনি সুন্দরভাবে
বুদ্ধিমত্তার সাথে তার সমাধান
দিতেন।
তারপর যিনি হাস্যোজ্জ্বল
চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে
আছেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি
হলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রথম
মহিলা শহীদ যিনি নিজের
জীবনকে আল্লাহর রাহে বিলীন
করে দিয়েছেন, তবু বাতিলের
কাছে মাথা নত করেননি।
অথচ তুমি ভয় করছো যে, তুমি কিছুই
পারবে না। তুমি তো নারী। এসব
একদম ভাবা চলবে না।
তোমাদের ইসলামই
নারীদেরকে ডাক্তার হওয়ার
অনুমতি দিয়েছে। অনুমতি বললে
ভুল হবে, এটা অবশ্যই নারীদের
কর্তব্য যে, পর্দা রক্ষা করতে হলে
নারীদের জন্য নারী ডাক্তারই
উত্তম।
আরও জেনে রাখো! যদি তুমি
ইসলামের জ্ঞান বাদ দিয়ে
শুধুমাত্র দুনিয়াবি জ্ঞান অর্জন
কর, তাহলে তুমি একটা ফরজ লঙ্ঘন
করায় পরকালে কঠিন শাস্তির
সম্মুখীন হবে। কেননা ইসলামিক
জ্ঞান অর্জন শুধু পুরুষদের জন্য নয়,
নারীদের ওপরও ফরজ। এই বলে
তারা সবাই উধাও হয়ে গেল।
অট্টালিকাটি হাওয়ার সাথে
মিশে যেতে থাকল। আর রিতাও
নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎ একসময় তার ঘুম ভেঙে গেল।
জেগে দেখে তার শরীর ঘেমে
গেছে।
হারিকেনের আলোয় দেয়ালে
ঝুলানো ঘড়িটি স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে। তখন রাত দুটো বেজে
বিশ মিনিট। ঘড়ির কাঁটা অসহায়
হয়ে খসখস করে ঘুরতে থাকে। যেন
তার গন্তব্য খুঁজে পাচ্ছে না।
বাড়ি সবাই ঘুমে বিভোর হয়ে
আছে। এই সুযোগে রিতা আস্তে
আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল।
জোনাকিরা তাদের আলো
জ্বালিয়েই চলছে। যেন তাকে
তার সঠিক পথের দিশা দিচ্ছে।
আর ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এমনভাবে
ডাকছে যেন তাকে সাহস
জোগাচ্ছে। এগিয়ে যাও। আমরা
আছি তোমার সাথে। বুকে সাহস
সঞ্চার করে সে পা বাড়ালো
মাহমুদ স্যারের বাড়ির পথে। দশ
মিনিটেই পৌঁছে গেল
গন্তব্যে।
স্যার তো অবাক, এতো রাতে
তুমি। তোমার না বিয়ে? যাক
এসেছো যখন ভেতরে এসো। এই
বলে স্যার দরজা খুলে দিলেন।
ভেতরে ঢুকেই রিতা সে কী
কান্না। স্যার তার পিঠে হাত
বুলিয়ে সান্ত¡নার সুরে বললেন,
পাগলি মেয়ে এভাবে কেউ
কাঁদে? তোর মনের খবর আমি সব
জানি। দেখবি সব ঠিক হয়ে
যাবে, তুই আল্লাহর ওপর ভরসা
রাখ।
এ দিকে বিয়ের আয়োজন
পুরোপুরি সম্পন্ন কিন্তু রিতার
আম্মুর কান্নাজড়িত কণ্ঠে
আফজাল মিয়া যখন শুনতে পেল
রিতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে
না তখন তার অবস্থা এমন হলো যে,
যেন মাথায় আকাশ ভেঙে
পড়েছে।
আফজাল মিয়া কালবিলম্ব না
করে থানায় চলে গেল। থানায়
গিয়ে তো আফজাল মিয়া অবাক।
যে মেয়েকে খুঁজে বের করতে
সে থানায় জিডি করতে এলো,
সে মেয়েই নাকি তার বিরুদ্ধে
মামলা করেছে। ওসি সাহেব যখন
তার হাতে হাতকড়া পরালেন
তখনই সে অপমান সইতে না পেরে
অজ্ঞান হয়ে গেল।
এরপর আফজাল মিয়ার যখন জ্ঞান
ফিরল সে দেখতে পেল সে
হাসপাতালে একটা বেডে।
মাহমুদ স্যার তার মাথায় হাত
রাখলেন। সে বললো, ‘স্যার
আমারে মাফ কইরা দেন, আমার
ভুল হইয়া গেছে। আমি নিজের
কথা চিন্তা কইরা ম্যাইয়াডার
সর্বনাশ করতে গেছিলাম।’
মাহমুদ স্যার বললেন, ‘অভাবে
পড়লে হয়তো অন্য কেউও এ কাজই
করতো। যাক সে বিষয় বাদ দাও।
আজ থেকে ও শুধু তোমারই মেয়ে
নয়, মেয়ে আমারও। আমি একে
ডাক্তার বানিয়েই ছাড়ব।
স্যারের কথা শুনে রিতা যেন
আজ নতুন জীবন ফিরে পেল।
আনন্দে তার গন্ড বেয়ে
দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।



সংকলন ৩৫৬- অভিশাপ

"স্যার,,,আপনি কি অভিশাপ বিশ্বাস করেন???? "
অবাক হয়ে তাকালাম আমার চেম্বারে বসা রোগীটার
দিকে,,, এখন রাত ১২ টা,,, বাসায় যাব বলে ঠিক
করেছিলাম,,, হঠাৎ এই লোকটা ভিতরে আসল,,, আমার পি
এস তৃণা হয়ত ওয়াশরুমে গিয়েছিল,,,বিনাবাধায়ই এই
লোক ভিতরে আসল,,,,কারণ আমি পরে শুনলাম,, তৃণা হয়ত
ওর চেয়ারে এসে বসল,,,,
"বলুন না স্যার,,,আপনি কি অভিশাপ বিশ্বাস
করেন/???,,,"
আমি অবাক হয়ে দেখছি লোকটাকে,,, লোক না বলে
ছেলেই বলা ভাল,,, বয়স হয়ত ২২/২৩,,, চেহারা রাজপুত্রের
মত,,,এরকম হ্যান্ডসাম ছেলে সচরাচর দেখা যায়
না,,,চোখদুটো মায়া মায়া,,,,চেহারায় পাগলামির
ছিটেফোঁটা নেই,,,কিন্তু সে সিরিয়াসলি এই প্রশ্নটি
করেছে।
আমি বললাম,,, "একটু ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ?"
ছেলেটি বলল,,, অফ কোর্স স্যার,,,ক্লিয়ার করার জন্যই
তো এসেছি,,, আপনি কি শুনবেন স্যার??? সময় হবে
আপনার???
ঘড়ির দিক চেয়ে ভাবলাম,,,বাসায় তো কেউ নেই,,,দেরি
করে গেলে প্রবলেম হবে না,,, শুনেই যাই,,,ইন্টারেস্টিং
লাগছে,,,,
অনুমতি পেয়ে ছেলেটা বলা শুরু করল,,,
" স্যার,,, আমি এক মফস্বলের ছেলে,,,আমার বাবা এক
সরকারি চাকরিজীবী,,, আমি ছোটবেলা থেকে অনেক
মেধাবী ছিলাম,,,কিন্তু যতটা মেধাবী ছিলাম,,ঠিক
ততটাই ভীতু ছিলাম,,,,
স্কুল লাইফ থেকেই অনেক যন্ত্রণার মাঝে
ছিলাম,,ক্লাসে ছেলেরা বিরক্ত করত,,মারত,,,টিফিন
কেড়ে খেত,,,,উদ্ভট উদ্ভট নামে ডাকত,,,,,
কিছু বলতাম না,,বলতে গেলে মার খেতাম,,,রক্তাক্ত
মুখে বাসায় ফিরলে,, মাকে বলতাম,,সিড়ি থেকে পড়ে
গেছি,,,,
এধরণের সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়া আমার
নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেল,,, ভয়ে বাবা মার
কাছে বিচার চাইতাম না,,,কারণ ওরা বলত,,,বাবা মার
কাছে বললে আরো মারবে,,,, একজন পুলিশের ছেলে
ছিল,,,সে বলত,,"ডিম দেবে",,, সেটা কি জানতাম
না,,,কিন্তু ওরা যেহেতু বলছে,,তো ভয়ংকর কিছুই হবে,,,,
এভাবে স্কুলজীবন শেষ করলাম,,,,হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম,,,
অবশেষে শান্তি,,,,
কিন্তু সেই শান্তি বেশিদিন টিকল না,,, একবার
পরীক্ষার সময় এক কদাকার ছেলের পাশে সিট পড়ল,,,
ছেলেটা পুরো পরীক্ষাটাই আমারটা দেখে লিখতে
চাইল,,,, অর্ধেকের মত দেখিয়ে বললাম,,ভাই আমার তো
লিখতে হবে,,নইলে শেষ হবে না,,,, এই বলে বাকিটুকু আর
দেখাতে পারলাম না,,,,,
ছেলেটা তাতেই ক্ষেপে গেল,,, আমাকে বলল,,,দেখে
নিবে,,,,
এরপর থেকে কলেজের সব পরীক্ষায় দেখলাম,,,পরীক্ষার
হলে ওপেনলি সবাই বই দেখে লিখছে,,,স্যাররাও কিছু
বলছে না,,,,
কিন্তু এতকিছুর পরেও ওরা পরীক্ষায় আমাকে হারাতে
পারত না,,, আমাদের কলেজের একটা নিয়ম ছিল,,,ফার্স্ট
হলে কলেজের ফান্ড থেকে বৃত্তি দিত,,,প্রত্যেকবার
আমিই সেটা পেতাম,,,কিন্তু রাখতে পারতাম না,,,টাকা
নিয়ে বাইরে বের হবার সাথে সাথে সেই কদাকার
ছেলের দল টাকাগুলো নিয়ে যেত ছিনিয়ে,,,, ওরা এক
রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিল,,,সবার সামনে টাকা
ছিনিয়ে নিলেও জনসাধারণ রায় দিত,,ওদের পাওনা
টাকা আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে শান্তিপূর্ণ
উপায়ে,,,,
কলেজ ছেড়েও বের হলাম,,, চান্স পেলাম ঢাকার এক
নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,,,,এই প্রথম বাবা মা থেকে
দূরে কোথাও গেলাম,,, মন আমার ভেঙে যাচ্ছিল,,,কিন্তু
বাবা মাকে ভাল রাখতে,,বড় আমার হতেই হবে,,,
ভার্সিটির হলে আমার জায়গা হল,,,জায়গা হল কিছু
সিনিয়র পলিটিকাল ভাইদের সাথে,,,যারা কবে থেকে
এই ভার্সিটিতে পড়ে নিজেরাই জানে না,,,,ভুলে
গেছে,,,
আমার সারাজীবনের সব যন্ত্রণা,অশান্তি সীমারেখা
অতিক্রম করল,,,,এখানে আমি পড়াশুনার টাইম পেতাম
না,,, আমার দায়িত্ব ছিল,,,বড়ভাইদের জন্য সিগারেট
আনা,,,তাদের এসাইনমেন্ট লিখে দেওয়া,,তাদের কাপড়
ধুয়ে দেওয়া,,ঘর ঝাড়ু দেওয়া,,,আর আমার বাবার দেওয়া
মাসিক ৬০০০ টাকার ৫০০০ তাদেরকে দিয়ে দেওয়া,,,,,
প্রতিমাসে শেষ ৬-৭ দিন আমার শুধু পানি খেয়ে থাকা
লাগত,,, ঈদে বাসায় এসে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম,,,
কিন্তু মাকে বুঝাতাম,,কত দিন দেখি নি বলে এই
কান্না,,,আসল কথা আমি আর সাত আসমানের উপর বসে
থাকা একজন ছাড়া কেউই জানত না,,,,
তারপর একদিন আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের একটা
ঘটনা ঘটল,,,, এটা এস এস সি বা এইচ এস সি এর বোর্ডে
প্লেসের আনন্দ না,,, এই আনন্দের নাম কি জানেন
স্যার??? এই আনন্দের নাম "তিশা"
নতুন ব্যাচের সবচেয়ে সুন্দরি মেয়ে,,,দেখলে যেকোন
ছেলের বুক ধড়ফড় করতে বাধ্য,,,,পরীর মত এক মেয়ে,,,,, ওর
সাথে প্রথম কথা বলার ভঙ্গিটাও ইন্টারেস্টিং,,, কারণ
ওই প্রথম আমি ভয়ে না,,,,ব্যাখ্যার অতীত এক
ভালোলাগার কারণে তোতলানো শুরু করেছিলাম।
আমাকে দেখে সে নিজেই এসে বলেছিল,,, "হাই,,আমি
তিশা,,,এবারের নিউ ফার্স্ট ইয়ার,,,, আপনি তো থার্ড
ইয়ারের স্টুডেন্ট,না? আপনার কথা অনেক শুনেছি,,,
শুনলাম আপনি কলেজে আসার পর নাকি,,,জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম প্লেসটা কেউ নিতে পারেনি?"
আমি কি বললাম জানেন স্যার,,, হ-হ-হবে হ-হ-হয়ত,,, আ-
আমি জা-জানি না,,,,
হা হা হা,,,, আমি কি গাধা,তাই না স্যার,,,,,
ওই থেকে শুরু,,, মেয়েটা সেধে সেধেই কথা বলত,,কি
ক্যান্টিন,,কি মাঠ,,,আমাকে আর কখনওই একা দেখা যায়
নি,,,,আমার কষ্টের জীবনের শান্তির স্পর্শ,,,, তিশা,,,,
স্যার,,,, আমার কপালে এত সুখ কেন সইবে বলুন,,,, আমার
রুমমেট,, রাজনৈতিক দলের নেতা দেখে ফেলল
তিশাকে,,,এও জেনে ফেলল,,, ওর আমার প্রতি দুর্বলতা
আছে,,,,,
আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে বলল,,, "*****,,, ওই মালের
সাথে তোরে যদি কখনো আর দেখছি,,,,ছাল তুলে নিব,,,,
এ জিনিস আমার,,বুঝছিস???
আমার ভয় আবার ফিরে এল,,,জানেন স্যার,,,আমার সারা
জীবনের মাত্র ওই তিনমাস বুকের মধ্যে ভয় জিনিসটা
ছিল না,,, শুধু শান্তি ছিল,,,আজ সেটা আবার ফিরে এল,,,
ওইদিন থেকে তিশাকে ইগনোর করতে লাগলাম,,, ফোন
ধরলাম না,,,,মেসেজের রিপ্লাই দিতাম না,,,দূর থেকে
ওকে দেখলেই পালিয়ে যেতাম,,,,
একটা কথা কি জানেন স্যার??? আমি কিন্তু কখনওই
ওকে ভালবাসি কথাটা বলি নি,,,ও ও বলেনি,,,মনে মনে
হয়ত বলতাম,,,মুখে কেউ কাউকে বলতাম না,,,,
একদিন লাইব্রেরিতে বসে পড়ছিলাম,,,কখন ও আমার
পাশে আসল বুঝলাম না,,,, আমাকে বলল,,, "তুমি আমাকে
এভয়েড করছ কেন বল তো,,,তোমার সাথে এক মুহুর্ত কথা
না বললে আমার বুকে যেন পাথর চেপে বসে,,সেটা তুমি
বুঝ না??? তোমাকে একমুহুর্ত না দেখলে চোখ ফেটে
পানি আসে তুমি তা বুঝ না???
ও যথেষ্ট জোরে কথা বলছিল,,,লাইব্রেরির সবাই ওর
দিকে তাকিয়েছিল,,,, আমি বললাম,,, "তিশা,,,তুমি চলে
যাও,,, আমার সাথে তোমাকে দেখলে আমাকে মেরে
ফেলবে,,,প্লিজ তিশা,,,চলে যাও,,,
ওকে পুরো কাহিনী খুলে বললাম,,,,ও শুনে বলল,,,,"শোন,,,জ
ীবনে প্রথমবার যদি কাউকে ভালবেসে থাকি,,সে
তুমি,,,শেষবারের মত কাউকে ভালবেসে থাকলেও সে শুধু
তুমি,,,, অন্য কেউ কিছু বললে বলুক,,,আই ডোন্ট কেয়ার,,,,"
আমাকে অবাক করে দিয়ে ও আমার সামনে হাটু গেড়ে
বসল,,,, "তুমি আমার স্বপ্নের রাজপুত্র,,,যেদিন তোমাকে
প্রথম দেখেছি,,তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি,,,তুমি
আমার সেই রাজকুমার যে প্রতি রাতে পক্ষীরাজে করে
আমার স্বপ্নে আসত,,,আমাকে নিয়ে যেতে,,,, তোমাকে
আমি বাস্তবে খুজে পেয়েছি,,,,তোমাকে আমি ছাড়তে
পারব না,,,তাই মেয়ে হয়ে আজ সব লজ্জা চুলোয় ফেলে
তোমাকে বলছি,,, "আই লাভ ইউ,রাজপুত্র,,,আই লাভ ইউ"
পুরো লাইব্রেরি হতবাক হয়ে আমাদের দেখছে,,,আর
আমি দেখছি ওই হরিণের মত টানাটানা দুইচোখের টলটল
করা পানি,,,ওকে তুলে জড়িয়ে ধরলাম,,,,বললাম,,, "আই
লাভ ইউ, রাজকন্যা"
ওই খবর দাবানলের মত সারা ভার্সিটিতে ছড়িয়ে
পড়ল,,,,পরিণাম হিসেবে,,,সারা রাত আমাকে পচা পুকুরে
গলাপর্যন্ত ডুবিয়ে রাখা হল,,, কোন কারণেউঠতে গেলে
রড দিয়ে আমার পিঠে পিটানো হল,,,,
আমার রক্তাক্ত মুখ দেখে তিশা পরেরদিন আমাকে
বলল,,, "চল,,,আমরা বিয়ে করে ফেলি,,,তাহলে ওই শয়তান
আর আমার জন্য তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না,,,"
আমি বললাম,,, "আচ্ছা,,,তাই হবে"
দুর্ভাগ্যের ব্যাপার,, তিশা আর আমি যখন এই ব্যাপার
নিয়ে আলোচনা করছিলাম,,,সেই ছাত্র নেতার এক
চামচা,,,আমাদের সবকথা শুনে ফেলে,,,,,
আমি রুমে ফেরার পর,,আমাকে বলে,,, "কিরে তুই নাকি
আজ বিয়ে করবি??? চল আমরা সাক্ষী দিই,,,"
ওই শয়তানটার চেহারা দেখে সেদিন বুঝেছিলাম,,,পিশ
াচ বলতে সত্যিই কিছু আছে,,,,
ওরা আমাকে পাঞ্জাবি দিল,,,একজন বর যেভাবে
সাজে সেভাবেই আমাকে সাজালো,,,তারপর আমাকে
তিশাকে ফোন দিয়ে বলতে বাধ্য করাল,,,রাত ১১ টায় এক
নির্জন জায়গায় যেতে,,, যেখানে কাজি অফিস আছে,,,
তিশা ভাবল,,হয়ত আমি লুকিয়ে শয়তানদের চোখ ফাঁকি
দিতে এইভাবে ওকে আসতে বলেছি,,,ও ঠিক সেভাবেই
ওখানে গেল,,,,
স্যার,,, আপনি বিশ্বাস করবেন না,,, ওই রাতে লাল শাড়ি
পরে তিশাকে দেখতে মানুষের মত লাগছিল না,,,
লাগছিল হুরপরীর মত,,,
ও আমাকে বলল,,,এখানে কাজি অফিস কোথায়,,,আর
বিয়ে করব,সাক্ষী লাগবে না???
আমার পিছনের অন্ধকার থেকে ৪ টা পলিটিকাল কুত্তা
বের হল,,,, বড় কুত্তাটা বলল,,,"সাক্ষী একজন,ডার্লিং,,,,
তোমার বর আজ ৪ জন"
বলেই ওরা হাসতে লাগল,,,, তিশা আতংকে আমার দিক
তাকাল,,, আমি ভয়ে আধমরা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম,
,,,তিশার দিক তাকালাম না,,,
চার কুত্তা ওকে তুলে পাশের ঝোপে নিয়ে গেল,,, ও
কাতরস্বরে আমাকে শেষবারের মত বলেছিল,,,, "বাঁচাও,,,"
আমি ডাক শুনে গেলাম,,,কিন্তু একটা চকচকে ছুরি দেখে
ভয়ে মূর্তি হয়ে গেলাম,,,তিশার আর্তনাদ আস্তে আস্তে
ম্রিয়মাণ হয়ে গেল,,,,
কুত্তাগুলো বলতে থাকল,,, "আমার ৭৮ তম,,,আমার ৮৬ তম,,,
আমার ৫৬ তম,,,,"
বড়কুত্তা বলল,,, "আমার ১১৫ তম,,,"
বলে খ্যাক খ্যাক করে হেসে দিল,,,একজন বলল,,,
ভাই,,মনে হয় মইরা গেছে,,, কি করব? ফরেনসিক করলেই
তো ধরা খামু"
বড়কুত্তা বলল,,, পথ আছে,,,
বলে ওরা ছুরিটা দিয়ে তিশার শরীর কয়েক টুকরা
করল,,,তারপর একটা স্যুটকেসে ভরে,,আমার হাতে দিয়ে
বলল,,, "নে তোর বউরে নে,,,, বুড়িগঙ্গায় ফেলবি,,,,আর
তারপর সিগারেট কিনে রুমে আসবি,,,অনেক
খাটাখাটনির পর,,সিগারেটের মজাই আলাদা"
আবার খ্যাক খ্যাক করে হেসে চলে গেল,,,,
অন্ধকার,,, ফাঁকা চারিদিক,,,
একা রাজপথ,,,তার উপর আমি আর তিশা,,, তিশা আমার
কোলে,,,স্যুটকেসের ভিতরে,,,, একটা আজব অনুভূতি
আমার বুকে,,,,
আমার তিশা,,,আমার সামনে আজ চলে গেল,,,আমিই
তিশার খুনি,,,,
ওকে বুড়িগঙ্গা ব্রিজের উপর থেকে ফেলে দিলাম,,,
এখন সিগারেট আনতে যেতে হবে,,,,
আকাশ পাতাল,,,নদী থেকে যেন তীব্র আলোড়ন শুরু
হল,,,সারা দুনিয়া যেন কাঁদছে,,, কোথা থেকে যেন
তিশা বলল,,, " মেরুদণ্ডহীন,,, তোর রূপের প্রেমে পড়ে আজ
আমার এই অবস্থা,,,তোকে অভিশাপ দিলাম,,, তোর দিকে
আজ থেকে যেই মেয়ে তাকাবে,,,ভয়ে আঁতকে উঠবে,,"
জানেন স্যার,,তারপর থেকে মেয়েরা আমার দিক
তাকালে কি দেখে????"
আমি ভয়ে কাঠ হয়ে আছি,, গলা থেকে স্বর বেরুচ্ছে না,,,,
ছেলেটা বল,,, "ওরা দেখে,,,এক বীভৎস পঁচা গলা
অমেরুদণ্ডী, যে কিলবিল করে ওদের দিক যাচ্ছে"
এখন উঠি স্যার,,,ভাল থাকবেন,,,
দরজার কাছে গিয়ে সে ফিরে তাকাল,,,বলল,,, "পুরুষ
মানুষ হয়ে জন্মালে, মেরুদন্ডটাকে শক্ত করতে
হয়,,বুঝলেন স্যার?"
ও বের হয়ে গেল,,, হঠাৎ,,,বাইরে থেকে আমার পি এস
তৃণার কণ্ঠ শোনা গেল,,, ভয়ার্ত কণ্ঠ,,, "ও আল্লাহ,,,এটা
কি!!""
তারপর শোনা গেল তৃণার এক বিকট চিৎকার,,, যা শুনে
আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল

লেখা : ফ্রাংকেনস্টাইনের কুৎসিত দানব

সংকলন ৩৫৫- ব্যার্থতা

লিখাঃ আলমগির হোসেন(লেখক চাচা) ৷
উৎসর্গঃSabiha Surkar Bristy .

⇒ ⇒ মানুষ সৃস্টির সেরা জীব! কিন্তু তার ভিতর যে এতটা
নোংরামী থাকতে পারে জীবনে কখনো কল্পনা করতে
পারি নি! অন্তত পক্ষে তোমাকে নিয়ে না! কারন, তুমি
আমাকে মিথ্যে ভালবাসার ফাদে ফেলেছিলে! তুমিই
আমাকে ভালবাসার আস্বাস দিয়েছিলে! কিন্তু আজকে
সেই ভালবাসাকে অস্বিকার করলে ৷ কেমনে অস্বিকার
করতে পারলে তুমি ?? cry emoticon

আমি তো জানতাম পৃথিবীতে বিস্বাস নামে একটা
জীনিস আছে! আর সেই বিস্বাসের কারনেই পৃথিবী
টিকে আছে! কিন্তু আজ আমি পুরোপুরী সাক্সেস যে
আসলে এখন আর সেই বিস্বাস জিনিস টি নেই! মানুষ
রিয়েল ভালবাসাকে লাথি মেরে পথের দুলোয় ফেলে
দেয়! এবং ফালতু ভালবাসাকে বুকে টেনে নেয়!
ফালতু লোকের ভালবাসার অভাব হয় না বাট, সহজ সরল
লোকের. ভালবাসার খুবই অভাব! cry emoticon

মানুষ রিয়েল ভালবাসাকে করে দিয়েছে কঠিন আর
ফালতু ভালবাসাকে করে দিয়েছে সহজ! তদ্রুপ, আমি
তোমাকে বিস্বাস করে ছিলাম, সুধুই বিশ্বাস নয়,
তোমাকে সত্যিকারে ভালই বেসে ছিলাম! আমি কখনো
ভাবি নি তুমি আমাকে এ ভাবে ধোকা দিয়ে চলে যাবে
!

আমি জানি ভার্চুয়াল লাইফের ভালবাসার কোন মূল্য
নেই কিন্তু আমি বলব আমি তোমাকে সত্যিই ভালবেসে
ছিলাম, সুধুই তোমার কথার মাধ্যমে, তোমার আচরনের,
মাধ্যমে, আর সব চেয়ে বড় কথা এটা যে তুমিই আমাকে
ভালবেসে ছিলে তবে আজ কেন ধোকা দিলে? ৷

যখন তুমি আমার সাথে প্রথম ইনবক্স করো তখন আমি
তোমাকে অনেক বার বুঝিয়েছিলাম আর তুমি বার বারই
আমাকে বলেছ তুমি আমাকে সত্যি কারেই ভালবাস!
ছিঃ ছিঃ ছিঃ cry emoticon cry emoticon আমার ভাবতেও ঘৃনা হয় তুমি এই রকম
একটা জঘন্য মেয়ে, তোমার ভিতর এতটাই নোংরামী
বাস করে! আমি তোমাকে তোমার রুপ, সৌন্দর্য দেখে
কখনোই লাভ করি নি আমি তোমার ভিতর একটা
চাঁদের আলো দেখেছিলাম আর তাই দেখেই আমি
তোমাকে ভালবেসে ছিলাম

আমার ধর্ম যদি ইসলাম হয়! আমি যদি, মুসলমানের বাচ্চা
হই তবে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো আমি
তোমাকে সত্যিকারেই ভালবেসে ছিলাম! কিন্তু আজ
আমার সেই বিস্বাস টুকু কিসের জন্য ধুলোয় মিশিয়ে
দিলে? ? এইটা ভার্চুয়াল লাইফ সেই জন্য না আমাকে
তোমার পছন্দ হয়নি সেই জন্য? ? cry emoticon

তোমার যদি পছন্দ নাই হত তবে প্রথম দিন কেন বলে
দাওনি তুমি আমাকে তোমার স্বার্থের জন্য ব্যবহার
করছো? ব্যবহার করছো ক্ষনিক সময়ের টাইম পাছের জন্য!
বাহ্ বাহ্ বাহ্ তোমার অভিনয় তো খুব সুন্দর! তুমি এই রকম
মিথ্যে ধোকা দিতে পারো?? মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে
দিতে পারো ?? এত সুন্দর নিখুত অভিনয় করতে পারো ??

তাহলে তুমি এখানে কেন যাও তুমি সিনেমায় গিয়ে
অভিনয় করো ?? আমি বলছি তুমি অভিনয়ে ঠিকই
নোবেল পুরস্কার পাবে! থাক ওসব কথা, তুমি হয়ত ভাবতে
পারো, তোমার সাথে আমার পরিচয় ক্ষনিক সময়ের জন্য
৷ আমি কেন তোমাকে এত চার্জ দিব? ?

আরে বোকা তুমি এটাও কি বুজনা যে রিয়েল লাভ করে
সে নিশ্চই চার্জ দেয় কেননা, তার ভিতর একটা
হারানোর ভয় থাকে, তুমি যদি অন্য কারো সাথে সম্পর্ক
করো ? তুমি যদি হারিয়ে যাও ইত্যাদি ইত্যাদি!
তোমাকে আমি ব্লক মারতে ঠিকই বলেছিলাম কিন্তু
এটা কেন জানো? ? ব্লক মারতে বলেছিলাম এই জন্য যে
তুমি আমাকে সত্যি কারে লাভ করো কিনা সেটা
পরিক্ষা করার জন্য! আবার এতটাই চার্জ দিয়েছিলাম
এটাও তোমাকে পরিক্ষা করার জন্য যে তুমি আমাকে
আসলেই লাভ করো কিনা? ?

আর তুমি সত্যি সত্যিই আমাকে ব্লক মারলে?
তোমাকে এই পরিক্ষা গুলো করেছিলাম শুধুই তোমার
মুখের কথা শুনে, কেননা, তুমি বার বার. আমাকে
ভালবাসি ভালবাসি বৱেছিলে! কেন এই গুলো
বলেছিলে কিসের জন্য করেছিলে ?? আজ আমার
চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করতেছে যে এই
পৃথিবীতে এখন আর একটাও ভাল মানুষ নেই! সবাই
স্বার্থপর, ভন্ড, প্রতারক,

আমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে তুমি ধোকা দিয়েছ! তুমি সুখে
থাক জান সুখে থাক আমি এই দুয়াই করি ৷ আমি
ভার্চুয়ালের সবাইকে সাক্ষি রেখে বলতেছি পৃথিবীতে
যতদিন বাচবো ততদিন আমি তোমাকে মনে রাখব আর
চোক্ষের জ্বল ফেলবো!
বলব ভার্চুয়ালে আমি এক মেয়ের দ্বারা প্রতারিত
হয়েছিলাম! তোমার সাথে আমার দেখা হবে ঐ হাশরের
ময়দানে! তুমি সুখে থাকো, শান্তিতে থাকো? ?

বিঃদ্রঃ আমার এই জীবন কাহিনী হয়ত বা কারো ভাল
লাগবে ৷ আবাপ কারও ভাল লাগবেনা ৷ যাদের কাছে
ভাল লাগবেনা প্লিজ তারা এই পোস্ট এরিয়ে যাবেন
প্লিজ ৷
:
সারমর্ম :: আমার মত কেহ এই রকম ভূল করবেন না ৷ যদি ভূল
করেন তাহলে অবস্যই এর মাশুল একদিন দিতে হবে ৷
ভার্চুয়াল লাইফে কখনো প্রেম, ভালবাসায় জরাবেন না
প্লিজ ! প্লিজ ! প্লিজ!

সংকলন ৩৫৭- খুনশুটি ও ভালবাসা

ক্লাসে বসে বারবার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছে পূর্বা।
রবিন এখনও ক্লাসে আসেনি। সবসময়ে্ই যে রবিন ঠিক
টাইমে ক্লাস করে, তা কিন্তু না। কিন্তু আজ কেন দেরি
করবে ও? তাছাড়া ও বলেছিলো আজ ঠিক সময়ে ক্লাসে
পৌছে যাবে। অথচ এখনও আসছে না। পূর্বা ওর পাশে
রবিনের জন্য জায়গাও রেখেছিলো। এই মাত্র শ্রেয়া
সেই সিটটা দখল করে নিলো। শ্রেয়া এটা ইচ্ছে করেই
করেছে। ওর বসার আরও জায়গা ছিল। কিন্তু পূর্বাকে
রাগানোর জন্যই রবিনে জন্য রাখা জায়গাটাই দখল
করতে হলো তাকে। পূর্বা বসে বসে কলম কামড়াচ্ছে।
কলম কামড়ানোটা ওর মুদ্রা দোষ। এর জন্য জীবনে কম
বকুনি খেতে হয়নি তাকে। ওদের স্কুলের ম্যাডাম প্রায়ই
বকতেন ওকে। আর বলতেন, “কলমের মধ্যে কি এমন স্বাধ
লুকিয়ে আছে, যে এটাকে সারাক্ষণ কামড়াতে হবে?
বাসা থেকে চাটনি লাগিয়ে এনেছো নাকি?” এভাবে
বকতে বকতে এক সময় টিচারও হাল ছেড়ে দিলেন। কিন্তু
পূর্বা হাল ছাড়েনি। এখনও ধরে রেখেছে অভ্যাসটা।
.
স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। পূর্বা বারবার বাহিরের দিকে
তাকাচ্ছে। অবশ্য বাহিরের দিকে তাকিয়েও খুব একটা
লাভ হচ্ছে না। রুমের জানালাগুলো বন্ধ করা। জানালায়
কাঁচ লাগানো আছে। কিন্তু দিন দিন ময়লা পড়ে ঘোলা
হয়ে আছে কাঁচগুলো। ভেতর থেকে তাকালে বাহিরের
কিছুই দেখা যায় না। তবুও বার বার বাহিরে দেখার
চেষ্টা করছে পূর্বা। এখনও রবিনে যে কেন আসছেনা,
বুঝতে পারছে না কিছুই। আজ একটা বিশেষ দিনও বটে।
ওদের প্রথম ভ্যালেন্টাইন আজ। ইচ্ছা ছিল, প্রথম
ক্লাসটা একসাথে করবে দুজনে। এরপর বাহিরে কোথাও
ঘুরতে বের হবে। কিন্তু ডালিম কুমারের এখনও আসার
কোনও নাম নেই। রাগে মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে ওর।
ইচ্ছে হচ্ছে ওকে কাছে পেলে চিবিয়ে খেতে। খাওয়ার
পর দুই গ্লাস বোরহানি খেয়ে সব হজম করে ফেলতে
পারলে আরও ভাল হত। কাঠপট্টি রোডের বিরিয়ানির
হাউজের বোরহানিটা বেশ ভাল হয় খেতে।
.
এতক্ষণে পেছনের দরজা দিয়ে নাযিল হলেন মিস্টার
মহারাজ। এসেই একটা দাঁত কেলানো হাসি উপহার
করলেন পূর্বাকে। দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। বেছে
বেছে পূর্বার পেছনের সিটটাতেই আসন গ্রহন করলেন
তিনি। অতঃপর ভাবুক কবির মত মুখে হাত রেখে পূর্বার
কাছে দেরিতে আসার জবাবদিহিতা করতে লাগলেন।
ওর কথার জন্য পূর্বা ঠিকভাবে লেকচারও শুনতে পাচ্ছে
না। এখন আগের থেকেও বেশি বিরক্ত লাগছে ওর। মনে
হচ্ছে ও ক্লাসে না আসলেই ভাল হত। অন্তত ক্লাসটা
ঠিকমত করা যেত। রবিন মুখে হাত রেখে বলছে,
-তোমার আরও পেছনে বসা উচিত ছিল
মিরাক্কেলের “পলাশ অধিকারী” এর মত করে মুখ না
নেড়েই পূর্বা জিজ্ঞেস করে,
-কেন?
-স্যার নার্ভাস ফিল করছেন
পূর্বা মুখে বিরক্তির ভাব এনে বললো,
-উফফ্! লেকচার শুনতে দাও।
-এটা আর শোনার কি আছে? দেখছো না, Coefficient of
Variance বাদ দিয়ে বসন্তের কথা বলছেন। এটা তোমার
কারনেই হচ্ছে।
-চুপ করো
-ওকে সরি। শোনো।
ইতোমধ্যে স্যারের সুদৃষ্টি নিক্ষেপ হলো ওদের উপর।
এসে রবিনকে জিজ্ঞেস করে,
__কোনও প্রবলেম?
_স্যার আসলে না... আমি তো স্যার দেরি করে ফেললাম
স্যার... সরি স্যার... আপনি আগে কি পড়িয়েছেন, আমি
তো জানিনা। এটা ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম স্যার...
কিন্তু ও আমার কথা শুনতে পাচ্ছিলো না... আপনি
পেয়েছেন।
__আপনি এক কাজ করুন। ক্লাস শেষে আমার অফিসে চলে
আসুন।
_জি স্যার নিশ্চয়ই আসবো।
.
স্যার ওখান থেকে সরে যেতেই রবিনের টিটকারী
মার্কা কথা শুরু...
-স্যারের দেখছি তোমার জন্য অনেক মায়া।
-হুম। অনেক মায়া। এখন চুপ করো।
-তাহলে তুমি এক কাজ করতে পারো।
-উফফ্...
-বলবো কি কাজ? বলি?
পূর্বা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-না! না!! না!!
-স্যার তো বসন্তের কথা বলছেন, তুমি স্যারকে
ভ্যালেন্টাইন গিফট হিসেবে কোকিলের ডাক ডেকে
শুনিয়ে দিতে পারো।
এবার আর পূর্বা বিরক্তি ভাবটা ধরে রাখতে পারলো
না। ওর পাগলামী কথা শুনে হেসে উঠলো। তবে অবশ্যই
তা স্যারের দৃষ্টিকে আড়াল করে।
***
.
কলা ভবনের পেছনে লেকের পাড়ে বসে আছে দুজন। রবিন
একরাশ বিরক্তি নিয়ে পূর্বার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিরক্তির কারন, পূর্বা আজ মেকআপ করে এসেছে।
মেকআপ ছাড়াই ওকে সুন্দর দেখায়। মেকআপ করলে ওর
সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা থাকে না। এখন পূর্বাকে
দেখে মনে হচ্ছে রাজ্যের সব আটা ময়দা সুজি ওর মুখে।
গালের উপর হালকা টমেটো সসের প্রলেপও আছে। রবিন
এখন এতটা রেগে আছে, পারলে ওকে এখনই লেকের
পানিতে চুবোয়। কিন্তু ও পূর্বাকে কিছু বলছে না। এই
বিশেষ দিনে ও পূর্বার মনে কষ্ট দিতে চায় না। পূর্বাও
জানে রবিনের মেকআপ পছন্দ না কিন্তু এতটা অপছন্দের,
তা জানত না। আজকের ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষ্যে একটু
সাজ-গোজ করেছিলো ও। এখন ও রবিনের দিকে
তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। ও তাকিয়ে আছে লেকের
পানির দিকে। পানির রঙটা একটু নীলচে ধরনের। তবে
বেশ ভালই পরিষ্কার। পনির উপর অল্প কিছু কচুরিপানা
থাকলে ভাল হত। কচুরিপানার সাদা ফুলগুলো ওর পছন্দ।
কিন্তু কোনোদিন হাতে ধরে দেখার সৌভাগ্য ওর হয়নি।
যে পানিতে কচুরিপানা থাকে, সে পানিতে কেউ
নামতে চায় না। তাহলে গায়ে চুলকানি হয়। তাই দুর
থেকেই ফুলগুলো দেখতে হয়েছে পূর্বাকে। এই লেকে
কচুরিপানা নাই। কিন্তু সাত-আটটা রাজহাস দেখা
যাচ্ছে। হাসগুলো পানিতে সাতার কাটছে আর কচকচ
করে পানি চিবিয়ে খাচ্ছে। রাজহাসগুলো দেখতে বেশ
সুন্দর। কিন্তু ওদের ডাকটা খুব বিশ্রি। শুনলে পূর্বার
পিলে চমকে যায়। তাই ও রাজহাস থেকে নিরাপদ দুরত্ব
বজায় রাখে।
.
এতক্ষন পর রবিনের মুখে একটু বুলি ফুটলো।
-পূর্বা
-হুম
-আরও কিছুক্ষণ থাকবে, নাকি উঠবে?
-চলো ওঠা যাক।
একটা রিকসা ডেকে নিয়ে দুজন বসলো তাতে। রবিন যে
পূর্বাকে বকে নাই, এতই ও অনেক খুশি।
.
রিকসাতে করে যাচ্ছিল দুজন। তখন সামনে থেকে আসা
একটা রিক্সা থেকে একটা মেয়ে মাথা উচিয়ে বলল,
“হাই রবিইইন”। রবিন কিছু বলছে না। ভয়ে মুখ কাচুমাচু
করে বসে আছে। এখন পূর্বা ওকে পুরোদমে ঝাড়বে।
ভাবতে না ভাবতেই শুরু হল পূর্বার জেরা।
-মেয়েটা কে?
-কোন মেয়েটা?
-যে তোমাকে দেখে রাজহাসের মত গলা বাড়িয়ে ‘হাই’
দিলো
-কি জানি! ভার্সিটির জুনিয়র হবে হয়ত
-তোমাকে চেনে কিভাবে?
-চিনতেই পারে
-তুমি চেন না?
-মনে পড়ছে না।
-ঠিকমত ভেবে বলো। জুনিয়র কেউ তোমার নাম ধরে
ডাকবে না।
-ও আচ্ছা। তাহলে ও আমার কাজিন হতে পারে। ঠিকমত
দেখতে পাইনি তো।
-কে এমন কাজিন, যে তোমাকে দেখামাত্রই চার আলিফ
টান দিয়ে তোমার নাম ধরে ডাকলো?
-বড় মামার মেজ মেয়ে, তন্নী
-ও আচ্ছা। ফোন করো তাকে।
-কেন?
-আমি বলেছি তাই। জিজ্ঞেস করো, সে এখন কোথায়?
-ছাড়ো না এসব। কিসব নিয়ে কথা বলছি আমরা!
-তুমি ফোন দিবে কি না?
-আচ্ছা দিচ্ছি
.
ওপার থেকে ফোন ধরতেই রবিন বললো,
_হ্যালো তন্নী
__হ্যা ভাইয়া, কেমন আছো?
_হুম ভালো। তুই ভাল আছিস?
__এইতো আছি।
_কি করিস?
__বাসায় বসে টিভি দেখতেছি
_ও আচ্ছা। কোথাও বের হসনি?
__কিভাবে বের হবো? আম্মু তো বের হতে দেয় না। তুমি
এসে দু’একদিন থেকে যাও না, প্লিজ। বড্ড একা একা
লাগছে।
_আচ্ছা দেখবো। এখন রাখি রে
__রাখবা? আচ্ছা রাখো
ফোন রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে রবিন। এক
প্যাঁচ খুলতে গিয়ে আর এক প্যাঁচে পড়ে গেছে। এবার
পূর্বা বলছে,
-বড্ড একা একা লাগছে। তাই না?
-আমি তো কিছু বলি নাই
-এমন আর কত কাজিন আছে তোমার?
-আর নেই। একটাও নেই
-ফের মিথ্যে কথা! তোমাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি...
.
পূর্বা সমানে বকে যাচ্ছে ওকে। রবিন মাথা নিচু করে শুধু
শুনে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই কেউ ওকে বকলে ও
কেঁদে দিত। এখন ওর ভয় হচ্ছে, এমন বকুনি শুনে কখন যেন
আবার কেঁদে ফেলে ও। তাহলে তো মান-সম্মান সব
প্লাস্টিক! প্রেমিকার বকুনি শুনে প্রেমিক কেঁদে
দিচ্ছে। শুনলে লোকে কি বলবে! এর মধ্যে পূর্বা বলে
উঠলো,
-এই, তুমি চোখ মুছ। কাঁদছো কেন?
-বলে কি! এরই মধ্যে কেঁদে ফেলেছি নাকি?
চোখ মুছতে গিয়ে রবিন লক্ষ্য করে, ওর চোখ শুকনো। তার
মানে ও কাঁদেনি। কিন্তু... পূর্বা ওর মনের কথা বুঝলো
ক্যামনে?
লেখা__ Nazmul Hossain Nayeem



সংকলন ৩৫৪- আজব প্রপোজ মাইরী

রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় এক মেয়েকে দেখে
থমকে গিয়েছিলাম। আগে যদি জানতাম এমন সুন্দরী
আমার বাসার সামনের রাস্তা দিয়া যায় তাইলে বাপের
বাড়ি বিক্রি করে রাস্তাটা কিনে নিতাম।কিন্তু এখন
সিদ্ধান্ত নিলাম এই মেয়ের সাথে প্রেম করতেই হবে।
অতঃপর আমি মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আর
এভাবে হঠাৎ করে একটা ছেলে সামনে আসায় ও ভয়
পেয়ে পিছিয়ে গেল। তারপর আমি শুরু করলাম প্যাঁচাল -
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম আপু। আমি ফাহিম। আমি
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে বিজ্ঞান বিভাগে পরি। আমি খুব
ভাল ছেলে। নেশা করিনা। আর সিগারেট তো চোখেই
দেখি নাই। আর হ্যা আমার প্রেমের অভিজ্ঞতা নাই।
কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হল কেউ আমার বুকে ড্রাম
বাজাচ্ছে। তার মানে আমি আপনাকে দেখে টাস্কি
খাইছি কিন্তু এখন পানি খাব!!! এখন যদি আপনি রেগে
যান তাহলে আমি পালাচ্ছি আর হ্যা আমার সালাম টা
নিয়েন।
এই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেয়ার পর আমি তার সামনে থেকে
চলে আসলাম। তাকে কিছু বলার সুযোগও দেইনি। যদি
খারাপ কিছু বলে এই ভয়ে। কারন আমি খুব লাজুক পোলা।
আর নিজের প্রশংসা নিজে করার মজাই আলাদা। হি হি
হি...
[কি ছেলেরে বাবা!! প্রপোজ করল না কি সেটাই
বুঝলাম না। আজব ছেলে। আগে অনেক ছেলেই তাকে
প্রপোজ করেছে কিন্তু এমন করে কেউ করেনি। তবে এই
ছেলের স্টাইলটা মজাই লেগেছে..এসব ভাবতে ভাবতে
মীম প্রাইভেট যাচ্ছিল]
পরেরদিন সকালে,
এবারে মীম দেখতে পেল ফাহিম ওর সামনে আসতেছে।
কিন্তু আজকে ভয় পেল না। কালকে ছেলেটার প্রপোজ
স্টাইলটা মজাই লেগেছে।
ফাহিমঃ আপু আসসালামু আলাইকুম
মীমঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছু বলবেন পিচ্চি
ভাইয়া?
[মেয়েটার মুখে এই কথা শুনে নিজের চুল গুলো ছিড়তে
ইচ্ছা করছিল ফাহিমের। কেন যে আপু বলতে গেল।
ফাহিমঃকালকে আমি আপনাকে কিছু বলেছিলাম। তার
উত্তর টা দিবেন??
মীমঃ আসলে ভাইয়া কালকে আপনি যা বললেন সেটা
শুনতে ভালোই লেগেছে। কিন্তু আমি কিচ্ছুই বুঝিনি!!

এবার মেয়েটার মাথার চুলগুলো ছিড়ার ইচ্ছা করছিল ওর।
তবে নিজেকে দমিয়ে রাখল ফাহিম।
ফাহিমঃ ও। আচ্ছা আপনার নামটাই তো জানা হল না।
কি নাম আপনার?
মীমঃ আমার নাম মীম। আচ্ছা আমার সমপর্কে জেনে
আপনার কি লাভ?
ফাহিমঃ কালকে শুনেন নাই??
মীমঃ বললাম তো কিচ্ছু বুঝি নাই।
এবার ফাহিম মাথায় হাত দিয়ে বলল " আসলে কালকে
আমি আপনাকে দেখেই আপনার প্রেমে পড়ে গেছি।
আমি আপনাকে ভালবাসি।
মীম বিচলিত না হয়ে তাকে বলল " যাকে ভালবাসেন
তাকে আপু বলে ডাকছেন ক্যান?? "
ফাহিমঃ অভ্যাস নেইতো। তাই কি বলব বুঝতে পারিনি।
মীমঃ আচ্ছা ভেবে দেখব।
ছেলেটার কথাবার্তায় ওকে ভালই লেগেছিল মীমের।
আসলে ও চেয়েছিল এমন একটা বোকা বয়ফ্রেন্ড যাকে
নাচানো যাবে। তাই ও ঠিক করল ছেলেটাকে একটু
ঘুরাবে।
আবার পরের দিন যথারীতি দেখা দুজনের
ফাহিমঃ আপু আমার... স্যরি মীম আমার উত্তরটা?
মীমঃ হি হি হি।। স্যরি ভাইয়া আমি আপনাকে
ভালবাসতে পারব না। তবে একটা চান্স দিতে পারি।
ফাহিমঃ কি???
মীমঃ এমন ভাবে প্রপোজ করত হবে যাতে আমার মন গলে
যায়। পারবেন?
ফাহিমঃ আচ্ছা।
পরেরদিন অনেক ভেবেচিন্তে ফাহিম মীমকে প্রপোজ
করার পদ্ধতি বের করল। ভাল করে সেঁজেগুজে গেল।
রাস্তায়...
মীমঃ হুম। শুরু করুন
ফাহিমঃ আ আ আ আ আ
মীমঃ হায় হায়! আপনি দেখছি বোবা হয়ে গেছেন!
ফাহিমঃ আসলে তা নয়।১ম বার তাই সমস্যা হচ্ছে।

মীমঃআগেরদিন তো বললেন!
ফাহিমঃ সেদিন ত প্রপোজ করিনি
মীমঃ তাইলে থাকেন।আমি গেলাম।যত্তসব পাগল
ফাহিমঃ ইসসস প্রেম করা হবে না নাকি? মেয়েটাকে
কি করে যে রাজি করাই!!
পরেরদিন আবার ফাহিম শার্ট-প্যান্ট পরে হাতে
গোলাপ নিয়ে দাড়াল।
ফাহিমঃ আমি আপনাকে ভা ভা ভআআল..
মীমঃ তারপর
ফাহিমঃ ভা ভা ভা ভ আভ ভালবাসি..... আহ! বলেছি!!
মীমঃ এরকম হ্যাংলা স্টাইল আমার পছন্দ হয়নি। বাই
এভাবে রাজি না হওয়ায় ফাহিম লুংগি পরে,হাফ প্যান্ট
পরে, গেঞ্জি পরে,খালি পায়েও প্রপোজ করল। কিন্তু
বালিকা ওকে দেখেই অট্টহাসি দিত আর বরাবরের মত
না বলত।
অতপর এক বন্ধুর কাছে প্রেম প্রস্তাবের বিষয়ে জ্ঞান
নিতে গেল ও। সেই বুদ্ধি অনুযায়ী মীমের সামনে
দাড়িয়ে একটা ১০০০ টাকার নোট বের করে ফাহিম ওকে
প্রপোজ করল। কিন্তু তারপরের কাহিনী খুবই কষ্টের।
ফাহিম কথাটা বলার পরেই নিজের গালে পাঁচ আংগুলের
দাগের উপস্থিতি টের পেল।আর মীম বলল
মীমঃ তুমি আমাকে ১০০০ টাকা দিয়ে প্রপোজ করতে
এসেছ? ছি!
ফাহিমঃ কেন?? কম হয়েছে??
দূর্ভাগ্যজনক ভাবে এই কথা বলার পর ফাহিম কে দুই
গালেই হাত বুলাতে দেখা গেল। কি হয়েছে সেটা
ইতিমধ্যে আপনাদের বুঝার কথা।
বন্ধুর বুদ্ধিটা কাজে না দেয়ায় বড়ভাই এর কাছে বুদ্ধি
নিতে গেল ফাহিম। তিনি বললেন মেয়েরা ডিজুস
পোলা পছন্দ করে।তাই ওকে ডিজুস পোলা হতে হবে।
ভাইয়ের কথামত ও পরদিন সকালে চুলে জেল নামক
আঠালো পদার্থ দিয়ে অভিকর্ষ বলকে ভুল প্রমানিত
করে চুল খাড়া করল। তারপর চোখে চশমা দিয়ে শরীরে
পারফিউম মেখে একটা টি-শার্ট, আর হাফ প্যান্ট পরে
বাইকে চড়ে মীমের সামনে গেল।

ফাহিমঃ বালিকা তোমার সাথে সারাজিবন কাটাতে
আমি একপায়ে খাড়া।
মীমঃ১ পায়ে কেন? তুমি খোড়া নাকি??
এভাবে ওকে বোল্ড হতে হবে ও ভাবেই নি। ওকে দেখেই
মীম আবার বলল "আমি এরকম ছেলে পছন্দ করিনা"। বলে
চলে গেল। আর একটি হতাশ প্রপোজ নিয়ে বাসায় ফিরল
ফাহিম।
পরদিন আবার সাধারণ ছেলের মত প্রপোজ করতে গেল
সে-
ফাহিমঃ আমি তোমাকে ভালবাসি
মীমঃ আচ্ছা আমি তোমারে এতবার ফিরিয়ে দিলাম
তাও হাল ছাড় না কেন?
ফাহিমঃ বইয়ে পড়েছি failure is the pillar of success
মীমঃ হি হি হি। এই সাকসেস এর জন্য কতগুলা পিলার
বানাবা?
ফাহিমঃ যতক্ষণ রাজি হবা না।
মীমঃ ভাল। আচ্ছা বাই
বাসায় এসে আবার ভাবনা শুরু করল সে।এবার ফেসবুক
ঘেটে কিছু ভালবাসার গল্প পড়ল ফাহিম। সেখানে
অনেক লাইন ওর মনে ধরল। কালকে সেই লাইন গুলিই
বলবে বলে ভাবল।
অপরদিকে ছেলেটাকে অনেক জ্বালানোর পর কালকে
হ্যা বলার সিদ্ধান্ত নিল মীম।আসলে ও নিজেও
ফাহিমকে ভালবেসে ফেলেছে। কিন্তু ও যদি একটু
রোমান্টিক ভাবে প্রপোজ করত তাহলে অনেক আগেই
ওকে হ্যা বলে দিত মীম।শুধু ভাবত কখন এভাবে প্রপোজ
করবে। নাহ ওকে দিয়ে প্রপোজ করানো হলনা মনে হয়।
তাই ও নিজেই রাজি হবে ভাবল।
অবশেষে এল সেই দিন। ফাহিম পাঞ্জাবী পড়েছে
আজকে। হাতে ৩ টা লাল গোলাপ। মীম আজকে একটু
সেঁজেগুজে এসেছে।ওকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছিল।
যথারীতি ফাহিম ওর সামনে এসে দাড়াল।তারপর
সারারাত ধরে মুখস্থ করা প্রেমের বানী সুন্দর করে বলা
শুরু করল -
ফাহিমঃ বালিকা তুমি কি আমার মনের মাঝে নিজের
বসত গড়বে? হয়ত খুব ধন-সম্পদ দিয়ে তোমায় খুশি রাখতে
পারব না।কিন্তু কথা দিলাম আজিবন তোমায় একইভাবে
ভালবাসব। কখনো ভালবাসার কমতি হতে দিব না।
সারাটি জীবন তোমায় ভরিয়ে রাখব অজস্র ভালবাসায়।

হবে বৃষ্টিবিলাসে আমার সংগি? তুমি কি ভালবাসবে
আমায়??
[এতদিন পর মীমের মনের মত করে ওকে প্রপোজ করল
ফাহিম। এমনিতেই ও আজকে রাজি হয়ে যেত।তবে
এভাবে আরো ভাল লাগছিল ওর।তাই অবশেষে হ্যা উত্তর
টা দিয়েই দিল]
মীমঃ যাক আজকে হয়েছে বুদ্ধু। ভালবাসি তোমায়....
অবশেষে শুরু হল আরেকটা ভালবাসার নতুন অধ্যায়। সুখে
থাক তারা দুজনে আর তাদের ভালবাসা...

লেখা ঃ হোমো সেপিয়েন্স



সংকলন ৩৫৩- এক বর্ষা মূখর দিনে

-আরে ইউসুফ ভাইয়া কেমন আছেন ?
-এই সময়ে আবার কে ডাক দিলো।
এখনি একটা চর মারতে পারলে
মনটায় অনেক শান্তি পেতাম
কারন সিগারেট খাবার সময়
আমাকে কেউ বিরক্ত করলে
আমার মাথা গরম হইয়া যায়।কিন্তু
এগুলোর কিছুই বলাও হল না আর
করাও হল না।তাই
এক রকম বাধ্য হয়েই পিছে
ফিরলাম পিছে
ফিরে আমি একরকম চমকেই উঠলাম
কারন
আমার পিছে একটা পরি
দারিয়ে আছে। এই
মূহুর্তে নাটোরের বনলতা
সেনের কথা মনে
পরে । কিন্তু আমি কোন কবি
নইযে এর অপার সুন্দরর্যের বর্ননা
দিয়ে কবিতা লিখবো। তবুও কিছু
কথা থেকে যায় যা না বলাই
ভাল।
-ভাইয়া আপনি কি আমার কথা
শুনছেন?
-ও ও তুমি। কেমন আছ? বাসার সবাই
ভাল?
-আরে আপনি তোতলাচ্ছেন
কেন!! আর আপনি সবসময় এত গুলা
প্রশ্ন একসাথে করেন কেন?
-আরে ফাজিল মাইয়া তুমি জদি
বুঝতা তাইলে কি আমার এতদিন
একা থাকতে হয়। কিন্তু কিন্তু
কিছুই বলতে পারলাম না।আরে
না এমনি জিজ্ঞাস করলাম । তা
কোথায় যাচ্ছ?
-আপনাকে কি সব বলতে হবে?
-না না তা বলবা কেন বেয়াদব
মে কোথাকার।
আরে না কি জে বলো আমি তো
এমনি জিজ্ঞাস করলাম। এই
কথাটা বলে একটা ফিসলা
হাসি দিলাম।
-আপনি সব সময় হাসেন কেন?
আপনার হাসি দেকলে আমার গা
জ্বলে যায়।
-মনে মনে বলি ওই পিচ্চি আমার
হাসিতে কি পেট্রোল আছে
যে তোর গা জ্বলে যায়।
আসলে তুমিতো এখন ছোট তাই
জান না যে হাসলে হার্ট ভাল
থাকে আর তা ছারা আরো
অনেক উপোকার করে শরিরের।
-আপনি আবার আমাকে ছোট
বল্লেন । আপনি জানেন না আমি
এখন Inter 1st ইয়ারে পরি। আর
দাড়ান আজ আপনাদের
বাসায় গিয়ে আন্টির কাছে
বিচার দিবো যে
আপনি সিগারেট খান!!
-এইরে বাসায় জদি বলে
তাহলেই হইছে!! আরে কে
বলেছে তুমি পিচ্চি তুমি এখন বড়
হয়ে গেছ তাই না!!
-আপনিতো বললেন এইমাত্র
-ও মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে। আর
বের হবে না এখন থেকে
প্রতিদিন ডিটারজেন্ট দিয়ে
কুলি করবো।
-ওকে যান বলবো না এই বলে
একটা হাসি দিয়ে চলে গেল আর
আমার বুকেও আগুন দিয়ে চলে
গেল। ওর এই হাসি দেকলেই বুকের
বাম পাশে কেমন জানি করে।
কি রকম ফিলিংস সেইটা
নিজেও বুঝে উঠতে পারি না।
ওর নাম সামান্তা। ও আমাদের
এলাকায় থাকে
আর ওর বাসার সাথে আমাদের
বাসার অনেক ভাল সম্পর্ক প্রায়
যাওয়া আসা হয়।
আমি যখন Inter 1st ইয়ারে পরি তখন
থেকেই ওকে পচ্ছন্দ করি। আমার
মনের
এক কোনে একটু একটু করে এই
ভাললাগা ভালবাসায় পরিনত
হয়েছে। কিন্তু
এই পিচ্চি বোঝে না আমার
মনের ভাষা।
আর তাই আমিও জোর দেই না।
২.
ভার্সিটি থেকে ক্লাস করে
আসা ধরছিলাম।
যেহেতু বর্ষাকাল তাই যা হওয়ার
তাই হলো।
ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামলো। আর
আমার এক কথায় বৃষ্টি ভাল লাগে
না কিন্তু জোর
করেই ভিজতে ভিজতে বাসায়
দিকে রওয়ানা দিলাম।
এলাকায় ঢুকবো ঠিক তখনি
দেকলাম কিছু দূরে আরেকটি মে
খুব আনন্দের সাথেই বৃষ্টিতে
ভিজতেছে।
একটু ভাল করে লক্ষ্য করলাম আর
ঠিকি
চিনতে পেরেছি এই পাগলীটা
সামান্তা।
আমি ওর কাছে গেলাম খুব কাছে
গিয়ে
ডাক দিলাম
-এই পিচ্চি বৃষ্টিতে ভিজতেছ
কেন?
আমার কথা শুনে একটু ভয় পেল
তারপর
পিছে ফিরে দেকলো আমি তবুও
পুরাপুরি ভয়টা গেল না চেহারা
থেকে!
-আপনি আবার আমাকে পিচ্চি
বললেন।
-তাইতো আমি আবার ভুল করলাম!!
-আপনাকে কিছু বলে লাভ নাই
আপনি একটা আপনি একটা,,,,
-আমি একটা কি?
-আপনি একটা মিচকে শয়তান।
(রাগের ইমু)
-ও তাই নাকি। তা মিচকে শয়তান
আমার মত
দেকতে নাকি?
-হুম। এই বলে আবার একটা হাসি
দিল
-এইরে আমি মনে হয় নতুন করেএই
পিচ্চির
প্রেমে পরলাম। কারন ওর এই
হাসিটা যতবার
দেখি ততবার ওর প্রেমে পরি।
-কি ভাবছেন?
-কিছু না। তোমার কি বৃষ্টি ভাল
লাগে?
-হিম। এই বৃষ্টির মধ্যে আলাদা
একটা শুর আছে আর এই সুরটা অনেক
সুন্দর যা অন্য
কিছু থেকে পাওয়া যায় না।
-বৃষ্টির আবার আলাদা শুর। এই বলে
আবার
ফিসলা হাসি।
-আপনার বিশ্বাষ হয় না। আপনি
চোখ বন্ধ করুন আর খুব কাছ থেকে
বৃষ্টিকে অনুভব
করুন তাইলেই শুনতে পারবেন।
-আমিও ওর কথা মত গভীর মনযোগে
বৃষ্টির
শুর শুনতে চেষ্টা করছি । আর এই
প্রথম আমার
কাছে বৃষ্টি ভাল লাগলো।
-কি শুনতে পারছেন?
-ওর কথায় আমি বাস্তবে ফিরে
এলাম। হুম পাচ্ছি।
-বলেছিলাম না।
-তোমাকে একটা কথা বলার
ছিলো। কিন্তু
কিভাবে বলি ভেবে পাচ্ছি
না।
-একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলুন এত
ভনিতা করার কিছু নাই।
-মানে আমি তোমাকে একটু আকটু
ভালবাসি।
-তার মানে আপনি বেসি
ভালবাসেন না।
-না না আমি তোমাকে অনেক
বেসি ভালবাসি।
-তাহলে আপনি খালি হাতে
এসেছেন কেন?
-ও তাই। কিন্তু এখন গোলাপ
পাবো কোথায়?
-আমি জানি না যেখান থেকে
ইচ্ছা সেইখান থেকে আনবেন।
-মনে মনে বলি তুমি আসলেই
পিচ্চি। তাহলে
চলো সামনে আগাই দেখি
পাওয়া যায় নাকি।
হাটতে হাটতে একটা পার্কে
ঢুকলাম। আর তখনও বৃষ্টি পরতেছে
অবিরামভাবে। গোলাপ
পেলাম না তাই আমার প্রিয় কদম
ফুল দিয়েই
প্রপজ করলাম।
-আপনি আসলেই একটা মিচকে
শয়তান।
-কেন আমিতো তোমাকে
প্রোপজ করলাম।
-হুম করছেন কিন্তু একবার বলেন
নাই ভালবাসি।
-ও। তারপর ওর হাতের থেকে কদম
ফুল গুলো নিয়ে আবার নতুন করে
বল্লাম ঃ-
-পিচ্চি মে, আমি তোমাকে
ভালবাসি
তুমিকি সারাজীবনের জন্য
আমার পিচ্চি হতে
রাজি আছো। যদি রাজি থাক
তাহলে তোমার ওই হাত দুটো
বাড়িয়ে দাও।
এই প্রথম ওর হাত ধরলাম। আর আমি
চাই এই হাত আর কোনদিন ছারবো
না।আর
একটি বর্ষনমুখর দিনে নতুন করে
একটি
ভালবাসার শুরু হলো। প্রায় ৩ বছর
প্রেম
করলাম কিন্তু এর ভিতরে কিছু
অপ্রিতী
ঘটনা ঘটে গেল। ওর বাবা মারা
যায় হঠাত করে কিছুদিন আগেই।
"
৩.
ওপরের কথা গুলো আজ সব সৃতি।
কাল
সামান্তার বিয়ে। এটাই বাস্তব
কারন ওর
বাবা মরে যাওয়ার সময় একটা
শেষ ইচ্ছা বলেগেছেন।
তার শেষ ইচ্ছাটা হলো তার মের
সাথে তার
বন্ধুর ছেলের বিবাহ দেয়া।
কিন্তু সামান্তা এসবের কিছুই
জানতো না। শুধু ওর মা জানতো।
তাই ওর বিয়ে ঠিক করেছে ওই
ছেলের সাথে।
"
আজকাল নিকোটিনের গন্ধ আর
কাজ করে
না। মনেহয় একসাথে ৪-৫
সিগারেট খাই। হঠাত
সামান্তার ফোন।
-হ্যালো
-তুমি কোথায়? (কাদতে কাঁদতে)
-কেন বাসায়।আর তোমার না
কাল বিয়ে এখন ফোন দিছো
কেন?
-চলনা আমরা পালিয়ে যাই।
-আমি ওর মুখ থেকে এরকম কিছুই
আশা করেছিলাম। না এখন
পালানো সম্ভব না।
-কিন্তু কেন? আর তুমি আমাকে
ভালবাস না।
-হুম ভালবাসি। আর ভালবাসি
বলেই তোমাকে নিয়ে
পালাতে পারবো না। তোমার
বাবার শেষ ইচ্চা তোমার সাথে
তার বন্ধুর ছেলের বিয়ে হোক
তারপর তোমার মার ওই হাসিমুখ
তোমার আত্মীয় স্বজনের মনে
দঃখ দিয়ে আমরা কখনও সুখী হতে
পারবো না।
-এটাই তোমার শেষ কথা।
-হুম।
-ভাল থেক।আর নিজের দিকে
খেয়াল রেখ।
"
এই মূহুর্তে আমার মনে যে ঝড়
হচ্ছে তা থামানো সম্ভব না আর
এই ঝড়ে সব কিছু তছনছ হয়ে যাবে।
কিন্তু এই কষ্টটা সাময়িকের
জন্য। আমি জানি ও এখন খুব।
কাঁদবে। কিন্তু
বাস্তবকে মেনে নিতেই হবে।
আমি পারতাম ওকে নিয়ে
পালিয়ে যেতে কিন্তু আমাদের
সুখের জন্য অন্য কার মনে দুঃখ
দেওয়ার অধিকার আমার নেই।
ভালবাসলেই পেতে হবে কোন
কোন ক্ষেত্রে
দিতেও হয়।
এটাই বাস্তব। সামান্তা চলে
গেছে কিছুক্ষন আগে ওর বরের
সাথে। কিন্তু আজ কেন
বৃষ্টি হচ্ছে। হয়ত বৃষ্টি চায় আমার
সব কান্নাকে
বৃষ্টির জলে ধুয়ে দিতে। এই সেই
বৃষ্টিমুখর দিন যে দিন আমার আর
সামান্তার পথ চলা শুরু
হয়েছিল আর আজকেই আবার সব
শেষ হলো।,,
"
(একাকি হাটছি বৃষ্টির মধ্যে
কেউ নেই চারপাশে শুধু হাতে
কয়েকটি কদম ফুল)

লেখক : Himur Dupur(Devil Himu

সংকলন ৩৫২- বিরহী বরষা

আজও প্রতিটি বৃষ্টির দিনে আমি ছাদে গিয়ে দাঁড়াই ।
ওপাশের খোলা ছাদটার দিকে তাকিয়ে বারবার পলক
ফেলি । বৃষ্টিফোঁটারা আমার মোটা গ্লাসের
চশমাটাকে ঘোলা করে দেয় । শার্টের হাতায় চশমটা
মুছি । তারপর আবার তাকাই । আবার চশমাটা ঘোলা হয় ,
আবার মুছি , তারপর আবার তাকাই ।
মাঝেমাঝে কেউ একজন পেছন থেকে ডাকে , আমি
প্রতিবারই চমকে উঠি ।
.
"আবারো একা একা বৃষ্টিতে ভিজতেছ ! কতবার বলেছি
আমাকেও ডাকবে ! আমরা একসাথে ভিজব । কে শুনে
কার কথা । যাও . . . তোমার সাথে কথাই বলবো না । তুমি
আমাকে একটুও ভালোবাস না ।"
.
আমি রিমির দিকে তাকাতে পারি না । অন্যদিকে
তাকিয়ে থাকি , কিংবা মাথা নিচু করে রাখি । এই
মেয়েটি আমাকে ভিষন ভালোবাসে । কিন্তু মেয়েটি
জানে না , তার ভালোবাসার প্রতিদান আমি কখনোই
দিতে পারবো না । আমার সমস্ত ভালোবাসা , আবেগ ,
অনুভূতি ওপাশের ছাদটায় বন্ধী হয়ে আছে ।
.
সদ্য শাড়ি পরতে শেখা ষোড়শী এক তরুনী আনমনে ভিজে
চলেছে । তার সরু কোমরে যেন ভরা শ্রাবণের ঢেউ
উঠেছে , গোলাপরাঙা দু'টি ঠোঁটে যেন কামনার আগুন
লেগেছে । এই অঝোর বর্ষায় সেই আগুন দাউ দাউ করে
জ্বলছে । জ্বলছি আমি , জ্বলছে আমার ভিতর-বাহির ,
আমার পুরো পৃথিবী ।
. .
রিমি মেয়েটা বড় অভিমানী । যখন-তখন আমার সাথে
মান-অভিমানের খেলা খেলতে চায় । মেয়েটা চায়
আমি গিয়ে তার মান ভাঙ্গাই । কাঁধে হাত রেখে
মিষ্টি করে দু'টো কথা বলি । আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে
হয় , কিন্তু পারি না । অদৃশ্যে এক শিকলে হাত-পা বাঁধা
আমার ।
.
আমার ডায়েরি জুড়ে শত শত কবিতা । রিমি গভীর
মনযোগে একেকটা কবিতা পড়ে , চুপিচুপি ঘুরে বেড়ায়
কবিতার অলিগলিতে , নিজেকে খুঁজে ফিরে বারবার ।
কই ? রিমি নামের কেউতো এখানে নেই । তবে কেউ
একজন আছে । যার বয়স ষোল কি সতেরো হবে । যার নাম
কখনো মেঘবালিকা , কখনো সূর্যমুখী , কখনো চৈতালী ,
কখনো বৈকালী , কখনো সুহাসিনী , কখনোবা
মায়াবিনী ।
রিমি ঐ নামগুলোর ছায়ায় নিজেকে খোঁজার চেষ্টা
করে । মাঝে মাঝে আমাকে প্রশ্নও করে ।
"আরে বোকা এগুলো সব কাল্পনিক চরিত্র।"
আমার চিরায়ত এই সহজাত জবাবে রিমি মাথা দোলায় ।
যেন সব বুঝে ফেলেছে । তারপর আবার কি যেন ভাবনা
এসে ওকে ঘিরে ধরে । এভাবেই চলছে ।
.
এবারের বর্ষাটা বড় দীর্ঘ । শেষই হতে চায় না । সাত বছর
আগের সেই বর্ষাটাও এমনই ছিল । আমি এভাবেই
ওপাশের ছাদটায় তাকিয়ে ছিলাম । মেয়েটা সেই কখন
থেকে ভিজে চলেছে । চোখ দু'টো টকটকে লাল । হঠাত্
বিয়ের খবরে সে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে । আমিও
নিরুপায় । বিয়ে করার মত বয়স , সামর্থ্য, সাহস কোনটাই
ছিল না আমার । তাকে ফিরিয়ে দেয়াটাই ছিল সহজ পথ
। আমি সে পথেই হাঁটলাম ।
কিন্তু সে হাঁটলো নতুন এক পথে । হারিয়ে যাওয়টাই
যেখানে গন্তব্য । আমি বুঝিনি , সে আমাকে বুঝতেই
দেয়নি । তার আগেই সব শেষ । নিচে তাকিয়ে দেখি
নিথর দেহটা পড়ে আছে । বর্ষার জল আর রক্তের ঢল
মিলেমিশে একাকার ।
.
.
রিমি যে কখন এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই
করিনি । আমি বুঝতে পারছি সে আমার সাথে ভিজতে
চাইছে । চোখে তার রাজ্যের তৃষ্ণা , স্পর্শে মাতাল
আহ্বান । আজ কিছুতেই সেই আহ্বান উপেক্ষা করতে
পারলাম না আমি । আচমকাই ওকে আমার ভেজা বুকে
টেনে নিলাম । মেয়েটা কিছুক্ষন আমার ঘোলা চোখে
তাকিয়ে ছিল , তারপর কেঁদেই ফেললো ।
"তুমি এত নিষ্ঠুর কেন বলতো ? আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে
ভিজলে এমন কি ক্ষতি তোমার ? তুমি জানো বৃষ্টি
আমার কতটা ভাল লাগার ? তুমি জানো তোমায় কতটা
ভালোবাসি আমি ?
.
রিমির গলায় আবার অভিমানের সুর । নিজের সমস্ত
শক্তি দিয়ে 'ও' আমাকে জড়িয়ে রাখতে চাইছে । সমস্ত
ভালোবাসা , আবেগ আর সবটুকু নারীত্ব দিয়ে আমাকে
দখল করতে চাইছে ।
কিন্তু আমার দৃষ্টি ওপাশের ছাদটার দিকে , বৃষ্টি-বন্দী
এক ষোড়শী তরুনীর দিকে ।
- -
লেখা : FA Tarek

সংকলন ৩৫১- ব্রেকাপের অপেক্ষায়

- মেঘা আপু, মেঘা আপু...
- হ্যা শ্রাবণ বলো, কেমন আছো?
- হ্যা আপু ভাল, তোমার একটু দরকার ছিলো
- কি
- একটা চ্যাপ্টার বুঝিয়ে নিতাম
- কোন চ্যাপ্টার?
- এস্ট্রোপেক্টেন
- আমার যে এখন একটা ক্লাস আছে ভাইয়া,
তোমাকে তাহলে একটু অপেক্ষা করতে হবে।
- নো প্রব্লেম আপু, তোমার জন্য আমি
সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারবো
- এই পাগল ছেলে, সারাজীবন মানে? এই
ক্লাসের সময় হয়ে গেলো আমি গেলাম।
.
আমি শ্রাবণ, আর আমি এতক্ষন যার সাথে কথা
বললাম উনি হলেন আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর
সিনিয়র আপু যাকে প্রথম দেখেই আমি টুপ করে
প্রেমে পরে গিয়েছিলাম। অনেক সাহস
করে কাঠখড় পুড়িয়ে মেঘা আপুর সাথে কথা
বলা শুরু করলাম। বুঝা জিনিস না বুঝা জিনিস
সব কিছু শুধু উনার কাছে বুঝিয়ে নেই। কিন্তু
বুঝাবুঝি যে এখানে কেবলমাত্র বাহ্যিক
বিষয় আর অভ্যন্তরীন বিষয় যে অনেক
সূদুরপ্রসারী এটা আমি বাদে সবারই অজানা।
.
সবকিছু খাওয়ারই কিছু নিয়ম নীতি আছে
কিন্তু আমি সব নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে সিনিয়র
আপুর উপরে ক্রাশ খেয়ে প্রেমের সাগরে
হাবুডুবু খাচ্ছি।
.
ক্লাস শেষে আপু আসলো,
- এই তুমি এতক্ষন এখানে দাঁড়ায় ছিলা?
- হ্যা আপু, কেবল তোমারই জন্য
- আচ্ছা চলো, ওখানটায় বসে চ্যাপ্টার টা
নিয়ে আলোচনা করা যাক
- হ্যা চলো
.
আপু পড়া বোঝাচ্ছে, আর তার দুটো ঠোট
অনবরত এক হচ্ছে, আলাদা হচ্ছে আর সেখান
থেকে সুমিষ্ট ভয়েস ভেসে আসছে আর আমি
তাকিয়ে আছি অবাক দৃষ্টিতে। কর্নকুহরে
বইয়ের পড়াগুলো প্রেমের অমিয় বাণীর মত
শুনতে পাচ্ছি। হালকা বাতাসে চুল গুলো
উড়ছে আর আমি মিষ্টি বড় আপুটির দিকে
চেয়ে আছি, চোখে আমার অনেক প্রেম
প্রকাশমান।
.
- এই ছেলে তোমার মনোযোগ কোথায়? কি
বললাম একটু আগে বলো তো,
- ওই যে হর্মিফরা না কি জানি
- গাধা, আমি এস্ট্রোপেক্টেন এর পানি
সংবহনতন্ত্র বুঝাইলাম, কি ভাবছিলা এতক্ষন
তুমি? আর এমন ভাবে চেয়েছিলা কেন?
- তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে তাই দেখছিলাম
- পড়ায় মনোযোগ না দিয়ে তুমি....
- তোমার মত যদি একটা বউ পাইতাম
- এই আমি তোমার বড় আপু
- তো কি হইছে আপু?
- আজব তো...
.
সুন্দর মূহুর্তটাকে নিজের হাতে না না
নিজের চোখে নষ্ট করে দিলাম। তবুও খুশি
যে আজ মন ভরে দেখতে পেয়েছি মেঘাকে
না মানে মেঘা আপুকে।
.
রাতের বেলা ফেসবুকে আপুর সাথে
চ্যাটিং হচ্ছে,
- আপু তুমি এত সুইট কেনো?
- কেন ডায়াবেটিস হইছে নাকি?
- হয়নাই, তবে হবেই নির্ঘাত, আপু একটা কথা
- কি?
- মেঘা আমি তোমাকে ভালবাসি
মেঘা আপু আমি তোমাকে ভালবাসি
- হি হি, এই ছোটবাবু তোমার ভাইয়া
জানতে পারলে তোমাকে কিমা বানায়
ফেলবে
- ভাইয়া আবার কে? তোমার বড় ভাইয়া
- ওই পোলা, আমার বিএফ এর কথা বলতেছি
.
আর মেসেজ করিনি, জুনিয়র আর সেইম এইজদের
বয়ফ্রেন্ড থাকে থাক, কিন্তু সিনিয়ির
আপুটারও বয়ফ্রেন্ড থাকতে হবে কেনো!
.
অনেকদিন মেঘার মানে মেঘা আপুর সাথে
কথা বলিনা। একদিন মুখোমুখি হয়ে গেলাম,
- এই শ্রাবণ, আপুর আর খোজ নাওনা ক্যান?
- আপু তোমার ব্রেকাপ হইছে?
- মানে?
- মানে কিছুনা? ব্রেকাপ হইছে কিনা
সেটা বলো
- না হয়নি আর হবেই বা কেনো! আর তুমিইবা
আমাকে এ প্রশ্ন করছো কেনো?
- তা তুমি বুঝবানা, ব্রেকাপ হইলে আমায়
বলবে প্লিজ
- আজব তো...
.
মেঘা আপুর সাথে এখন দেখা হলেই এখন একই
প্রশ্ন - এখনও ব্রেকাপ হয়নি আপু তোমাদের। আর
আপু উত্তর দেয়- আজব ছেলে নয়তো পাগল
ছেলে।
.
আজও অপেক্ষায় আছি মেঘার না মানে
মেঘা আপুর ব্রেকাপের অপেক্ষায়।
.
লিখাঃ আমিম এহসান...

সংকলন ৩৫০- অশ্রু

"বৃষ্টিতে ভিজা একটা অন্যরকম অনুভূতি তাই না?
.
আজকে সকাল থেকেই টুপটুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। অন্যান্য
দিনের চেয়ে আজকের আবহাওয়া অন্যরকম। তারচেয়ে
আজকের বৃষ্টিটাও অন্যরকম। ঝিরি ঝিরি করে পড়ছে।
অন্যদিন বৃষ্টির সাথে ধমকা বাতাস বয়ে বেড়ায় আজ
সেটা হচ্ছে না। কেন যেন আজকে ইচ্ছে হলো বৃষ্টিতে
ভিজতে তাই ভিজতেছি। তবে একা নয়। পিচ্চি
ছেলেদের সাথে। ঠিক তখনি একটা মেয়ে ছাতা মাথায়
দিয়ে এসে ঐ কথাটা বললো... বৃষ্টিতে ভিজা একটা
অন্যরকম অনুভূতি তাই না?...
.
আমি কিছুই বলি নি। চুপ করে থাকলাম। আর ঐ পিচ্চি
ছেলেগুলার সাথে ছেলে মানষী করতে থাকলাম। কাদাঁ
ছুড়াছুড়ি করতে থাকলাম।
.
"হি হি হি। অদ্ভুত আপনি। কি আনন্দে পিচ্চি ছেলেদের
সাথে বৃষ্টিতে ভিজছেন।
.
মেয়েটি যখন হি হি হি করে হাসলো তখন এক নজর
তাকালাম। বর্ষণমুখর দিনে এমন একটা মেয়ে চিনা নেই
জানা নেই আমার সাথে কথা বলছে। মনে হচ্ছে খুব
পরিচিত। আমি তো জানি মেয়েরা নিজে গায়ে পড়ে
কথা বলতে আসে না। তবে এই মেয়েটা মনে হচ্ছে একটু
অন্যরকম।
.
"বৃষ্টিতে কখনো এইভাবে ভিজেছেন?
"বৃষ্টিতে ভিজেছি অনেক। তবে এইভাবে আপনার মত
ভিজি নি। জানলার পাশে দাড়িয়ে দু হাত বাড়িয়ে
বৃষ্টির জল স্পর্শ করছিলাম ঠিক তখনি আপনাকে দেখতে
পাই এই ছেলেগুলার সাথে বৃষ্টিতে ভিজছেন। কেন যেন
কৌতহল জাগল খুব কাছ থেকে আপনাদের আনন্দটুকু
উপলব্দি করার। তাই ছাতা মাথায় দিয়ে চলে এসেছি।
.
মেয়েটি এক টানা কথাগুলা বলে শেষ করলো।
.
"কি নাম আপনার?
"জ্বি আমি সুবন।
"এইভাবে ছেলে মানষী করে বেড়ান? জানেন আপনারা
যা পারেন তা আমরা পারি না।
.
আমি মেয়েটির কথা বুঝলাম না। কি বুঝাতে চেয়েছে
মেয়েটি?
.
"আমি কিছুই বুঝি নি।
"এই যে ছেলেরা একটা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে
পারে আমরা মেয়েরা তা পারি না। আমাদের
প্রত্যেকটা কাজে জবাবদিহি করতে হয়।
"তা অবশ্য ঠিক।
"জানেন আমারো এখন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু...
.
মেয়েটি পুরো কথাটা শেষ করলো না। অসম্পূর্ণ ভাবেই
কথাটা রেখে দিল।
.
"কিন্তু কি?
"ঐযে স্বাধীনতা নেই।
.
আমি আর কিছু না বলে দু হাত বাড়িয়ে চোখ দুটো বন্ধ
করে আকাশের দিকে মুখ করে রাখলাম।
.
"বৃষ্টিতে কখনো কেদেঁছেন?
.
মেয়েটির কথায় আবার শরীরটা নারা দিয়ে সোজা
হলাম।
.
"না কাদিঁ নি। আপনি কেদেঁছেন?
"হ্যাঁ অনেকবার কেদেঁছি।
"আপনার কি ভীষন দুঃখ?
"কেন বলুন তো?
"আমি তো জানি যারা বুকে কষ্ট নামের শব্দটাকে চাপা
দিয়ে হাসি খুশিতে চলাফেরা করে তারা নিরবে
বৃষ্টিতে কাঁদে।
.
এবার মেয়েটি চুপ হয়ে গেল। আমার বুঝতে বাকি রইলো
না।
.
"আপনার নাম জানা হয় নি।
"স্নিগ্ধা
"ভিজবেন বৃষ্টিতে?
"বাসায় বকা দিবে।
"তাহলে ঠিক আছে ভিজার দরকার নেই।
.
আমি আবার ছেলেগুলার সাথে দুষ্টামি করতে থাকলাম।
ঠিক কিছুক্ষন পর মেয়েটি ছাতা বন্ধ করে আমার পাশে
দাড়াল আর বললো...
.
"আমি ভিজবো বৃষ্টিতে। একটু কাদঁবো।
.
আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। আর মনে মনে ভাবতে
লাগলাম মেয়েটি কি সত্যি কাদঁবে?
.
"কেন কাদঁবেন?
"মন হালকা করার জন্য।
"কি এমন কষ্ট আপনার?
"থাক না ঐসব কথা। এখন যে কাদঁতে চাই আমি।
.
সবার জীবনে কিছু না কিছু কষ্ট থাকে। কেউ প্রকাশ
করে আর কেউ প্রকাশ করে না। আর যারা প্রকাশ করে
না। তারা নিরবে রাতে বালিশ ভিজায়। বৃষ্টি এলে
বৃষ্টিতে কান্না করে।
.
"চলেন আমিও কাদঁবো আপনার সাথে।
"আপনি কেন কাদঁবেন?
"আমারো ইচ্ছে হচ্ছে।
"আপনারো কি কষ্ট আছে?
.
আমি চুপ হয়ে গেলাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। ঐযে
বললাম কেউ প্রকাশ করে আর কেউ প্রকাশ করে না।
আমিও সেই দলের একজন। আমি বললাম...
.
"চলেন কাঁদি। আর পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করুন।
"হ্যাঁ চলুন।
.
এরপর দুজনেই দু হাত মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে
স্মৃতি গুলা স্মরণ করে কাদঁতে থাকলাম।
.
প্রায় অনেক্ষন পর স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞেস করলাম...
.
"মন হালকা লাগছে আপনার?
"হ্যাঁ অনেকটা।
"আরো হালকা করতে চান?
"কিভাবে?
"দু হাত মেলে এবার চিত্কার করে বলুন আই হেইট ইয়ু।
.
স্নিগ্ধা মেয়েটা আমার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে
থাকলো। মনে হচ্ছে কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না।
আমি নিজেই দু হাত মেলে চিত্কার করে বলতে
লাগলাম.. আই হেইট ইয়ু.. ১বার ২বার এইভাবে অনেকবার
বললাম। এরপর পাশ থেকে শব্দ শুনতে পেলাম...
.
"আই হেইট ইয়ু.... আই হেইট ইয়ু... আই হেইট ইয়ু....
.
আমার দেখাদেখি স্নিগ্ধাও বলতে লাগলো। আমি
শুনতে লাগলাম। মেয়েটি থামছে না। কাদঁতে কাদঁতে
বলছে থামার নাম নেই। একপর্যায়ে মাটিতে বসে উচ্চ
সুরে কাদঁতে লাগলো হাতের মাঝে মুখ গুজে। কাদুঁক
মেয়েটা। আজ যে কাদাঁর দিন। না আর কিছুই বলবো না
মেয়েটিকে। আমি হাটা দিলাম আর গাইতে থাকলাম....
ও আমায় ভালোবাসে নি অসীম এ ভালোবাসা ও বুঝে
নি....
লেখা> মোঃ জাহিদুল হক সুবন।

সংকলন ৩৪৯- গাধা

লেখা> মোঃ জাহিদুল হক সুবন।
.
"এখানে কি করছো তুমি?
.
খোলা আকাশের নিচে বসে আছে
মাহফুজ একটা বট গাছের সাথে হেলান
দিয়ে। জায়গাটা তার অনেক প্রিয়।
মনটা তেমন ভাল নেই। যখন মন ভাল
থাকে না এই জায়গায় এসে চুপটি করে
বসে থাকে। সকাল বেলায় বাবার
সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের
হয়ে এদিক ওদিক একটূ ঘুরাঘুরি করে এই
জায়গায় এসে বসে আছে। সকাল
থেকেই তেমন কিছু খায় নি। প্রায় দুপুর
হওয়া বাকি। আসলে যখন মন ভাল থাকে
না, তখন কোন কিছু খাওয়ার রুচি থাকে
না। একা বসে আছে ঠিক তখন সাবিহা
মাহফুজের সামনে এসে কথাটা
বলেছে।
.
"কি হলো চুপ করে আছ কেন? এখানে
একা একা কি করছো?
.
মাহফুজ তবুও চুপ হয়ে থাকে। সাবিহার
দিকে একনজর তাকিয়ে আবার
অন্যদিকে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে যায়।
.
"আশ্চর্য কথা বলবা না? এই কি হয়েছে
তোমার?
.
এই কথাটা বলে সাবিহা মাহফুজের
পাশে বসে। কাধে মাথা রেখে হাত
টুকু ধরে রাখে। সাবিহা জানে ওর
পাশে বসে একটু ছোয়া দিলেই ওর মন
ভাল হয়ে যাবে।
.
"না তেমন কিছু হয় নি। এমনি বসে আছি।
"কিছু একটা তো হয়েছে। না হলে তুমি
চুপচাপ কেন? সেই কখন থেকে তোমায়
খুজঁছি পাই নি। ফোন করলাম ফোন অফ।
তোমার বোন তিথিকে জিজ্ঞেস
করলাম ও বলেছে অফিসেও যাও নি।
বাবার সাথে রাগ করে নাকি বাসা
থেকে বের হয়েছ। তুমি কি এখনো
বাচ্চা। এমন কাজ করো কেন? আমি তো
জানি আমার পাগলটার মন ভাল না
থাকলে এইখানে এসে বসে থাকে।
বলো না কি হয়েছে?
.
মাহফুজ শুধু সাবিহার চোখের দিকে
তাকিয়ে থাকে। সাবিহাও তাকিয়ে
থাকে। চলতে থাকে তাদের
চোখাচোখি। এইভাবে অনেক্ষন দুজন
তাকিয়ে আছে। হঠাত্ মাহফুজ
সাবিহার চাদঁবদনখানি স্পর্শ করে
কপালে আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বলে...
.
"পাগলি আমি তোমায় অনেক
ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া
কাউকে বিয়ে করব না।
.
সাবিহা কথাটা শুনে হি হি হি করে
একটা হাসি দেয়। আর মাহফুজ সেই
মিষ্টি হাসিটার দিকে তাকিয়ে
থাকে।
.
"অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা আসছে
কেন? হু ... তোমার জন্য বিয়ে ঠিক
করেছে নাকি? হি হি হি।
.
মাহফুজ কিছুই বলল না। চুপ করে থাকল। ওর
চুপ করে থাকাতে সাবিহার মুখের
আভাটা একটু অন্য রকম হয়ে যায়।
সাধারণত এই সব ঘটনাগুলো মেয়েদের
মধ্যে বিরাজ মান। বাসা থেকে যখন
একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় তখন
মেয়েটা খুব হতাশ হয়ে যায়। তার প্রিয়
মানুষটাকে কি জবাব দিবে। অনেকে
পালিয়ে যায় তার প্রিয় মানুষটার
সাথে। তার প্রিয় মানুষটা তাকে বুকে
টেনে বলে... আরে বোকা মেয়ে আমি
আছি তো। ভয় পেও না। কিন্তু সাবিহা
আর মাহফুজের মধ্যে ঘটনা উল্টো। আচ্ছা
এখন কি সাবিহা মাহফুজকে শান্তনা
দিয়ে বলবে... এই মন খারাপ করো না,
আমি আছি। দুজনে কিছুক্ষন নিরবতা
পালন করল। মাহফুজ সাবিহার হাত
আকড়ে ধরে বলে...
.
"বাবা আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু
করেছে।
.
সাবিহার মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে গেল।
মূলত এইসব ডায়ালগ গুলা মেয়েরা
কাদঁতে কাদঁতে তার ভালোবাসার
মানুষটার কাছে বলে। সাবিহা একটু
ইতস্তবোধ করে বলল...
.
"ভাল তো বাবা মেয়ে দেখছে পছন্দ
হলে বিয়ে করে ফেলবা। মন খারাপের
কি আছে?
"তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা?
.
সাবিহা চুপ হয়ে যায়। মাহফুজের মা
নেই। ওর বোনের জন্মের দু বছর পরেই মা
ইন্তেকাল করে। বাবার আদর যত্নে দুই
ভাই বোন বড় হয়েছে। মায়ের
ভালোবাসা তেমন না পেলেও
মাহফুজের বাবা তা পূরণ করতে যথাযত
চেষ্টা করেছে। মাহফুজ কখনো তার
বাবার অবাধ্য হয় নি। আজ সকালে
নাস্তার টেবিলে মাহফুজকে একটা
ফটো দিয়ে বলে...
.
"দেখতো মাহফুজ মেয়েটা তোর পছন্দ হয়
কিনা?
"পছন্দ দিয়ে কি হবে?
"আরে বুঝিস না গাধা। আমাকে বল
মেয়েটা তোর পছন্দ কিনা?
.
মাহফুজ ব্যাপারটা বুঝে যায়। ফটো
হাতে নিয়ে বলে...
.
"দেখো বাবা তুমি এইগুলা কেন করছো
আমি বুঝতে পারছি। আমি বিয়ে করব
না।
"আরে গাধা তোর বিয়ের বয়স হয়েছে।
জানিস তোর মা বেচেঁ থাকলে এই
কাজ গুলা তোর মা করত।
.
মাহফুজ ফটোর দিকে কিছুক্ষন
তাকালো। তারপর বলল...
.
"আমি বিয়ে করব না।
.
কথাটা শুনে মাহফুজের বাবা একটু
অবাক হয়। যে ছেলে কোন দিন মুখের
উপর তর্ক করে নি সেই ছেলে আজ....। একটু
রাগান্বিত হয়ে বলল....
.
"কি বললি তুই? তুই বিয়ে করবি না, তোর
গাড় করবে তোর বাবা করবে।
"তুমি বিয়ে করলে করো। কিন্তু আমি
করব না।
.
এই বলে বাসা থেকে মাহফুজ বের হয়ে
আসে। সাবিহা চুপ করে আছে। কি
বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। বিষয়টা
পাশ কেটে বলল...
.
"সকাল বেলা বাসা থেকে বের
হয়েছো কিছু খেয়েছো?
.
মাহফুজ মাথা দিয়ে না সূচক ইশারা
দেয়।
.
"গাধা কোথাকার। রাগ করো আর যাই
করো অন্তত পেট তো শান্তি রাখবা।
চশমা খোলো।
"কেন?
.
এত কেন কেন করবা না। এই বলে
সাবিহা মাহফুজুজের চোখের চশমাটা
খুলে দেয়। তারপর হ্যান্ডব্যাগ থেকে
দুটো ছোট বাটি বের করে। একটাতে
কয়েকটা পরোটা আর আরেকটাতে
মাংস।
.
"এই হা করো।
.
সাবিহা জানে রাগ করলে মাহফুজ না
খেয়ে থাকে। তাই সঙ্গে নাস্তা
নিয়ে এসেছে। সাবিহা নিজ হাতে
খাইয়ে দিচ্ছে। এক অদ্ভুত ভাল লাগে
সাবিহার যখন মাহফুজকে নিজ হাতে
খাইয়ে দেয়। আর ভাবছে এই চশমা পড়া
হাবলা ছেলেটাকে এত ভালোবাসে
কেন? সাবিহা সব সময় চোখে কাজল
দিয়ে রাখে। ওর চোখে পানি জমতে
শুরু করেছে।
নিশ্চয় কাজল লেপটে কালো পানি
বের হবে।
.
"ফটোটা দেখো। এই মেয়েটাকে
কখনো আমার সাথে মানাবে না। তুমি
বলো এই মেয়েকে কি করে বিয়ে করব?
.
সাবিহা ফটো টা হাতে নেয় তবে
কিছু বলে নি। নিচের দিকে তাকিয়ে
থাকল। খাওয়া শেষ হলে ওড়না দিয়ে
মুখ মুছে দেয়। তারপর কিছু না বলে
সাবিহা উঠে হাটতে থাকে। মাহফুজ
বসে বসে তার চলে যাওয়া দেখছে।
ঝাপসা হতে থাকে সাবিহার চলে
যাওয়া দৃশ্য। সাবিহা রাগ ভাঙ্গাতে
এসে এখন নিজেই মন খারাপের আভা
নিয়ে চলে যাচ্ছে।
.
হঠাত্ মাঝ পথ থেকে ছুটে এসে
সাবিহা মাহফুজের সামনে দাড়ায় আর
শার্টের কলার ধরে উঠিয়ে গালে
চটাশ করে থাপ্পর মেরে বলে...
.
"এত নাটক কেন করলা?
.
মাহফুজ হা করে তাকিয়ে থাকে। চরের
চটে চশমাটা মাটিতে পড়ে যায়। আর
ভাবে এটা কি সেই মেয়ে যে
আমাকে একটু আগে খাইয়ে দিল। এটা
কি সেই মেয়ে যে নিজের ওড়না
দিয়ে মুখ মুছে দিল।
.
"ঐ চার চোখ কানা চুপ করে আছো কেন?
তুমি বিয়ে করবে না?
"না এই মেয়েকে আমি বিয়ে করব না।
আমায় চর মেরেছে। এই মেয়েকে
বিয়ে করলে আমার খবর আছে।
"বিয়ে করবে না তুমি?
.
আসল কথা হলো ফটোতে যার ছবি ছিল
সেটা আর কেউ না সাবিহার।
মাঝপথে গিয়ে যখন সাবিহা ফটোটার
দিকে চোখ বুলিয়ে নিজিকে দেখে
তখন সে থমকে যায়। আর অবাক হয়। কেন
এই চশমা পড়া হাবলা ছেলেটা এত
নাটক করল? মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে
তাকিয়ে কাদঁতে থাকে সাবিহা।
মাহফুজের পাশের এলাকাতেই
সাবিহারা থাকে। দেখতে শুনতে
ভালই। একটা ছেলে/মেয়ে যখন
এলাকায় বেড়ে উঠে তখন তাদের
চালচলন আচাড় ব্যবহার মানুষের নজরে
লাগে বিশেষ করে মুরিব্বদের চোখে।
সেই অনুযায়ী সাবিহাকে ভাল লাগত
মাহফুজের বাবার কাছে।
.
"আরে কি হলো কাদঁছো কেন?
"আমি কাদঁলে তোমার কি?
"আরে শোনো বাবা যখন নাস্তার
টেবিলে তোমার ফটো দেখালো
আমি ভাবতেও পারি নি এটা হবে। আর
আমি যদি সাথে সাথে রাজি হয়ে
বলতাম বাবা পছন্দ হয়েছে বিয়ে করব।
রশি রেডি রাখো না মানে মালা
রেডি রাখো গলায় ঝুলাতে হবে।
ব্যাপারটা কি রকম দাড়ায় বলো তো।
তাই এই নাটক করেছি।
"কচুর নাটক করেছো তুমি । অন্তত তোমার
বাবাকে বলতে পারতা যে,... বাবা
আমি ভেবে চিন্তে পরে বলব।.... এখন
যদি তোমার বাবা ভাবে এই মেয়ে
তোমার পছন্দ না। তখন যদি অন্য
মেয়েকে ঠিক করে?
.
মাহফুজ চশমাট তুলে চোখে দিয়ে
মাথা চুলকাতে থাকে। আর বলে....
.
"এখন কি আমাদের বিয়ে হবে না?
"নাহ। এই রকম গাধার সাথে বিয়ে হবে
না।
"এই আমি কি সত্যিই গাধা?
.
সাবিহা কিছু না বলে হাটতে থাকে।
আর মাহফুজ গাধার মত দাড়িয়ে থাকে।
আসলে সমাজে এই রকম গাধা গুলার
ভালোবাসাতে কোন হিংসে নেই।
বেশি কিছু চাওয়া নেই। ওরা গাধার
মতই ভালোবেসে যায়। হয়ত সাবিহা
আবার দৌড়ে এসে মাহফুজকে জড়িয়ে
ধরে বলবে আমার গাধাটাকে আমি
অনেক ভালোবাসি। আর মাহফুজ
কপালে আলতো করে ছুয়ে দিবে।
বেচেঁ থাক সব গাধাদের
ভালোবাসা।

সংকলন ৩৪৮- অনুভুতি

লেখকঃ আবির রায়হান

-আওয়াজ কিসের ?
সাহেদ কিছুক্ষন কি বলবে কিছু বুঝতে
পারলো না । চারিদিকে এতো
আওয়াজ
। তার উপর পাশের জন্যও ফোনে কার
সাথে যেন কথা বলছে । কিন্তু এতো
জোরে বলছে সাহেদের ইচ্ছে হল বলে
ভাই ফোন ব্যবহার করার কি দরকার
আপনি এতো জোরে বলছেন জানলা
দিয়ে মুখ বের করে বলেন ওপাশ থেকে
এমনিতেই শুনতে পাবে !
সাহেদ ফোনের কাছে একটা হাত
নিয়ে
যথা সম্ভব মুখ ঢেকে বলল
এই তো বাইরে আছি তো তাই !
-ও আচ্ছা অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছেন
বুঝি !
-তুমিও তো যাচ্ছো, তাই না ? -
কিভাবে বুঝলেন ?
এই প্রশ্নের চট করে উত্তর সাহেদ
দিতে পারলো না ! কেবল বাসের
মহিলা
সিটের একেবারে কোনায় বসা ফোন
কানে মেয়েটার দিকে আরেকবার
তাকালো । সাহেদ এমন জায়গায়
বসেছে
যেখান থেকে মেয়েটাকে পরিস্কার
দেখা যায় কিন্তু মেয়েটা চট করেই
চাইলেই
তাকে দেখতে পারবে না !
সাহেদ তবুও একটু আমতা আমতা করে
বলল
-না মানে এখন তো তোমার অফিস
থেকে বাসায় যাওয়ার সময় তাই না ? -
হুম ! ঠিক ধরেছেন ! কোথায় আছে
এখন ?
-এখন .....উমমম ! এখন .......
-বুঝতে পারছেন না এখন কোথায়
আছেন ?
-এই কাটাবনের কাছে । -কাটাবন ?
আপনি না খিলগাওয়ের
দিকে থাকেন !
-ও হ্যা ! কাটাবন না ! কাকরাইল !
-তাই !!
সাহেদের নিজে কে একটা চড় মারতে
ইচ্ছে হল । ঠিক মত একটা মিথ্যা
কথাও বলতে পারে না !
সাহেদ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো
তখনই বাস টা ব্রেক করলো ! ফোনের
ওপাশ থেকে মিমি বলল -আচ্ছা আমার
স্টপেজ চলে এসেছে ।
আমি নেমে পড়বো !
সাহেদ প্রায় বলেই ফেলেছিল যে
তোমার বাসাতো মোহাম্মাদ পুর !
এখনও তো আসে নাই কিন্তু শেষ
মুহুর্তে নিজেকে আটকে নিল ! -আচ্ছা
এই বলে ফোন টা রেখে দিল !
তাকিয়ে
দেখলো সামনের বসা মিমি বাসের
সামনের গেট দিয়ে নেমে পড়লো ।
সাহেদ নেমে পড়লো এরেকটু পরেই ।
তাকিয়ে দেখে মিমি ততক্ষনে পনের
নাম্বারের গলির দিকে হাটা শুরু
করেছে ।
কি ব্যাপার মিমি আজকে এখানে
নামলো কেন ?
আর ওকে মিথ্যাই বা বলল কেন ?
সাহেদ অনিশ্চিত পায়ে মিমির পেছন
পেছন হাটতে লাগলো ! মিমির সাথে
সপ্তাহ খানেক আগে বিয়ে হয়েছে ।
ঠিক
ধুমধাম করে বিয়ে না । কেবল কলমা
পড়িয়ে রাখা হয়েছে । আরও কিছু দিন
পরে উঠিয়ে আনা হবে ! কিন্তু এই
কদিনেই মিমির উপর একটা
অদ্ভুদ মায়া জন্মে গেছে । বাসররাতে
যখন মিমি ওর পাশে ঘুমাচ্ছিল অদ্ভুদ
একটা বুক ধড়ফড়ানী কাজ করছিল ওর
ভেতর । রাতের ডিম লাইট জ্বালানো
ছিল । উঠে গিয়ে মেয়েটার দিকে
তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ।
আশ্চার্য হয়ে গেল এইটা দেখে যে
মেয়েটাকে সপ্তাহে খানেক আগে
ঠিক
মত চিনতোও না । আজকে মনে হচ্ছে
যেন কত দিনের চেনা !
তারপর গত কয়েক দিন থেকে সাহেদ
একটা অদ্ভুদ কাজ করা শুরু করেছে ।
অফিস ছুটির পরেই মিমির অফিসের
সামনে চলে যায় । সেখানে ওর জন্য
অপেক্ষা করে । তারপর মিমি যখন বের
হয় ওর পিছ নেয় । কেন ও নিজেই জানে
না । সামনে হেটে যাওয়া মেয়েটি
ওর
নিজের বউ অথচ ও ওকে ডাকতে পারে
না । কেবল পেছন পেছন ওর বাড়ি পর্যন্ত
আছে । তারপর চলে যায় ! মাঝে মাঝে
পথেই মাঝেই ওকে ফোন দেয় । অল্প
কয়েকটা কথা বলে ফোন রেখে দেয় !
আরও কথা বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু
একটু সংকোচ হয় ! ও আবার কি না কি
ভেবে বসবে ! আজকেও তেমন টাই পিছু
নিয়েছিল । অফিসে পর ও যেই বাসে
উঠেছিল সেই বাসের পেছনের দরজা
দিয়ে ও উঠে পেছনের দিকে বসে
ওকে দেখছিল !
কিন্তু আজকে মেয়েটা এতো
তাড়াতাড়ি
নেমে গেল কেন ?
কোন বন্ধুর বাসায় যাবে ?
হয়তো ?
সাহেদ হাটতে লাগলো ! মিমি
সামনের
একটা গলির ভেতরে আড়ালো হয়ে
গেল
আবার ! সাহেদ আরও দ্রুত পা
বাড়ালো ! ঠিক যখন গলির মাথায়
পৌছে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই ওকে
অবাক করে দিয়ে মিমি বেরিয়ে এল ।
একেবারে ওর মুখোমুখি !
সাহেদ কি বলবে বুঝতে পারলো না ।
কেবল অপ্রস্তুতের মত তাকিয়ে রইলো
মিমির দিকে !
-আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন ?
-না মানে.... সাহেদ কি বলবে ঠিক
খুজে পেল না ।
কিছু বলার মত কোন কথা নেইও ওর
সাথে । ওর পিছু পিছু আসতে যে ওর
ভাল
লাগার অনুভুতিটা সেটা সে কোন
ভাবেই
মিমিকে বোঝাতে পারবে না !
মিমি বলল -আপনি কালকেও
এসেছিলেন ! তাই না ?
-হুম !
-কেন ?
-জানি না ! কেবল তোমাকে দেখতে
ইচ্ছে হল তাই !
-তা আমাকে বলা যেত না ? সরাসরি
আমাকে ফোন করলে কি সমস্যা ছিল
শুনি ?
সাহেদ কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো
না !
মিমি বলল
-আজকে যে বাসে দৌড়ে উঠতে
গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন
সেটা যদি বড়
কিছু হত তখন ?
সাহেদ অবাক হয়ে গেল । মিমি
তাহলে
তাকে ভাল করেই দেখেছে !
-তুমি দেখেছো ?
-নিজেকে কি মনে করেন ? সিআইএর
এজেন্ট ? হ্যাবলার মত ফলো করলে
মানুষ তো দেখে ফেলবেই !
সাহেদ আবারও বোকার মত তাকিয়ে
রইলো মিমির দিকে । ধরা পরে ওর
মোটেই খারাপ লাগছে না । বরং
খানিকটা ভালই লাগছে ।
মিমি খানিকটা রাগ দেখিয়ে বলল
-এর পর থেকে আমাকে সরাসরি ফোন
দিবে ! বাসে পিছনে না
পাশাপাশি বসে
যাবো ঠিক আছে !
-আচ্ছা !
-আচ্ছা এখন চল আমাকে বাসায় পৌছে
দাও ! তোমার সাথে রিক্সা করে
যাবো
বলে একটু আগেই নেমে পড়েছি ।
সাহেদ লক্ষ্য করলো মিমি ওকে তুমি
করে বলা শুরু করেছে । যখন ওদের
রিক্সা চলতে শুরু করলো মিমি যেন
একটা ওয়াকিং রেডিও হয়ে গেল ! কত
কথা ননস্টপ বলে চলেছে । সাহেদ কেবল
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ! ওর সারা
মন জুড়ে একটা অদ্ভুদ ভাল লাগা কাজ
করছিল !

সংকলন ৩৪৭- সুখের হাতছানি

অনেক্ষন অপেক্ষা করার পরে আরিফ
লতিফ রহমান এর দেখা পেল। লতিফ
রহমান চেয়ারে বসার পরেই আরিফ বলল
-আমি আরিফ।
-ও আপনি আরিফ? কি মনে করে?
-আমার রেকর্ডিংগুলো একটু শুনে দেখুন।
-শুনেছি। আপনার গান ভাল। কিন্তু
বিনামুল্যে হবে না। এখম কেউ সিডি
কেনে না। সবাই ইন্টারনেট থেকে
গান ডাউনলোড করে শোনে। তাই
আমি পারবো না।
.
আরিফের প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু
পকেটে মাত্র চল্লিশ টাকা আছে।
চল্লিশ টাকায় খেলে বাসায় যাওয়ার
টাকা থাকবে না। বেপার না পেটে
ক্ষুধা না থাকলে হেটেই যাওয়া যায়।
.
চল্লিশ টাকায় ভাত হবে না বলে
আরিফ হেটে হোটেলের দিকে
যাচ্ছে। ওইদিকে কমদামী হোটেল
আছে। সেখানে অল্প টাকায় পেট ভরে
ভেত খাওয়া যায়। হোক সেটা বাসি
খাবার।
.
আরিফ বাড়িতে ফিরে মিতুকে বলল
-খেয়েছ?
-হ্যা।
-কোথায় খেলে?
-আজকে বস লাঞ্চের জন্য বলল। তাই ওর
সাথে লাঞ্চ করলাম।
-তাহলে তো খুব ভালই কেটেছে।
.
আরিফ ঘুমিয়ে ছিল। কারো কথার
আওয়াজ পেয়ে আরিফের ঘুম ভেঙে
গেল। সে শুনতে পেল
-তুমিও কম যাও। তুমিও তো অনেক কিউট
লাগে।
-......
-যাহ। দুষ্টু।
.
পরে আরিফ বুঝতে পারলো মিতু
মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে।
কিন্তু এইধরনের কথা কার সাথে?
.
কিছুক্ষন কথাগুলো শোনার পরে আরিফ
বলল
-এত রাতে কার সাথে কথা বলছো?
-না মানে বসের সাথে।
-এত রাতে কিসের কথা?
-কালকে একটা মিটিং আছে।তাই
কথা বলছিলাম।
-এখন ঘুমাও। সকালে কথা বলো।
.
আরিফ জানে নাবিলের সাথে কি
কথা বলছে? তবুও কিছু বলছে না।কারন
আরিফের মত ছেলের সাথে মিতু এখনও
আছে এটাই আরিফের জন্য অনেক।
.
আজ সকাল সকাল আরিফ বেড়িয়ে গেল।
আজ একটা কলেজে আরিফের অনুষ্ঠান
আছে। তাই আরিফকে তারাতারি
যেতে হবে।
.
গান গেয়ে আরিফ আজ অনেক টাকা
পেয়েছে। তাই আরিফ আজ মিতুর জন্য
অনেক কিছু কিনবে।
.
একটা শাড়ি কিনে আরিফ বাড়ির
দিকে যাচ্ছে আর অনেক কথা ভাবছে।
হয়তো মিতু শাড়িটা দেখে অনেক
খুশি হবে। খুশিতে আরিফকে জড়িয়ে
ধরে বলবে
-আরে আমার শাড়ি আছে তো।
তোমার নিজের জন্য একটা শার্ট
কিনলে পারতে।
-তোমাকে ভালবাসি বলেই তো
এনেছি।
-পাগল একটা।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আরিফ
বাসায় ঢুকে পরলো। বাসায় মিতুকে
খুজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। এইসময় মিতু
অফিস থেকে চলে আসার কথা। হয়তো
লুকিয়ে থেকে আরিফকে ভয়
দেখাচ্ছে।
.
মিতুকে খুঁজতে টেবিলের উপরে একটা
কাগজ পেল। কাগজটা হাতে নিয়ে
আরিফ পরতে শুরু করলো।
আরিফ, আমি তোমাকে ছেড়ে চলে
যাচ্ছি। আমি আমার বসকে বিয়ে
করছি।আমার অতিত জেনে সে
আমাকে বিয়ে করছে।
তুমি আমাকে বিয়ে করে কষ্ট ছাড়া
কিছুই দিতে পারো নি।আর আমার বস
আমাকে অর্থ দিয়ে সুখেই রাখবে........
.
আরিফ চিঠিটা পুরোপুরি না পড়েই
টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে
পরলো।
.
আরিফের ফোনে হঠাৎ মিতুর ফোন
আসলো।আরিফ ফোন ধরে বলল
-কি হয়েছে?
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তুমি
একটা কিছু করো।
-কি করবো এখন?
-আমাকে বিয়ে করবে।আমি তোমার
জন্য কাজি অফিসের সামনে দাড়িয়ে
আছি।
.
বিয়ে করে আরিফ মিতুকে নিয়ে
বাড়িতে আসলো। আরিফের বাবা
কিছুতেই আরিফের বিয়ে মেনে নিল
না। আরিফের মা অনেক বলাতেও লাভ
হলো না। আরিফকে বাড়ি থেকে
তাড়িয়ে দিল।
.
গিটার নিয়ে আরিফ বাড়ি থেকে
বেড়িয়ে আসে। মিতুর সাথে সংসার
বাধলো।একবেলা না খেয়ে থাকলেও
মিতুকে না খাইয়ে রাখে না।
.
আরিফের হঠাৎ পুরাতন কথাগুলো মনে
পরে গেছে। আরিফ বলল
-মিতু হায়রে তোর ভালবাসা!!!
.
গিটার হাতে নিয়ে আরিফ গান
গাচ্ছে। কারন গিটার আর গানই
আরিফের সঙ্গি।
.
আরিফের ইচ্ছা ছিল একদিন তার গান
বের হবে। গান আর মিতুকে নিয়ে সব
দুঃখ ভুলে যাবে। কিন্তু আরিফের কোন
ইচ্ছা পুরন হলো না। কারন গান বের
করতে যে টাকা দরকার সেই টাকা
আরিফের নেই।
.
আরিফ একবার ভাবলো তার বাবার
থেকে টাকা নিবে। কিন্তু পরে
আরিফের বাবা তাকে টাকা দিবে
না কারন সেদিন আরিফকে তার বাবা
রাগ অভিমান নিয়ে তাড়িয়ে
দিয়েছে।
.
আরিফ রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে।
হালকা বৃষ্টি পরছে। হঠাৎ মোবাইল
বেজে উঠলো। মোবাইল ধরে বলল
-হ্যালো।
-আমি মিউজিক কোম্পানি থেকে
বলছিলাম।
-হ্যা। বলুন।
-আমরা আপনার একক এলবাম বের করতে
চাই।
-বলেন কি!! টাকা..
-আরে ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না।
.
আরিফের আজ অনেক খুশি লাগছে। তাই
বৃষ্টির ভেতরে হেটে চলেছে। বৃষ্টির
সাথে আরিফের দুঃখগুলো ঝড়ে
যাচ্ছে।
.
একটা গাড়ি এসে কাদা পানি
আরিফের গায়ে ছিটিয়ে দিয়ে চলে
গেল।আরিফ বলল
-এই কেরে...
কিছু বলতে চেয়েও বলল না। কারন আজ
আরিফের সুখের দিন।
.
গাড়িটা পিছিয়ে এসে কাচ
নামালো। আরিফ ভেতরের লোকটিকে
দেখে অবাক হয়ে গেল।গাড়ির
ভেতরে বাবা বসে আছে।
.
পাশ কাটিয়ে চলে যেতে আরিফের
বাবা ডাক দিয়ে বলল
-দাড়া বাবা।
-......
-আমার সাথে কথা বলবি না? আমার ভুল
হয়ে গেছে। এবার বাড়ি চল।
-কিসের ভুল আমার খবর রেখেছ
কোনদিন?
-তোকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর
পরে আমি অনুশোচনায় ভুগছিলাম।
তোকে অনেক খুঁজেছি। কিন্তু পাই নি।
পরে জানতে পারলাম টাকার জন্য
তোর এলবাম বের হচ্ছে না। তাই আমি
সব টাকা দিয়ে এসেছি।
-তুমি!!
-হ্যা বাবা। এবার বৌমাকে নিয়ে
বাড়ি চল।
-তোমার বৌমা সুখে আছে থাকুক।
.
কয়েকমাস পরে.....
আজ কয়েকবছর পরে আরিফ অফিসে
এসেছে।
.
আরিফ হঠাৎ কাউকে দেখে বাইরে
এসে দাড়িয়ে আছে। আরিফের বাবা
বলল
-তুই এখানে দাড়িয়ে? বৌমাকে
আমাদের কোম্পানির ম্যানেজারের
সাথে দেখলাম।
-আমিও দেখেছি।
-তুই এখানে কেন?আর বৌমা....
-তোমার বৌমা এখন ম্যানেজারের
স্ত্রি।
-কি!!আমার কোম্পানির সামান্য
ম্যানেজার!!!
আরিফের বাবা আরিফকে সবকিছু বলল।
.
আরিফের বাবা আরিফকে মিতুকে
ফিরিয়ে আনতে চাইলেও রাজি হলো
না। কারন যে সুখের হাতছানি পেয়ে
ছেড়ে গিয়েছে তাকে আরিফের
প্রয়জন নেই।
.
আরিফ সবার সামনে যাচ্ছে না। সবার
সামনে আরিফকে পরিচয় করে দিতে
চাচ্ছে। আরিফ যাচ্ছে না। কারন
আরিফকে দেখে কারো হাসিমুখ মলিন
হতে পারে। আরো মলিন হবে যখন শুনবে
তার স্বামি আরিফের কোম্পানির
একজন সাধারন ম্যানেজার।
.
মিতু যে সুখের হাতছানি পেয়েছে।
সেটা নিয়েই থাক।
.
লেখা-- Pabnar Tarcera Balok

সংকলন ৩৪৬- ব্ল্যাংক টেক্সট

লেখা-জিয়াউল হক
...
রাতের সময়টা বেশ অদ্ভুতুড়ে!
একটাই তো সময় কিন্তু অজস্র মানুষকে
নিয়ন্ত্রণ করে। কাওকে কাঁদায়,
কাউকে কষ্ট দেয়, কারো মাঝে
জাগিয়ে তোলে পশুত্ব, আবার কাউকে
করে অসহায়, কেউবা আঁতকে ওঠে,
কারো স্বপ্ন নাড়ে আবার কাউকে
ফেলে দেয় ভাবনার সাগরে।
আমি ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খেতে
খেতে আনমনে হেঁটে চলেছি এই সরু
রাস্তাটা ধরে। এই খানিকক্ষণ হল
কালো চাদরে মুড়েছে আকাশটা। বেশ
অন্ধকার কিন্তু কিছু দূর পর পর
ল্যাম্পপোস্ট। শীতের রাত, তাই আলো
সীমিত। কবরস্থানটার পাশ দিয়ে
হোস্টেলে ফিরছি। হঠাৎ কানে কেমন
যেন কান্নার আওয়াজ পেলাম।
ভাবলাম, কাল রাতের ভুত এফ.এম এর
গল্পটা মাথা বেশ ভালো ভাবেই
চেপেছে। সামনে বাঁপাশে চোখ
পরতেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। একি!
মেয়েটা কে? এভাবে কবরের পাশে
দাঁড়িয়ে কাঁদছে কেন? হাজারো প্রশ্ন
আমায় সমানে গুতোচ্ছে।
...
-এইযে, শুনছেন?
-কে আপনি? কি চাই? (একটু কাঁপা
কাপাঁ কন্ঠে)
-না, মানে এই রাতের বেলায় আপনি
একা এখানে কেনো? কোনো সমস্যা
হয়েছে কি? (লক্ষ্য করলাম কবরটি আসিফ
মাহমুদ নামক কারোর)
- (হু হু করে মেয়েটি আবার কেঁদে ওঠে)
-আচ্ছা! বলবেন তো কি হয়েছে।
-আপনার কি দরকার? চলে যান এখান
থেকে।
-চলে যাব? আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি
চোখের পানিতে মুখ ধুয়া চালিয়ে
যান।
আমি পেছন ফিরে দু কদম আগাতেই
আবার কি ভেবে ঘুরে দাড়ালাম।
-আপনি চাইলেই আমায় বলতে পারেন।
কেউ রেখে চলে গেছে বা অন্যকিছু?
মুহূর্ত দুএকের জন্যে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর
ব্যাটারি ফুরিয়ে গেল নাকি!
এরপর নীল শাড়ীটার আঁচলে ডান
চোখের চোখের জল মুছে নেয় সে। এবং
শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে "শুনবেন?"
এবার আমি একটু আঁতকে উঠি। মেয়েটি
আবার ভুতের গল্পের মত আমার ঘাড়
মটকাবে নাতো?!
ভয়ে বললাম, "আমি শুনছি, বলে ফেলুন"
"শুনুন তবে"
সেদিন আমরা তিন বান্ধবী
ভার্সিটির মাঠে বসে গল্প করছিলাম।
তো গল্প শেষে বাসায় যাবার জন্যে
যেইমাত্র উঠতে যাব, তখনই আমার জুতোর
হিল ভেঙে পরে যাই একটি ছেলের
গায়ে। যেমনটা ছিনেমায় ঘটে আরকি!
ছেলেটি আশ্চর্যজনকভাবে আমার উপর
প্রচণ্ড বিরক্ত হয় আর বলে উঠে,
-এইসব জুতো আপনার পায়ের জন্য না।
বাসায় চটিজুতো থাকলে ওটা পরবেন।
মানাবে বেশ ভালোই।
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে
যায়। আমার খুব অপমান বোধ হচ্ছিল।
আমার বান্ধবীরা আমাকে বেশ
রাগাচ্ছিল। সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা
করেছিলাম, এর প্রতিশোধ আমি নেবই।
কেটে গেল কয়েক সপ্তাহ। ছেলেটির
কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ
দেখি আমার পাশের সারিতে কালো
শার্ট পরে থাকা ছেলেটি তো সেই
ছেলেটা। আমার ক্লাসে? সে
পুরোনো রাগ আবার জ্বলে উঠতে শুরু
করে।
ক্লাস শেষে ওই ছেলেটার বায়ো-
ডাটা জোগাড় করলাম। ছেলেটার নাম
আসিফ। যেমন হ্যান্ডসাম তেমন স্মার্ট।
ভার্সিটিতে বেশ ভালোই নাম আছে
তার। যাইহোক অনেক রাত হয়েছে।
ঘুমিয়ে পড়লাম সেদিন।
...
-এই ছেলে তুমি বিয়ে করেছ? গালে
হলুদ লাগিয়েছ যে! (ওর বন্ধুরা কি
নিয়ে যেন মজা করছিল। আমি ওএ
ইতস্তত করবার জন্যে বলেছি)
-হুম ওই যে, ওইটা আমার মেয়ে (ফোর্থ
ইয়ারের একটা আপুর দিকে তাঁক করে)।
ওর বড় আরো একটা ছেলে আছে।
-ইয়ার্কি করো কেনো এত?
-ও আচ্ছা! তাই? তাহলে তোমার
পরিচিত কেউ আছে?
-কেন?
-ওইযে! বিয়েটা সেরেই ফেলি।
ইদানীং যে হারে ভূমিকম্প হচ্ছে!
-উফফ! অসহ্য!
ক্লাসের সময় হওয়ার চলে এলাম আমি।
পুরো ক্লাসে আর মন বসল না আমার। কখন
যে প্রতিশোধের আগুন ভালোবাসার
রেণুতে পরিণত হল। বুঝতেই পারলাম না।
বুঝলাম, আমি আসিফের প্রেমে পরে
গেছি।
আমরা ধীরে ধীরে বন্ধু হহয়ে গেলাম।
এরপর অনেকবার অনেক ভাবেই ওর মন জয়
করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হলো
না।আসিফ ছেলেটা সত্যিই অনেক
বেশি ভালো। কিন্তু ও কখনই
রিলেশনশিপ করার জন্য সিরিয়াস ছিল
না। এক পর্যায়ে আমি আশা ছেড়েই
দিয়েছিলাম। খুব ভেঙে পরেছিলাম।
.......
হঠাৎ করেই ঘুম থেকে উঠে বসলাম।
চারিপাশ অন্ধকার। স্বপ্ন দেখছিলাম
না এটা নিশ্চিত ছিলাম। মোবাইলের
দিকে চোখ যেতেই আসিফের ছবি
ভেসে ওঠল ফোনে।
-হ্যালো, তারিন?
-না ভুত! এতো রাতে ফোন দিয়েছ
কেনো?
-আচ্ছা কতক্ষণ ধরে ফোন করেই যাচ্ছি,
পিক করছ না। এমন হয়ে বিয়ের পর কি যে
হবে।
-মানে? কি বলছ? স্বপ্নে আছ তুমি?
-না তারিন।সেদিন থেকে স্বপ্ন
সাজাচ্ছি যেদিন তোমায় প্রথম
দেখেছিলাম। এতদিন সাহস হয়নি।
কিন্তু আজ বলছি। আমি তোমায়
ভালোবাসি তারিন।
-সত্যি বলছ?
-হ্যা। একদম সত্যি। বিশ্বাস করো এতটুকুও
মিথ্যে বলছি না
-তাহলে এতদিন আমি যখন বলছিলাম
তখন গুরুত্ব দাওনি যে?
-আমি চাইছিলাম তোমায় আরো
ভালো করে বুঝতে। তুমি সত্যিই কি
আমায় ভালোবাসো কিনা।
-আজ কি মনে হচ্ছে?
-জানি না। শুধু এতটুকু জানি যে, আমি
তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। তোমায়
আমি সত্যিই খুব বেশি ভালোবাসি
তারিন। বলো তুমি আমায়
ভালোবাসো না?
-না। বাসি না। তুমি আমাকে আগে
গুরুত্ব দাও নি। আমি তোমায়
ভালোবাসি না আসিফ। আমার থেকে
ভালো কাউকে খুঁজে নিও।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। মনে মনে
খুব বেশি আনন্দ হচ্ছে। আমার মনের
মানুষটিকে আমি কাছে পেতে
যাচ্ছি। আবার কষ্টও হচ্ছে। ওকে মিথ্যে
বলবার জন্যে।
"আমিও যে তোমায় খুব বেশি
ভালোবাসি বোকা আসিফ। একটু ক'দিন
এভাবে থাকো। বুঝো কাছের
মানুষটিকে দূরে ঠেলে দিলে কেমন
লাগে।"
সেদিন আর রাতে ঘুম হয়নি। ফোন অফ
করে রেখে সারা রাত আসিফের কথা
ভাবছিলাম। এরপর তিনদিন
ভার্সিটিতেও যাই নি। আসিফকে
মিথ্যে কষ্ট দেবার জন্যে।
.......
সেদিন রাতের ঠিক তিন দিন পর
সকালে আমার বাসায় আমার নামে
একটি বক্স আসে। ওটা আসিফ
পাঠিয়েছিল। ভেতরে একটা নীল
রঙের শাড়ী। নীল ওর প্রিয় রঙ। আর
একটা চিঠি। ওতে লিখা ছিল,
"প্রিয় আমার কলিজার টুকরাটা,
এত অভিমান করলে চলবে? আমি জানি
তুমি আমায় ভালোবাসো। কিন্তু আর
কষ্ট না দিলেই কি নয়? :') আমি তোমায়
নীল শাড়িতে দেখব আর শুনব যে, তুমি
আমায় ভালোবাসো। তাই শাড়িটা
পড়ে আজ বিকেল চারটায় লরেঞ্জ
ক্যাফেতে চলে এসো। আমি তোমার
অপেক্ষায় থাকব।
ইতি তোমার আস্ফু"
আমি ওকে আদর করে আস্ফু ডাকতাম।
.....
উফফ!! অনেকক্ষণ হয়ে গেছে ঘুমিয়েছি।
ঘুম থেকে উঠে ফোনে আসিফের
অনেকগুলো টেক্সট জমে ছিল। ওর সাথে
দেখা করতে যাইনি বলে বড্ড বেশি
রাগ করে ফেলেছে ছেলেটা। আমি
সেদিন তাকে কোনো রিপ্লাই দেই
নি। আমি যে অভিমান করেছি তার
সাথে!
পরদিন দুপুরের কথা,
আসিফ সকাল থেকে আর কোনো টেক্সট
করেনি। তাই আমি রাগ ঝেরে ফেলে
তাকে টেক্সট করলাম।
"আরে আমার বুদ্ধুটা আমিও তোমাকে
সত্যিই ভালোবাসি। এতটুকুও বোঝো
না?"
সাথে সাথে রিপ্লাই। "আমি বাসি
না"
আমি খুব রেগে গেলাম। এসব কি?!
আমি আবার টেক্সট করলাম "সত্যিই কি
আমায় আর ভালোবাসো না?"
সে আমাকে একটা ব্ল্যাংক টেক্সট
করেছে।
আমি রেগে গিয়ে তাকে ফোন করে
ইচ্ছেমত বকেছি। এমন কি এটাও বলেছি
যে, আমিও তাকে আর ভালোবাসি।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আসিফ একটা
শব্দ পর্যন্ত কথা বলেনি।
ফোন রেখে দিলাম...
পরদিন আমি বুঝতে পারলাম আমার ভুল।
আসিফের ফোনে একটা টেক্সট করে
দিলাম। সেই নীল শাড়িটা পড়ে ছুটে
গেলাম লরেঞ্জ ক্যাফেতে। ওকে
এখানে আসতে বলেছি। "I LOVE U" বলব
বলে।
একি! ও কোথায়? এতক্ষণ হয় গেলো আসল
না যে?!
ওর মেস এ ছুটে গিয়ে শুনি গতকাল
রাতে ট্রাক দুর্ঘটনায় আসিফের মৃত্যু হয়।
বাসায় ফিরে আসি আমি। নিজেকে
কোন মতেই ক্ষমা করতে পারছি না
আমি।অজানা এক শক্তি আমাকে পরাস্থ
করতে ছুটে চলেছে আমারে পেছনে। শুধু
টেক্সটগুলো দেখছিলাম।
কিন্তু!!! ওটা আসলে ব্ল্যাংক টেক্সট
ছিল না। ওটার শেষে লিখা ছিল "I
LOVE U"
....
"আমি নিজেকে ক্ষমা করতে
পারিনি" -একথাটা বলতেই আমার
সামনের অচেনা মেয়েটা কোথা
যেন হারিয়ে গেল। তার গল্প শুনতে
শুনতে কখন যে, এত দূরে চলে এসেছি
টেরও পাইনি।হঠাৎ নিজেকে একটা
কবরের রেলিঙের ওপর আবিশকার
করলাম। ওটাতে লিখা ছিল,
নামঃ তারিন আক্তার
তারিখটা ছিল আজ থেকে ঠিক তিন
দিন আগের...

সংকলন ৩৪৫- বিন্তি

(১)
হঠাৎ দু : স্বপ্নের মতো করে নিরবের ঘুম টা ভেঙে যায়। লাফ দিয়ে বেড থেকে উঠে দাড়িয়ে ধপাস করে আবার সেই বেড এই মুখে হাত গুজে বসে পরে।
অন্যান্য সকাল গুলোতে বিন্তি নিরবের মাথায় হাত বুলিয়ে কতো শত দুষ্টুমি করে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। আর আজ কেমন করে যেনো অস্বস্তিদায়ক ভাবে ঘুম টা ভাঙলো। নিজের মনের মধ্যে চাপা অপরাধ বোধের দরুন নিজেই বিরবির করে বলে উঠলো "ধেত! এতো টা ভুল না করলেও হতো!"
.
নিরব ডোর খুলে পাশের রুমে যায়, কিন্তু বিন্তি কে খুজে পায়না, একে একে ড্রইং/ডাইনিং রুম পেরিয়ে আবার নিজের রুমে ফিরে এলেও কোথাও বিন্তি কে খুজে পায়না নিরব। কেমন যেনো এক অদ্ভুত মায়া কান্না বেরিয়ে আসে নিজ থেকে।
হঠাৎ করে পাশ ফিরে ড্রেসিং টেবিল এর উপর গ্লাসে চাপা এক টুকরো কাগজ দেখতে পেয়ে হাতে তুলে নেয় নিরব, যেখানে বিন্তির হাতে লেখা গুটি কয়েক অক্ষর যা মুহুর্তেই নিরব এর পুরো দুনিয়াকে তছনছ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট, কাগজে লিখা "ভালো থেকো, চলে যাচ্ছি, খুজতে যেয়োনা, পাবেনা"।
.
(২)
নিরব আর বিন্তি দুজোনের খুব ছোট্ট এক টা সংসার। কিন্তু যার মধ্যে ভালবাসার কোনো কমতি নেই। প্রেম করেই দুজনের বিয়ে। কতো কাঠখোর পুরিয়ে বাবা মা কে ম্যানেজ করলো বিন্তি শুধু মাত্র নিরব এর জন্য। অথচ সেই নিরবই একটুতেই এতো রেগে গিয়ে এভাবে চলে যেতে বললো। তাই বিন্তির এই সিদ্ধান্ত, আর কখনো ওর কাছে ফিরে যাবেনা। চলে যাবে দু চোখ যেখানে থামে। সাইফ কে বলে ঢাকা-কক্সবাজার এর একটা প্যাকেজ বুক করিয়েছে তিন দিনের জন্য। অথচ যদি কাল চাঁদ দেখা যায় তবে এরপর দিন ঈদ। বাসের জানালার পাশের সিট টায় মাথা টা কে হেলে দিয়ে বসে থাকে বিন্তি। এভাবে একা চলে এসেছে ভেবে অনুশোচনায় পরতে গিয়েই রাতের ঘটনা মনে পড়ে যায় বিন্তির।
.
নিরব একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে বিয়ের আগে থেকেই। দিনে যায় রাতে ফিরে। বিন্তি সারাটা ক্ষণ বাসায় একা থাকে। শুধু যেদিন মাস্টার্স এর ক্লাস থাকে সেদিন সকালে বের হয় এ ছারা বাদ বাকি সময় ঘরে থেকেই নিরব এর জন্য টুকিটাকি এটা সেটা রান্না করতে থাকে। কতো পদ যে মাঝে মাঝে রেধে ফেলে তা সে নিজেই ভুলে যায়।
.
গতোকাল বিন্তির খুব অসুস্থতা অনুভব করে। বিন্তি ভেবেছিলো কাজের বুয়ো টা বিকেলে আসলে ওকে দিয়ে রাধিয়ে নিবে আজকের দিন টা। সেই ভেবে শুয়ে থেকে ঘুমিয়ে পরে বিন্তি।
আর সেই ঘুম ভাঙে নিরব এর ফোন কলে রাত আট টায়!
নিরবের সাথে কথা শেষ করে সব বুজে উঠতেই বিন্তির মাথায় হাত! যেই বুয়োর জন্য অপেক্ষা সেই বুয়োই আজ আসেনি!
.
বিন্তির মেজাস টা চরমে উঠে। তবুও অসুস্থ শরীর নিয়ে ধিরে ধিরে উঠে নিরবের জন্য ভাত আর ডিম ভাজি করে। ডিম ভাজা শেষ হতেই নিরব চলে আসে। হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসেই আচমকা নিরব বিন্তি কে ঝারি দিয়ে বলে " এসব কি রেঁধেছ? , সারাদিন অফিস করে রোজা রেখে এসে কি আন্ডা খেতে বসবো? ফাজলামি করো?"
আগে থেকেই রেগে থাকায় বিন্তিও রেগে গিয়ে বলে উঠে "এই আমি কি তোমার বাসার কাজের বুয়ো যে সারাদিন খেটে খুটে তোমার জন্য শুধু রসোগোল্লা বানিয়ে রাখবো?"
বিন্তি কে অবাক করে দিয়ে নিরব প্রথম বারের মতো তেরে গিয়ে বিন্তি কে বলে উঠে " কি বললে তুমি? তোমার সাহস তো কম না! তোমাকে কাজের বুয়ো হয়ে থাকতে বলেছে কে? ভাল না লাগলে চলে যাও" কথা টা বলেই নিরব রুম এ ঢুকে বিকট শব্দে ডোর অফ করে দেয়। বিন্তি কিছু বুঝে না উঠতে পেরে হু হু করে কেঁদে দেয়। সারা রাত ড্রইং রুমে পরে থেকে বিন্তি কাঁদতে থাকে অথচ নিরব এর যেনো কোনো হুশ ই নেই। একটি বারের জন্যেও বিন্তির কাছে গিয়ে স্যরি বলেনি। বিন্তিও যে অসুস্থ থেকেও রোজা রেখে এ পর্যন্ত কিছু খায়নি তাও একবার জানতে চাইলোনা!!
কথা গুলো ভাবতেই বিন্তি হু হু করে আবারো কেঁদে উঠে।
.
(৩)
এদিকে সকাল থেকে নিরব হন্যে হয়ে বিন্তি কে খুঁজতে থাকে। বিন্তির বাবা-মায়ের বাসায় ফোন দিয়ে জানতে পারে সেখানেও যায়নি। একে একে নিরব এর জানা থাকা বিন্তির সব কটা রিলেটিভ দের কাছে ফোন দিয়েও কোথাও খুজে পায়না বিন্তিকে। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে তবুও বিন্তির না আসা নিরব কে যেনো উম্মাদ করে তুলে। ওদিকে বিন্তির চলে যাওয়ার খবর শুনে বিন্তি দের বাবা- মায়ের বাসায়েও তোলপার শুরু হয়ে যায়। সেখান থেকে নিরব কে অনবরত থ্রেড দেয়া হচ্ছে। সব কিছু গুলিয়ে ফেলে নিরব নিজের রুমে মেঝেতে লুটিয়ে পরে চিৎকার করে কাদতে থাকে আর নিজেই নিজের নোখ দিয়ে মুখ খামচে ধরে।
.
রাত ২টা। নিরব সেইই সকাল থেকে প্রতিটি টাইমে বিন্তির ফোনে কল দিচ্ছে। কিন্তু সেই একই কথা "এই মুহুর্তে আপানার কাং্খিত নাম্বারে সং্যোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা"।
নিরব নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে মাঝ রাতেই ঘর ছেরে বেরিয়ে পরে রাস্তায় হন্ত হয়ে খুঁজতে থাকে বিন্তিকে।
হাটতে হাটতে সকাল হয়ে যায় তবুও নিরব এর কোনো হুশ হয়না।
.
(৪)
কক্সবাজার এ এসে বিন্তি যে হোটেল টায় উঠেছে সেখানে বিন্তির পাশের রুমেই এক বুড়ো বুড়ির জুটি এসেছে। সকালে ওই আন্টি নিজেই এসে বিন্তির সাথে পরিচিত হয়। সেখান থেকেই জানতে পারে তাদের পঞ্চাশতম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে ছেলে রা জোর করে কক্সবাজার এ ঘুরতে পাঠিয়েছে।
বুরো বুড়ির এই বয়সের রোমান্স দেখে বিন্তি নিজেই অবাক হয়। আর তখন ই নিরব এর কাছে ফোন দেয়ার জন্য হাত টা বারাতেই একরাশ জেদ এসে সেই হাত টা কে সড়িয়ে নেয়।
.
বিন্তি আনমনে সমুদ্র পাড়ে হাটতে থাকে। কক্সবাজার এ আসার পর গতোকাল এর সারাটি সময় বিন্তি ঘুমিয়েই কাটিয়েছে। বিন্তির কিছু দুর সামনেই ওই আন্টি-আংকেল এর জুটিটা হাটছে। বিন্তি ভাবতে থাকে এখন নিরব কে ফোন করলে কেমন হবে? হয়তো নিরব খুব চেঁচামেচি করবে না হয় কয়েকশো বার স্যরি বলবে। থাক তার চেয়ে ও ওর মতো থাকুক। যে মানুষ নিজের স্ত্রীর ভিতরের কথা টুকু ভাল করে বুজতে চায় না তার একা থাকাই ভাল।
.
বিন্তি হঠাৎ নিজের ঠোটের উপর নোনা জল এর অস্তিত্ব খুজে পায়, যার উৎপত্তি বিন্তির চোখ জোরা থেকে। "ভালবাসার রঙ গুলো খুব অদ্ভুত। কোনো কোনো সম্পর্কে পুরোটা সময় মনোমালিন্যতায় ভরপুর হয়ে থাকে। তবুও সম্পর্কের ভাঙন ধরেনা। আবার কিছু সম্পর্কের পুরোটা সময় জুরেই সুখের সুধা বইতে থাকে কিন্তু হঠাৎ ছোট্ট একটা ভুলের জন্য দুজনের মাঝে হয় পাহাড়সম ভাঙনের সৃষ্টি"।
.
(৫)
বিন্তির বাবা প্রথম থেকেই নিরব কে পছন্দ করতোনা। তবুও শুধু মাত্র বিন্তির জন্যই বিয়ে টা হয়েছিলো। এখন বিন্তির না আসার খবর শুনে চিন্তা আর এতো দিন এর খোব মিলিয়ে গুলিয়ে ফেলে নিরব কে ঝাচ্ছেতাই বলছে -" এই ছেলে! পেয়েছো টা কি আমার মেয়েটা কে? সেই শুরু থেকেই কষ্ট দিয়েছ, ভুলিয়ে ভালিয়ে মেয়েটাকে পাগল ও করেছ, আর এখন নিজেই গুম করে রেখে বলছো বিন্তি রাগ করে বেরিয়ে গিয়েছে না? দাড়াও আমি তোমার শেষ দেখে ছারবো!"
.
পুরো ঘরের অবস্থাই থমথমে। একদিন পর ঈদ অথচ এখন ও বিন্তির কোনো খোজ নেই। নিরব দের পরিবার ও এ বাসায় চলে এসেছে। থানা- পুলিশ পর্যন্ত জিডিও হয়েছে। ঠিক তখন বিন্তির ছোট খালার ছেলে সাইফ এসে নিরব কে ডেকে নেয় "ভাইয়া, কিছু কথা ছিলো!"
.
(৬)
বিকেল শেষ হয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। হোটেল রুম এর জানালার ধারে বসে সাগর পাড়ে চেয়ে থেকে বিন্তি কাঁদছে। শাওয়ার ছেরে ভিজতে ভিজতে খুব জোরে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে বিন্তির।
হঠাৎ রুম এর ডোর এ খট খট আওয়াজ শুনতে পায়। বিন্তি আসতে বলে, দেখে সেই আন্টি টা এসেছে।
"মা তোমার ফেস টা কেমন দেখাচ্ছে যে?"
"কেমন আন্টি? ঠিক ই তো আছি"
"কিন্তু আমার যে মনে হচ্ছে তুমি কেঁদেছ?"
"না! আমি ঠিক আছি, কিছু বলবেন আন্টি?"
"না, তেমন কিছুনা, আকাশে আজ নতুন চাঁদ উঠলো যে, কাল তো ঈদ, তাই তোমার খোজ নিতে এলাম"
"তাই নাকি? ঈদ মোবারক আন্টি"
"ঈদ মোবারক! তা মা তুমি কি আরো কদিন থাকবে এখানে?"
"উম্ম এইতো দু/একদিন থাকবো, তো আপনাদের পঞ্চাশতম ম্যারেজ ডে কেমন লাগলো? ঈদ কোথায় করবেন?
"এইতো মা! ছেলেরা আনন্দ করে পাঠিয়েছে, আমরাও আনন্দ পেলাম, বুড়ো বয়সের আনন্দ, আর আমরা তো আজ রাতের গাড়িতেই চলে যাচ্ছি মা"
"ও! মিস করবো আপনাদের"
"আমরাও করবো মা, তবে যাওয়ার আগে তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই যদি কিছু মনে না করো"
"নিশ্চই,বলুন আন্টি"
"তুমি কি ম্যারিড?"
"জি"
"হাসব্যান্ড এর সাথে ঝামেলা হয়েছে?"
"(!)"
"শোনো মা, কিছু মনে করোনা,সেই প্রথম থেকেই তোমার মন টা কেমন যেনো লাগছিলো তাই জিজ্ঞেশ করলাম, তবে একটা কথা কি, জীবনে চলার পথে নিজেদের মাঝে অনেক ঝামেলা হবে, অনেক খারাপ কিছু হবে, তাই বলে আলাদা হয়ে থেকোনা, হয়তো রাগের মধ্যে এখন কিছু করছো, কিন্তু একটা সময় ঠিক বুজতে পারবে। এই দেখোনা আমরা এখন ও এক সাথে আছি? তোমাদের মতো সময়ের হাজার ঝামেলা পেরিয়েই তো এখন ও এক সাথে আছি, হা হা হা"
"(-)"
"মন খারাপ করোনা, বুজলে মা? আমাদের জন্য দোয়া করো, যাই, তোমার আংকেল বসে আছে একা, ভাল থেকো"
.
(৭)
রাত এর ডিনার করে হোটেল রুম ছেরে বাহিরে এসে খোলা জায়গাটায় বসে থাকে বিন্তি। কাল ঈদ, অথচ যার সাথে বসে থেকে ঈদের দিনের প্ল্যান করার কথা সেই পাসে নেই। বুকের মধ্যে সূক্ষ্ম চিন চিন ব্যাথা অনুভব করে বিন্তি। পাচ সাত ভাবতে ভাবতে আনমনা ভাবেই ফোন টা অন করে নিরব কে কল দেয় বিন্তি, হঠাৎ বিন্তি হতচকিয়ে যায়! নিরব এর ফোন এর রিংটোনের সেইম রিংটোন স্পষ্ট ভাবে বিন্তির পিছনে বাজছে।
পিছনে ঘুরে দাড়াতেই বিন্তি দেখতে পায় নিরব দাড়িয়ে এক মনে বিন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হওয়া ভাব না কাটতেই নিরব বিন্তির হাত টা ধরে এক ঝটকা তে বুকের সাথে চেপে ধরে।
দুজনেই কাঁদতে থাকে। একজন কাঁদছে প্রিয় মানুষ টিকে খুজে পাওয়ার আনন্দে আর অন্য জন কাঁদছে প্রিয় মানুষ টির রাগ ভাঙানোর সুখে।
.
রাতের নরম প্রকৃতি তে বাস এর জানালার পাশে বিন্তি বসে আছে, কিন্তু এবার একা নয়, সাথে আছে নিজের জীবনে সবচাইতে আপন মানুষ টা।
নিরবতা ভেঙে নিরব বলে উঠে-
"এই শুনো, সাইফ যে একটা মেয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম করে এটা কিন্তু কাউকে বলবেনা, ও যদি তোমার লুকানো আস্তানার কথা না বলতো তাহলে আজ রাতেই আমি ডেড হয়ে যেতাম"
"উহহহ, ন্যাকা, ওইদিন এত্তো গুলো কথা বলে এখন সুফী সাজতে এসেছে। আর কোনো দিন ওসব বললে আর খুজে পাবেনা, কাউকে না জানিয়েই চলে যাবো"
"সেই সুযোগ টা আপনাকে আর দেয়া হবেনা মহা রানী, এখন থেকে আপনাকে আমার মধ্যেই বেধে রাখবো, আর কষ্ট দিবোনা"
"হুহ, মনে থাকে যেনো"
"থাকবে"
.
গাড়িতে থাকা সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে, বিন্তিও নিরব এর কাধে মাথা রেখে শুয়ে আছে, আস্তে করে ওদের সিটের জানালা টা খুলে দেয় নিরব। সাথে সাথেই এক ঝটকা বাতাসে বিন্তির চুল গুলো উড়ে এসে নিরব এর মুখ ঢেকে দেয়, গভীর আবেশে তলিয়ে যায় দুজন। নিরব ও নিজের মনে চোখ বুজেই শপথ করে ফেলে, " এই পথচলার হয়তো শেষ আছে, কিন্তু কখনো যেনো নিজেদের এক সাথে চলার পথ টি শেষ না হয়"।
বা হাত টা দিয়ে বিন্তির বাহু চেপে ধরে নিরব। দু-জনেই চোখ বুজে অনুভব করতে থাকে পবিত্র কিছু মুহুর্ত কে।
.
"সত্য ভালবাসা গুলো এমন ই। এর কোনো সমাপ্তি নেই। কেননা পবিত্র ভালবাসার প্রতিটি মুহুর্তই একেকটি নতুন অধ্যায়ের জম্ম দেয়"।
.
Written By : অদৃশ্য ইকারাস