ক্লাসে বসে বারবার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছে পূর্বা।
রবিন এখনও ক্লাসে আসেনি। সবসময়ে্ই যে রবিন ঠিক
টাইমে ক্লাস করে, তা কিন্তু না। কিন্তু আজ কেন দেরি
করবে ও? তাছাড়া ও বলেছিলো আজ ঠিক সময়ে ক্লাসে
পৌছে যাবে। অথচ এখনও আসছে না। পূর্বা ওর পাশে
রবিনের জন্য জায়গাও রেখেছিলো। এই মাত্র শ্রেয়া
সেই সিটটা দখল করে নিলো। শ্রেয়া এটা ইচ্ছে করেই
করেছে। ওর বসার আরও জায়গা ছিল। কিন্তু পূর্বাকে
রাগানোর জন্যই রবিনে জন্য রাখা জায়গাটাই দখল
করতে হলো তাকে। পূর্বা বসে বসে কলম কামড়াচ্ছে।
কলম কামড়ানোটা ওর মুদ্রা দোষ। এর জন্য জীবনে কম
বকুনি খেতে হয়নি তাকে। ওদের স্কুলের ম্যাডাম প্রায়ই
বকতেন ওকে। আর বলতেন, “কলমের মধ্যে কি এমন স্বাধ
লুকিয়ে আছে, যে এটাকে সারাক্ষণ কামড়াতে হবে?
বাসা থেকে চাটনি লাগিয়ে এনেছো নাকি?” এভাবে
বকতে বকতে এক সময় টিচারও হাল ছেড়ে দিলেন। কিন্তু
পূর্বা হাল ছাড়েনি। এখনও ধরে রেখেছে অভ্যাসটা।
.
স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। পূর্বা বারবার বাহিরের দিকে
তাকাচ্ছে। অবশ্য বাহিরের দিকে তাকিয়েও খুব একটা
লাভ হচ্ছে না। রুমের জানালাগুলো বন্ধ করা। জানালায়
কাঁচ লাগানো আছে। কিন্তু দিন দিন ময়লা পড়ে ঘোলা
হয়ে আছে কাঁচগুলো। ভেতর থেকে তাকালে বাহিরের
কিছুই দেখা যায় না। তবুও বার বার বাহিরে দেখার
চেষ্টা করছে পূর্বা। এখনও রবিনে যে কেন আসছেনা,
বুঝতে পারছে না কিছুই। আজ একটা বিশেষ দিনও বটে।
ওদের প্রথম ভ্যালেন্টাইন আজ। ইচ্ছা ছিল, প্রথম
ক্লাসটা একসাথে করবে দুজনে। এরপর বাহিরে কোথাও
ঘুরতে বের হবে। কিন্তু ডালিম কুমারের এখনও আসার
কোনও নাম নেই। রাগে মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে ওর।
ইচ্ছে হচ্ছে ওকে কাছে পেলে চিবিয়ে খেতে। খাওয়ার
পর দুই গ্লাস বোরহানি খেয়ে সব হজম করে ফেলতে
পারলে আরও ভাল হত। কাঠপট্টি রোডের বিরিয়ানির
হাউজের বোরহানিটা বেশ ভাল হয় খেতে।
.
এতক্ষণে পেছনের দরজা দিয়ে নাযিল হলেন মিস্টার
মহারাজ। এসেই একটা দাঁত কেলানো হাসি উপহার
করলেন পূর্বাকে। দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। বেছে
বেছে পূর্বার পেছনের সিটটাতেই আসন গ্রহন করলেন
তিনি। অতঃপর ভাবুক কবির মত মুখে হাত রেখে পূর্বার
কাছে দেরিতে আসার জবাবদিহিতা করতে লাগলেন।
ওর কথার জন্য পূর্বা ঠিকভাবে লেকচারও শুনতে পাচ্ছে
না। এখন আগের থেকেও বেশি বিরক্ত লাগছে ওর। মনে
হচ্ছে ও ক্লাসে না আসলেই ভাল হত। অন্তত ক্লাসটা
ঠিকমত করা যেত। রবিন মুখে হাত রেখে বলছে,
-তোমার আরও পেছনে বসা উচিত ছিল
মিরাক্কেলের “পলাশ অধিকারী” এর মত করে মুখ না
নেড়েই পূর্বা জিজ্ঞেস করে,
-কেন?
-স্যার নার্ভাস ফিল করছেন
পূর্বা মুখে বিরক্তির ভাব এনে বললো,
-উফফ্! লেকচার শুনতে দাও।
-এটা আর শোনার কি আছে? দেখছো না, Coefficient of
Variance বাদ দিয়ে বসন্তের কথা বলছেন। এটা তোমার
কারনেই হচ্ছে।
-চুপ করো
-ওকে সরি। শোনো।
ইতোমধ্যে স্যারের সুদৃষ্টি নিক্ষেপ হলো ওদের উপর।
এসে রবিনকে জিজ্ঞেস করে,
__কোনও প্রবলেম?
_স্যার আসলে না... আমি তো স্যার দেরি করে ফেললাম
স্যার... সরি স্যার... আপনি আগে কি পড়িয়েছেন, আমি
তো জানিনা। এটা ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম স্যার...
কিন্তু ও আমার কথা শুনতে পাচ্ছিলো না... আপনি
পেয়েছেন।
__আপনি এক কাজ করুন। ক্লাস শেষে আমার অফিসে চলে
আসুন।
_জি স্যার নিশ্চয়ই আসবো।
.
স্যার ওখান থেকে সরে যেতেই রবিনের টিটকারী
মার্কা কথা শুরু...
-স্যারের দেখছি তোমার জন্য অনেক মায়া।
-হুম। অনেক মায়া। এখন চুপ করো।
-তাহলে তুমি এক কাজ করতে পারো।
-উফফ্...
-বলবো কি কাজ? বলি?
পূর্বা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-না! না!! না!!
-স্যার তো বসন্তের কথা বলছেন, তুমি স্যারকে
ভ্যালেন্টাইন গিফট হিসেবে কোকিলের ডাক ডেকে
শুনিয়ে দিতে পারো।
এবার আর পূর্বা বিরক্তি ভাবটা ধরে রাখতে পারলো
না। ওর পাগলামী কথা শুনে হেসে উঠলো। তবে অবশ্যই
তা স্যারের দৃষ্টিকে আড়াল করে।
***
.
কলা ভবনের পেছনে লেকের পাড়ে বসে আছে দুজন। রবিন
একরাশ বিরক্তি নিয়ে পূর্বার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিরক্তির কারন, পূর্বা আজ মেকআপ করে এসেছে।
মেকআপ ছাড়াই ওকে সুন্দর দেখায়। মেকআপ করলে ওর
সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা থাকে না। এখন পূর্বাকে
দেখে মনে হচ্ছে রাজ্যের সব আটা ময়দা সুজি ওর মুখে।
গালের উপর হালকা টমেটো সসের প্রলেপও আছে। রবিন
এখন এতটা রেগে আছে, পারলে ওকে এখনই লেকের
পানিতে চুবোয়। কিন্তু ও পূর্বাকে কিছু বলছে না। এই
বিশেষ দিনে ও পূর্বার মনে কষ্ট দিতে চায় না। পূর্বাও
জানে রবিনের মেকআপ পছন্দ না কিন্তু এতটা অপছন্দের,
তা জানত না। আজকের ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষ্যে একটু
সাজ-গোজ করেছিলো ও। এখন ও রবিনের দিকে
তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। ও তাকিয়ে আছে লেকের
পানির দিকে। পানির রঙটা একটু নীলচে ধরনের। তবে
বেশ ভালই পরিষ্কার। পনির উপর অল্প কিছু কচুরিপানা
থাকলে ভাল হত। কচুরিপানার সাদা ফুলগুলো ওর পছন্দ।
কিন্তু কোনোদিন হাতে ধরে দেখার সৌভাগ্য ওর হয়নি।
যে পানিতে কচুরিপানা থাকে, সে পানিতে কেউ
নামতে চায় না। তাহলে গায়ে চুলকানি হয়। তাই দুর
থেকেই ফুলগুলো দেখতে হয়েছে পূর্বাকে। এই লেকে
কচুরিপানা নাই। কিন্তু সাত-আটটা রাজহাস দেখা
যাচ্ছে। হাসগুলো পানিতে সাতার কাটছে আর কচকচ
করে পানি চিবিয়ে খাচ্ছে। রাজহাসগুলো দেখতে বেশ
সুন্দর। কিন্তু ওদের ডাকটা খুব বিশ্রি। শুনলে পূর্বার
পিলে চমকে যায়। তাই ও রাজহাস থেকে নিরাপদ দুরত্ব
বজায় রাখে।
.
এতক্ষন পর রবিনের মুখে একটু বুলি ফুটলো।
-পূর্বা
-হুম
-আরও কিছুক্ষণ থাকবে, নাকি উঠবে?
-চলো ওঠা যাক।
একটা রিকসা ডেকে নিয়ে দুজন বসলো তাতে। রবিন যে
পূর্বাকে বকে নাই, এতই ও অনেক খুশি।
.
রিকসাতে করে যাচ্ছিল দুজন। তখন সামনে থেকে আসা
একটা রিক্সা থেকে একটা মেয়ে মাথা উচিয়ে বলল,
“হাই রবিইইন”। রবিন কিছু বলছে না। ভয়ে মুখ কাচুমাচু
করে বসে আছে। এখন পূর্বা ওকে পুরোদমে ঝাড়বে।
ভাবতে না ভাবতেই শুরু হল পূর্বার জেরা।
-মেয়েটা কে?
-কোন মেয়েটা?
-যে তোমাকে দেখে রাজহাসের মত গলা বাড়িয়ে ‘হাই’
দিলো
-কি জানি! ভার্সিটির জুনিয়র হবে হয়ত
-তোমাকে চেনে কিভাবে?
-চিনতেই পারে
-তুমি চেন না?
-মনে পড়ছে না।
-ঠিকমত ভেবে বলো। জুনিয়র কেউ তোমার নাম ধরে
ডাকবে না।
-ও আচ্ছা। তাহলে ও আমার কাজিন হতে পারে। ঠিকমত
দেখতে পাইনি তো।
-কে এমন কাজিন, যে তোমাকে দেখামাত্রই চার আলিফ
টান দিয়ে তোমার নাম ধরে ডাকলো?
-বড় মামার মেজ মেয়ে, তন্নী
-ও আচ্ছা। ফোন করো তাকে।
-কেন?
-আমি বলেছি তাই। জিজ্ঞেস করো, সে এখন কোথায়?
-ছাড়ো না এসব। কিসব নিয়ে কথা বলছি আমরা!
-তুমি ফোন দিবে কি না?
-আচ্ছা দিচ্ছি
.
ওপার থেকে ফোন ধরতেই রবিন বললো,
_হ্যালো তন্নী
__হ্যা ভাইয়া, কেমন আছো?
_হুম ভালো। তুই ভাল আছিস?
__এইতো আছি।
_কি করিস?
__বাসায় বসে টিভি দেখতেছি
_ও আচ্ছা। কোথাও বের হসনি?
__কিভাবে বের হবো? আম্মু তো বের হতে দেয় না। তুমি
এসে দু’একদিন থেকে যাও না, প্লিজ। বড্ড একা একা
লাগছে।
_আচ্ছা দেখবো। এখন রাখি রে
__রাখবা? আচ্ছা রাখো
ফোন রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে রবিন। এক
প্যাঁচ খুলতে গিয়ে আর এক প্যাঁচে পড়ে গেছে। এবার
পূর্বা বলছে,
-বড্ড একা একা লাগছে। তাই না?
-আমি তো কিছু বলি নাই
-এমন আর কত কাজিন আছে তোমার?
-আর নেই। একটাও নেই
-ফের মিথ্যে কথা! তোমাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি...
.
পূর্বা সমানে বকে যাচ্ছে ওকে। রবিন মাথা নিচু করে শুধু
শুনে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই কেউ ওকে বকলে ও
কেঁদে দিত। এখন ওর ভয় হচ্ছে, এমন বকুনি শুনে কখন যেন
আবার কেঁদে ফেলে ও। তাহলে তো মান-সম্মান সব
প্লাস্টিক! প্রেমিকার বকুনি শুনে প্রেমিক কেঁদে
দিচ্ছে। শুনলে লোকে কি বলবে! এর মধ্যে পূর্বা বলে
উঠলো,
-এই, তুমি চোখ মুছ। কাঁদছো কেন?
-বলে কি! এরই মধ্যে কেঁদে ফেলেছি নাকি?
চোখ মুছতে গিয়ে রবিন লক্ষ্য করে, ওর চোখ শুকনো। তার
মানে ও কাঁদেনি। কিন্তু... পূর্বা ওর মনের কথা বুঝলো
ক্যামনে?
লেখা__ Nazmul Hossain Nayeem
রবিন এখনও ক্লাসে আসেনি। সবসময়ে্ই যে রবিন ঠিক
টাইমে ক্লাস করে, তা কিন্তু না। কিন্তু আজ কেন দেরি
করবে ও? তাছাড়া ও বলেছিলো আজ ঠিক সময়ে ক্লাসে
পৌছে যাবে। অথচ এখনও আসছে না। পূর্বা ওর পাশে
রবিনের জন্য জায়গাও রেখেছিলো। এই মাত্র শ্রেয়া
সেই সিটটা দখল করে নিলো। শ্রেয়া এটা ইচ্ছে করেই
করেছে। ওর বসার আরও জায়গা ছিল। কিন্তু পূর্বাকে
রাগানোর জন্যই রবিনে জন্য রাখা জায়গাটাই দখল
করতে হলো তাকে। পূর্বা বসে বসে কলম কামড়াচ্ছে।
কলম কামড়ানোটা ওর মুদ্রা দোষ। এর জন্য জীবনে কম
বকুনি খেতে হয়নি তাকে। ওদের স্কুলের ম্যাডাম প্রায়ই
বকতেন ওকে। আর বলতেন, “কলমের মধ্যে কি এমন স্বাধ
লুকিয়ে আছে, যে এটাকে সারাক্ষণ কামড়াতে হবে?
বাসা থেকে চাটনি লাগিয়ে এনেছো নাকি?” এভাবে
বকতে বকতে এক সময় টিচারও হাল ছেড়ে দিলেন। কিন্তু
পূর্বা হাল ছাড়েনি। এখনও ধরে রেখেছে অভ্যাসটা।
.
স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। পূর্বা বারবার বাহিরের দিকে
তাকাচ্ছে। অবশ্য বাহিরের দিকে তাকিয়েও খুব একটা
লাভ হচ্ছে না। রুমের জানালাগুলো বন্ধ করা। জানালায়
কাঁচ লাগানো আছে। কিন্তু দিন দিন ময়লা পড়ে ঘোলা
হয়ে আছে কাঁচগুলো। ভেতর থেকে তাকালে বাহিরের
কিছুই দেখা যায় না। তবুও বার বার বাহিরে দেখার
চেষ্টা করছে পূর্বা। এখনও রবিনে যে কেন আসছেনা,
বুঝতে পারছে না কিছুই। আজ একটা বিশেষ দিনও বটে।
ওদের প্রথম ভ্যালেন্টাইন আজ। ইচ্ছা ছিল, প্রথম
ক্লাসটা একসাথে করবে দুজনে। এরপর বাহিরে কোথাও
ঘুরতে বের হবে। কিন্তু ডালিম কুমারের এখনও আসার
কোনও নাম নেই। রাগে মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে ওর।
ইচ্ছে হচ্ছে ওকে কাছে পেলে চিবিয়ে খেতে। খাওয়ার
পর দুই গ্লাস বোরহানি খেয়ে সব হজম করে ফেলতে
পারলে আরও ভাল হত। কাঠপট্টি রোডের বিরিয়ানির
হাউজের বোরহানিটা বেশ ভাল হয় খেতে।
.
এতক্ষণে পেছনের দরজা দিয়ে নাযিল হলেন মিস্টার
মহারাজ। এসেই একটা দাঁত কেলানো হাসি উপহার
করলেন পূর্বাকে। দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। বেছে
বেছে পূর্বার পেছনের সিটটাতেই আসন গ্রহন করলেন
তিনি। অতঃপর ভাবুক কবির মত মুখে হাত রেখে পূর্বার
কাছে দেরিতে আসার জবাবদিহিতা করতে লাগলেন।
ওর কথার জন্য পূর্বা ঠিকভাবে লেকচারও শুনতে পাচ্ছে
না। এখন আগের থেকেও বেশি বিরক্ত লাগছে ওর। মনে
হচ্ছে ও ক্লাসে না আসলেই ভাল হত। অন্তত ক্লাসটা
ঠিকমত করা যেত। রবিন মুখে হাত রেখে বলছে,
-তোমার আরও পেছনে বসা উচিত ছিল
মিরাক্কেলের “পলাশ অধিকারী” এর মত করে মুখ না
নেড়েই পূর্বা জিজ্ঞেস করে,
-কেন?
-স্যার নার্ভাস ফিল করছেন
পূর্বা মুখে বিরক্তির ভাব এনে বললো,
-উফফ্! লেকচার শুনতে দাও।
-এটা আর শোনার কি আছে? দেখছো না, Coefficient of
Variance বাদ দিয়ে বসন্তের কথা বলছেন। এটা তোমার
কারনেই হচ্ছে।
-চুপ করো
-ওকে সরি। শোনো।
ইতোমধ্যে স্যারের সুদৃষ্টি নিক্ষেপ হলো ওদের উপর।
এসে রবিনকে জিজ্ঞেস করে,
__কোনও প্রবলেম?
_স্যার আসলে না... আমি তো স্যার দেরি করে ফেললাম
স্যার... সরি স্যার... আপনি আগে কি পড়িয়েছেন, আমি
তো জানিনা। এটা ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম স্যার...
কিন্তু ও আমার কথা শুনতে পাচ্ছিলো না... আপনি
পেয়েছেন।
__আপনি এক কাজ করুন। ক্লাস শেষে আমার অফিসে চলে
আসুন।
_জি স্যার নিশ্চয়ই আসবো।
.
স্যার ওখান থেকে সরে যেতেই রবিনের টিটকারী
মার্কা কথা শুরু...
-স্যারের দেখছি তোমার জন্য অনেক মায়া।
-হুম। অনেক মায়া। এখন চুপ করো।
-তাহলে তুমি এক কাজ করতে পারো।
-উফফ্...
-বলবো কি কাজ? বলি?
পূর্বা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-না! না!! না!!
-স্যার তো বসন্তের কথা বলছেন, তুমি স্যারকে
ভ্যালেন্টাইন গিফট হিসেবে কোকিলের ডাক ডেকে
শুনিয়ে দিতে পারো।
এবার আর পূর্বা বিরক্তি ভাবটা ধরে রাখতে পারলো
না। ওর পাগলামী কথা শুনে হেসে উঠলো। তবে অবশ্যই
তা স্যারের দৃষ্টিকে আড়াল করে।
***
.
কলা ভবনের পেছনে লেকের পাড়ে বসে আছে দুজন। রবিন
একরাশ বিরক্তি নিয়ে পূর্বার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিরক্তির কারন, পূর্বা আজ মেকআপ করে এসেছে।
মেকআপ ছাড়াই ওকে সুন্দর দেখায়। মেকআপ করলে ওর
সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা থাকে না। এখন পূর্বাকে
দেখে মনে হচ্ছে রাজ্যের সব আটা ময়দা সুজি ওর মুখে।
গালের উপর হালকা টমেটো সসের প্রলেপও আছে। রবিন
এখন এতটা রেগে আছে, পারলে ওকে এখনই লেকের
পানিতে চুবোয়। কিন্তু ও পূর্বাকে কিছু বলছে না। এই
বিশেষ দিনে ও পূর্বার মনে কষ্ট দিতে চায় না। পূর্বাও
জানে রবিনের মেকআপ পছন্দ না কিন্তু এতটা অপছন্দের,
তা জানত না। আজকের ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষ্যে একটু
সাজ-গোজ করেছিলো ও। এখন ও রবিনের দিকে
তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। ও তাকিয়ে আছে লেকের
পানির দিকে। পানির রঙটা একটু নীলচে ধরনের। তবে
বেশ ভালই পরিষ্কার। পনির উপর অল্প কিছু কচুরিপানা
থাকলে ভাল হত। কচুরিপানার সাদা ফুলগুলো ওর পছন্দ।
কিন্তু কোনোদিন হাতে ধরে দেখার সৌভাগ্য ওর হয়নি।
যে পানিতে কচুরিপানা থাকে, সে পানিতে কেউ
নামতে চায় না। তাহলে গায়ে চুলকানি হয়। তাই দুর
থেকেই ফুলগুলো দেখতে হয়েছে পূর্বাকে। এই লেকে
কচুরিপানা নাই। কিন্তু সাত-আটটা রাজহাস দেখা
যাচ্ছে। হাসগুলো পানিতে সাতার কাটছে আর কচকচ
করে পানি চিবিয়ে খাচ্ছে। রাজহাসগুলো দেখতে বেশ
সুন্দর। কিন্তু ওদের ডাকটা খুব বিশ্রি। শুনলে পূর্বার
পিলে চমকে যায়। তাই ও রাজহাস থেকে নিরাপদ দুরত্ব
বজায় রাখে।
.
এতক্ষন পর রবিনের মুখে একটু বুলি ফুটলো।
-পূর্বা
-হুম
-আরও কিছুক্ষণ থাকবে, নাকি উঠবে?
-চলো ওঠা যাক।
একটা রিকসা ডেকে নিয়ে দুজন বসলো তাতে। রবিন যে
পূর্বাকে বকে নাই, এতই ও অনেক খুশি।
.
রিকসাতে করে যাচ্ছিল দুজন। তখন সামনে থেকে আসা
একটা রিক্সা থেকে একটা মেয়ে মাথা উচিয়ে বলল,
“হাই রবিইইন”। রবিন কিছু বলছে না। ভয়ে মুখ কাচুমাচু
করে বসে আছে। এখন পূর্বা ওকে পুরোদমে ঝাড়বে।
ভাবতে না ভাবতেই শুরু হল পূর্বার জেরা।
-মেয়েটা কে?
-কোন মেয়েটা?
-যে তোমাকে দেখে রাজহাসের মত গলা বাড়িয়ে ‘হাই’
দিলো
-কি জানি! ভার্সিটির জুনিয়র হবে হয়ত
-তোমাকে চেনে কিভাবে?
-চিনতেই পারে
-তুমি চেন না?
-মনে পড়ছে না।
-ঠিকমত ভেবে বলো। জুনিয়র কেউ তোমার নাম ধরে
ডাকবে না।
-ও আচ্ছা। তাহলে ও আমার কাজিন হতে পারে। ঠিকমত
দেখতে পাইনি তো।
-কে এমন কাজিন, যে তোমাকে দেখামাত্রই চার আলিফ
টান দিয়ে তোমার নাম ধরে ডাকলো?
-বড় মামার মেজ মেয়ে, তন্নী
-ও আচ্ছা। ফোন করো তাকে।
-কেন?
-আমি বলেছি তাই। জিজ্ঞেস করো, সে এখন কোথায়?
-ছাড়ো না এসব। কিসব নিয়ে কথা বলছি আমরা!
-তুমি ফোন দিবে কি না?
-আচ্ছা দিচ্ছি
.
ওপার থেকে ফোন ধরতেই রবিন বললো,
_হ্যালো তন্নী
__হ্যা ভাইয়া, কেমন আছো?
_হুম ভালো। তুই ভাল আছিস?
__এইতো আছি।
_কি করিস?
__বাসায় বসে টিভি দেখতেছি
_ও আচ্ছা। কোথাও বের হসনি?
__কিভাবে বের হবো? আম্মু তো বের হতে দেয় না। তুমি
এসে দু’একদিন থেকে যাও না, প্লিজ। বড্ড একা একা
লাগছে।
_আচ্ছা দেখবো। এখন রাখি রে
__রাখবা? আচ্ছা রাখো
ফোন রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে রবিন। এক
প্যাঁচ খুলতে গিয়ে আর এক প্যাঁচে পড়ে গেছে। এবার
পূর্বা বলছে,
-বড্ড একা একা লাগছে। তাই না?
-আমি তো কিছু বলি নাই
-এমন আর কত কাজিন আছে তোমার?
-আর নেই। একটাও নেই
-ফের মিথ্যে কথা! তোমাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি...
.
পূর্বা সমানে বকে যাচ্ছে ওকে। রবিন মাথা নিচু করে শুধু
শুনে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই কেউ ওকে বকলে ও
কেঁদে দিত। এখন ওর ভয় হচ্ছে, এমন বকুনি শুনে কখন যেন
আবার কেঁদে ফেলে ও। তাহলে তো মান-সম্মান সব
প্লাস্টিক! প্রেমিকার বকুনি শুনে প্রেমিক কেঁদে
দিচ্ছে। শুনলে লোকে কি বলবে! এর মধ্যে পূর্বা বলে
উঠলো,
-এই, তুমি চোখ মুছ। কাঁদছো কেন?
-বলে কি! এরই মধ্যে কেঁদে ফেলেছি নাকি?
চোখ মুছতে গিয়ে রবিন লক্ষ্য করে, ওর চোখ শুকনো। তার
মানে ও কাঁদেনি। কিন্তু... পূর্বা ওর মনের কথা বুঝলো
ক্যামনে?
লেখা__ Nazmul Hossain Nayeem