মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩২৩- নিলয়ের A+

লেখক: ডাকনাম ইমু (ইমরান)

সুপ্তি মধ্যেবিত্ত পরিবারের খুব
সাধারণ একটি মেয়ে। মধ্যেবিত্ত
পরিবারে জন্ম গ্রহন করলেই, অভাব কি
জিনিস বুঝতেও দেয়নি সুপ্তির বাবা
মা। সুপ্তি কিছু চাইলেই, সেটা সুপ্তির
বাবা যেকরেই হোক সুপ্তির ইচ্ছা পূরণ
করতো। মেয়ের প্রতি এতো ভালবাসা
দেখে সুপ্তির মা,সুপ্তির বাবাকে
মাঝে মাঝে আলাদিনের দৈত্য বলেও
ডাকতো। মেয়েকে নিয়ে সুপ্তির
বাবার অনেক আসা। সুপ্তি-কে নামকরা
ডাক্তার বানাবে। ছোট্ট থেকে
সুপ্তিও সেভাবেই তৈরি হচ্ছে। যে
সুপ্তিকে তার বাবার সাইকেলের
পিছনে কখনো সামনে বসিয়ে স্কুলে
দিয়ে নিয়ে আসতো, সেই সুপ্তি আজ ৫ম
ও ৮ম থেকে বিত্তি পেয়ে ৯ম
শ্রেনীতে পাঁ দিয়েছে। ক্লাসের ১
রোল এই পর্যন্ত কেউ তার কাছে থেকে
সিনিয়ে নিতে পারেনি (গ্রুপ
সাইন্স)।
নিলয় একি স্কুলের এক ব্যাচ সিনিয়ার
(১০ম শ্রেনী)। সুপ্তিকে প্রপোজ করে।
সুপ্তি রাজি না হওয়া নিলয় আস্তে
আস্তে নষ্ট হতে থাকে। নিলয় স্কুলে
এখন অনিয়মিত। সুপ্তি যে পথ ধরে স্কুলে
আসা যাওয়া করে সেই পথেরি কোন
এক আড়ালে দাড়িয়ে থাকে নিলয়।
যাওয়া আসার প্রতিনিয়ত এক ঝলক করে
সুপ্তির চোখে পরতো নিলয়। আস্তে
আস্তে নিলয় একে বারেই স্কুলে আসা
বন্ধ করে দেয়। ব্যাপারটা সুপ্তির
চোখে পরে। সুপ্তি ভাবতে থাকে
নিলয়ের এই অবস্থার জন্য সুপ্তি নিজেই
দায়ী। তাই সিদ্ধান্ত নেয় যে ভাবেই
হোক নিলয় যে স্থানে ছিল সেই
স্থানেই ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
পরদিন সকাল বেলা সুপ্তি যখন স্কুলে
আসতে ছিল রাস্তার এক পাশে
দাড়িয়ে নিলয় সুপ্তিকে দেখেই
বন্ধুদের সাথে কথা বলতে লাগছিল।
যাতে সুপ্তি বুঝতে না পারে নিলয়,
সুপ্তির জন্যেই প্রতিদিন রাস্তার
পাশে দাড়িয়ে থাকে।
সুপ্তিঃ--এই যে শুনুন?
নিলয়ঃ --আমাকে বলছো?
--হুম।
--কি বলবে বলো? (ভাবে মনে হচ্ছে
নিলয় অপরিচিত কারো সাথে কথা
বলছে)
--আপনি স্কুলে আসেন না কেন?
--এমনি,
--কাল থেকে নিয়মিত স্কুলে আসবেন।
--কেন?
--কেন-টেন বুঝিনা, আমি বল্লাম তাই
আসবেন!
সুপ্তির এসব কথা শুনে নিলয় অবাক হয়ে
গেছে। তাহলে কি সুপ্তিও নিলয় কে
ভালবাসে? যাইহোক, সুপ্তি আর কোন
কিছুই বললনা। নিলয়ও আর সুপ্তি-কে পিছু
ডাকলো না। নিলয় কাল সকালের
অপেক্ষায় আছে। কখন ভোর হবে আর কখন
স্কুলে যাবে। এই চিন্তার মাঝে
ঘোরপাক খেতে খেতে রাতটা পার
করল। সকাল বেলা স্কুলে প্রবেশ করতেই
সুপ্তির দেখা--
--এই সুপ্তি দাড়াও।(কাছে গিয়ে)
তুমি কি আমায় ভালবাসো?
--কই আমিতো আপনাকে একথা কখনো
বলিনি।
--তাহলে কাল যেসব কথা বললে।
--কালতো আমি আপনাকে এ ধরনের
কথা বলিনি।
নিলয় ভেবেছিল সুপ্তিও ওকে
ভালবাসে, তাই কাল এসব কথা
বলেছিল। নিলয়ের সকল কৌতুহল একদম
স্তব্ধ হয়ে গেল। নিলয়, সুপ্তির দিক
থেকে অভিমানি মুখে ফিরে পেছন
দিকে হাটতে শুরু করলো---
--এই নিলয়, শুনুন।
(নিলয় সুপ্তির দিকে তাকালো)
আমি আপনাকে ভালবাসিনা, তবে
ভালবাসবো কিন্তু আমার কিছু শর্ত
আছে।
--কি শর্ত? (নিলয় ভেজা গলায় বলল)
--শর্ত নং
১. বন্ধুদের সাথে বেশী সময় আড্ডাতে
থাকা যাবে না।
২. সব সময় আমার সাথে যোগাযোগ
করার স্রেষ্টা করবেন না।
৩. নিয়মিত ক্লাস করতে হবে এবং অবশ্যই
আপনার এস.এস.সি রেজাল্ট A+ থাকতে
হবে।
নিলয় ও কমকি ক্লাসে ৩ রোল তার,
চাইলে সে অবশ্যই A+ পেতে পারে।
--আমি রাজি আছি, আরো কোন শর্ত
থাকলে বলো?
--আপাদত এই কয়েকটা পালন করেন, সময়
হলে আমিই বলে দেবো।
--তাহলে একটা বার বলো তুমি আমায়
ভালবাসো।
--হুম, এখন নয়, তার আগে রেজাল্ট টা
আমায় গিফট করো তারপর বলবো।
নিলয় সারাটা দিন এখন প্রাইভেট আর
স্ট্যাডি নিয়েই ব্যস্ত।
যেভাবেই হোক তার ভালবাসার
মানুষটি-কে ভাল রেজাল্টা গিভ
দিতেই হবে। আর সার্টিফিকেট হাতে
দিয়ে বলবে আমি তোমায়
ভালবাসি,সুপ্তি তখন হাত বারিয়ে
নিলয়-কে জরিয়ে নেবে। দেখতে
দেখতে টেষ্ট পরীক্ষা চলে গিয়েছে
নিলয় ক্লাসে ফাষ্ট বয় হয়েছে। তার
রেজাল্ট দেখে সকল স্যার/ম্যাডাম ও
মুগ্ধ। নিলয় এ রেজাল্টের কথা শুনে
সুপ্তি বিন্দু মাত্র বিচলিত হয়নি। তার
চাই এস,এস,সি A+ এভাবে একটু করে
চলতে থাকে নিলয় সুপ্তির ভালবাসা।
এদের দুজনের কাছে আসার একটা মাত্র
বাধা আর সেটা হচ্ছে নিলয়ের A+
সার্টিফিকেট। নিলয় মাঝে মাঝে
ভাবে এখন কি তাহলে প্রেম করতে
গেলে A+ সার্টিফিকেট লাগে? একা
একা হেসেই মাতয়ারা হয়। এক্সাম শুরু
হলো পরীক্ষায় সব গুলোরি ১০০ মার্ক
করেছে। এবার শুধু রেজাল্ট এর পালা।
প্রহর পেরলেই রেজাল্ট হবে রাতে
নিলয়ের একটুও ঘুম নেই দুদিন ধরে কিছুই
খায়নি নিলয়। রেজাল্ট এর কথা শুনে
সুপ্তিও সারা রাত জেগে আছে। সুপ্তি
নিজেকে অনেক সান্তনা দেবার
শ্রেষ্টা করছে--
--আমার কি, রেজাল্ট তো ওর দেবে
তাহলে, আমার এত টেনশন ফিল হচ্ছে
কেন?
সুপ্তি একদমি টেনশন করবিনা!! আচ্ছা
নিলয় যদি A+ না পায় তাহলে কি আমি
ওকে ফিরিয়ে দেবো। সি! সি! কি
ভাবছি এসব। আচ্ছা যদি ওর A+ না আসে
তাহলে কি ও আর আমার সামনে আসবে
না? মাথায় কিচ্ছু মিলছে না, সুপ্তির।
সুপ্তি নিজেও বুঝতে পারছে নিলয়
ওকে দেওয়া কথা রাখায় ব্যর্থ হলে
নিলয় কতটা কষ্ট পাবে। সে সময় নিলয়
যে কোন এক্সিডেন্ট ঘটাতে একটুও
দ্বিধাবোধ করবে না, এটা সুপ্তির
কাছে পরিষ্কার। কারন সুপ্তিও যে
নিলয় কে বড্ড ভালবাসে। রাত ৩:৩৯
সুপ্তি কোন কিছু ভেবে না পেয়ে
বাবার মোবাইলটা দিয়েই নিলয় কে
ফোন দিলো---
---হ্যালো সুপ্তি, তুমি এত রাতে ফোন
দিলে কিভাবে?
[সুপ্তি নিলয় কে এত রাতে ফোন
দিয়েছে এখনো সেটা স্বপ্নের মতো
মনে হচ্ছে]
--বাবার ঘুমিয়ে গেছে ফোনটা
লুকিয়ে নিয়ে আসেছি। আপনি এত
রাতে কি করছিলেন ফোনটা দেওয়ার
সাথে সাথে রিসিব করলেন?
--আসলে কাল রেজাল্ট দেবেতো, তাই
টেনশন ফিল হচ্ছে। কিন্তু তুমি এত
রাতে জেগে কি করছো?
--আপনাকে কিছু কথা বলতে ফোন
দিয়েছে।
--কি? [কি কথা কেমন যেন গলায় আটকে
গেল নিলয়ের, মনে হয় গলা শুকিয়ে
গেছে]
--রেজাল্ট-টেজাল্ট যা খুশি তাই
হোক, আমি আপনাকে ভালবাসি। আর
শুনুন কাল কিন্তু আমি আমার গোলাপটা
চাই? [সুপ্তি কথা গুলো দ্রুত শেষ করেই
ফোনটা রেখে দিল]
আর নিলয় বোকা হয়ে ফোনটা কানের
কাছে ধরে রাখলো।

বিঃদ্রঃ সত্যি কারের ভালবাসায়
কোন প্রকার শর্ত থাকেনা।