মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩০৯- অবিস্মৃত স্মৃতি

লেখা - FA Tarek

মেয়েটা আমার প্রতিটি স্ট্যাটাসেই
লাইক দিত , যদিও সে আমার
ফ্রেন্ডলিস্টে ছিল না ।
প্রতিদিন পোস্ট দিয়ে আমি অধীর
আগ্রহে অপেক্ষা করতাম , কখন মেয়েটা
লাইক দিবে . . . .।
কখনো লাইক দিতে দেরী হলে কেমন
অস্থির লাগতো । ইচ্ছে করতো তাকে
গিয়ে বলি , "লাইক দিতে এত দেরী
করছো কেন ? আমি যে কতটা
অস্থিরতার মধ্যে আছি সেটা দেখতে
পাচ্ছ না ? "
কিন্তু বলতে পারতাম না , ইগোতে
বাধতো । কতবার যে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট
পাঠাতে চেয়েছি তাকে . . .
পারিনি । অদৃশ্য এক বাধায় বারবার
থেমে যেতে হয়েছে ।
আসলে ঐ বিশেষ লাইকটা আমার
কাছে নিছক কোন লাইক ছিল না ।
বলতে কোন দ্বিধা নেই যে , আমার
টুকটাক লেখালেখির ক্ষেত্রে ঐ একটা
লাইকই সবচেয়ে বেশী উত্সাহিত
করতো । লেখালেখি বলতে কবিতা
লেখার চেষ্টা করতাম আরকি । যদিও খুব
একটা ভাল লিখতাম না ।
মাঝেমাঝে খুব অবাক হতাম । চিনি
না , জানি না এমন একটা মেয়ের প্রতি
আমার অদ্ভুত এই ইমোশন দেখে ।
ছোট বেলা থেকেই আমার একটা
সমস্যা আছে । গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা
পড়লেই হলো . . . সর্দি , কাঁশি , জ্বর
সবাই একসাথে চেপে ধরতো আমাকে ।
যেন আমি ওদের বাপ-দাদার খুনী ! তাই
সুযোগ পেয়ে আমার উপর প্রতিশোধ
নিচ্ছে ! !
কিন্তু বর্ষার প্রথম বৃষ্টি বলে কথা . . .
এটাতো মিস দেয়া যায় না ।
যথারীতি ছাদে গিয়ে ইচ্ছামত
ভিজলাম । আর ওরা তিন ভাইও( সর্দি ,
কাঁশি , জ্বর ) সুযোগ পেয়ে যথারীতি
চেপে ধরলো আমাকে ।
সে-কি জ্বর ! প্রচন্ড জ্বর . . . . ।
টানা দশ দিন হাসপাতালে থাকতে
হয়েছিল । ওজন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে
গিয়েছিল । আমার মায়ের
মোটাতাজা ছেলেটা শুকিয়ে এমন
কাঠ হয়ে যাবে , মা এটা কিছুতেই
মানতে পারছিলেন না । খুব
কেঁদেছিলেন . . . মায়ের কান্না
দেখে সেদিন আমিও কেঁদেছিলাম ।
আমার মা কাঁদছিলেন , কারন তাঁর
ছেলে অসুস্থ । আর আমি কাঁদছিলাম ,
কারন আমায় মা কাঁদছিলেন ।
ঐ দশ দিনে আমি অনেক কিছুই মিস
করেছি । কলেজ , বন্ধু-বান্ধব , ক্রিকেট ,
ফেসবুক . . . অনেক আরো অনেক কিছু ।
তবে যে জিনিটা সবচেয়ে বেশী মিস
করেছি সেটা হল "একটি লাইক" ।
দীর্ঘ দশ দিন পর ফেসবুকে এসে কিছুটা
অবাক হলাম ।
সেই "লাইকওয়ালী" আমাকে এই প্রথম
বারের মত ম্যাসেজ পাঠিয়েছে । তাও
একটা দুইটা না । ১৫টা ম্যাসেজ !
আমি একটা একটা করে ম্যাসেজ
পড়ছিলাম আর কেমন যেন ঘোরের মধ্যে
তলিয়ে যাচ্ছিলাম ।
" ঠিক আছে আমি জীবনেও আর আপনার
সামনে এসে দাঁড়াব না , Good Bye"
"আপনি কি আমাকে এতটাই ঘৃনা
করেন ?"
"এতগুলো ম্যাসেজ পাঠালাম একটা
ম্যাসেজেরও জবাব দিলেন না !"
সবগুলো ম্যাসেজ পড়ার পর বুঝতে
পারলাম আমি তাকে যতটা মিস
করেছি সে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী
মিস করেছে আমাকে । সাথে সাথেই
নক করলাম , সাথে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও
দিলাম ।
একদিন , দুইদিন , তিনদিন . . . এভাবে এক
সপ্তাহ কেটে গেল । তার কোন খবর নেই
। এই সাত দিনে অনেকগুলো ম্যাসেজ
পাঠিয়েছি তাকে , কিন্তু তার কোন
জবাব পেলাম না ।
প্রতিদিন কয়েকবার করে তার
টাইমলাইন চেক করতাম , আর প্রতিবারই
হতাশ হতাম । ফেসবুকে তার সাথে
পরিচয় ছিল এমন অনেকের সাথেই কথা
বলেছি । কিন্তু কেউই তার বিষয়ে
কোন তথ্য দিতে পারেনি । তার আইডি
ঘেটেও তেমন কিছু পাওয়া গেল না ।
আচ্ছা মেয়েটা কি আমাকে
ভালবেসে ফেলেছিল ? তাহলে সে
এমন করলো কেন ? আচ্ছা সে কি কোন
দুর্ঘটনায় পড়েছে ? সে কি অসুস্থ ? সে
কি বেঁচে আছে . . . ? ?
না , আর ভাবতে পারছি না ।
মানুষ বদলায় । বেঁচে থাকার তাগিদেই
বদলায় । আমিও বাঁচতে চাই ।
পড়াশোনাটা ঠিকমত করতে হবে ।
এভাবে সারাক্ষন একটা মৃত আইডি
নিয়ে পড়ে থাকলেতো চলবে না ।
কোথাকার কোন এক মেয়ে . . .
"এলোকেশী নন্দিনী" না কি যেন
নাম ! তাকে নিয়ে এভাবে দিন-রাত
পড়ে থাকার কি আছে ? আমিতো
তাকে কখনো দেখিই নি !
- - -
ঐ ঘটনার পর আজ প্রায় দু'বছর হতে চলল ।
এখন তাকে আমি পুরোপুরি ভুলে গেছি
। তবে মাঝেমাঝে তার প্রোপিকের
পুতুলটার সাথে চুপিচুপি কথা বলি ,
তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিই । তেমন
কিছু না , জাস্ট সময় কাটানো আরকি !
আমি সত্যিই নন্দিনীকে ভুলে গেছি !
তার কথা আমার আর মনেই পড়ে না ! !
তবে প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে তার
দেয়া ম্যসেজগুলো একবার করে পড়ি ।
তেমন কিছু না , জাস্ট সময় কাটানো আর
কি !
একটা বিষয় কি . . . নন্দিনীর ঐ
ম্যাসেজগুলোর অদ্ভুত এক শক্তি আছে ।
যখনই ঐ ম্যাসেজগুলো পড়া শুরু করি তখনই
মোবাইল স্কিনটা ভিজে যায় । আজব
ব্যাপার !