মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৯১- মানবী

লিখা : Nz Bhuiyan Zaman

শহরের আকাশে সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে একটা রক্তিম আভা ধারন
করেছে । যান্ত্রিক এই শহরের ব্যস্ত মানুষেরাও তাই তাদের অফিস
সেড়ে বেড়িয়ে পড়েছে ব্যক্তিগত কোন কাজের উদ্দেশ্যে । কতই
না যান্ত্রিক তাদের জীবন । ছয়তলা প্লাটের ছাদের
একটা কোনে বসে মানুষ গুলোকে নিয়ে ভাবতে লাগল অনিক ।
যান্ত্রিক এই শহরে মানুষের জীবনটা যেন রোবটের মতই । সারাক্ষণ
মানুষগুলো কেমন ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় । কিন্তু তার
মাঝেও মানুষের ভালবাসার কোন অভাব নেই ।
মাটির এই মানুষগুলো যন্ত্রের মত জীবন যাপন করার পেছনে তো আছে একমাত্র
ভালবাসার আচড় । কেউ হয়তো নিজের জীবনকে ভালবেসে, কেউ সন্তানের,
সবাই নিজের আপন মানুষটার জন্যই এতোটা ব্যস্ত
করে তোলে জীবনটাকে । কিন্তু তার জীবনটা এতটা যন্ত্রময় করেছে একমাত্র
অবন্তির ভালবাসা । ছোট্টবেলায় একটা গাড়ি দূর্গটনায়
বাবা-মাকে হারিয়েছে সে । বড় হয়েছে চাচার কাছে । কিন্তু
বাবা মরার আগে সমস্ত সম্পদ উইল করে দিয়ে যায় তাকে । ছোট্টকাল
থেকে বাবা মায়ের ভালবাসা না পেলেও , চাচার ভালবাসায় বেড়ে উঠেছে সে । আর
এখন সে একটা মানবীর ভালবাসায় বেচেঁ আছে ।
একদিন রাতে ফেইসবুকের আইডিটা অপেন করে চোঁখ বুলাতে লাগল অনিক ।
একটা নটিফিকেশন আছে হোমপেইছে । "প্রজাপতির ডানা" Want to be your friend !
প্রফাইলটা চেক করে দেখে অনিক । একটা মেয়ের আইডি সেটা । Accept
বাটনে ক্লিক করে দেয় সে । এক মিনিট পর একটা মেসেজ আসে
-হাই !
~হ্যালো লিখে দেয় অনিক ।
-কেমন আছেন ?
~হুম ভাল । কিন্তু
আপনাকে তো আমি চিনিনা ।
-হয়ত আমি আপনাকে চিনিনা ! কিন্তু
তাই বলে কি আপনার
সাথে কথা বলতে পারবোনা ?
~তা বলছিনা । ওকে এখন
কি আমরা পরিচিত হতে পারি ?
-আমি অবন্তি ! ইডেন কলেজে বাংলায় অনার্স সেকেন্ড
ইয়ারে পড়ছি । আপনি ?
-আমি অনিক বাবার একটা কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে আছি ।
তারপর অনেক কথা হয় অবন্তি আর অনিকের । প্রতিদিন অফিস
সেড়ে রাতে ফেইসবুকে বসত অনিক ! কিন্তু অবন্তী সারাদিন অনিকের জন্য
অনলাইনে থাকত । একদিন অনিক একটা ছবি আপলোড করে !
ছবিটা দেখে অবন্তী অনিকের প্রেমে পড়ে যায় ।
সেদিন রাতে অনিকের নাম্বার চায় অবন্তী । অনিক কি ভেবে যেন
নাম্বারটা দিয়ে দেয় । কিছুক্ষণ পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন
আসে । কিন্তু অনিক তার অফিসের ফাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকায়
ফোনটা ধরতে পারেনি সে । ব্যর্থ কলের তালিকায়
নাম্বারটা দেখতে পেয়ে ফোনটা ব্যাক করে অনিক । একটা মায়াবী কন্ঠ অপর
প্রান্ত থেকে তার ফোনটা রিসিভ করে কুশল বিনিময় করে ।
পরিচয়টা দেবার পর অনিক অবন্তীর মায়াবী কন্ঠটার প্রেমে পড়ে যায় ।
অনিক তার পর থেকে যখনি অফিসে সময় পেত, অবন্তীকে ফোন দিত । অফিসের সময়
বাদে সবসময় তাদের কথা হত । একদিন অনিক অবন্তীকে দেখা করার
কথা বলে । অবন্তীও বলা মাত্রই রাজী হয়ে যায় । পরের দিন
বিকেলে অফিস সেড়ে অবন্তীকে ফোন করে অনিক ।
লেকের পাড়ে অবন্তীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে অনিক । হয়ত আজ
সে এই যান্ত্রিক জীবনটাকে যন্ত্র মানব হওয়ার পেছনে কারণ
দেখাতে পারবে । অবন্তীর দেওয়া সময় থেকে দশ মিনিট
পেরিয়ে গেছে ! এখনো অবন্তীর আসার খবর নেই ।
ফোনটা তোলো একটা কল দেয় সে । পেছন থেকে বেজে উঠে একটা রিংটোন ।
একটা সবুজ রঙের থ্রিপিচ পরা শ্যমলা রঙের একটা মেয়েকে ব্যাগ থেকে ফোন
বের করতে দেখে অনিক । ফোনটা রিসিভ করলে নিশ্চিত হয়
অনিক । যেমনটা আশা করেছিল, তার থেকেই একটা মায়াবী চেহারা দেখতে পেল
অনিক । এতদিন সে তার কন্ঠের প্রেমে পড়েছিলো আজ অবন্তীর
সবকিছুর প্রেমে পড়ে গেলো সে । সে যেন এক সম্পূর্না মানবীর
প্রেমে পড়ল । সে ফোনটা কেটে অবন্তীর কাছে গিয়ে পরিচয় দেয় ।
অবন্তী আগে অনিকের একটা ছবি দেখেছিলো । এবং সেটার প্রেমে পড়েছিলো আজ
সে দেখতে পেল ছবির চেয়ে সুন্দর এক অনিক কে । সেদিনটা দুজনেরই
জীবনে একটা বিশেষ দিন হয়ে রয়ে যায় । অবন্তীও অনিকের একপাশে বসে যোগ
দেয় অনিকের মানুষকে নিয়ে ভাবনায় । গতিময় করে তোলো তার
ভাবনা টাকে । শহরের রক্তিম রোদটা খাড়া হয়ে থাকা দেয়ালগুলো বেয়ে রক্তিম আভা ছড়িয়ে দেয় অনিকের পাশে দাড়িয়ে থাকা মানবী টাকে ।