মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৭০- অভিশপ্ত বুড়ি -স্বর্ণ লতা

আনুমানিক ১৯৬২ সাল।


ময়মনসিংহের বালিপাড়া গ্রাম।আজিজুল ১২/১৩ বছরের কিশোর।
যৌথ পরিবারে অনেকের সাথে একই
বাড়ীতে থাকতো ।

একদিন আজিজুল বাবা আর ভাই দের
সাথে মিলে বাড়ী থেকে কিছুটা দূরে এক
বিলে মাছ ধরতে গেলো।

কথা ছিলো, প্রথম
কিস্তির মাছ ধরা হয়ে গেলে আজিজুল
সেগুলো বাড়ী নিয়ে আসবে।
আর তারপর
সারাদিন ধরে যতো মাছ ধরা হবে,
তা অন্যরা বিকালে নিয়ে বাড়ী ফিরবেন।

কথামতো প্রথম
দিকে ধরা মাছগুলো দিয়ে আজিজুলকে বাড়ী পাঠানো হলো।
আর অন্য সবাই দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত
মাছ ধরার জন্য রয়ে গেলেন বিলে।

বিকালে মাছ ধরা শেষ করে সবাই
ফিরে আসলেন।
তাদেরকে দেখে বাড়ীর
মহিলারা আজিজুল এর ব্যাপারে প্রশ্ন
করলেন, তাকে দিয়ে তো আগেই কিছু মাছ
পাঠিয়ে দেবার কথা।

তাহলে পাঠানো হলোনা কেনো ??
প্রশ্ন শুনে অবাক হলেন তারা। আজিজুল
তো ফিরে এসেছে সেই কখন!
তাহলে বাড়ীতে নেই কেনো ?? আর কোথায়
যেতে পারে সে? মাছ নিয়ে তো বাড়ীতেই
আসার কথা....

আসেপাশে খুঁজা খুঁজি হলো।
খুঁজতে খুঁজতে বহুদূর দেখা হলো। কোত্থাও
সে নেই। কেউ দেখেনি তাকে। এমন
কী পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও নয়।

নিরুদ্দেশ আজিজুল। উৎকন্ঠিত পরিবার। আর
তার মায়ের অবস্থা আরো করুণ।
দিনের পর
দিন, বছরের পর বছর তিনি পথ চেয়ে থাকেন
ছেলের আশায়...

এলাকায় নতুন কোন অল্প বয়েসী মানুষের
খোঁজ পেলেই তিনি আকুল হয়ে খবর নেন।
যদি হারিয়ে যাওয়া ছেলেটিই ফিরে আসে,
হয়তো তার স্মৃতি বা হুঁশ নেই...

দীর্ঘ ১২ বছর এই অপেক্ষায় কেটে গেলো।
তারপর একদিন......
এক অপ্রকৃতিস্থ যুবক এলো আজিজুলের
বাড়িতে। সোজা ভাষায় যাদেরকে পাগল
বলা হয় সাধারণত, সেইরকম একজন।

কথা বলতে গেলে জিহ্বায় আটকে যায়, আর
অনেকটা শিশুসুলভ আচরণ। সে ওই
বাড়িতে ভিক্ষা করতে এলো।
সে বাড়িতে ঢুকেই কেমন যেনো অদ্ভুত আচরণ
করতে লাগলো। কেমন পরিচিত
ভঙ্গিতে এটা ওটার বর্ণনা দিতে লাগলো।

উঠোনের কোথায় কী ছিলো একসময় সব
বলতে লাগলো। আর, একটা ছোট্ট
মেয়েকে দেখে তার ছোট বোন রাজি-র নাম
করতে লাগলো।

আরেকজন মহিলাকে দেখেই
জেঠী বলে ডেকে উঠলো।
এসব দেখে আজিজুলের
মা লোকজনকে অনুরোধ করলেন, ওর হাতের
কনুই এর পাশে কোনো দাগ
আছে কিনা দেখতে।

দেখা গেলো, সত্যি একটা দাগ আছে!
নিশ্চিত হওয়া গেলো, হারানো আজিজুল
ফিরে এসেছে, মানসিক ভারসাম্য
হারিয়ে...

কিন্তু হারিয়ে যাবার আগে তো সে এমন
ছিলোনা।
তাকে প্রশ্ন করা হলো, এতোগুলো দিন
কোথায় ছিলো সে?
তার ভাঙ্গা ভাঙ্গা উত্তর-
"এক বুড়ি... এক বুড়ি নিয়ে গেছিল।"
আরো জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেলো,
যে বুড়ি তাকে নিয়ে গিয়েছিলো,
সে এতোদিন পর তাকে বলেছে, তুই চলে যা !

সেই বুড়ি তাকে দিয়ে কিছু কাজ করাতো,
কিন্তু কী কাজ তা আজিজুল বলতে পারেনি।
তার বর্ণনা শুনে মনে হতে পারে,
কোনো ছেলেধরার কবলে পড়েছিলো। কিন্তু
গত ১২ বছর ধরে যার সন্ধান
কোনো লোকালয়ে পাওয়া যায়নি, সে আর
যাই হোক, কোন মানুষের কাছে ছিলোনা....

সে নির্জন দুপুরে খাল বিলের এলাকায় মাছ
হাতে হারিয়ে গিয়েছিলো, এবং তার খোঁজ
কোনো মানুষের কাছে পাওয়া যায়নি।
আদতে সে কোনো মানুষের
কাছে ছিলো না।
ফিরে আসার কিছুদিন পর আজিজুল
একটা দুর্ঘটনায় মারা যায়।

Note : ঘটনাটি আমার খুব নিকটাত্মীয়ের
পরিবারে ঘটেছিলো । এই কাহিনীর সকলেই
আমার relative, শুধু জ্বিনরা ছাড়া।