লিখাঃ আল মামুন কৌশিক
- তুই এতো সুন্দর ছবি আঁকিস কেন বল তো?
- তুই সাথে আছিস যে তাই।
- একদম পাম মারবি না হাসান। আমি জানি তুই আমাকে পছন্দ করিস না।
- কে বলেছে তোকে?
- আমি জানি। যদি তাই না হবে তাহলে কালকে তুই আমাকে ফেলে শান্তার সাথে দেখা করেছিস কেনো?
- আরে মেয়েটা নতুন এসেছে ডিপার্টমেন্টে। আর তাছাড়া হাবিব স্যার আমাকে ডেকে একটু দেখিয়ে দিতে বলেছে সবকিছু।
- তোকে ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়লো না কেনো স্যারের?
- কারন স্যার চান আমি মেয়েটার সাথে প্রেম করি।
- ও আচ্ছা তাই? আচ্ছা যা তুই প্রেম কর। আমার সাথে আর কথা বলবি না।
- তোর সাথে কে কথা বলতে যায়? তুই ই তো আসিস আগ বাড়িয়ে।
- ও তাই না? এই যে আমি গেলাম আর আসবো না।
পরদিন সকাল সকাল ক্লাসে আসে রিনা। সাধারন দিনের চেয়ে আজকে একটু বেশি সাজুগুজু করেছে সে। কারন আজকে তার জন্মদিন। কিন্তু ওর মন খারাপ। গতকাল রাত থেকে অনেকেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ক্লাসে বন্ধুরা সবাই চিৎকার করে গান গেয়ে উইশ করেছে ও ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে। তবুও ওর মন ভালো নেই। যার উইশ করার কথা ছিলো সবার আগে তার সাথে গতকাল ঝগড়া হয়েছে তাই সে এখনও উইশ করে নি। সারাদিন ঢিলেঢালা ক্লাস করে বিকেলে বাসায় ফিরবে ও।
বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিক্সা ডাকার জন্য সামনে এগিয়ে যায় রিনা। নিজের মনের অজান্তেই কাকে যেন খুজছে তার মায়াবি চোখ দুটো। ঠিক রিক্সায় যখন উঠবে শান্তার ডাক শুনে ফিরে তাকায় ওর দিকে। শান্তা হেটে আসছে ওর দিকে, সাথে হাসানও আছে। হাসান হারামজাদাটা আবার সেই মেরুন কালারের পাঞ্জাবিটা পড়েছে। রিনা কত্তবার করে বলেছে এই পাঞ্জাবিতে ওকে খুব রোগা দেখায়।
রোগা দেখাক আর নাই বা দেখাক তাতে ওর কি! আর শান্তা মেয়েটা তাকে ডাকবে কেনো? আর সে ওর নাম জানলো কিভাবে? হাপাতে হাপাতে শান্তা আসে ওর কাছে।
- আপু শুভ জন্মদিন। শুভ হোক তোমার আগামি দিনগুলো।
- থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। বলেই রিক্সার দিকে পা বাড়ায় রিনা।
- আপু হাসান ভাইয়া আমাকে সব বলেছে। আসলে বাবার জন্যই এমনটা হলো। বাবাই ডেকে ভাইয়াকে বলেছে আমাকে সব স্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।
- ওহ তুমি হাবিব স্যারের মেয়ে!
- হুম। আপু শোন হাসান ভাইয়া অনেক ভালো আর অনেক বেশি ভালোবাসে তোমাকে।
- বলেছে তোমাকে।
- জি বলেছে। কাল সারাদিন শুধু তোমার কথাই বলেছে। এখন যাও ভাইয়া তোমার জন্য দাড়িয়ে আছে হাতে এক তোড়া ফুল নিয়ে।
রিনা এগিয়ে যায় হাসানের দিকে। ‘শুভ জন্মদিন তোকে’ বলে হাতের ফুলগুলো এগিয়ে দেয় রিনার দিকে। মুচকি হেসে ফুলগুলো হাতে নিয়ে বলে ‘হয়েছে হয়েছে।’
সারাটা বিকেল রক্তিম সূর্যটাকে সঙ্গি করে রিক্সায় ঘোরার সিদ্ধান্ত নেয় ওরা। খুব ধীর গতিতে রিক্সা এগিয়ে যায় সামনের দিকে।
- শোন হাসান, তুই আমাকে কালকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস। আমাকে অনেক কাঁদিয়েছিস। তাই তোর শাস্তি আজ থেকে তুই আমাকে আর তুই করে বলতে পারবি না। তুমি করে ডাকতে হবে, ইভেন বিয়ের পরেও।
- আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হবে।
- আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম তোমাকে। আমিও তুমি করে বলবো। আর শোনো তোমাকে না বলেছি এই মেরুন কালারের পাঞ্জাবিটা আর পড়বে না। তোমাকে খুব পচা দেখায়।
- আমি ইচ্ছা করেই পড়েছি। আমি চাই আজ আমাকে পচা দেখাক। আমি চাই আজ সবাই আমার পাশে বসা পরীটাকেই দেখুক প্রান ভরে...!