মক্কার ধনী উমাইয়া। ধনে-মানে সব দিক দিয়েই কুরাইশদের একজন প্রধান ব্যক্তি সে। প্রাচুর্যের যেমন তাঁর শেষ নেই, ইসলাম বিদ্বেষেও তাঁর কোন জুড়ি নেই। শিশু ইসলামকে ধ্বংসের কোন চেষ্টারই সে কোন ত্রুটি করে না। এই ঘোরতর ইসলাম বৈরী উমাইয়ারই একজন ক্রীতদাস ইসলাম গ্রহণ করেছে। তা জানতে পারল উমাইয়া। জানতে পেরে ক্রোধে ফেটে পড়ল সে। অকথ্য নির্যাতন সে শুরু করল। প্রহারে জর্জরিত সঙ্গাহীন-প্রায় ক্রীতদাসকে সে নির্দেশ দেয়, "এখনও বলি, মুহাম্মদের ধর্ম ত্যাগ কর। নতুবা তোর রক্ষা নেই।"
কিন্তু তাঁর ক্রীতদাস বিশ্বাসে অটল। শত নির্যাতন করেও তাঁর বিশ্বাসে ফাটল ধরানো গেলনা। ক্রোধে উন্মাদ হয়ে পড়ল উমাইয়া। শাস্তির আরো কঠোরতর পথ অনুসরণ করল সে।
একদিনের ঘটনা। আরব মরুভুমির মধ্যাহ্ন। আগুনের মত রোদ নামছে আকাশ থেকে। মরুভূমির বালু যেন টগবগিয়ে ফুটছে। উমাইয়া তাঁর ক্রীতদাসকে নির্দয়ভাবে প্রহার করল। তারপর তাঁকে সূর্যমুখী করে শুইয়ে দেয়া হল। ভারি পাথর চাপিয়ে দেয়া হলো তার বুকে। ক্রীতদাসের মুখে কোন অনুনয়-বিনয় নেই। মনে নেই কোন শঙ্কা। চোখে অশ্রু নেই, মুখে আর্তনাদ নেই। ঊর্ধ্বমুখী তাঁর প্রসন্ন মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আল্লাহর প্রশংসা ধনি- ‘আহাদ’, ‘আহাদ’।
ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)।‘আহাদ’, ‘আহাদ’ শব্দ তাঁর কানে এলো। অনুসন্ধিৎসু হয়ে শব্দ লক্ষ্য করে তিনি মরুভুমির বুকে শায়িত ক্রীতদাসের সমীপবর্তী হলেন। উমাইয়াকে দেখে সব ব্যাপারটাই তিনি মনে মনে বুঝে নিলেন। বললেন, "উমাইয়া, আপনাকে তো ধনী ও বিবেচক লোক বলেই জানতাম। কিন্তু আজ প্রমাণ পেলাম, আমার ধারণা সঠিক নয়। দাসটি যদি এতই না পছন্দ, তাঁকে বিক্রি করে দিলেই পারেন। এমম নির্দয় আচরণ কি মানুষের কাজ?"
হযরত আবু বকরের ঔষধে কাজ হলো। উমাইয়া বললেন, "এতো বাহাদুরী দেখাবেন না। দাস আমার। এর উপর সদাচার-কদাচার করবার অধিকার আমারই। তা যদি এতই দয়া লেগে থাকেম তবে একে কিনে নিলেই পারেন?"
হযরত আবু বকর (রাঃ) এই সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন। তিনি চট করে রাজী হয়ে গেলেন। একজন শ্বেতাঙ্গ ক্রীতদাস ও দশটি স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনে নিলেন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসকে। হযরত আবু বকর (রাঃ) ক্রীতদাসকে মরুভুমির বুক থেকে টেনে তুলে গা থেকে ধুলো ঝেড়ে দিলেন। উমাইয়া বিদ্রুপের হাসি হেসে বললেন, "কেমন বোকা তুমি বলত? এ অকর্মণ্য ভৃত্যটাকে একটি স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়েই বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। এখন আমার লাভ ও তোমার ক্ষতি দেখে হাসি সংবরন করতে পারছি না।"
আবু বকরও হেসে বললেন, "আমি ঠকিনি বন্ধু! এ ক্রীতদাসকে কেনার জন্য আমার সম্পত্তি দিতে হলেও আমি কুন্ঠিত হতাম না। কিন্তু একে আমি ধারণাতীত সস্তা মুল্যে ক্রয় করে নিয়ে চললাম।"
এ দাসটিই ছিলেন বিশ্ব বিশ্রুত বিলাল। ইসলামের প্রথম মুয়াযযিন হযরত বিলাল।