মন খারাপ হওয়াটা ব্যাপার না,মূল ব্যাপারটা হল প্রায় ৮ দিন পর অবনীর
সাথে দেখা করার কথা আজ.. ও জানেনা আমার মন খারাপ কিন্তু
দেখা হলে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারব না..
৮ দিন পর দেখা বলে অবনী আজ অনেক খুশি,
আগে প্রায় প্রতিদিন দেখা হত কিন্তু ওর এইচ এস সি পরীক্ষা সামনে,টেস্ট এ এক
সাবজেক্ট ফেল তাই প্রতিদিন দেখা করা বন্ধ আর আমার
সাথে কথা বলার পরিমাণও কম.. তবে এক শর্তে কথা বেশি বলতে পারে,যদি পড়া শেষ
করতে পারে.. ও মিথ্যা বলে না আমার সাথে.. আজ ওর না পড়লেও চলবে,
আমি না বললে ও পড়ে না আর ওর আম্মু তো ওর পড়া নিয়ে কিছু বলে না..
যা বলার টেস্ট এর রেজাল্ট এর পর বলেছিল,
এইচ এস সি তে খারাপ করলে বিয়ে দিয়ে দিবে..বাকিটা অবনীর
হাতে, এখন ও ঠিক করবে বিয়ে করবে নাকি পড়ালেখা.. এই দুইটা অপশানে ওর পছন্দ প্রথম অপশান 'বিয়ে করব' কিন্তু আমার এখনও পড়ালেখা চলছে..
আর যতদিন কিছু না করছি তার আগে তো ওকে বিয়ে করার প্রস্তাব
দিতে পারি না.. ব্যাপারটা ওকে বোঝানো যায় না ওর
সবকিছুতেই খামখেয়ালি..বলবে 'বিয়ে করে নিলে কি হবে' তাই ওর পড়ালেখা করা নিয়ে আমার এত চিন্তা.. কিন্তু সবসময় তো পড়া নিয়ে থাকলে হয়
না, তাই রেস্ট হিসেবে আমার সাথে ওর দেখা করা..
সকাল ৯টা ওর কল, সারা রাত ঘুমাইনি নিজের রুমে বসে আছি..
-হ্যালো বাবু
-হুম
-কোথায় তুমি?
-এইতো ঘুমাচ্ছি
-দেখ ৯ টা বাজে,তাড়াতাড়ি উঠ..
-ঘুম পাচ্ছে ঘুমাব পরে দেখা করব..
-আমি যে বাসা থেকে বের হয়েছি
-বাসায় চলে যাও
-আম্মু
বকা দিবে,আমি বলছি আসতে দেরি হবে এখন তাড়াতাড়ি বাসায় গেলে যদি সন্দেহ
করে..পরে বের হতে দিবে না..
-কিছু হবে না বাসায় চলে যাও
-একটা কথা বলি?
-আবার কি?
-আমি বাগানের ওখানটায় কিছুক্ষণ বসি তারপর চলে যাব
-যা ইচ্ছা হয় কর.. কলটা কেটে দিলাম,
একটা পার্কে দেখা করার কথা ,পার্কটা অনেকটা বড়..ভিতরে একটা পুকুর
আছে, বাগান আছে এক পাশে শিশুদের জন্য খেলার জায়গা আছে..
বাগানের পাশে বসার জায়গা আছে.. ও সেখানটায় বসে থাকবে নয়ত
পরে যদি আমার সাথে দেখা করার জন্য আসতে না পারে..
ও একা তাই একটু ভয় লাগল..
ফ্রেস হয়ে বের হলাম, রিক্সায় গেলাম পার্কে.. যেতেই যা দেখলাম তাতে মাথা গরম হয়ে গেল.. শীতকাল আর ও আইসক্রিম খাচ্ছে,
এক মনে খেয়েই যাচ্ছে.. আমি একটু দূরে দাড়িয়ে ওর
দিকে তাকিয়ে আছি.. ও আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভয়
পেল তারপর আইসক্রিমটা ফেলে দিল.. ওর পাশে গিয়ে বসলাম,
একটা থাপ্পর দিতে ইচ্ছা করছে.. ও হাসছে,
-আইসক্রিম খেতে কে বলেছে
-
হইছে কি জানো,একটা পিচ্ছি ছেলে আইসক্রিম বিক্রি করছিল..টাকার জন্য কত কিছু
করে মানুষ,এই ছোট ছেলেটাও করছে..আমার কাছে আইসক্রিম
নিয়ে আসল আমি না বললাম..তুমিতো বারণ করছিলা তাই না..তারপর ছেলেটা এত
করে বলল মায়া হল..আমি এমনি টাকা দিতে চাইলাম নিল না,তাই আইসক্রিম কিনলাম..তারপর ফেলে দিতে চাইলাম,কিন্তু খাবার নষ্ট
করা কি ঠিক বল?তাই একটু টেস্ট করে দেখলাম মজা লাগল তাই একটু
খেলাম..তারপর দেখ ফেলে দিয়েছি..তুমি তো বারণ করছ..
(ওর দিকে তাকিয়ে আছি রাগিভাবে)
-এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন আমি ইচ্ছা করে খাইনি তো..
(বলে হাত ধরল)
-হাত ছাড়
-তুমি তো আমার বাবু তাই না..
(ও হাসছে)
-সত্যি করে বল আইসক্রিম কেন খাইছ?ঐ তুমি কি আমার আড়ালে এমনটা কর নাকি?
-না না সত্যি বলছি এমন করি না,আজ তো পিচ্ছি ছেলেটা চাইছিল তাই খাইছি বিশ্বাস কর
-হুম,কি ভাল একটা মেয়ে তাই না..
(আমার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বলল)
-আই লাভ ইউ
-পড়ালেখা কেমন চলছে?
-পড়ালেখার তো চাকা নেই,কিভাবে চলবে?
-দুষ্ট হয়ে গেছ তাই না
-তোমার থেকেইতো শিখছি
-হুম আব্বু আম্মু কেমন আছে তোমার?
-ভাল,জানো একটা মজার ঘটনা ঘটছে
-না তো জানিনা
-
কি করে জানবা আমি তো তোমাকে বলি নাই,শোন না কি হইছে.......
শুরু হয়ে গেছে ওর বকবক, থাক বকবক করুক কতক্ষণ..থামালাম না..
ওর মজার ঘটনাগুলো মজার হয়, তবে হাসি পায় না. তাই আমিও হাসলাম না .ও
হাসতে হাসতে বলল,
-কি মজার তাই না?
-হুম
(ও হাসি থামিয়ে বলল)
-এই তুমি হাসছ না কেন?
-হাসি না আসলে কি করব
(হাতটা ছেড়ে দিল)
-উমমম শয়তান,চামচিকা,বানর,জিরাপ
-আর কিছু?
-না এইগুলাই চলবে হি হি হি
-তুমি তাইলে শয়তান,চামচিকা,বানর আর জিরাপের বউ
-হি হি হি
-এত হাসির কি আছে?
-আচ্ছা এতদিন পর পর তোমার সাথে দেখা হয়
তুমি আমাকে একটা ফুলও দাও না,কেন?
-তুমি আমাকে দাও নাকি?
-আমার কাছে তো অনেক ফুল কেনার
টাকা নেই
-আমার কাছেও নেই
-নেই কেন?
-আমি কি বড়লোক বাপের
ছেলে নাকি আজব..
-আমার পেতে হলে বড়লোক হতে হবে
-কি?
-কানে কম শুন নাকি
-আমি তোমাকে পেতে চাই না হইছে..
কিছুক্ষণ দুজনই চুপ,অবাক লাগছে ও আমাকে এমন কথা বলছে
চলে যেতে ইচ্ছা করছে.. উঠে দাড়ালাম ওর দিকে না তাকিয়ে হাটছি.. ও পিছন পিছন হাটল, রিক্সা উঠলাম,ও এক হাত দিয়ে ব্যাগটা ধরে রাখছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে..
-কি হইছে দাড়িয়ে আছ কেন উঠ..
উঠে বসল, পুরো রাস্তায় একটা কথাও বললাম না, ওর বাসার সামনে এসে দুজনই নামলাম,ও ভাড়া দিতে চাইল.. মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে,
-আমি ফকির না,
বলে ভাড়া দিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি. পিছন ফিরে দেখলাম ও নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে..বাসায় যাচ্ছে না. চলে আসলাম মায়া করতে ইচ্ছা হল না.. কয়েকবার ওকে কল দিব দিব করেও দেই নি..
খারাপ লাগছে মন খারাপ ছিল ওর সাথে দেখা করার পর ভাল ছিল কিন্তু
এখন আর ভাল লাগছে না.. ভাবলাম ও আজ পড়বে না,রাত ৯টায় কল দিলাম সব তো এইভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে না..
-হ্যালো
(গম্ভীরভাবে বলল)
-হুম বল
-কি কর?
-পড়ছি এখন কল দিছ যে..
-পড়ছ?
-তুমি তো পড়তে বলেছিলা..
-আমার সাথে কি তোমার আদৌ সম্পর্ক
আছে..
-থাকবে না কেন?একটা ছোট্ট কথা তো আর আমার ভালবাসার থেকে বড় না..
(অবাক হলাম কিন্তু তখনের কথাটার একটা দিক করতে হবে)
-তখন কি বলেছিলা
-দুষ্টামি করে বলেছিলাম,ভাবিনি
তুমি কষ্ট পাবে..এখন পড়ব রাতে কল দিও
কিন্তু.. কিছু বললাম না, সব মেয়ে নাকি কিছু অদ্ভুত গুন
নিয়ে জন্মায় আমার পাখিটার এই একটা গুন,সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার আর
অনেক ভালবাসার...