-না।ফোন থাকলে অয়েটিং থাকতেই পারে
-এইইই রুদ্র তোমার সাথে এটা যাচ্ছে না।নতুন কাকে পাইছ বল?
-আজব! আমার চোখ খচখচ করে ওঠে।রুদ্রের
হঠাত এরকম পরিবর্তন হয়ে যাওয়াটায় যতটা না কষ্ট পেয়েছি,তার চেয়েও
বেশি অবাক হয়েছে।অবাক হবারও যথেষ্ট কারন আছে।যে রুদ্র আমার
সাথে কথা বলার জন্য সারাক্ষন অস্থির হয়ে থাকতো,ফোন
অয়েটিং থাকলে সারাক্ষন জেরা করত সেই রুদ্রই এখন আমার
অয়েটিং এ থাকার ব্যাপারটাকে সবাভাবিক ভাবে দেখছে!
এইতো কয়েকমাস আগেই আসিফের সাথে রাত জেগে ঘন্টার পর
ঘন্টা আড্ডা দিচ্ছিলাম ফোনে। হঠাত রুদের ফোন।
আমাকে অয়েটিং পেয়ে কল কেটে দিয়েছিল সে।আমিও
আসিফের সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে লাগলাম।
রুদ্র ঘন্টা খানিক পর আবার কল দিয়েছিল।তখনো আমাকে অয়েটিংএ
পেয়ে আর কল দেয় নি। কয়েকদিন পর আবারো রাতে কথা বলি আসিফের
সাথে।রুদ্র সেদিনও আমাকে অয়েটিং এ পায়।সে কল দেয়
আবার কেটে দেয়।এভাবে প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ মিনিট পর পর সে কল
দিয়ে দেখে।সেদিন শেষ রাতে আমি যখন ওকে কল ব্যাক
করি ততক্ষনে সে আমাকে সাত বার কল দিয়েছে।ফোন রিসিভ করেই ওর
অভিযোগের সুরে জিজ্ঞাসা,কার সাথে কথা বলছিলা?
আমি ফেমিলি মেম্বারদের সাথে কথা বলার
কথা বলে এড়িয়ে যাই।কিন্তু সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।
বাচ্চাদের মত একটানা কাদতে থাকে সে। ব্যাপারটা বেশ বিরক্তিকর লাগে আমার কাছে।
এরপরে প্রায় প্রতিরাতেই সে আমাকে অয়েটিং এ পায়।কয়েক
মিনিট পর পর কল দিতে থাকে। আমি ইচ্ছে হলে শেষ রাতে ওকে কল
দেই,না হলে দেই না।কল করলেই কান্নাকাটি শুরু করে।অস্থির
থাকতো সে সব সময় আমাকে নিয়ে।যখন তখন কল দিয়ে চেক
করে আমি কারো সাথে কথা বলছি কিনা? একদিন প্রচন্ড
বিরক্তি নিয়ে বলি,তুমি এরকম করো কেন?অয়েটিং এ
থাকাটা কি এমন অসবাভাবিক ব্যাপার?ফেমিলি মেম্বারদের
সাথে কথা বলতে পারি না আমি? এতে এরকম অস্থির হওয়ার তো কোন
মানে দেখি না আমি। সে হতাশ হয়ে বলেছিল,যেদিন
আমি আর অস্থির হবো না,হাজারবার অয়েটিং এ দেখেও যেদিন আর
তোমাকে জেরা করবো না সেদিন বুঝবে তুমি আমার এই অস্থির হওয়ার
মানে।রুদ্রের কথা আমি হাসি মুখে এড়িয়ে যাই। এরকম ভাবেই চলছিল বেশ।রুদের
প্রতি আমার উদাসিনতা,আমার জন্য তার কান্নাকাটি,অস্থিরতায় দিন
গুলো ভালোভাবেই পার করছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগেই হঠাত
ধরতে পারলাম,রুদ্র কেমন জানি চেঞ্জ।আমাকে অয়েটিং এ
পেলেও আর কিছু বলে না।কল দিলে হেসে হেসে কথা বলে।আমার
জন্য তার মাঝে কোন অস্থিরতাই দেখতে পাই না।কথা বলার সময় ফোন
রাখতে চাইলেও বলে না,আর কিছুক্ষন থাকো প্লিজ।সব কিছুতেই রুদ্র এর পরিবর্তন লক্ষ
করি! ব্যাপারটা ধরতে পেরে আমি ঠিক থাকতে পারি না।ওর
অস্থিরতা,কান্নাকাটি সব কিছুকেই মিস করতে থাকি।নিজের
ভুল বুঝতে পেরে ওর কাছে ক্ষমা চাই। সে হাসি মুখে এড়িয়ে যায়।
আজকে দুপুরে বড় চাচ্চু কল দেয়। এটা অটা নিয়ে কথা বলতে বলতে অনেক্ষন
কেটে যায়।মাঝখানে রুদ্র মাত্র একবার কল দেয়। কথা বলা শেষে রুদ্রকে কল দেই। সে ফোন রিসিভ করেই আমার সাথে সবাভাবিক ভাবে কথা বলতে থাকে।একবারও
আমার অয়েটিং এ থাকাটা নিয়ে কিছু জানতে চায় না।আমি ফোনেই
ফুপিয়ে কাদতে থাকি। সে বিরক্ত হয়ে কল কেটে দেয়।
আমি আবারো তাকে কল করি। কিন্তু এবার আমি বিদ্যুতের
শকের মত আঘাত পাই।ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে অয়েটিং লেখা।
ঠিক এই মুহূর্তে আমি অস্থির হয়ে পড়ি রুদ্রকে হারানোর ভয়ে।
পাগলের মত যতবারই রুদের নাম্বারে কল দেই ততবারই
তাকে পাই অয়েটিং অবস্থায়। মিনিট দশেক পরে রুদের রুমমেটের
কাছ থেকে একটা এসএমএস পাই। সেটা ওপেন করে একটা সবস্থির নিঃশবাস ফেলি।এসএমএসটাতে
লেখা ছিলঃ "রুদ্রের হাতে এখন দুইটা ফোন।এক ফোনের নাম্বার দিয়ে সে আরেক
ফোনের নাম্বারে কল করে বসে বসে কাদছে"