মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১১৯- বিন্দু

লিখা: বিস্কুট পাগলা (ধূসর কাব্য)

-অর্ক!শুনতে পাচ্ছ?
-কে?কে আপনি!
-আমি!আমায় চিনতে পারছোনা?
-না!আপনি কে?রোজ কেন আমায় ডাকেন?
-আমি তোমায় নিতে আসি রোজ! কিন্তু তুমি আসোনা কেন? এসো আমার কাছে!
-না!বলুন প্লিজ কে আপনি!
-আমি তোমার বিন্দু!
-না!আপনি আমার কেও নন!চলে যান! প্লিজ!
-আমি ফিরে যেতেতো আসিনি! একটিবার ছাদে এসো!
-না!না!চলে যান আপনি! 
চিৎকার দিয়ে ওঠে অর্ক!তার ঘুম ভেঙে যায়!রোজ সে দেখছে এই
স্বপ্নটি!নিদ্রার রাণী যেন তার চোখে এ স্বপ্নটি খোদাই
করে এঁকে দিয়েছেন!তার ভাবনার কেন্দ্র হচ্ছে বিন্দু!কে এই
বিন্দু!রোজ কেন তার স্বপ্নে এসে তাকে ডাকছে!কেন
তাকে পেতে চাইছে! নাহ্ আর কিছু ভাবতে পারছেনা অর্ক!ঘড়ির
দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল আটটা তিরিশ বাজে!দ্রুত ওঠে দুটো পাওরুটি খেয়ে চলে যায়
কলেজে!
-দোস্ত আজ আবার সেই একই স্বপ্ন! ভাই কে এই বিন্দু আর কেনইবা আমার
পেছনে পড়েছে!
-দেখ ভাই! তোকে বলেছি স্বপ্নে যেদিন মেয়েটার ডাকে সাড়া দিবি সেদিনই বুঝবি কে এই বিন্দু!
-কি যে করবোরে ভাই!রোজ একই স্বপ্ন আর কতো দেখবো!
-ভাবিস না!এটা জাস্ট একটা স্বপ্ন! নিশেনের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ!সে বুঝতে পারছে না কি করবে। অর্ক রোজ বিন্দু ডাকছে!কিন্তু কেন!অর্ক কিভাবে বিন্দুর নামটা জানলো।ওরতো জানার কথা নয়! কিছু ভাবতে পারছেনা সে আর! অর্কের মা কে ফোন করে সে!
-হ্যালো আন্টি অর্ক আজ আবার একই স্বপ্ন দেখেছে!
-আমার ছেলেটার যে কি হলো বুঝতে পারছিনা। তুমি ওকে কিছু বলোনিতো?
-না আন্টি বলিনি!
-এক কাজ করো তুমি অর্ককে এখানে নিয়ে আস!
-আন্টি কি বলছেন?ওখানে!যদি......
-কিছু হবেনা!তুমি নিয়ে আস! নিশানের মাথায় দুশ্চিন্তা যেন দানা বাধতে শুরু করলো!অর্কের মা কি ভুল করছেন? ওখানে গিয়ে যদি অর্ক.......
ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে যায় নিশান!বাড়ি পৌছে অর্ককে ফোন করে!
-কাল তোর বাড়ি যাবো!
-কেন?
-আন্টি তোকে নিয়ে যেতে বলেছেন!
-হঠাৎ?
-এমনি আমি ফোন করেছিলাম তো আমাকে বললেন তোকে যেন নিয়ে যাই!
-আচ্ছা! অর্ক ঢাকার একটি মেসে থাকে!তার বাড়ি ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে!
সে টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং-এর চতুর্থ বর্ষে পড়ে!তার একটা সমস্যা হচ্ছে সে প্রতি রাতে একই স্বপ্ন দেখে! সে জানেনা কে বিন্দু নামের সেই মেয়েটি! একা একা ছাদে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে!চাঁদ উঠেছে! চারিদিকে কুয়াশার হালকে একটি চাদর বিছিয়ে দিয়েছেন যেন বিধাতা! গিটারটা নিয়ে বাজাতে বাজাতে একটা গান তুললো কন্ঠে!
"বিন্দু আমি, তুমি আমায় ঘিরে,বৃত্তের ভেতর শুধু তুমি আছো!"
গাইতে গাইতে অনেক রাত হয়ে যায়! আজ আর খাবার ইচ্ছে নেই তার!
তাই শুয়ে পড়ে সে এসেই! জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবছে বিন্দুর
কথা! ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে অর্ক!
-অর্ক আমার কথা কি একটিবারো মনে পড়েনা তোমার?
-না!আমি তোমায় চিনিনা!কে তুমি?
-আমি বিন্দু!তোমার বিন্দু! ভালোবাসি শুধুই তোমায়!
-চলে যাও!যাও যাও যাও! ঘুম ভেঙে যায় অর্কের!কলিংবেল বাজছে!দরজা খুলে দেখে নিশান দাড়িয়ে!
-কিরে এতখন লাগে দরজা খুলতে? রুমমেটরা কোথায়?
-সবাই ছুটি নিয়ে চলে গেছে!
-তোকে শুকনো লাগছে কেন?আবার?
-হ্যা ভাই আবার!
-আচ্ছা চল আগে খেয়ে নে পর বেরিয়ে পরা যাক!
-ঠাকাছে! খেয়েদেয়ে বেরিয়ে পরে অর্ক আর নিশান!স্টেশানে গিয়ে ট্রেনের
টিকিট কিনে সোজা অর্কের বাড়ি! বাড়ি এসে মায়ের কাছে বসে থাকে অর্ক!
-কি হয়েছে বাবা?
-কিছুনা মা!কেমন আছ?
-তুই এলি তাই খুব ভালো! মায়ের উত্তর পেয় অর্ক চলে যায়
নিজের ঘরে! নিশানের সাথে কথা বলেন অর্কের মা!নিশান কে আজ থেকে যেতে বলেন কিন্তু নিশান থাকেনি!দুপুরের খাওয়া শেষ করে চলে যায় সে! অর্কের বাবা বিকেলে এসে ছেলের খোজ খবর নেন!একসাথে অনেক গল্প করে তারা!সন্ধ্যায় অর্ক ছাদে ওঠে!মোবাইলটা বের করে সে নিজের অজান্তে 0171******* নম্বটা ডায়াল করে!কিন্তু
নম্বরটি বন্ধ পায় সে! চেতনা ফিরে এলে সে ভাবতে থাকে এ নম্বর সে কোথায় পেল!এটা কার নম্বর। জিপি কেয়ারা ফোন করে জানতে পারে নম্বরটি বিন্দু
নামে রেজিস্টার করা!থমকে যায় অর্ক!ভয় পেয়ে যায় সে!
মনে মনে ভাবে আজ সে যদি বিন্দুকে স্বপ্নে পায়
তবে যাবে তার কাছে!রাত এগারোটায় ঘুমোতে যায় সে!
-অর্ক!আজ আমায় ফোন করতে চেয়েছিলে তুমি!
-হ্যা!
-এসো!ছাদে এসো!
-আসছি!
অর্ক এবার ছাদে চলে যায় তার স্বপ্নে!ঘুরে দাড়ায় বিন্দু! একি!এ যে অর্কের চিরচেনা মুখ!তার সব মনে পরতে থাকে! পুরোনো কথা তার মনে পড়ে যায়!
*******
-এই আমি কে গো?
-তুমি বিন্দু!আমার বিন্দু!
-ইশশশ্!কোনদিন ভুলে যাবেনাতো!
- ভুলে গেলে তুমি এসে মনে করিয়ে দিয়ে যাবে?
-যাবো!মরে গেলেও এসে মনে করিয়ে যাবো! অর্ক আর বিন্দু দু বছর আগে এভাবেই
কথা বলতো!একে অপরকে পাগলের মতো ভালোবালতো!বিন্দু যেন
অর্কের জান ছিলো!বিন্দুর পরিবার অর্ককে চিনতো!তাদের সম্পর্কে কোন দ্বিমত
করেনি বিন্দুর পরিবার!একদিন অর্ক তার মা কে বিন্দুর কথা বলে।তার
মা ছেলের পছন্দে খুশি হন কেননা বিন্দু দেখতে অসাধারণ ছিলো!অর্কের মা বিন্দুর
ব্যাপারে অর্কের বাবাকে সব বলে! কিন্তু অহংকারী বড়লোক বাবা মধ্যবিত্ত
বিন্দুকে মেনে নিতে পারেনি মনে মনে! তিনি পরদিন অর্ককে বলেন
বিন্দুকে তাদের বাড়ি আসার কথা বলতে! বাবার নিয়ত জানতোনা অর্ক!তাই
খুশি হয়ে বিন্দুকে বাড়ি আসতে বলে! এদিকে অর্কের বাবা ট্রাক
ভাড়া করে চালককে বিন্দুর ছবি দিয়ে বলেন যে গাড়িতে বিন্দু
আসবে তা উড়িয়ে দিতে!কিন্তু তার বাবা জানতেন না যে অর্ক
নিজে গিয়েছিলো বিন্দুকে আনতে! মাঝপথে এসেগেলে সেই ট্রাক
গাড়িতে বিন্দু আছে নিশ্চিৎ হয়ে ধাক্কা দেয় গাড়িতে!ঘঠনাস্থল
েই মারা যায় বিন্দু!অর্ক চেতনা হারিয়ে তিন মাস কোমায়
থাকে!কোমা থেকা ফিরে তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায়!
বামা মা আর বন্ধু নিশান তাকে নিজেদের পরিচয় দেয়!তারপর
থেকে তাদের ছাড়া আর কাওকে চিনতোনা অর্ক!
রোজ রাতে বিন্দুকে ফোন করতো জন্যেই আজ রাতে অর্ক
বিন্দুর নম্বরটায় ডায়াল করেছিল! এসব দেখে অর্কের ঘুম ভেঙে যায়!
বিন্দু বিন্দু করে চিৎকার করতে থাকে সে!কিন্তু তার
বিন্দুর সাড়া মেলেনা!অজ্ঞান হয়ে যায় অর্ক!বাবা মা ছেলের
চিৎকার শোনে ছাদে চলে যায়! দেখে ছেলে পড়ে আছে!
হাসপাতালে নেয়া হয় অর্ককে! সেদিন রাতে আবার বিন্দুকে স্বপ্নে দেখে!
-আমায় নিয়ে যাও বিন্দু!তোমার সাথে নাও!
-থাকতে চাও আমার সাথে?
-হ্যা!এই নিস্ঠুর জগৎ থেকে আমায় নিয়ে যাও!প্লিজ!
-তবে এসো আমার সাথে! বিন্দুকে আলিঙ্গন করে চলে যাচ্ছে অর্ক! পরদিন ডাক্তার জানায় অর্ক আবার কোমায় চলে গেছে!নিশানও তাকে দেখতে আসে!এক সপ্তাহপর মারা যায় অর্ক! অর্কের ঘরটি আজ খালি!ছাদে কেও নেই আজ!রাত নেমে এলে নিঃশব্দ
একটি গান বেজে ওঠে-
"বিন্দু আমি, তুমি আমায় ঘিরে,বৃত্তের ভেতর শুধু তুমি আছো!"