মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১১৮- একজন মিথিলা

লিখা :- MH Tareq

রাত ৩টা ৪৫মিনিট, আজাইরা ফেবুতে ঘুরঘুর করতেছিলাম।
হঠাৎ মিথিলার মেসেজ.....
-দাদা, দোয়া কইরো তোমার এই বইনডা যেনো মইরা যায়। ;-(
-আরে দিদি, এতো রাইতে? কি হইছে তোর?
-ও আমারে মারছে, আর মুখের উপরে তালাক বলছে দাদা!
খুব বেশী অবাক হতে পারিনি, ওই পাষন্ডটার সম্পর্কে অনেক
আগে থেকেই জানি। কিন্তু তালাকের কথা বলবে কেনো???
মাথা খারাপ অবস্থা আমার....
-কস কি এগুলা? এমন করছে কেন?
-কইতেও লজ্বা লাগে দাদা, ৪/৫ মিনিটের সুখের জন্য, কি আর কমু?
মুহুর্তেই কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম, কি বলবো বুঝতে পারছি না,
বিনা নোটিশেই মোবাইলের স্কীন ঝাপসা হয়ে গেছে, এ
বারিধারা বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ঘৃণায় মনটা পাষন্ড
হয়ে উঠলো, কোনমতে সামলে নিচ্ছি নিজেকে.....
-তুই কালকেই বাপের বাড়ি চলে যা দিদি। ;-(
-বাপ মায় জায়গা দিবোনা দাদা!!
-কেনো?
-বাপে ওর থেকে টাকা ঋণ নিছে ৩ লাখ, ওইটা শোধ করতে পারবোনা।
বাপের ব্যবসা লাটে উঠছে।
-তোর বিয়ের মোহরানা কত ছিলো?
-৩ লাখ মনে অয়।
-তাইলে তো কাটাকাটি করলেই হয়। তুই বাপের বাড়ি থাকবি, আমার আর ৩
বছর লাগবো সর্বোচ্য, এরপর তোর দায়িত্ব আমার।
-কিন্তু আমার মাইয়া আমারে দিবোনা কুত্তাটায় -:-O
আনিশা তো তোরে ছাড়া থাকতেও পারবোনা।
কিছুই করার ক্ষমতা নেই এই মুহুর্তে, অসহায়ত্ব গ্রাস করলো পুরোদমে।
আনিশাই তো ওর কাছে সব। মেয়েটাকে ছাড়া ও কোথাও যাবেনা!
কোনমতে বোনটাকে বুঝিয়ে ঘুমাতে পাঠালাম। যদিও ঘুমাতে পারেনি ও কষ্টের
তীব্রতায়। আট বছর আগে আলমগীরের সাথে বিয়ে হয় মিথিলার।
বাল্যবিবাহের মতোই ১৪ বছর বয়স তখন ওর। এ কারণেই বিয়ে পরবর্তী তিন বছর
বাপের বাড়িতে কাটায়ি তারপর ইতালী যায় ও।
সেখানে স্বামী সেদেশীয় কাস্টমসে কাজ করে ভালোই
মাইনে পায়। সব মিলিয়ে ভালোই যাওয়ার কথা। তারউপর বছর না পেরুতেই
মিথিলার কোল জুড়ে আসে ওর ফুটফুটে কলিজার টুকরা আনিসা।
কিন্তু এটাতো আর গল্পনা আর রুপকথাও না, এটা নির্মম বাস্তবতা। মিথিলার
বাবার আর্থিক অবস্থা অতটা ভালো না হওয়ার মেয়ের জামাই থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেয় ব্যবসার জন্য। কিন্তু ব্যবসা জমেনি, তাই টাকা ফেরতের
সুযোগই রইলোনা। এসব কারণ মিলিয়ে স্বামীর বৈরী আচরণের
স্বীকার হতে থাকে মিথিলা। প্রবাসে একা স্বামীর কাছে থাকার
কারণে বৈরীতা বেড়েই চলে। খারাপ ব্যবহার, মারধর ছিলো নিত্যনৈমত্তিক ব্যপার। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গত বছর মিথিলা দেশে ফিরে একা মেয়েকে নিয়ে।
কিছুদিন ভালোই কাটে বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি করে করে। কিন্তু
বছর পেরুনোর আগেই দেশে ফিরে আলমগীর। আবার শুরু হয়
দুঃসহ দিন। কিছু বলার বা করার ক্ষমতা নেই কারোই।
আমি আপাতত অসহায়, নিরব ভঙ্গাঙ্কুর দর্শক আমি।অনেক কিছুই করার
ইচ্ছা আছে ওর জন্য, ওর কষ্ট আমি একদম সইতে পারিনা! অনেক
ভালোবাসি ওকে আর ওর পিচ্ছি ম্যাডামটাকে ;-(
...........@...........
-মিথি, দেখতো ছেলেটা কেমন? আনিশার জন্য মানাবে ভালোই, তাইনা??
-হুম, ভালোইতো (অনেকটা উদাসীনভাবে)
-
ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষ করেছে সবে। নতুন একটা....
(থেমে গেলাম আমি, আমার বকবকানিতে কান নেই ওর) চিন্তায় অন্যমনস্কা হয়ে আছে ও, হয়তো অতীতের কস্টগুলো মনে পড়ে গেছে, অনেক গ্লানি পেরিয়ে আজ ভালোই আছে ও। আনিশা কে বিয়ে দেয়ার একদম ইচ্ছে নেই, কিন্তু মেয়েতো বড় হয়ে গেছে। কি আর করা। মেয়েটাকে ছাড়া থাকবে কেমনে ও। হয়তো এসব চিন্তায় ডুবে আছে।
আমি নিরব দর্শক। শেষটুকু নিছকই কল্পনা। ভালো স্বপ্ন কে না দেখতে চায়। আমিও চাই,
ভালো থাকুক সকল বধুরা। তারাও হয়ে উঠুক এক একজন কল্পনার মিথিলা।
ভালো থাকুক মিথিলারা।