মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

রম্য সংকলন ৫- মেশিনটা


“এই শোন মেশিনটা লাগবে আজকের জন্য।ব্যাটার আজ শেষ দেখেই ছাড়বো”
আমার কথা শুনে শুভ নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।চোখ লাল হয়ে আছে,কানের কাছে এখনো ফোন।বুঝলাম গার্লফ্রেন্ডের সাথে বিশেষ কথা চালাচ্ছে।দরজা ভেজানো ছিল,আমি দরজায় নোক না করেই ঢুকে পড়ি।এটা ঠিক হয় নি,তাই তাকে স্বাভাবিক হওয়ার সময় দিতে চেয়ারে বসে পড়লাম।
“কি যেন চাচ্ছিলি?”ফোনটা রেখে শুভ আমার দিকে ঝুকে বলল।
“তোর মেশিনটা লাগবে এক দিনের জন্য।”
“আমার মেশিন মানে!”
“মানে তোর পিস্তলটা।যেটা তোর জন্মদিনে তোকে তোর মামা উপহার দিয়েছে”
শুভর মামা দেশের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী।অনেক ক্ষমতা তার,জন্মদিনে ভাগ্নেকে হাতির বাচ্চা উপহার দেওয়ার মত ক্ষমতাও তার আছে।সেখানে গত জন্মদিনের দিনে লাইসেন্সসহ একটা পিস্তল আমাদের দেখিয়ে যখন শুভ বলল,”এটা মামা আমাকে দিয়েছে” তখন আমরা কেউইই অবাক হই নি।খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।বরং প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমাদের সার্কেলের বন্ধুরাও মেশিনটা নিয়ে যায় মাঝে মধ্যে।
আমার অবশ্য এটা প্রয়োজন পড়ে নি এর আগে ।এই প্রথম মেশিনটা নিতে আসলাম।
“দোস্ত মেশিন দিয়ে তুই কি করবি?কোন প্রজেক্ট আছে নাকি হাতে?”
“হ্যা আছে।গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট”
“আমাকে একটু খুলে বল।যদি তোকে কোন হেল্প করতে পারি”
“লাগবে না,আমি একাই পারবো।তুই পিস্তলটা দে।ব্যাটার আজ শেষ দেখে ছাড়বো।খুব বাড় বেড়েছে সে”
“কার কথা বলছিস?নাম কি?”
“আবিদ”
“আবিদ!মানে তোর রুমমেট?”
“হ্যা”
“সে কি করেছে তোর সাথে?আমি যতটুকু জানি ছেলেটা তো অনেক ভদ্র।”
“ভদ্র ছিল।কিন্তু গত চার সপ্তাহ ধরে আমার কথা শুনছে না।একটা কাজ করতে বলছি বারবার।কিন্তু সে কানেই নিচ্ছে না,কত্ত বড় বেয়াদপ!মেশিন দে,ওর বেয়াদবি আজকে একেবারেই শেষ করবো”
শুভ আমার হাতে পিস্তলটা দিয়েই বলল,মিশন সাকসেসফুল হলে সাথে সাথে আমাকে জানাবি কিন্তু”
আমি পিস্তলটা পকেটে ঢুকিয়েই বের হয়ে গেলাম।আমি হনহন করে মেসের দিকে হাটছি।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেসে ফিরতে হবে।কাজটাও যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় ততই ভালো। আবিদটা নিশ্চয়ই এখন পড়ছে।ক্ষেতা পুড়ি ওর পড়াশোনার।গত চার সপ্তাহ ধরে সে আমার সাথে যেটা করেছে সেটার দফারফা আজকেই করে ছাড়বো।
রুমে এসে দেখি আবিদ শুয়ে শুয়ে হেট স্টোরি টু এর ভিডিও গানটা দেখছে।আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে মনোযোগ দিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলো সে।আমি চেয়ার টেনে ওর খাটের পাশে গিয়ে বসলাম।তারপর ওর মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মারলাম বিছানার উপর।বললাম,একটু আগে যে কাজটা করতে বলে বাইরে গেলাম সেটা করেছিস?
“না করি নি” স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল আবিদ।
“কেন করিস নি?”হুংকার ছেড়ে বললাম।
“এমনিই”
আর ঠিক থাকতে পারলাম না।পকেট থেকে পিস্তলটা বের করেই ওর দিকে তাক করে ধরলাম।পিস্তল দেখেই ছেলেটা দারুন ভয় পেয়েছে।কোন কথা বলতে পারছে না।
আমি দাতে দাত চেপে বললাম,তোর বেয়াদবি অনেক দেখেছি।আর না...
কথা শেষ করতে পারলাম না,তার আগেই সে বলে উঠলো,ভাই ভাই প্লিজ এবারের মত ক্ষমা করে দেন।
“তাহলে কাজটা কবে করবি বল?”
“কালকেই করবো ভাই প্রমিজ”
“না আজকেই করবি,এক্ষুনি করবি”
“না ভাই এখন অনেক রাত।কালকে করবো”
“কি এখনো আমার মুখে মুখে কথা!আজকে এখনই করবি কিনা বল?”বলেই এক হাত দিয়ে পিস্তলটা আবিদের কপালে ধরলাম আর অন্য হাত দিয়ে আবিদের শার্টের কলার চেপে ধরে কাছে টেনে আনলাম।সাথে সাথে একটা ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এসে লাগলো।“উহ আর সহ্য করা যায় না।চল আজকে এক্ষুনি গোসল করবি।গত চার সপ্তাহ ধরে তোর গোসল না করা শরীরের গন্ধে ঘুমাতে পারছি না”
ওয়াশ রুমে আবিদকে ঢুকিয়ে দিয়েই দরজায় পিস্তল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আর ঐদিকে ভয়ের চোটে আবিদ একের পর এক মগ পানি মাথায় ঢালতেই আছে।



লেখাঃ Ranga Real
সোর্স- Valobash Tomake  ফেইসবুক পেইজ