মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৪৯- অন্তহীন ভালোবাসা

লেখা : অস্পষ্ট আমি


ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং
নিলয় এর ফোনটা বেজেই চলেছে।
নীলাদ্রি সে কখন
থেকে করেছে তো করছেই। সেদিকে কোন
ভ্রুক্ষেপই নেই
নিলয়ের। আজ নীলাদ্রি জন্মদিন
সেটা নিলয় জানে।
নীলাদ্রি ভেবেছে নিলয় ভুলে গিয়েছে তাই
বারবার ফোন করছে। নিলয় এখন নিরব
কে খুঁজছে। কারণ নীলাদ্রি তার জন্মদিনের
অনুষ্ঠান এ নিলয় কে যেতে বলেছে। আর
নিলয় এর কাছে একটা টাকাও নেই যে ওর
জন্মদিনে কিছু উপহার দিবে। নিলয়
ভাবছে নীলাদ্রির বাবা ওর জন্মদিনের
জন্য কত বড় পার্টি দিয়েছে। আর সেই
পার্টিতে দাওয়াত দিয়েছে নিলয় কে।
কিন্তু নিলয়ের কাছে এখন কোন
টাকাপয়সা নেই। থাকবে কি করে? নিলয়
তো বেকার একজন ছেলে। পড়াশুনা শেষ
করেছে বছর দুইএক হয়। কিন্তু এতদিনেও
কোন চাকরী পায় নি নিলয়। পাবে কি করে?
নিলয়ের তো আর মামা চাচার জোর নেই
যে মামা চাচা গিয়ে বলবে আর ওর
চাকরী হয়ে যাবে।
নিলয় বসে ওদের সম্পকের কথা ভাবছে।
নীলাদ্রির সাথে নিলয়ের সম্পর্ক ৪
বছরের। তাদের প্রথম দেখাটাও
ছিলো অদ্ভুদ ভাবে। তখন ছিল বর্ষাকাল।
কিছুক্ষণ পর পরেই অঝর ধারায়
বৃষ্টি পরতো আকাশের বুক থেকে।
তেমনি একটা দিনের সকালের কথা। নিলয়
ভার্সিটি তে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে।
আকাশটা তখন ছিলো মেঘাছন্ন।
মনে হচ্ছে এই বুঝি কেদে দিবে আকাশ টা।
মুছে দিবে তার সমস্ত দুঃখ কষ্ট। নিলয় ও
এটা দেখে খুব খুশি হয়েছিলো। সে নিজেও
বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করে। বৃষ্টির
দিয়ে মুছে জীবনের সব ক্লান্তি, সব কষ্ট,
গ্লানি।
ভাবতে ভাবতে ক্যাম্পাসে পৌছে গেল
নিলয়। নিলয় পৌছানো মাত্রই শুরু হলো তুমুল
বৃষ্টি। সবাই দৌরে ভার্সিটির
ভিতরে চলে গেলো। কিন্তু নিলয় চুপ
করে দারিয়ে আছে। আসলে শুধু দারিয়েই
ছিলো না। সে অবাক
নয়নে দেখছিলো একটা ডানা ছারা পরি কে।
নিলয় প্রথমে ভেবেছিলো এ নিশ্চই মানুষ
হতে পারে না।
কি করে একটা মেয়ে এতোটা সুন্দর
হতে পারে? নিলয় এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকে।
কিন্তু
সে বুঝতে পারছে না কি করতে আচ্ছে সে।
হঠাৎ একটা মিষ্টি ডাকে ঘুর
ভাঙে নিলয়ের।
নীলাদ্রি : হ্যালো মিস্টার,,,,,,,
কি দেখছেন এমন করে?
ভেজা কাপরে মেয়েদের দেখতে খুব
মজা পান তাই না?
নিলয় : না মানে... ইয়ে মানে....
( নীলাদ্রি কে দেখে আর
কথা বলতে পারছে না নিলয়)
নিলাদ্রী : কি মানে মানে করছেন?
বদমাইশি করার যায়গা পান না তাই না?
নিলয় : আপনি ভুল করছেন।
আমি আসলে এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি এই ভার্সিটির ই স্টুডেন্ট।
নিলাদ্রী : ও... তাই? নতুন এসেছ নাকি?
আগে কখনও দেখি নি তো? সিনিয়রদের
কে সম্মান দিতে শিখনি?
(নীলাদ্রি নিজেই এই ভার্সিটি তে নতুন।
নিলয়ের এক বেচ জুনিয়ার।
সেটা ননীলাদ্রি জানতাও না। তবু একটু
ভাব নিলো বললো )
নিলয় : না মানে......
নীলাদ্রি : আবার মানে মানে? কোন
ইয়ারে পড় তুমি?
নিলয় : জী মানে ফাইনাল ইয়ার।
নীলাদ্রি : ( ভয়ে ভয়ে) আপনি ফাইনাল
ইয়ার পড়েন আগে বলবেন তো। তাহলে আর
এভাবে........ স্যরি ভাইয়া।
নিলয় : থাক আর কিছু বলতে হবে না।
তুমি কোন ইয়ার?
নীলাদ্রি : না মানে ভাইয়া আমি আপানার
এক ব্যাচ জুনিয়ার।
নিলয় :
তাহলে এতো ভাইয়া ভাইয়া করতে হবে না।
ফ্রেন্ড ভাবতে পারো। (নিলয় এতখনে একটু
নরমাল হলো।)
এটা বলে নিলয় চলে গেলো। আর
নীলাদ্রি ভাবছে ছেলেটা ভালোই।
ফ্রেন্ডশিপ করলে মন্দ হয় না।
তারপর থেকে প্রতিদিনই নিলয় আর
নীলাদ্রির টুকটাক কথা হতে থাকে। একসময়
তাদের মাঝে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু
নিলয় নীলাদ্রি কে প্রথমদিন দেখেই ওর
প্রেমে পরে গিয়েছে। কিন্তু কখনও বলার
সাহস হয় নি। কারণ নীলাদ্রি উচ্চবিত্ত
পরিবারের মেয়ে। ওর বাবা একজন বড়
ব্যবসাই। আর নিলয় তো গ্রামের এক স্কুল
মাস্টার এর ছেলে। ওর বাবার মাসিক আয়
দিয়ে সংসার আর নিলয় এর খরচ চালাতেই
খুব কষ্ট হয়। তাই আর নীলাদ্রি কে কিছু
বলার সাহস হয় নি।
কিন্তু ভার্সিটিরর ফেয়ারওয়েল এর দিন
নীলাদ্রি নিজেই গিয়ে দাড়ালো নিলয়এর
সামনে। নীলাদ্রি আজ অনেক সুন্দর
করে সেজেছে। ঠিক নিলয়ের মনের মত করে।
নিলয়ও আজ নীলাদ্রি কে দেখে অবাক
হয়ে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন
দেখছে। নীলাদ্রি আজ আকাশি রঙের
শাড়ি পরেছে। তাতে নীলাদ্রি কে ঠিক
যেন সর্গের অপ্সরীরর মত লাগছে।
নীলাদ্রি : এই কি দেখছো এমন করে?
নিলয় : (নীলাদ্রির ডাকে ঘোর
ভাঙলো নিলয়ের) আজ তোমাকে অপূর্ব
লাগছে।
নীলাদ্রি : জানি। কারণ আমি আজ তোমার
পছন্দ মত সেজেছি।
নিলয় : তাই নাকি? আমিতো ভাবলাম আজ
তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডেট আছে। তাই
এমন করে সেজেছ।
নীলাদ্রি : কি বললা তুমি? ঐ
তুমি জানো না আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।
কিন্তু আজ হতে যাচ্ছে।
নিলয় : তাই নাকি? তা কে সে?
আমাকে দেখাবে না?( নিলয়ের মুখের
হাসিটা মলিন হয়ে গিয়েছে)
নীলাদ্রি : হুম একটু পরেই দেখতে পাবে।
চল ঐদিকটায় যাই।(একটা কৃষ্ণচূরা গাছ
দিকে ইঙ্গিত করে বললো নিলয় কে)
নিলয় : চলো।
হঠাৎ করেই আবার ফোনের রিংটোন এ ঘোর
ভাঙলো নিলয়ের। বুঝতে পারলো সে এতখন
অতীতে হারিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু
যখনি সুখের
ভাবনা টা আআসলো তখনি নীলাদ্রির
ফোনে ভাবনায় ছেদ পরলো। হঠাৎ
মনে পরলো আজ নীলাদ্রির জন্মদিন। আর
সেখানে যাওয়ার জন্যই বারে বারে ফোন
করছে নীলাদ্রি। কিন্তু নিলয়
ফোনটা ধরছে না।
নিলয় ওর বন্ধু নিরব কে খুজছে কিছু
টাকা ধার নিবে বলে। আগেও অনেকবার
নিয়েছে কিন্তু আজ দিবে কিনা সেই
সন্দেহে আছে নিলয়। প্রায় এক
ঘন্টা ধরে খুজেও নিরব কে কোথাও
পেলো না নিলয়। তাই ভাবছে হাতের
ফোনটা ই বিক্রি করে দিবে।
নীলাদ্রি কে তো কিছু একটা গিফট
করতে হবে। তাই হাতের ফোনটা এক
বড়ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে দিলো খুব কম
দামে। আর কিছু টাকা ধার নিলো। সব
মিলিয়ে হাজাড় পাঁচেক টাকার মত হলো।
তা দিয়ে একটা রিং কিনে নিয়ে গেলো নীলাদ্রির
জন্য।
নীলাদ্রির বাসায় গিয়ে দেখলো অনেক
অতিথি আছে সেখানে। সবাই উচ্চবংশের
তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সবাই কেমন
করে তাকাচ্ছে নিলয়ের দিকে। বিষয়
টা বুঝতে গিয়ে নিজের
দিকে তাকালো নিলয়। বুঝতে পারলো ওর
ময়লা পরা শার্ট টা আর
রং উঠে যাওয়া পেন্ট টা দেখেই সবাই
তাকিয়ে আছে তার দিকে। নীলাদ্রি ও খুব
করা দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে নিলয়ের
দিকে। নিলয়
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নীলাদ্রির
হাতে তারাতারি করে গিফট
টা দিয়ে চলে গেলো। নিলয়
ভেবেছিলো নিজের হাতেই
রিং টা পরিয়ে দিবে নীলাদ্রি কে। কিন্তু
তার সেই স্বপ্নটা আর পূরণ হলো না।
নিলয় রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোর
নিচে দিয়ে হাটছে আর ভাবছে ও
নীলাদ্রি কে কতটা লজ্জায় ফেলে দিলো।
সেখানে না গেলেও পারতো।
আসলে কিযে করে না সবসময়।
রাতে অনেক নিলয়কে অনেক ফোন
করেছে নীলাদ্রি। কিন্তু ফোন বন্ধ
ছিলো নিলয়ের। নিলয় চায়
না নীলাদ্রি ওর জন্য আবার কোন লজ্জাজনক
অবাস্থায় পরুক। ভাবছে নীলাদ্রির
সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখবে না। ওর মত
বেকার ছেলেদের ভালোবাসা থাক্তে নেই।
মনের কোন স্বাদ আহ্লাদ থাকতে নেই।
নীলাদ্রির মত মেয়ে কে নিয়ে স্বপ্ন
দেখাও ভুল ওর। নীলাদ্রি কে কখনও সুখ
দিতে পারবে সে। কাল সকালেই কিছু
একটা করতে হবে। ভাবতে ভাবতে একসময়
ঘুমিয়ে যায় নিলয়। সকাল বেলা মেসের এক
বড়ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙে নিলয়ের। চোখ
মেলে দেখে নীলাদ্রি বসে আছে ওর
সামনে।
নিলয় : নীলাদ্রি তুমি এখানে? (অবাক
হয়ে)
নীলাদ্রি : খুব অবাক হচ্ছ? অবাক হওয়ার
কিছু নেই। তোমার সাথে আমার কিছু
কথা আছে।
নিলয় : বলো কি বলবে?
নীলাদ্রি : এখানে বলবো?
নিলয় : না। একটু বসো আমি আসছি।
বলেই নিলয় চলে যায় ফ্রেস হতে। ফ্রেস
হয়ে এসে নীলাদ্রি কে নিয়ে বের হয়ে যায়
নিলয়।
নিলয় : বলো কি বলবা।
নীলাদ্রি : গতকাল তুমি এমন ড্রেস
পরে গেলে কেন?
নিলয় : তুমিতো জানই আমার অবস্থা।
নীলাদ্রি : তাই বলে এমন। আর কিছু
ছিলো না তোমার? তুমি জানো কতটা লজ্জায়
পরতে হয়েছিল আমাকে?
নিলয় : স্যরি। আমি বুঝতে পারি নি।
নীলাদ্রি : রাতে ফোন অফ ছিলো কেন?
নিলয় : মোবাইলটা হারিয়ে ফেলেছি।
নীলাদ্রি : হারিয়ে ফেলেছ
নাকি বেচে দিয়েছ?
টাকা ছিলো না তো আমার জন্য গিফট
নিয়ে যেতে কে বলেছিল?
নিলয় : না মানে.......
নীলাদ্রি : আবার
না মানে না মানে করছো কেন? এই নাও
তোমার ফোন।
নিলয় : এটা তো আমার না।
নীলাদ্রি : জানি, তোমার জন্যই
কিনে এনেছি। আর এখানে তোমার জন্য কিছু
পেন্ট আর শার্ট আছে।
নিলয় : কিন্ত এগুলো আমাকে কেন......
নীলাদ্রি নিলয় কে কিছু
বলতে না দিয়ে) চুপ।
এগুলো তোমাকে এমনি এমনি দিচ্ছি না। এই
নাও আমার বাবার অফিসের ঠিকানা। কাল
গিয়ে একবার দেখা করবে।
নিলয় : (তোতলিয়ে) সে....সে....সেখ
ানে কেনো?
নীলাদ্রি :
বাবা বলেছে তোমাকে গুলি করে মারবে তাই।
নিলয় : কি বলছো এসব?
নীলাদ্রি : (হাসতে হাসতে) ভয় পাওয়ার
কিছু নেই।
বাবা বলেছে ওনা অফিসে তোমাকে একটা চাকরী দিবেন।
নিলয় : ও তাই বলো।
নীলাদ্রি একটা কথা বলবো?
নীলাদ্রি : বলতে হবে না।
আমি জানি তুমি কি বলবা।
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তাই তো।
নিলয় : হুম।
নীলাদ্রি : আমিও তোমাকে অনেক
ভালোবাসি হাদারাম।
এই বলে নীলাদ্রি নিলয়ের
বলুকে মাথা গুজে দিলো। আর নিলয়
ভাবছে পৃথিবীর সব কিছু
ভুলে থাকতে পারবে সে। কিন্তু এই
পাগলী টা কে নয়। সত্যি অনেক
ভালোবাসে ওকে।