লেখা-Rajonno Raj
- এই তোমাকে না কতোবার বলছি,
এইভাবে কথা বলবা না| 'গানু' এইটা আবার
কি ধরনের উচ্চারন?
.
- তুমি শুধু শুধুই রাগ করতেছো| কত্তো কিউট
একটা শব্দ...
- হুমম... কচু কিউট| আর কোনো শব্দ
যদি এইভাবে উচ্চারন করো তাহলে তোমার
সাথে কথাই বলবো না| হুমম...
.
- আচ্ছা বলার দরকার নাই| তুমি সারাদিন
এই সিরিয়াল নিয়েই পরে থাকো|
তুমি কি খেয়াল করছো? আজ আমি কখন অফিস
থেকে আসছি| আর কখন থেকে তোমার
সামনে বসে আছি|
- হুমম... জানি| একটু আগে আসছো| আরেকটু
অপেক্ষা করো সোনা| এই সিরিয়ালটা শেষ
করেই আমার জানের দিকে আমি মনোযোগ
দিতেছি|
- ধুর...
.
এই বলে শুভ্র উঠে গেল ড্রয়িং রুম থেকে|
নাহ এই মেঘলা মেয়েটাকে নিয়ে আর
পারা গেলো না| এই মেয়েটা যে সিরিয়াল
এতো মনোযোগ দিয়ে দেখে কি আহরন
করে তাই শুভ্র ভেবে পায় না| তিন মাস
হলো ওদের বিয়ে হয়েছে| এই তিন মাস
ভালো মতো পর্যবেক্ষন করে শুভ্রের মনে হল
মেঘলা যেন তাকে বিয়ে না করে এই
সিরিয়ালকে বিয়ে করেছে|
.
অনেকটা অভিমান করেই শুভ্র
ছাদে চলে গেল| আর চাদ দেখতে লাগল| আজ
চাদেরও যেন তার মতো দুঃখ| কেমন
মেঘগুলো ঢেকে রেখেছে চাদটাকে...
এদিকে কিছুক্ষন পরই মেঘলার খেয়াল হল
শুভ্রর কথা| নাহ ছেলেটাকে আজ বেশি দুঃখ
দিয়ে ফেলেছে| এখন অভিমান
টা না ভাঙালে রাতে না খেয়েই
শুয়ে পড়বে| মেঘলা জানে অভিমান
করলে শুভ্র ছাদে গিয়ে বসে থাকে|
তো মেঘলাও সাথে সাথে ছাদে উঠলো|
দেখলো শুভ্র ছাদের
একপাশে দাড়িয়ে চাদের
দিকে তাকিয়ে আছে| যদিও চাদটা মেঘ
দিয়ে ঢাকা| তবুও চাদের অবস্থান
টা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে|
.
-
ছাদে দাড়িয়ে একা একা কি করছে বাবুটা?
- ____
.
- বাবুটা কি রাগ করছে?
- না বাবুর রাগ করার ক্ষমতা নেই|
.
- তবে বাবু কথা বলছে না কেন?
- বাবুর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না|
.
- তাই তাহলে বাবুর
কি করতে ইচ্ছা হচ্ছে??
- একা একা থাকতে|
.
- কিন্তু আমার
যে একা থাকতে ইচ্ছা করছে না|
- কেন? তোমার
সঙ্গী হিসাবে তো সিরিয়াল আছে| তোমার
একা থাকতে হবে কেন??
.
- তাই বাবুসোনাটা দেখি অনেক রাগ
করেছে|
- বললাম না আমার রাগ করার ক্ষমতা নাই|
(অনেকটা ধমকের সুরে)
.
- আমার সাথে এরকম করলে কিন্তু
আমি কেদে দিব|
- যাও কাদো| আর ওই সিরিয়ালের
কাছে গিয়ে তোমার দুঃখটা শেয়ার করো|
.
নাহ মেঘলা আর পারতেছে না| শুভ্রর
অভিমানটা ভাঙাতে এতো কিছু করেও কিছু
হচ্ছে না| সে এবার সত্যি সত্যিই
কেদে দিল| আর রুমের দিকে পা বাড়ালো|
এই কান্নাটা সে শুভ্রকে দেখাবে না|
কিন্তু সে যেতে পারছে না| কেউ তার হাত
টা টেনে ধরেছে পিছন থেকে| হুমম শুভ্রই
টেনে ধরেছে তার হাত|
.
- কি ব্যাপার? আমার
গানুটা কি সত্যি সত্যিই সিরিয়ালের
সাথে তার দুঃখ শেয়ার করতে যাচ্ছে?
- ____
.
- কি হয়েছে গানু? এখন তুমি রাগ
করলে নাকি??
- তুই আবার ঐ অড ওয়ার্ড টা বলতেছিস
শয়তান? (কান্নাজড়িত কন্ঠে)
.
- ওরে বাব্বা... আমার গানুটা আমার
সাথে তুই তুকারি করতেছে...
- একশবার করবো| তোর তাতে কি? আগে বল
তুই আমার সাথে এরকম করলি ক্যান?
.
- কি রকম?
- ওই যে তখন কথা বললি না|
.
- ও এই কথা... আরে তখন আমি দেখলাম
তুমি কতোটা রাগতে পারো|
- তাই বলে ওই ভাবে আমাকে রাগাতে হবে?
জানো আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি তোমার ওই
কথা গুলাতে|
.
- আমি আসলেই অনেক সরি জানু|
তোমাকে ওইভাবে বলা আমার ঠিক হয়নাই|
যাও প্রমিস আর কখনও বলবো না|
- সত্যি তো?
.
- তিন সত্যি| তবে একটা শর্ত আছে|
- কি শর্ত?
.
- তুমি আর এইভাবে সিরিয়াল
দেখতে পারবা না|
- এইটা বাদ দিয়ে অন্য একটা শর্ত
দাওনা জান|
.
- নাহ তোমাকে এই শর্তটাই পালন
করতে হবে|
- কিন্তু এটা যে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে|
.
- অভ্যাস ত্যাগ করো|
- কিভাবে করবো?
.
- আমি শিখিয়ে দিবো|
- সত্যিই শিখিয়ে দিবা?
.
- হুমম সত্যি|
- ওকে গানু...
তুমি পাশে থাকলে আমি যেকোনো শর্ত পালন
করতে রাজি আছি...
.
- কিইইইহ... তুমি আমাকে কপি করতেছো?
- আমি আমার গানুর কপি করবো না তো কার
কপি করবো?
.
- উম্মাহ জানু... তুমি এত্তোগুলা ভালো|
-
.
- জানু তোমার লিপস্টিক একটু
খাইতে দিবা?
- যাহ দুস্টু... ছাদে দাড়িয়ে লিপস্টিক
খাইতে চাইতেছে| লোকজন
দেখলে কি ভাববে?
.
- কি ভাববে আবার? বরং বলবে, শুভ্র তার
জানুর লিপস্টিক খাইতেছে|
- কিছু মুখে আটকায় না| তাইনা?
আচ্ছা বাসায় চলো তোমার খবর আছে....
.
- আর কিছুক্ষন থাকি না...
- না রান্না বসিয়ে আসছি| এতক্ষনে মনেহয়
পুড়ে গেছে| তারাতারি চলো|
.
- আরে দাড়াও না| এতো তাড়া কিসের?
পুড়লে পুড়ুক|
আমরা বাইরে থেকে খেয়ে নিব| এখন
আমি আমার বউএর সাথে একান্তে কিছু সময়
কাটাবো|
- না... রোজ রোজ বাইরে খাওয়া ভালো না|
আজ আমরা বাসায়ই খাব|
.
- তাহলে লিপস্টিক খাইতে দিলা না...
- না.. সেটা রাতে হবে| এখন চলোতো|
.
এই
বলে মেঘলা শুভ্রকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায়|
অতঃপর তাদের এই ভালোবাসা রেলগাড়ির
মতো আজীবন চলতে থাকে....