মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৫৬- ভালবাসার পূর্ণতা

লেখাঃ তাওহীদুর রহমান


— রিয়া !!!
আমার টাই টা খুঁজে পাচ্ছিনা।
— দাঁড়ান আমি খুঁজে দিচ্ছি।
আজ অফিস যেতে অনেক লেইট হয়ে যাচ্ছে সাব্বিরের।
খুব তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে টাই পড়তে ভুলে গিয়েছে সে।
— এই তো। পেয়েছি দাঁড়ান আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
এই বলে সাব্বিরের পাশে যেতেই সে রিয়ার হাত ধরে ফেলে।
— না প্রয়োজন নেয়। আমি পড়ে নিব, বাই টেইক কেয়ার।
সাব্বির অফিসের কাজে বের হয়ে গেল।
এদিকে রিয়া মুখ নিচু করে এখনো সাব্বিরের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
একটু একটু ঝাপসা লাগছে সামনের সিঁড়িটা।
হয়ত নিয়মিত আজও তার চোখের কোণে পানিগুলো খেলে বেড়াচ্ছে।
পেছনে কারো হাত তার ঘাড়ে অনুভব করতে পারল সে।
চমকে গিয়ে চোখের পানি মুছতে গিয়ে পুরোটা মুছতে সক্ষম হলনা।
— বৌমা।
— হ…হ্যা আম্মা। কিছু বলবেন. ???
— তোমার চোখে পানি কেন মা ???
কি হয়েছে ???
— ও কিছুনা। হয়ত পোকা পড়েছে।
— মা রে….
আমি সব বুঝি…..!!!
তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।
আজ আমার জন্যে তোর এই অবস্থা।
চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন রিয়ার শাশুড়ি।
— ছিঃছিঃ মা আপনি এসব কি বলছেন. ???
— হুম ঠিকই বলছি।
তবে একটা কথা মাথায় রাখ, এত তাড়া ভেঙ্গে পরলে চলবেনা।
একটা ছেলেকে মেয়েরাই ভাল হ্যান্ডেল করতে পারে।
তুই একদম ভেঙ্গে পরবিনা। আমি আছি তো।
— অবশ্যই আম্মা।
আপনি দোয়া করবেন, আমার জন্যে।
*****
জানালার পাশে চায়ের কাপ হাতে বসে আছে রিয়া।
সামনে গল্পের বই।
আর টিভি ও চলছে।
সিরিয়াল দেখার ফাঁকে ফাঁকে হিরু-হিরুইন এর রোমাঞ্চ গুলো বেশ ভাল ভাবেই লক্ষ করছে সে।
মূহুর্তেই মন টা খারাপ হয়ে গেল তার।
কারণ বিয়ে হয়েছে আজ তিন মাস। সাব্বির কখনো টিভির ঐ হিরুর মতো করে রিয়ালে জড়িয়ে ধরেনি।
সাব্বিরের বাবা- মা এবং রিয়ার বাবা-মা তখন একই গ্রামে বসবাস করত।
তাদের দুই পরিবারের মধ্যে বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল বিশেষ করে সাব্বিরের মা আর রিয়ার মা, এরা ছিল একে অপরের শুধু বান্ধবী না। একে বারে বোনের মতো।
সাব্বিরের বাবার চাকরির সুবাদে সাব্বিরের পরিবার গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে গেলেও রিয়ার পরিবার গ্রামেই থেকে যায়।
আর সাব্বির ভাল পড়ালেখা করার জন্যে বাইরে চলে যায়।
পড়া শেষ করে বাংলাদেশে আসার পর থেকেই তাকে বিয়ের জন্যে চাপ দেওয়া হয়।
রিয়া ছোট বেলা থেকেই বেশ কিউট এবং সৌন্দর্যের অধিকারী ছিল।
তখন থেকেই রিয়ার মা কে আগে ভাগেই সাব্বিরের সাথেই ওর বিয়ের কথা বলে রেখেছিলেন সাব্বিরের মা।
এখন সব কিছু ঠিকই ছিল।
কিন্তু বিদেশ থেকে আসার পর যে ধরনের মেয়েদের প্রতি সাব্বির আকৃষ্ট ছিল, রিয়া সে ধরনের মেয়ে নয়।
আর এতে সাব্বিরের অমত থাকা সত্বেও মায়ের আদেশে তাকে এই বিয়ে করতে হয়।
তাই আজ পর্যন্ত রিয়ার দিকে ভাল করে ফিরেও তাকায়না সে।
রিয়া খুব সাদাসিধা একটা গ্রাম্য মেয়ে।
লেখাপড়াও করেছে ভাল মত।
কিন্তু অন্যদের মত কোন প্রকার চঞ্চলতা তার মাঝে উপস্থিত নেয়। যা সাব্বির সবসময় ওর মাঝে খুঁজে বেড়ায়।
সাব্বিরের ফ্রেন্ডদের মতে রিয়া একটা খ্যাত।
ওর মত মেয়ে বিয়ে করা মানে নিজের জীবন নিজেই শেষ করে দেওয়া।
ফ্রেন্ডদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় রিয়া অনেক বার দেখে ফেলেছিল আর আড়ালে কাঁদত।
*****
বিকেল পার হতেই কাজ কর্ম শেষ করে আবারও গল্পের বই এর দিকে মন দিল সে।
একটু পর কি মনে করে আলমারিত দিকে চোখ পরল তার।
কিছুদিন আগে একটা ছবির এলবাম দেখেছিল সে।
সেখানে সাব্বিরের বেশ কিছু ছবি আছে, যেগুলাতে ওদের ছোট বেলার ছবিও থাকার কথা সাথে সাথে চাবিটা নিয়ে আলমারি খোলে ফটোর এলবাম টা হাতে নিল সে।
সাব্বিরের ছবি গুলো বেশ সুন্দরই লাগছে।
সব ছবিতে কিউট একটা হাসি বিদ্যমান। বিয়ের পর থেকে এই টাইপের হাসি কখনো দেখেনি সে।
সারাক্ষণ কেমন জানি মুখটা ভার হয়ে থাকে তার।
এলবাম টা বেশ বড় ছিল।
ছবি গুলা দেখে শেষ হওয়ার পথে, তাই সেটা ঠিক স্থানে আবার রেখে দিতে গেলে সেখান থেকে ছোট একটা ডায়েরী রিয়ার চোখে পরে।
এলবামটা আলমারি তে রেখে দিয়েই ডায়েরীটা হাতে নিয়েই পড়তে থাকে সে।
বেশ পুরানো ডায়েরী, এটাতে সাব্বিরের অনেক মনের কথা লিখা আছে।
কিছু ইন্টারেস্টিং লেখাও ছিল।
স্পষ্ট লিখা আছে শান্তা নামক এক মেয়ের সাথে সাব্বিরের ভাল রিলেশন ছিল, পড়ার উদ্দেশ্যে বাইরে চলে যাওয়ার সময় সাব্বির শান্তাকে কথা দিয়েছিল পড়া শেষ করে এসেই তাকে তার ঘরের বৌ করে আনবে।
কিন্তু সাব্বির দেশে ফেরার আগেই শান্তার বিয়ে হয়ে যায়।
— আহারে বেচারা, শেষ মেস ছ্যাঁকা !!!
হিহিহি করে হাসতে লাগল রিয়া।
আবারও ডায়েরীর লেখার দিকে মন দিল সে।
সেখানে রিয়ার আচরণ, কথা বলার ধরন, সাব্বিরের প্রিয় কালার, ভাল লাগার মোমেন্ট এবং কিছু মিষ্টি অনুভূতির কথা লিখা আছে।
ডায়েরীটা পড়ে শেষ করল রিয়া।
এবং যেখানে পেয়েছিল সেখানেই রেখে দিয়েছে।
আসলেই তো শান্তার আচরণের সাথে রিয়ার আচরণের অনেক পার্থক্য, এসব হয়ত সাব্বির খুব মিস করে।
— না আর মিস করতে দেওয়া যাবেনা।
এই বলে আবারও মুচকি হাসি দিল রিয়া।
আজ সাব্বির বাইরে ডিনার করে আসার কথা ছিল।
তাই রিয়া অপেক্ষা না করে রাতের খাবারটা খেয়ে আবার তার রুমে প্রবেশ করল।
আলমারি খুলে ডায়েরীটা আবার হাতে নিলা এবং সাব্বিরের পছন্দের কি কি ছিল সেগুলাতে চোখ বুলাতে লাগল।
একটু পর আলমারি থেকে নীল শাড়িটা বের করল সে।
সাথে কালো টিপ।
চোখে কাজল দিয়ে, হাত ভর্তি কিছু রঙ্গিন কিছু চুড়ি পড়ল।
এভাবে ডায়েরী পড়ে একে একে সব কাজ সম্পন্ন করল সে।
আর ডায়েরীতা লিখা ছিল শান্তা ইচ্ছা করেই কপালের টিপ টা বাঁকা করে দিত, আর সাব্বির সেটা ঠিক করে দিত।
রিয়াও তার ব্যতিক্রম কিছু করলনা।
ইচ্ছা করেই সব ঠিক করলেও টিপ টা বাঁকা করেই দিল।
একটু পর কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে ছুটে যায় সে।
দরজা খুলতেই সাব্বিরের চেহারার দিকে চোখ পরে রিয়ার।
সে হা করে আছে, কেমন জানি বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব এসেছে তার চেহারায়।
আজ বরং তাকেই বোকা এবং খ্যাত মার্কা মনে হচ্ছে।
অবশ্য সাব্বিরের এই বৈশিষ্ট্যের কথা ডায়েরীতে পড়েনি রিয়া।
অনেক কষ্টে নিজের হাসি লুকালো রিয়া।
— হা করে কি দেখেন. ???
ভেতরে আসবেন না ??
নাকি আমাকে দেখে পেত্নী মনে করে ভয়ে পালানোর চিন্তা করছেন?
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেলল রিয়া।
— ওহ… হ্যা তাই তো।
*****
রুমের জানালা টা খোলা।
রিয়া খাটের এক পাশে বসে আছে।
জানার ফাঁক দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের আলো সোজা তার চেহারায় এসে পড়েছে।
এই সময়টাই সাব্বির প্রতিদিন ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কিছু কাজ করে থাকে।
রিয়া কে একটুও সময় দিতনা।
সাব্বিরের এরূপ আচরণ দেখে অন্য দিকে ফিরে রিয়া মুচকি হাসছে……
নীরবতা ভেঙ্গে রিয়া বলে উঠল,
— চাঁদে যাবেন. ???
— হ্যা, চলো। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদটা আজ একটু স্পেশাল মনে হচ্ছে আমার কাছে।
সেট উপভোগ করা প্রয়োজন।
— আচ্ছা ঠিকাছে, দাড়ান আমি চা নিয়ে আসি।
চা খেতে খেতে আড্ডা দিব ছাদে।
*****
চায়ের কাপে এক চুমক দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো সাব্বির।
আরেকবার রিয়ার দিকে তাকালো।
মৃদু বাতাসে রিয়ার সিল্কি চুল উড়ে বেড়াচ্ছে।
সাব্বিরের খুব ইচ্ছা হচ্ছে রিয়ার সাথে একটু গা ঘেঁষে দাঁড়াতে।
কিন্তু কোথায় যেন বাঁধা পাচ্ছে সে।
কেন যে এতদিন খারাপ আচরণ করেছিল তার সাথে !!
আজ রিয়ার চেহেরা থেকে চোখ সরছেনা তার।
চেহারায় বেশ মায়া, চোখ গুলো টানাটানা এ যেন মানুষ রূপি কোন পরী তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
সাব্বিরের এমন বোকা বোকা চেহারা আগে কখনো লক্ষ করেনি রিয়া।
আজ আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে সে।
একটু পর নীরবতা ভেঙ্গে সাব্বির বলে উঠল।
— আচ্ছা, কখনো কি এমন কথা ছিল যে চাঁদ একসাথে দুইটা দেখা যাবে ???
— না তো। আমি তো এই টাইপের কথা কখনো শুনিনাই।
হঠাৎ এ কথা কেন বলছেন. ??
অবাক হয়ে বলতে থাকে রিয়া।
— না মানে আজ দুইটা চাঁদ এক সাথে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
— কোথায় দেখি ???
— হুম দেখাব যদি কাছে আসো ।
সাব্বিরের কথা শুনে রিয়া লজ্জাই লাল হয়ে যায়।
আর এখনো আগের জায়গায় দাড়িয়ে আছে।
তার এই অবস্থা দেখে সাব্বির নিজেই এগিয়ে যায়।
আর রিয়ার গালে হাত রেখে বলে এই তো….!!!
একটা চাঁদ আকাশে। আরেকটা চাঁদ আমার সামনেই।
যাকে ধরার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
যা আগে কাছে থাকার পর ও দেখার জন্যে ঐ মেগাফিক্সেল এর চোখ ছিল না।
রিয়া চুপচাপ সাব্বিরের কথা শুনে যাচ্ছে।
মুখ দিয়ে কিছু বের হয়েও কেন জানি আটকে যাচ্ছে।
— একি সব কিছু ঠিক মত করে। টিপ টা ঠিক করে দিতে পারলেনা ???
দাঁড়াও আমি ঠিক করে দিচ্ছি……
আহ…
প্রিয়জনের প্রথম স্পর্শ. !!!
সত্যিই উপভোগ করার মত।
ভালবাসার পূর্ণতা পাওয়া যায় এমন মানুষকে কাছে পেলেই।
যাকে আমরা সর্বদা কল্পনার রাজ্যে সাজিয়ে থাকি।