- এই যে মিস্টার। এভাবে হা করে কি দেখছেন?
ধ্রুব চশমাটা কপাল থেকে নামিয়ে চোখে চাপিয়ে পিটি পিট করে তাকিয়ে দেখলো অপরিচিত কণ্ঠস্বরের মালিকিন কে।
- জি আমাকে বলছেন?
- হ্যা আমি আপনাকেই বলছি। ওভাবে পানির দিকে হা করে তাকিয়ে কি দেখছেন? দেখে তো মনে হয় চশমা ছাড়া কিছু দেখেন না।
- না কিছু দেখছি না। ভাবছিলাম। আপনাকে ঠিক...
কথা শেষ করার আগেই মেয়েটি বললো,
- আমার নাম ফারিয়া। আমি কি আপনার সাথে বসে কিছু সময় গল্প করতে পারি?
- জি বসুন। হতবুদ্ধি ভাবটা ধ্রুবর চেহারাটা থেকে সরে নিই।
- আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। অস্বস্তি লাগে। এর আগে আমার মতো সুন্দরী কি দেখেননি নাকি?
- না মানে...
- শুনুন আমি ভদ্র ঘরের মেয়ে। একটু ঝামেলায় পড়েছি। সামান্য সাহায্য দরকার।
ধ্রুব এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না। আজকে ওর রুমমেট অনিক তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে মেসে। তাই ধ্রুবকে বলেছে কিছুক্ষনের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আসতে। ধ্রুব বাসা থেকে বের হয়ে ধানমণ্ডি লেকে অযথাই বসে ছিলো। এখন না জানি কোন ঝামেলায় তাকে পড়তে হয়।
- দেখুন খারাপ মেয়ে ভাববেন না। একটু হেল্প করুন প্লিজ।
- আচ্ছা বলুন আমি কিভাবে সাহায্য করবো। আমার কাছে তো কোন টাকা নেই।
- আমার কোন টাকা পয়সা লাগবে না।
- তাহলে ঠিক আছে বলুন।
- আপনি আমাকে একটু কমলাপুর রেলস্টেশনে নিয়ে যাবেন প্লিজ। আমি আগে কখনও একা একা যাই নি সেখানে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু বলুন তো আপনাকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন?
- আসলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। রাহাত আজকে খুব বকা ঝকা করেছে আমাকে একটা ছোট্ট কারনে। বলতে বলতেই চোখ টলটল করে উঠলো ফারিয়ার।
এই দুরন্ত চটপটে মেয়েটি যে এতো সহজেই কান্না করে দিতে পারে ধ্রুব তা বুঝতে পারে নি।
- আচ্ছা আপনি বসুন প্লিজ।
ধ্রুব ধরে নিলো রাহাত মানুষটা খুব একটা ভালো না। নয়তো পরীর মতো সুন্দর এই মেয়েকে কষ্ট দিলো কিভাবে? ধ্রুব ঠিক এই মুহূর্তে বুঝতে পারছে না তার আসলে কি করা উচিত। আর একটু কথা বলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে নেয়া যায়।
দু’বছর আগে ফারিয়া আর রাহাতের বিয়ে হয়েছিলো। প্রায় সাড়ে তিন বছর অভিসারের পর তাদের বিয়ে হয় পরিবারের অমতে। ফারিয়া তার পড়িবার পরিজন ছেড়ে রাহাতের পায়ে ভর করে চলে এসেছিলো পরম নির্ভরতায়। যেখানে সে তার সুখ দুঃখগুলো সব দিয়ে দিয়েছিলো রাহাতকে আর রাহাত কিনা এই বিশ্বাসের অমর্যাদা করে ফেললো খুব ঠুনকো একটা কারনে।
ঘটনা শুনে ধ্রুবর ফুরফুরে মনটা দুম করে ভারি হয়ে গেলো।
- আপনি তাহলে এখন কোথায় যাবেন?
- সিলেটে। আমার এক বান্ধবীর বাসায়। ওর সাথে কথা হয়েছে।
- রাতের আগে তো কোন সিলেটের ট্রেন নেই। এতক্ষণ কি করবেন?
- এইখানেই বসে থাকবো। আপনার যদি জরুরি কাজ থাকে তাহলে চলে যেতে পারেন। আমি একাই একটা ব্যাবস্থা করে নিতে পারবো।
ধ্রুব আসলে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার কোন কাজ নেই। এখন মেসে গেলে শীর্ষেন্দুর তিথি উপন্যাসটা শেষ করতে পারতো। এর বেশি জরুরি কাজ কিছু এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
- আচ্ছা চলুন ওই বেঞ্চিটাতে বসি আগে।
ঠিক এই অবস্থাতে একটি মেয়েকে ছেড়ে দিতে মন টানছে না ধ্রুবর। এই সময়টা একটা মেয়ের জন্য একা একা পার্কে বসে থাকা বিপদজনক তো বটেই। এই অসম্ভব সুন্দর মেয়েটিকে ফেলে রেখে চলে যেতে পারে না ধ্রুব। তার চেয়ে বরং বুঝিয়ে তাকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়া যেতে পারে। ধ্রুবর কাছে দুটি পথ খোলা আছে এখন। হয় ফারিয়াকে কমলাপুর নিয়ে যেতে হবে নয় তো তাকে না জানিয়ে নিয়ে যেতে হবে রাহাতের অফিসে। গল্প করার এক ফাকে রাহাতের অফিসের নাম ঠিকানা জেনে নিয়েছে ধ্রুব।
বিকেলের সোনালি রোদ এখন আর গায়ে লাগছে না। পরিপূর্ণ একটি দিনের সমাপ্তির শোকে একটা কোকিল ডেকে উঠলো করুণ সুরে। কোকিলটা কি তার শেষ ডাক ডাকছে? খুব ডাকছে আজ। গলায় রক্ত তুলে ডাকছে যেন।
অন্ধকার জমাট বাধার আগেই একটা রিক্সা ডাকলো ধ্রুব...!