মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ১৭-চ্যাপ্টার ১, অপারেশন তেলআবিব-১

লেখক- আবুল আসাদ

ডাইরীর সাদা বুক। খস্ খস্ শব্দ
তুলে এগিয়ে চলেছে একটি কলমঃ
‘ ... সিং কিয়াং-এর ধুসর
মরুভূমি। দূরে উত্তর দিগন্তের
তিয়েনশান
পর্বতমালা কালো রেখার মত
দাঁড়িয়ে আছে। অর্থহীনভাবে শুধু
চেয়ে থাকি চারিদিকে। কোন
কাজ নেই। জীবনের গতি যেন
আমাদের স্তব্ধ হয়ে গেছে। আজ
ক ’দিন হল যুগ-যুগান্তরের
ভিটে মাটি ছেড়ে আমরা ৫
হাজার মুসলমান আশ্রয়
নিয়েছি আমাদের জাতীয়
ভাইদের কাছে এ সুদূর মরুদ্যানে।
অত্যাচারীর চকচকে রক্ত পিপাসু
বেয়নেট আর রাইফেলের গলিত
সীসা ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদের
বহু ভাই বহু বোনকে। চোখে আর
কারো পানি নেই।
শুকিয়ে গেছে অশ্রুর ধারা।
মরু-ঘেরা এ দূর্গম
মরুদ্যানে এসে আমাদের
যারা একটুখানি স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলেছিল, ভুল
ভেঙ্গে গেল তাদের অচিরেই।
একদিন সকালে উঠে শুনলাম
এদেশের সে ফেরাউন বাহিনীও
এগিয়ে আসছে এদিকে। আব্ব
চিৎকার করে বললেন,
‘আমরা বাঘের মুখ
থেকে খসে কশাই এর
হাতে পড়েছি। আমাদের
মাতৃভূমি তুর্কিস্তানের একখন্ড
ভূমিতেও আজ
আমাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দিবে না শয়তানরা।
বুঝলাম আব্বার সহ্য নিঃশেষ
হতে চলেছে।
আব্বার আয়োজন শুরু হ ’ ল
যাত্রার। নারী আর শিশুদের
চোখের
পানিতে ভারি হয়ে উঠল মরুভূমির
শুষ্ক বাতাস। এবার শুধু আমরাই নই,
মরুদ্যান ও আশে পাশের আরো ৪৫
হাজার মুসলিম নর নারীর উদ্বাস্তু
মিছিল এসে শামিল হল আমাদের
সাথে।
আমার চার বছরের ভাই ইউসুফ
এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আমরা আবার কোথায় যাব
ভাইজান! বাড়ী গেলে সেই
মানুষরা যে আবার
মারবে আমাদের? আমি অভয়
দিয়ে বললাম, ‘ না ভাই
আমরা বাড়ী যাচ্ছি না।’
কিন্তু কোথায়
যাচ্ছি বলতে পারলাম না।
কোথায় যাব আমরা?
তাজিকিস্তান
কিংবা উজবেকিস্তান।
সেতো আর এক সিংকিয়াং।
অবশেষে সবাই বুক
ভরা আশা নিয়ে তাকালো দক্ষিণের
দিকে। উচ্চারিত হলো ভারতের
নাম-মুহাম্মদ বিন কাসিমের এ
ভারত, মাহমুদ, বাবর, ঈসা খাঁ, টিপু,
তিতুমীরের এ ভারত।
মরুভূমির সাদা বালুর উপর
দিয়ে এগিয়ে চলল ছিন্নমূল
মানুষের আদিগন্ত মিছিল।
পিছনে পড়ে রইল সহস্র শতাব্দির
স্মৃতি বিজড়িত
মাতৃভূমি সিংকিয়াং। কেন এমন
হ ’ ল? কি করেছি আমরা? শুধু
তো স্বাধীনভাবে বাঁচতে চেয়েছি।
মানুষের এ চাওয়া তো চিরন্তন।
মুসলমান হওয়ার অপরাধে কি এ
অধিকার আমাদের থাকবে না?
কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল।
ধীরে ধীরে তিব্বতের
দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা।
হঠাৎ একদিন কয়েকটি সামরিক
বিমান খুব নীচু দিয়ে আমাদের
মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল।
আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল
গোটা কাফেলায়।
তাহলে কি ওরা এখনো পিছু
ছাড়েনি আমাদের?
মরুভূমির নিঝুম-নিস্তব্ধ রাত।
বাতাসের
একটানা শোঁ শোঁ নিঃশ্বাস
নিস্তব্ধতার মাঝে তরঙ্গ তুলছে শুধু।
উপরে লক্ষ কোটি তারার মেলা।
কাফেলার পরিশ্রান্ত
পথিকরা কেউ জেগে নেই বোধ
হয়। হঠাৎ উত্তর দিগন্ত
থেকে ভেসে এল কয়েকটি জেট
ইঞ্জিনের ভয়ঙ্কর শব্দ। তারপর বুম!
বুম! বুম......
চিৎকার
ছুটোছুটি আর্তনাদে গভীর
রাত্রির নিশুতি প্রহর
ভেঙ্গে পড়ল টুকরো টুকরো হয়ে। ঘুম
ভেঙে গেল আমার। বিছানায়
উঠে বসেছি।
বোবা হয়ে গেছি যেন। আব্বার
চিৎকার
ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেলাম।
নিজের চোখকে বিশ্বাস হয়
না আমার। কি বিভৎস সে দৃশ্য!
আব্বার তাবু জ্বলছে।
টলতে টলতে আব্বা ইউসুফকে টেনে নিয়ে আসছেন।
ইউসুফের কোমর থেকে পিছন
দিকটা নেই, কয়লার মত
হয়ে গেছে ওর শরীর। একটি অষ্ফুট
চিৎকারই শুধু আমার মুখ
থেকে বেরুল ...।
যখন জ্ঞান ফিরল,
বেলা হয়ে গেছে তখন অনেক।
আব্বার দিকে চোখ পড়তেই
দেখলাম অত্যন্ত ক্ষীণ
কণ্ঠে তিনি আমায় ডাকছেন।
আমি কাছে যেতেই
তিনি বললেন ‘ মুসা,
কাফেলা নিয়ে যত সত্ত্বর পার
এখান
থেকে সামনে এগিয়ে যাও।
মনে .....?
আমি বাধা দিয়ে বললাম, এ
সব কি বলছেন আব্বা? আপনি ভাল
হয়ে যাবেন। আব্বা ম্লান
হাসলেন। বললেন, তাঁর ডাক
এলে কেউ
সে ডাকে সাড়া না দিয়ে কি পারে মুসা
?
একটু থেমে তিনি বললেন,
মুসা, ইউসুফ নাই; দুঃখ করো না।
পৃথিবীর সমস্ত নিপীড়িত শিশুর
মাঝে তোমার
ইউসুফকে খুঁজে পাবে। তোমার
মা, বাবা নেই
বলে কখনো ভেবনা, পৃথিবীর
নির্যাতিত মানষের
মধ্যে তোমার মা-
বাবাকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করো।’
অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে পড়ল আব্বার কণ্ঠ।
আব্বার মুখ থেকে অষ্ফুটে তাঁর
কথা বেরিয়ে এল, মনে রেখ মুসা;
শুধু সিংকিয়াং এর মুসলমানদের
একার এ দূর্দশা নয়, পৃথিবীর
কোটি কোটি তোমার ভাই-বোন
এমনিভাবেই নিশ্চিহ্ন
হয়ে যাচ্ছে। আরও মনে রেখ,
তোমার এ মজলুম মুসলিম ভাই
বোনদের অশ্রু মোছানোর
দায়িত্ব, তাদের অবস্থার
পারিবর্তন আনার দায়িত্ব
তোমাদের মত তরুণদের।
তোমরা স্রষ্টার নির্দেশগুলোর
আর তোমাদের গৌরবময়
ইতিহাসকে সর্বদা সামনে রেখো।
খালেদ, তারিক, মুসা, মুহাম্মদ বিন
কাসিমের তলোয়ার যেদিন
তোমরা আবার
হাতে তুলে নিতে পারবে,
দেখবে সেদিন আল্লাহর সাহায্য
কত দ্রুত নেমে আসে তোমাদের
উপর।
আব্বা তাঁর নিঃসাড় দুর্বল
হাত দিয়ে আমার অশ্রু
মোছানোর ব্যর্থ
চেষ্টা করে বললেন, মুসা, অশ্রু
তো মুসলমানদের জন্য নয়।
তোমরা সেই জাতি যারা হাত
কেটে গেলে পা দিয়ে পতাকা ধরে রাখে।
পা কেটে গেলে দাঁত
দিয়ে পতাকা ধরে রাখে।
আমি অশ্রু মুছে বললাম,
আব্বা আমি আর কাঁদব না।
দোয়া করুন - ঘরের
কোণে বসে কাপুরুষের মত যেন
না মরি।
চারিদিকেচেয়েদেখলাম,
গতকাল যারা দুনিয়ার
আলো বাতাসে বিচরণ করেছে,
তাদেরই হাজার হাজার বিকৃত
লাশে মরুভুমির বুক
কালো হয়ে উঠেছে। শত শত
পোড়া তাঁবুর খন্ড খন্ড অংশ
ছিটিয়ে, ছড়িয়ে পড়ে আছে। শত
শত এতিম শিশুর সব হারানোর
কান্না চারিদিকে মাতম
তুলেছে। আবার যখন আব্বার
দিকে চাইলাম, চোখ দু ’ টি তাঁর
বুজে গেছে। চোখ দু ‘ টি আর
কোনদিন চাইবে না পৃথিবীর
দিকে। একটি অবরুদ্ধ উচ্ছ্বাস যেন
ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে চাইল
আমার সমগ্র হৃদয়কে। চারিদিক
থেকে অন্ধকার এসে সংকীর্ণ
করে দিতে চাইল আমার
পৃথিবীকে। দাঁতে দাঁত
চেপে শক্ত হতে চেষ্টা করলাম
আমি।
কাঁধের উপর একটি কোমল
স্পর্শে চমকে উঠলাম।
ফিরে দেখলাম ‘ ফারজানা ’ । শুভ্র
গন্ড দু ‘ টি চোখের
পানিতে ভেসে যাচ্ছে তার।
অশ্রু-ধোয়া কালো চোখ
দু ’ টিতে কি নিঃসীম মায়া। এমন
নিবিড়ভাবে ফারজানাকে কোনদিন
আমি দেখিনি।
ফারজানা সিংকিয়াং এর
প্রধান বিচারপতি আমির
হাসানের কন্যা।
আমি বললাম,
ফারজানা কোন দুঃসংবাদ নেই
তো? সে বলল, আমরা ভাল আছি।
আব্বা আপানাকে আমাদের
তাঁবুতে ডেকেছেন।
মরু সূর্য তখন আগুন বৃষ্টি করছে।
আমি জানতাম, ফারজানাদের
ছোট্ট একটি তাঁবু। আমি বললাম,
চারিদিকে চেয়ে দেখো ফারজানা
, তাঁবুর
ছায়া আমরা কতজনকে দিতে পারব।
যা হোক এদিকের
একটা ব্যবস্থা করা যাবেই।
তুমি যাও ফারজানা।
আমি চাচাজানের
সাথে পরে দেখা করব।
আমরা আমাদের দশ হাজার
ভাই বোনকে মরু বালুর অনন্ত শয্যায়
ঘুমিয়ে রেখে এগিয়ে চললাম
সামনে। একদিন
গোধূলী মুহুর্তে আমরা পৌঁছুলাম
তিব্বত সীমান্তে। দেখলাম
তিব্বত সরকার সীমান্ত বন্ধ
করে দিয়েছে। জানলাম
সিংকিয়াং এর
মাটি যাদেরকে আশ্রয়
দিতে পারেনি তিব্বতের
মাটিতেও তাদের পা রাখবার
কোন জায়গা নেই। ক্লান্ত,
পরিশ্রান্ত ছিন্নমূল বনি আদমের
কোন আবেদন নিবেদন কোন
কাজে এল না। আশা ভঙ্গের চরম
হতাশায় মৃত্যুর স্তব্ধতা নেমে এল
কাফেলা ঘিরে।
এবার কোথায় যাব আমরা?
উত্তরে মৃত্যু
হাতছানি দিয়ে ডাকছে,
দক্ষিণে তিব্বত সীমান্তের
দুর্ভেদ্য দেয়াল। আশার
একটি ক্ষীণ আলোক বর্তিকা তখন
জ্বলছে-কাশ্মীর
হয়ে আফগানিস্তান। পথ অত্যন্ত
দুর্গম। কিন্তু উপায় নেই তবু।
হিমালয়ের ১৮ হাজার ফিট
উঁচু বরফ মোড়া মৃত্যু-শীতল পথ
ধরে আফগানিস্তানের
দিকে যাত্রা শুরু হল আমাদের।
দিন, মাস গড়িয়ে চলল। পার্বত্য
পথের কষ্টকর আরোহণ অবরোহণ
নিঃশেষ করে দিল মানুষের
প্রত্যয়ের শেষ সঞ্চয়টুকু। তার উপর
দুঃসহ শীত। প্রতিদিনই শত শত
পরিশ্রান্ত মানুষের উপর
নেমে আসতে লাগলো মৃত্যুর
হিমশীতল পরশ। দুর্বল বৃদ্ধ, কোমল
দেহ নারী, অসহায় শিশুরাই
প্রধান শিকারে পরিণত হল এর।
সবার মত ফারজানার বৃদ্ধ
পিতাকেও একদিন হিমালয়ের এক
অজ্ঞাত গুহায় সমাহিত
করে আমরা এগিয়ে চললাম
সামনের দিকে। ফারজানার
অবস্থাও হয়ে উঠেছে মর্মান্তিক।
তার আব্বার মৃত্যুর পর
সে পাষাণের মত মৌন
হয়ে গেছে। বোবা দৃষ্টির শূন্য
চাহনির মাঝে কোন ভাবান্তরই
খুঁজে পাওয়া যায় না। ওর
একটি হাত
ধরে আমি পাশাপাশি চলছিলাম।
কয়েকদিন পর হাত
ধরে নিয়ে চলাও অসম্ভব
হয়ে উঠতে লাগল। ভীষণ জ্বর উঠল
ফারজানার। পা দু ’ টি আর
উঠতে চায় না ওর।
সেদিন গভীর রাত।
ঘুমিয়ে পড়েছে বোধ হয় সবাই।
জ্বরের তীব্র ব্যাথায়
ফারজানা কাতরাচ্ছে; একটু
দূরে বসে অসহায়ভাবে সে দৃশ্য
দেখছি আমি। হিমালয়ের
নিঃসীম মৌনতার
মাঝে ফারজানার অষ্ফুট
কাতরানি তীব্র আর্ত বিলাপের
মত আমরা সমগ্র হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত
করে দিচ্ছে।
আমি ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে ওর
মাথার পাশে বসলাম।
ধীরে ধীরে হাত বুলালাম ওর
আগুনের মত ললাটে। ওর দুর্বল
দু ’ টি হাত উঠে এল। তুলে নিল
আমার হাত ওর দু ’ হাতের মুঠোয়।
তারপর হাত মুখে চেপে ধরে বাঁধ
ভাঙা নিঃশব্দ কান্নায়
ভেঙে পড়ল ফারজানা। আমি ওর
মাথায় হাত
বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম,
কেঁদোনা ফারজানা, কষ্ট
এতে আরও বাড়বে।
ফারজানা বলল,
আমাকে ভুলাতে চেষ্টা করো না।
আমি জানি, আমার সময়
ঘনিয়ে এসেছে। তারপর একটু
থেমে ধীরে ধীরে বলল,
মুসা ভাই, সজ্ঞানে কখনও কোন
পাপ করেছি বলে মনে পড়ে না।
তুমি কি আমাকে আশ্বাস
দিতে পার-অমর জীবনের সেই
জগতে আবার
আমি তোমাকে খুঁজে পাব।
আব্বার কাছে বলেছিলাম, কাঁদব
না। কিন্তু চোখের
পাতা দু ’ টি সহসা ভারি হয়ে উঠল।
আমি বললাম, একথা শুধু তিনিই
জানেন ফারজানা।
তবে বলতে পারি আমি-
তিনি তাঁর বান্দার কোন একান্ত
কামনাকেই অপূর্ণ রাখেন না।
ফরজানা যেন গভীর
পরিতৃপ্তির সাথে চোখ বুজল।
অষ্ফুটে তার মুখ
থেকে বেরিয়ে এল, আল্লাহই
তো আমাকে সবচেয়ে ভালো জানেন।
চোখ দু ’ টি আর
খুললো না ফারজানা। কোনদিনই
তা আর খোলার নয়।
হিমালয়ের বুক চিরে দীর্ঘ
পথ চলার পর আমরা যখন আফগান
সীমান্তে পৌঁছলাম, ৫০ হাজার
মানুষের মধ্যে আমরা তখন
বেঁচেআছি মাত্র ৮৫০ জন......।
খস্ খস্ শব্দ বন্ধ হল।
হঠাৎ থেমে গেল কলমটি!
টেবিলের
একপাশে রাখা একটি ক্ষুদ্র
যন্ত্রে হঠাৎ
লালবাতি জ্বলে উঠল। আর সেই
সাথে অয়্যারলেস গ্রাহকযন্ত্র
থেকে ‘ ব্লিৎস ব্লিৎস’ শব্দ
ভেসে এল। আহমদ
মুসা লেখা থামিয়ে ডাইরীটা বন্ধ
করে উঠে দাঁড়াল। প্রায়
সাড়ে ছ ’ফুট লম্বা লোকটি। মধ্য
এশিয়ার
ঐতিহ্যবাহী তুর্কি স্বাস্থ্য
দেহে। সকল প্রকারের কষ্ট
এবং যে কোন প্রতিকূল
অবস্থা মোকাবিলার
যোগ্যতা দিয়ে যেন আল্লাহ
সৃষ্টি করেছেন একে। মাথার চুল
ছোট করে ছাঁটা। চোখ
দু ’ টি উজ্জ্বল এবং দৃষ্টি অতি তী
ক্ষ্ণ। শান্ত দর্শন মুখাবয়বে অনমনীয়
ব্যক্তিত্বের সুস্পষ্ট ছাপ। এ
লোকটি বিশ্বের
সবচেয়ে বেশী আলোচিত
এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির
মাথা ব্যথা। সাইমুমের মধ্যমনি।
মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া এবং উত্তর
ককেশিয়া থেকে তানজানিয়া পর্যন্ত
সুবিস্তৃত মুসলিম সমাজের
প্রতিটি মজলুম মানুষ তার নাম
গর্বের সাথে স্মরণ
করে এবং স্বাধীন দেশ আর
স্বাধীন জীবনের স্বপ্ন দেখে।
আহমদ
মুসা উঠে গিয়ে অয়্যারলেসের
কাছে বসল। বলল, আহমদ
মুসা স্পিকিং।
ওপার থেকে একটি কণ্ঠ
ভেসে এল, ‘ আমি ফারুক আমিন
বলছি।’
-কি খবর বল।
-বাংলাদেশ সিক্রেট
সার্ভিস একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
আমাদের দিয়েছে।
আমি এক্ষুণি আসতে চাই।
- এস। ৪০১১ অপারেশনের
খবর?
- পনর মিনিট হল ফিরেছে।
জেরুজালেমে ক্ষেপনাস্ত্র
ঘাঁটি তৈরীর সাধ ওদের অনেক
দিনের জন্য মিটে গেছে। মাউন্ট
গুলিভিয়রের ক্ষেপণাস্ত্র
বেদিটি ধূলা হয়ে গেছে প্রচন্ড
ডিনামাইটের বিষ্ফোরণে। আর
ইহুদী ক্ষেপণাস্ত্র বিশারদ
মাইকেল শার্পের দেহটিও
উড়ে গেছে তার সাথে।
মুহূর্তের জন্য আহমদ মুসার
চোখ দু ’ টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল,
বিজয়ী ভাইদের আমার সালাম
দাও ফারুক। আর শোন-কোন প্রকার
আত্মতৃপ্তির অবকাশ আমাদের নেই।
লক্ষ্য আমাদের বহুদূর পথ অত্যন্ত দূর্গম।
এ পর্যন্ত যা আমরা করেছি তার
চেয়ে ভবিষ্যতে যা আমাদের
করতে হবে তা হাজারো গুণ
বেশী। আচ্ছা , তুমি এস।
এবার অয়্যারলেসটির
কাঁটা ঘুরিয়ে আর একটি চ্যানেল
তৈরী করল। নতুন ঠিকানায়
কয়েকবার যোগাযোগ
করতে চেষ্টা করল। সফল হলো না।
উঠে দাঁড়ালো আহমদ মুসা।
ভ্রুদু’ টি তার কুঞ্চিত হয়ে উঠল।
টেলিফোনটি তুলে নিয়ে একটি পরিচিত
নাম্বারে ডায়াল করে বলল,
শফিক তুমি একটু উপরে এস।
আহমদ মুসা খস্ খস্
করে একটি কাগজে লিখলঃ
‘‘ হাসান তারিকের
অয়্যারলেস
অস্বাভাবিকভাবে নীরব।
সে কোথায় খোঁজ নাও।
এখন নয়, আগামিকাল ভোর
পাঁচটায়
আমাকে হেডকোয়ার্টারে পাবে। ’’
একটু পরেই নীল
বাতি জ্বলে উঠল ঘরে।
পর্দা ঠেলে প্রবেশ করল শফিক।
সামনের চেয়ারটায়
বসতে ইংগিত করল আহমদ মুসা।
তারপর চিঠিটি ওর
দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
পররাষ্ট্র দফতরের ঠিক
বিপরীতে রাস্তার উত্তর
পার্শ্বে ৩২২ নং বাড়ী।
বাড়ীটিতে ঢুকে সোজা তিন
তলায় উঠে যাবে। তাঁর এ চিঠি।
সাবধানে যেয়ো।

অল ক্রেডিট সাইমুন সিরিজ
(চলবে....)