মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৭২- একজন জগানন্দ

লেখা - ঐন্দ্রপুরের বোকা প্রহরী

কিছু লিখা বাকি ছিলো। কিছু লিখতে গিয়ে ও পারিনি। কলম
টা হাতে যে থাকতে চায়না এখন তার বড্ড অভিমান।তাই কী বোর্ড এ আঙ্গুল
রেখে অনিচ্ছা সত্তে ও টুক টাক মাথার আবোর্জনা সরানোর ব্যার্থ চেষ্টা করি।
মাথা টা ঘুরে।যত্ত আবর্জনা সব যেনো এই মাথার ভেতর। কিচ্ছু
আসেনা । বীপ বীপ বীপ। এই নবীন কোথায় গেলি?
একটা কাপ চা চা বলে কতক্ষন ধরে চেচাচ্ছি কথা কিছু
কানে গেলো? =আসছি জগা ভাই। এইতো হয়ে গেছে।
..
হূম তারাতারী আন।আমার মাথায় আর কিচ্ছু নেই ।পরের মাসে ঘর
ভাড়া দোকান বিল কই থেকে দিবো কে জানে।
..
লেখক+কবি জগানন্দ এই যুগের কবি আধুনিক তো বটেই বয়স ৩৪/৩৫
তো হবেই।আসল নাম জগাই লেখতে লেখতে নামটা অটোমেটিক ই
জগাই থেকে জগানন্দ তে কনভার্ট  হয়েছে।ঝাকড়া চুল,লম্বা গোফ,এক
মুষ্ঠি দাড়ি ও আছে থুতনি তে.. চোখে মোটা ফ্রেমের কালো কাঠের
চশমা দেখতে বড়ই অদ্ভূত। নিজে যতই লেখার চেষ্টা করে লেখা টা সে কোনরকম ই
আয়ত্ত করতে পারে না। আগে কলমে খাতায় লিখতেন নতুনের
সাথে তাল মিলাতে গিয়ে একটা পুরাতন ল্যাপটপ
কিনেছেন এখন এই ল্যাপটপ এই ট্রাই করেন।আয়ের উৎস আর কিছুই না একমাত্র
তার টুকটাক লেখা আর কবিতা ছাড়া। উনার লেখাগুলা খুব
ভালো না হলে খারাপ ও বলা চলে না। এই লেখাগুলোর মধ্যে বাছাই
করা লেখাগুলো বেনামী পত্র পত্রিকায় ছাপানো হয় তার সাথে কিছু
ভন্ড লেখক এর সাক্ষাৎ আছে যাদের সে লেখা দেয় আর সেই লেখা তারা নিজের
নামে চালিয়ে লেখক হওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করে।এই থেকেই তার উপার্জন ।
তিনি প্রকৃতির টানে বাড়ি ছারা হয়েছেন অনেক
আগেই। তার একটাই কথা যদি স্বাধীনতাই না থাকে লেখা টা আসবে কই থেকে।
তিনি যে স্বাধীনতা পেয়ে কোন রাজার ধন উদ্ধার করেছেন একমাত্র
তিনি ই জানেন।. তবু ও তার বড় সপ্ন একদিন তার লেখা সবাই পরবে বড় বড়
ম্যাগাজিন পত্রিকায় তার লেখা ছাপা হবে সবাই
তাকে বাহবা দিবে সবাই তার কাছে অটোগ্রাফ চাইবে ফটোগ্রাফ
নিবে। .......
নবীন । উনার নিত্যদিনের সঙ্গী ।ওর বাবা মা কেউ নেই আগে পার্কে বাদাম বিক্রি করতো।এই ছেলেটা যে কি মনে করে মিঃ জগার এতো ভক্ত হয়ে গেলো তা বোধ হয় ও
নিজে ও জানে না।একদিন জগানন্দ পার্কে বসে আনমনে কিছু
চিন্তা করছিলেন হঠাৎ নবীন বাদাম নিয়ে জগার সামনে।
,,,,,,,
স্যার বাদাম নিবেন? 
=বাদাম? ঐ যে একটা খোলায় দুটো বিচি,.... খায় শুধু মিছিমিছি,,,
আমার জীবন সস্তা বাদাম খাওয়া দাওয়া ঘুমানোই কাম
...
স্যার কি কন? বাদাম নিবেন.... না নিলে কন চইলা যাই।
=ঐ যাবি কিরে...... আয় কিছু সুখ দুঃখের গল্প করি।
...
স্যার আপনের লগে এখন সুখ দুঃখের গল্প করলে আমার না খাইয়া থাকতে হইবো।
=না খাইয়া থাকবি ক্যান? তর বাড়িতে কে কে আছে? কই থাকস? পরালেখা করস না?
..
আমার এই বাপ মা কেউ নাই স্যার।. থাকি স্টেশনে। আর দিনে বাদাম বেচি। ক্লাস ৫ পর্যন্ত পরছিলাম।এখন যাই স্যার।
..........
এইভাবে নবীনের সাথে জগানন্দের পরিচয় হয়। জগানন্দ যখন
জানতে পারে নবীন অনাথ থাকার কোন জায়গা নেই তখন জগানন্দ ই নবীন
কে ওর কাছে নিয়ে আসে। আস্তে আস্তে নবীনের অনেক
ভালো লেগে যায় জগার গল্প কবিতা ওর চাল চলন কথাবার্তা।জগানন্দ
বলে নবীনকে স্যার না বলে জগা ভাই ডাকতে । জগানন্দ যা ই বলতো নবীন
তা থেকে কিছু শিখতো।.জগানন্দ ভাত খেত ছড়িয়ে ছিটিয়ে বলতো আমি একলা খেলে হবে আমার আশেপাশে কত প্রানী না খেয়ে আছে এই যে পিপড়া,ইদুর,কাক কত সুন্দর। এর সুবাদে ঘরে তো মশা মাছি তেলাপোকা ইদুর পিপড়ার বাসস্থান
বানিয়ে ফেলছে ঘরটাকে। জগানন্দ মাঝে মাঝে নবীন কে আবেগের
ছলে বলতো এখন আর কবি লেখকদের কোন দাম নেই রে জগৎ টা বড় নিষ্ঠুর
হয়ে গেছে রে এই জগৎ এ প্রতিভার কোন মূল্যায়ন হয় না।সব নকলের জারিজুড়ী....
নবীনের ছোট্ট মাথায় এইসব কথা ধরে না। জগা যা ই বলে নবীন তাই
শুনে।নবীন ও মাঝে মাঝে ছোট ছোট কবিতা রচনা করে জগা কে শোনায়// (ঐ
সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে)// জগা তো আনন্দে আত্নহার।. নবীন কে বলে তুই একদিন অনেক বড় হবি।
.........
হঠাৎ একরাত এ জগানন্দের অনেক মন খারাপ ।চেহারা মলিন হয়ে আছে।নবীন
জিজ্ঞেস করলো ...... কি হইছে জগা ভাই? =কিছু হয়নাইরে। এমনেই মনটা খারাপ।
আজ তরে কিছু কথা বলবো মন দিয়া শুনবি।
..
কি বলবেন ভাই?
=আমি যদি হঠাৎ হারাইয়া যাই অথবা মারা ও যাইতে পারি তুই কিন্তু আমার
লেখা গুলা কবিতা গুলা আগলাইয়া রাখিস। এই জীবনটা একটা ব্যার্থ জীবন রে।.
এতদিনে বুঝলাম এই ফালতু লেখার কোন দাম নাই এই যান্ত্রীক মানুষ গুলার
কাছে। তুই ভালো লেখা শিখে গেছিস এই কয়দিনে এইটা ধরে রাখ কাজে দিবে ।
হয়তো আমি সফল হতে পারি নাই তুই হবি সফল
এইটা আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি। ভালো থাক নিজের পথ বেছে নে।আর
আমার কথা ভূলে যাস।আমার নাম এই পৃথিবী থেকে মুছে যাক এটা আমি চাই।
ব্যার্থ মানুষের কোন স্থান নেই এই সফল পৃথিবীতে।, যা রে অনেক রাতহইছে ঘুমা এবার।
........
নবীন কি বলবে বুঝতে পারলো না।  সে তার নিজের খাটে ঘুমাতে গেলো।
.........
...
পরদিন সকাল বেলা ঘূম থেকে উঠে নবীন দেখলো জগানন্দের
অসাড় দেহখানা মাটিতে উপুর হয়ে পরে আছে।
কিভাবে কি হলো কিছুই বুজতে পারলো না নবীন। শুধু
হাতে একটা কবিতার ছেড়া পাতা ছিলো।
''''''''' বিষাদময় এই পৃথীবিতে আমার থাকা হলো না আর।
নষ্ট জীবন কষ্টে ভরা শুধু হাহাকার। নীরবে চলে গেলাম সয়ে গেলাম
বঞ্চনা। আমি ছিলাম মানুষ রে ভাই লোহায়
গড়া যন্ত্র না'''''''''
....
আজ ২০বৎসর পর...... দেশের সবচাইতে বড় লেখকের
কাতারে প্রথমে অবস্থান করছেন মিঃ নবীনন্দ। জগানন্দের নাম অনুসারেই
তার নাম টা রাখা। জগানন্দের লেখাই ওর অনুপ্রেরনা।আজ ''জগানন্দ কবি ও লেখক
কল্যান ট্রাস্ট'' এর উদ্বোধন করবেন নবীনন্দ।
যা থেকে নবীন কবিদের সাহায্য সহযোগীতা করা হবে আর কোন
প্রতিভা যাতে জগানন্দের মতো নষ্ট না হয়।
.....
রাত জেগে জগানন্দের ডায়েরীটা পরলো নবীন। জগানন্দের
মৃত্যুটা আজ ও রহস্যময়। হয়তোবা কবি সাহিত্যিক লেখকের
জীবন এমনই।কখন যে জীবন শুরু হলো তা না বুঝতেই হঠাৎ জীবনের শেষ
হয়ে যায়। আজ নবীনন্দ তার জীবনের ডায়েরী লিখতে বসছে।
'''কিছু কিছু মানুষের কারনে কিছু মানুষের বেচে থাকা,, যদি ও তারা সময়
ও স্রোতের উল্টো পিঠে চলতে পারে না কিন্তু তারা নিজেরা অন্যদের ঐ
উল্টো পিঠে চলতে শেখায় নতুন করে বাচতে শেখায়।
এই পৃথিবীটা কিছু কিছু মানুষের জন্য আজো সুন্দর.. অদ্ভূত সুন্দর''' সকালের
আলো ফুটেছে। নতুন দিনের আলো। আরেকটা নতুন সূর্য। জগা ভাই তোমার
আত্নার ওপর শান্তি বর্ষীত হওক............