মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৬- 'জোকার' -মাহির আবরার

একটু পরই সন্ধ্যা নামবে। এ সময়টায় আবেগ কেন
জানি একটু বেশিই কাজ করে। পৃথিবীটা এসময়
অসাধারন এক রূপে সাজে। এ রূপ কেবলই দেখবার;
উপলদ্ধি করবার। রুদ্র প্রায়ই এ
সময়টা বারান্দায় কাটিয়ে দেয়। আজও এর
ব্যাতিক্রম হচ্ছে না। গান শুনছে ও। ডান
কানে একটা ইয়ারপিস গুঁজে রেখেছে। ওর
সান্ধ্যকালীন প্লেলিস্ট টা একটু অন্য
ভাবে সাজানো। বেশির ভাগই রবীন্দ্র সংগীত।
বাবা মার একমাত্র সন্তান রুদ্র। স্নাতক
দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। দারুন আড্ডাবাজ
প্রানবন্ত একটা ছেলে। একেবারে আড্ডার প্রাণ।
হাসি-তামাশায় আড্ডা মাতিয়ে রাখতে রুদ্রের
জুড়ি মেলা ভার। রুদ্র গান শুনছে আর
উঁকিঝুঁকি মেরে কিছু একটা দেখবার চেষ্টা করছে।
ঘড়িতে সময় ৫ টা বেজে ৫০ মিনিট। রুদ্রের
দৃষ্টি সামনের বিল্ডিং এর চতুর্থ তলার বাম
পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই
সমবয়সী একটা মেয়েকে দেখা যায় ওপাশটায়।
বারান্দায় এসেই হাতের হালকা ইশারা। এর
মানে হল ফেসবুকে ঢুকতে হবে। রুদ্র
জানে মেয়েটা এটাই বলবে। হয়ত প্রায়ই বলে।
তড়িঘড়ি করে লগইন করল রুদ্র। এরপর কিছুক্ষণ
একান্ত কথোপকথন-
রুদ্রঃ কেমন আছ?
-ভাল। তুমি??
রুদ্রঃ হুমম। ভালই। আজ ভার্সিটি যাও নি?
-না। কি করছ তুমি?
রুদ্রঃ এইত বারান্দায় দাড়িয়ে গান শুনছি আর
একটা মেয়ের সাথে কথা বলছি। উঁহু;
সামনাসামনি না। ফেসবুকে কথা হচ্ছে।
-আচ্ছা যাই। কাল কথা হবে!
রুদ্র শূন্য বারান্দার দিকে কিছুক্ষণ
তাকিয়ে থাকে। তারপর চলে আসে নিজের রুমে।
মেয়েটার নাম হিয়া। রুদ্রের ভার্সিটিতেই ফলিত
রসায়নে পড়ছে। ভার্সিটি লাইফের শুরুর
দিকে পরিচয় দু'জনার। এরপর কেবলই ফেসবুকের
নীল জমিনে কথাবার্তা, আলাপচারিতা। হিয়ার আর
যেমনটাই লাগুক রুদ্রের এ আলাপচারিতা ভালই
লাগে। ইদানিং কেমন জানি একটা মায়া মায়া ভাব
কাজ করে মেয়েটার জন্য। আগে রুদ্রের কল্পনায়
একটা মেয়ে থাকত। মেয়েটা অদ্ভুত রূপসী। কিন্তু
চেহারাটা ঠিক বোঝা যায় না। আসলে রুদ্র হাজার
চেষ্টা করেও চেহারাটা আন্দাজ করতে পারত না।
এখন কেন জানি চেহারাটা বোধগম্য হতে শুরু
করেছে। কেবলি হিয়ার চেহারা কল্পনায় ভাসে।
হিয়ার বাবা ওসি। আমাদের দেশের পুলিশদের
বরাবরই আলাদা সম্প্রদায় ভাবা হয়। হিয়ার
বাবাও তাই। এ নিয়ে অবশ্য রুদ্র চিন্তিত নয়।
হিয়াকে রুদ্রের ভাল লাগে ব্যাস। কাউকে ভাল
লাগার মাঝে দোষের কিছু থাকতে পারে না।
রুমে ঢুকেও স্থির থাকতে পারে না রুদ্র। ফোন
করে হাসানকে।
--এই হাসান! একটু আসতে পারবি? আমি ৫
নাম্বারে ওয়েট করছি। রুবেল মামার দোকানের
সামনে। তারাতারি কিন্তু; মিনিট দশেকের মধ্যেই
আসা চাই। জরুরী কথা আছে।
ওপক্ষ থেকে কোন উত্তর পাবার আগেই ফোন
রেখে দিল রুদ্র। আসলে ওপাশ থেকে উত্তরের
জন্য অপেক্ষা করাটা বোকামী। তখন নিশ্চয়ই
শুনতে হবে- -এখন আসতে পারব না রে। আমি এই
করছি, সেই করছি......। রুদ্র এতটা বোকা না। ও
জানে হাসান নিশ্চয়ই আসবে। দশ মিনিটের জায়গায়
পনের মিনিট লাগতে পারে। কিন্তু হাসান আসবেই।
হাসান ওর স্কুল লাইফের বেস্ট ফ্রেন্ড।
এক্কেবারে শেষ বেঞ্চের দু'জন অতন্দ্র সৈনিক!
(ধানমন্ডি ৫ নাম্বার)
চা খেতে খেতে কথা বলছে ওরা দু'জন। দুটো পানির
ড্রামের উপর মুখোমুখি বসেছে ওরা।
ঢাকা শহরে ফুটপাতের চা দোকানীদের জন্য এসব
ড্রামের উপযোগীতা অপরিসীম। এতে পানিও
রাখা যায় আবার কাস্টমারদের বসতেও দেয়া যায়।
হাসানের এক হাতে চায়ের কাপ আরেক
হাতে সিগারেট। কিছুক্ষণ পরপর
সিগারেটে একটা করে টান দিচ্ছে আর
ধোঁয়া ছাড়ছে। আর দশ
বারোটা উঠতি বয়সী ছেলের মত ওদের আড্ডার
টপিকও আজ রাজনীতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক
বিশ্বকে ছাপিয়ে পাশের বিল্ডিং এর
অপ্সরীকে নিয়ে।
-বল কি জন্য এত তাড়াহুড়ো করে ডাকলি?
--একটা কথা ছিল দোস্ত।
-হুমম সে তো বুঝতেই পাচ্ছি। তো কথাটা কি এখন
শুরু করা যায়?
--অবশ্যই। ওই যে তোকে বলেছিলাম না; ওই
মেয়েটার কথা। ওর কাল জন্মদিন।
-কে? হিয়ার কথা বলছিস!!
--হুমম। মেয়েটাকে প্রচন্ড রকম
ভালবেসে ফেলেছি রে দোস্ত।
-এসব আজাইরা প্যাঁচাল ছাড়। এহ প্রচন্ড
ভালবাসা!!!!
--আসলেই দোস্ত আই এম সিরিয়াস।
-তুই তো এর আগেও ওই মেয়েকে নিয়ে সিরিয়াস
ছিলি! কই দেখাও তো করতে পারলি না একবার।
খালি ভার্সিটি বাসে যা দু একবার কথা বলেছিলি।
তোকে দিয়ে না ওসব হবে না বুঝলি!
--কিছু একটা কর না দোস্ত। কালই প্রপোজ
করতে চাচ্ছিলাম।
-আরো দুটো চায়ের অর্ডার দে।
সাথে একটা ব্ল্যাক।
--(ওই মামা দুটো চা। আর একটা ব্ল্যাক দিও।)
-এবার শোন; মনোযোগ দিয়ে শুনবি।
এক্কেবারে মনোযোগ দিয়ে। তোর
যদি হিয়াকে একেবারেই ভাল লেগে থাকে তাইলে আর
ওয়েট করে লাভ নেই। তুই কি শিওর কালই ওর
জন্মদিন?
--হুমম। আমি শিওর। অনেক কষ্টে জেনেছি।
মেয়েটা ফেসবুকেও জন্মদিন হাইড করে রেখেছে। ওর
ডিপার্টমেন্টের এক ফ্রেন্ডের কাছে থেকে জেনেছি।
-তাইলে শোন তুই যেহেতু সিরিয়াস; আমিও
সিরিয়াস। আচ্ছা মেয়েটার নাম্বার আছে তোর
কাছে?
--হুমম। আছে। ও-ই দিয়েছিল চ্যাটের এক
পর্যায়ে। কিন্তু ফোনে তো কথা হয় নি কখনো!
আর আমি......
-এত বকবক করিস না। নাম্বারটা ডায়াল কর।
--ডায়াল করে কি তোকে ধরিয়ে দেব?
-আরে গাধা আমি কেন। তুই নিজেই কথা বলবি।
বলবি যে কাল তোরা দেখা করছিস।
যেখানে ইচ্ছে সেখানে দেখা করলেই চলবে।
বিষয়টা আর্জেন্ট।
--হুমম। দাঁড়া আর এক কাপ চা খেয়ে নিই। তারপর
ফোন করছি। চা খেলে মনে হয় একটু হলেও সাহস
পাব।
--লাগলে আরো দুই কাপ খা।
[--হ্যালো! হিয়া!!! আমি রুদ্র....
-ওহ। রুদ্র, হুমম বল।
--কেমন আছ?
-এইত একটু আগেই তো বললাম।
--ওহ। বলেছিলে নাকি! ভুলেই গেছি!! আচ্ছা কাল
একবার দেখা করা যায় তোমার সাথে। কেবলই
কিছুক্ষনের জন্য? ব্যাপারটা আর্জেন্ট।
-কি এমন আর্জেন্ট শুনি?
--দেখা হলেই না হয় শুনবে।
-হুমম... কাল তো আমি ব্যাস্ত থাকব একটু।
আচ্ছা সকাল দশটায় ধানমন্ডি লেকে?
--ওক্কে!!!!!]
কথা না শেষ হতেই অভদ্রের মত হুট করে ফোন
রেখে দিল রুদ্র। ও এখন মহা খুশি। পৃথিবীর
সুখী মানুষগুলোর একজন মনে হচ্ছে নিজেকে।
--জানিস হাসান ফেসবুকে আমাদের অনেক কথাই
হয়। আমার ভালই লাগে বারান্দায়
দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওর সাথে চ্যাট করতে। ওরও
নিশ্চয়ই খারাপ লাগে না। কাল মনে হয় কিছু
একটা হয়েই যাবে দোস্ত....
-এত অস্থির হচ্ছিস কেন? শান্ত হয়ে বোস। কাল
অবশ্যই অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠবি। আজ
রাতেই ঠিক করে রাখবি কি পড়ে বেরুবি।
সকালে উঠেই শাহবাগ যাবি। কিছু গোলাপ আর
বেলী কিনবি। বুঝলি? কিছু গিফট নিলেও মন্দ হয়
না। জন্মদিন প্লাস প্রপোজাল দুটোই এক
সাথে চুকে যাবে।
--আচ্ছা তাই করব। তোকে কাল ফোন করে সব
জানিয়ে দিব। এখন বাসায় যা। আমি ঘামছি কেন
জানি! মনে হয় উত্তেজনায়। বাসায় যাব।
একটা লম্বা শাওয়ার নেয়া দরকার।
(পরদিন সকাল ৯.৩০)
যথারীতি গোলাপ, বেলী, আর একটা গিফটের
প্যাকেট নিয়ে ধানমন্ডি লেকে হাজির রুদ্র। কাল
রাতে অজস্রবার আয়নার সামনে ট্রায়াল
দিয়েছে ও। কি বলে শুরু করবে সেটা মুখস্ত করেই
এসেছিল। কিন্তু গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। হঠাৎ
হিয়ার ফোন।
-হুমম। রুদ্র? আমি ডিঙির সামনে। কতক্ষন
লাগবে তোমার?
--এইত এসে পড়েছি। আর ৫ মিনিট।
ওই যে হিয়াকে দেখা যাচ্ছে। অকারনেই হার্টবিট
বেড়ে যাচ্ছে। এক কাপ চা খাওয়া দরকার ছিল।
কিন্তু এখন সম্ভব না। এভাবেই সামনে যেতে হবে।
পিছন থেকেই অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।
যা হবার হবে। ভয় পেয়ে লাভ নেই....
আগে কি করা উচিত প্রপোজাল না বার্থডে উইশ।
ও নিশ্চয়ই ভেবেছে আমি তো জানিই না যে আজ
ওর বার্থডে। চমকে দেয়া যায়!
না আগে প্রপোজটাই করে ফেলি। শুভ
কাজে দেরী করা বোকামী।
--হিয়া!
-ওহ। এসেছ! তারপর কি অবস্থা?
--সুন্দর লাগছে তোমাকে!
-থ্যাংকস। হুমম কি বলবে বল। আমার তাড়া আছে।
--আসলে....
-কি?
--আসলে তুমি বরাবরই সুন্দর। আজ আরও সুন্দর
লাগছে তোমাকে। দেখ
তোমাকে একটা কথা অনেকদিন ধরেই বলব বলব
করেও বলা হচ্ছে না। পৃথিবীর কঠিনতম
তিনটে শব্দ "আমি তোমাকে ভাল........"
ঠাস করে গালে একটা আওয়াজ পড়ল। রুদ্র
নির্বাক। আড়াল
করে রাখা ফুলগুলো সবে সামনে এনেছে সে। কিছু
বুঝে উঠবার আগেই কিছু শুনিয়েও দিল হিয়া।
পরিচিত নিষ্পাপ মুখখানা পাল্টে গেল-
"কি ভেবেছ তুমি? প্রপোজ করলেই মেয়েদের
পাওয়া যায়। আয়নায় নিজেকে দেখেছ একবার!
কেবলি হা হা করে হাসতে জান আর মেয়েদের
সাথে বেহায়াপনা করতেই জান। আর কিছু শিখেছ?
তোমার মত জোকার টাইপ একটা ছেলে কোন
সাহসে আমাকে প্রপোজ করে।
বখাটে কোথাকার!!!!"
কথাগুলো কেমন যেন আবহ সৃষ্টি করে।
মাথা ঝিমঝিম করছে রুদ্রের। সময় যেন
কিছুক্ষনের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল।
হিয়া চলে যাচ্ছে! ইচ্ছে হচ্ছে ডাক দিয়ে ফেরাতে।
কিন্তু পারছে না। ডিঙির সামনের কিছু লোক
হা করে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে। যেন সিনেমার
কিছু দৃশ্য দেখছে ওরা। চোখের
সামনে একটা জলজ্যান্ত জোকার দেখছে। নিজেকেও
জোকার জোকার মনে হল রুদ্রের। কার্ডের
প্যাকেটে যেমন তিনটে জোকার এমনিতেই
থাকে নিজেকেও তেমনি মূল্যহীন মনে হচ্ছে। রুদ্রের
চোখ হঠাৎই ভিজে গেল।
চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে আমি বখাটে নই...
কিন্তু আওয়াজ বেরুচ্ছে না গলা দিয়ে। বেলী আর
গোলাপগুলো পানিতে ছুড়ে ফেলে দিল ও।
বার্থডে গিফট-টাও দেয়া হল না আর। ব্যাগের
কোনায় পড়ে আছে ওটা।
একটা রিকশা নিয়ে সোজা বাসায় এল ও।
ছাদে গিয়ে পরিচিত টাংকিটার উপর বসল।
ফোনটা কর্কশ শব্দে বেজে চলেছে। স্ক্রীনের উপর
লেখা ভাসছে। "Hasan is calling....."
ফোনটা আছাড় মারতে ইচ্ছে করছে এ মূহুর্তে।
চোখ কেমন জানি ঝাপসা হয়ে আসছে ওর। ভর
দুপুরেও শরীরে কেমন জানি কাপুনি অনুভূত হচ্ছে।
ঠান্ডা লাগছে ভীষন। ঘামা শার্ট
শুকিয়ে গেছে অনেক আগেই। মাথাটা ঘুরপাক
খেতে লাগল তীব্র ভাবে। গালে নিশ্চয়ই পাঁচ
আঙুলের ছাপ পড়েছে। এতসব ভাবতে ভাবতে কখন
যে কি হল! হাসানের ডাকে হঠাৎই চোখ খুলল ও।
-কিরে? কত বার ফোন করেছি তোকে? ফোন
ধরলি না কেন? কোথায় কোথায়
খুঁজেছি তোকে জানিস??
(রুদ্রের মুখ থেকে কোন কথা বেরুচ্ছে না। কেবলই
একজোড়া নিষ্পলক চোখ হাসানের
দিকে তাকিয়ে আছে। এ চোখই সব বলে দিতে পারে।
কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার পড়ে না।)
-কিরে? প্রোপোজাল কি রিফিউজড??
কথা বলছিস না কেন? আমি তোর ফ্রেন্ড না!
আমাকে অন্তত বল। বলবি; নাকি গেলাম।
(যাবার ভঙ্গিতে টাংকি থেকে নামল হাসান)
--হাসান!!! তুইও চলে যাবি?
-কান্নায় চোখে পানি চলে এল হাসানের। না দোস্ত
কিভাবে যাব তোকে রেখে! দাঁড়া আসছি আমি।
খালি যাব আর আসব।
দৌড়ে গিয়ে পানি, জুস, কেক আর রুদ্রের পছন্দের
চিপস নিয়ে ফিরল হাসান। সাথে রুদ্রের গিটারটাও
নিয়ে এল।
-ওই হাতমুখ ধুয়ে নে। খবরদার অতিরিক্ত ভাব
দেখাবি না। কোথাকার কোন মেয়ের জন্য
সে নাকি বন্ধুর সাথে কথা বলবে না। আরে জোকার
তোকে ছাড়া আমাদের সার্কেল চলবে কিভাবে?
আমাদের কথা তো একবার ভাববি!
--আমার খারাপ লাগছে ভীষন। কি ভাবে যে কি হল
বুঝে উঠতে পারলাম না কিছুই। একটা সুন্দর
চেহারার মানুষ কিভাবে এতটা.....
-আমি অত কিছু শুনতে চেয়েছি? খামোখা আমার
টাইম ওয়েস্ট করবি না। দাঁড়া দোস্ত একটা চরম
বুদ্ধি এসেছে মাথায়। জিজ্ঞেস করবি না কি বুদ্ধি?
--কি?
-এক্সাম তো শেষ চল ট্যুর দেই একটা। সিলেট
ঘুরে আসি কি বলিস???
--(কিছুক্ষণ হা হয়ে বসে রইল রুদ্র। তারপর...)
মাথা ঠিক আছে তোর???
ইতিমধ্যেই চারজনকে ফোন করেছে হাসান।
সবাইকে বলা হয়েছে ব্যাগপ্যাক রেডি করে রাত
এগারটার মধ্যে বাস কাউন্টারে থাকতে। বারোটার
বাসেই রওয়ানা হবে ওরা।
-আরে একটা মেয়ের জন্য জীবন
থেমে থাকতে পারে না। আর
যে ভালবাসাকে বুঝতে জানে না তার জন্য
তো নয়ই।
রুদ্রের কান্না পাচ্ছে ভীষন। এ কান্নায়
বেদনা আছে, বন্ধুর ভালবাসা আছে, আনন্দও
আছে হয়ত। তবে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
--দোস্ত একটা গান ধরবি???
গীটারের সাথে গান ধরেছে হাসান----
"একা পাখি বসে আছে শহুরে দেয়ালে.....
শীষ দিয়ে গান গায় ধূসর খেয়ালে........ ..
তার ফেলে যাওয়া আনমনা শীষ, এই শহরের সব
রাস্তায়....
ধোঁয়াটে বাতাসে, নালিশ রেখে যায়.......।।"
হাসানের গলাটা বরাবরই জোস। আজ
আরো মায়াবী লাগছে কেন জানি। একটু পরেই
সন্ধ্যা হবে। এ সময়টা রুদ্রের অনেক প্রিয়।
পৃথিবী এসময় মায়াবী রূপ ধারন করে। আজও ধারন
করেছে হয়ত। অকারনেই চোখ
ঝাপসা হয়ে উঠছে রুদ্রের। হাসানের গান দূর
থেকে দূরে ভেসে যাচ্ছে। ছাদের
একপাশে কিছুটা কুয়াশা জমে ধোঁয়াশার
সৃষ্টি করেছে। রুদ্রের চোখ ঝাপসা হয়েছে ঠিকই
কিন্তু কাঁদছে না ও। কারন
জোকাররা কাঁদতে জানে না। জোকারদের
কাঁদতে নেই!!!!!!