মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩১- বুবুন -মহাকালের সৈনিক

অর্পিতার ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি ।এমনিতেই
অর্পিতার চেহারার মাঝে একটা সদ্য ফোটা গোলাপের সজীবতা আছে ।
তার সেই সজীবতা আরো বেশি প্রকাশ পায় সে যখন ঘুমায় তখন ।
লোকে বলে ,যে মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর লাগে সেই আসল
সুন্দরী ।সৃষ্টিকর্তাকে জিঙ্গেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে কিভাবে অর্পিতাকে এত সুন্দর করে সৃষ্টি করলেন তিনি.....
.
.
গ্রীষ্মের দুপুরে যখন মাথার উপর সূর্যটা গলগল করে তখন আমাদের
সামনে যদি কাঁচা আমের ভর্তা থাকে তবে সেটি একটু
চেখে দেখার ইচ্ছা নিবারণ করা আমাদের পক্ষে অনেক কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার হয়ে পড়ে।অর্পিতার ঘুমন্ত মুখটা দেখে তার ঠোটে আল্পনা এঁকে দেয়ার ইচ্ছাটা আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না আমি। সেই ইচ্ছে থেকে অর্পিতার ভেজা তুলার নরম গোলাপি ঠোঁটের ওপর আমার নিকোটিনে পোড়া ঠোঁট দুটি চেপে ধরলাম ।সে কি অর্পিতাও আমার মাথাটা তার হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো । বুঝেছি মহারাণী ঘুমান নি ।এতক্ষণ
আমার সাথে মজা নিচ্ছিলেন...
.
.
অর্পিতাকে পাঁজা কোলে করে তুলে আনলাম রান্নাঘরে ।সে চা বানাচ্ছে আর
আমি তাকে সুখের অত্যাচার
করে চলেছি . . .
~এই এই কি করছো তুমি !
~কেন তোমার সেন্স হিউমার
কি মরে গিয়েছে নাকি ।তোমার চোখ
মুখ তো তা বলছে না...
~উফফ..তোমাকে নিয়ে আর পারি না ।
ছাড়ো ছাড়ো...
~ছাড়বো না...
~আমারই দোষ বাঁদর কে বেশি আদর
দিলে বাঁদরের
বাঁদরামী আরো বেড়ে যায়..
~তাই নাকি ?
~হুম ছাড়ো প্লিজ চা পুড়ে যাচ্ছে...
.
.
বারান্দায় বসে বসে দুজন চা খাচ্ছি আর চাঁদ দেখছি ।
অর্পিতা আমার বুকে নাক দিয়ে ঘষছে আর ভাঙ্গা রেডিওর মত বকবক করেই চলেছে...
.
.
কিছুক্ষণ পর ,চোখ মলতে মলতে এলো আমাদের বুবুন সোনা ।আমার
মেয়ে মতান্তরে অর্পিতার মেয়ে আবার জন্মসূত্রে আমাদের
দুজনের মেয়ে ।বুবুন নামটা খুব অদ্ভুত ।ভালো নাম আছে বৈকি তবে আমি আর
অর্পিতা তাকে বুবুন সোনা বলেই ডাকি । কি ভাবে কোনদিন বুবুন
নামটার উৎপত্তি তা আমার আর অর্পিতার কারোরই মনে নেই...
.
বুবুন যখন ভাল কিছু করে তখন অর্পিতা বলে , দেখেছো সে আমার
মেয়ে...আবার যখন জেদ করে তখন অর্পি [আমার আদুরে নাম ]
বলে ,তোমার মেয়ের জেদ তুমিই কমাও...
.
হঠাৎ বুবুন এসে আমাদের আড্ডায় যোগ দিল ।এই মধ্যরাতে যখন সবাই
নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে তখন এই তিনটি প্রাণী একত্রে বারান্দায়
বসে বসে নানারকম খোশ গল্পে মেতে উঠেছে । কখনো অর্পি কথা বলছে ,কখনোবা বুবুন সোনা বলছে কিন্তু আমি চুপ করে শুনছি ।আমি নির্বাক স্রোতা ।
আমার এই একটা দোষ ,মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়ে যায় কিন্তু
আমি আমি বিপরীত ।আমি অধিক সুখে পাথর হয়ে যাই...
.
.
আট বছর আগে ফ্যামিলির ইচ্ছেতেই আমাদের বিয়ে হয় ।আমাদের বিয়েরও
একটি বিরাট ইতিহাস আছে সেই ইতিহাস নাহয় আরেকদিন বলবো ।
পাঁচ বছর আগে আমাদের বুবুন সোনার জন্ম ।বুবুনকে যখন প্রথম
কোলে নেই তখন আমার হাত কাপছিল ।কোলে নেয়ার সাথে সাথেই
বুবুন ওয়া ওয়া করে কেঁদে উঠলো । কি করব বুঝতে পারছিলাম না ।তাই
বুবুনের কান্না দেখে বেকুবের মত সবার সামনে আমিই কেঁদে উঠলাম ।
বাপ বেটির কাহিনী দেখে নার্স তো হেসেই খুন ।কিন্তু আমার
কান্না থামছিলই না ।এ কান্না কাউকে হারানোর জন্য নয় ।এ
কান্না ছিল কাউকে পাওয়ার কান্না । অর্পিতার দিকে তাকিয়ে দেখলাম
সেও কাঁদছে....
.
.
বুবুনের জন্মের পর আমাদের বাসায় সব কিছু পাল্টে গেল ।প্রথম প্রথম
তো অর্পির সাথে ঝগড়াও লাগতো কে বুবুনকে কোলে নিবে তা নিয়ে ।
আমার আর অর্পির মাঝে বুবুন ঘুমাতো ।অর্পি ঘুমাতো কিন্তু
আমি ঘুমাতে পারতাম না ।খুব চিন্তা হত কারণ অর্পি ঘুমের
ঘোরে খুব নাড়াচাড়া করে ,কখন বুবুনের ওপর হাত ফেলে দেয়
কে জানে....
.
.
বুবুন একটু বড় হওয়ার পর আমাদের ঝগড়া মিল করে দিতো ।সে ছিল
আমাদের বিচারক ।এত ছোট কিন্তু সে আমাদের দুজনের দুজনের
প্রতি অভিযোগ যে আমরা দুজনই অবাক হয়ে যেতাম...
.
.
একদিন অফিস থেকে বসের বাসায় একটি পার্টিতে যাই ।
পার্টি থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত দেড়টা বেজে গেল ।বাসায়
এসে দেখি মা মেয়ে দুজনেই কারো কোনো কথা নেই ,শব্দ নেই ।
চুপচাপ হয়ে আছে দুজন । আমি বুঝলাম সামনে আমার জন্য
মহাবিপদ ।তাদের নিরবতা আমাকে ১০নম্বর মহাবিপদ
সংকেত দিচ্ছিল ।তাই তাদের সাথে কোনরূপ কথাবার্তা না বলে ফ্রেস হয়ে যেই
না শুতে যাচ্ছি তখনই বুবুনের ডাক... গেলাম ড্রয়িং রুমে ।
সেখানে একটি সোফাতে বসে আছে । সামনের বাম পাশে সোফাতে বসে আছে অর্পি আর
ডান পাশেরটায় আমার জন্য সিট রাখা ।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ,রুমে কোনো লাইট নেই ।শুধু একটি ডিমলাইট জ্বলছে...
>আব্বু তুমি দুটি ভুল করেছো ।
>কি কি ?
>এক ,রাতে দেরি করে ফিরেছো ।
দুই ,নিজের অপরাধ স্বীকার
না করে আম্মু আর আমার কাছ
থেকে পালাতে চাচ্ছো ।
>হুম ।এখন আমার
কি শাস্তি পেতে হবে ।
>প্রথম শাস্তি ,তোমাকে আমার আর
আম্মুর সাথে নাচতে হবে এখন ।আর
দ্বিতীয় শাস্তি ,কাল আমাদের
ফ্যান্টাসি কিংডম এ
নিয়ে যেতে হবে....
ডিম লাইটের মৃদু আলোতেও দেখছি অর্পি মিটমিট করে হাসছে ।
আর মহামান্য বিচারক ,বিচার কার্য শেষ করে কম্পিউটারে গান ছাড়লো ।
আর আমাদের নিয়ে নাচা শুরু করল । নাচের তালে তালে অর্পিকে বুবুনের
আড়াল করে একটু একটু আদর করছিলাম আমি ।একসময় বুবুন নাচ
বন্ধ করে চুপ করে সোফাতে বসে পড়লো ।
>কি হয়েছে বুবুন আম্মু ?
>আমি তোমাদের মিল করিয়ে দিলাম
আর তোমাদের কাছে কোনমুল্য নেই
আমার ।
>কে বলেছে তোকে তোর মুল্য নেই ?
>অন্ধকার বলে কি আমি দেখতে পাই
না ?শুনে রাখো আমি তোমাদের
মেয়ে তাই তোমাদের চেয়েও
আমি বেশি চালাক
>কি করলাম আমরা ?
>কি করলা মানে ?তোমার
আম্মুকে রেখে তুমি আমার
আম্মুকে কেন বার বার আদর
করছো শুনি ?
....একথা শুনে অর্পিতা লজ্জায় লাল হয়ে পা এর নখ দিয়ে আমার পা এ আঁচড় কেটে চামড়া তুলে ফেলল...
.
.
.
¤ ¤ ¤একদিন আমার ছোট্ট বুবুন সোনাটা বড় হবে ।সকল মেয়ের মত তাকেও একদিন তার স্বামীর বাড়ি চলে যেতে হবে ।ভাবছি তখন কি করব আমরা ,কে আমাদের বিচার
করবে তখন ???