মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২- কিরনের আলো (একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প) -- হাসান ফেরদৌস

কিরন গ্রামের সহজ শরল ছেলে। এস এস সি পরীক্ষায় ভাল ভাবে পাশ করে বাবা মার সাথে শহরে চলে এসেছে কোন একটি কলেজে ভর্তি হবে বলে। আলো শহরে বড়ো হওয়া মেয়ে। আলো কিরনের চেয়ে বয়স তিনেকের ছোট। আগে থেকেই আলো সাথে কিরনের অল্প জানা শুনা ছিল। কিরন যখন গ্রামে থাকত তখন আলো তার বাবা মার সাথে কিরনদের বাড়িতে বেড়াতে যেতো। কিন্তু কিরন তখন তাকে ঐভাবে পাত্তা দিত না।
শহরে কিরনদের বাসা এবং আলোদের বাসা একই এলাকায় প্রতিদিন ওদের সাথে দেখা হয় কিন্তু কথা হয় অল্প। সকালে কিরন কলেজে চলে যেত এবং আলোও স্কুলে চলে যেত। বিকালে ওদের দেখা হতো। কিরন একটি জিনিস লক্ষ্য করেছে আলো যেন তাকে কিছু বলতে চায় কিন্তু সে বলে না। কিরন অনেকবার চেষ্ঠা করেছে আলো কি বলতে চায় তা বুঝার জন্য। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছে।
একদিন আলো কিরনের কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করল তার কোন মেয়ে বন্ধু আছে কিনা। কিরন বলল নেই।
আলোঃ সত্যি করে বলো
কিরনঃ মিথ্যা বলব কেন?
আলোঃ তুমি কাউকে ভালবাসনা
কিরনঃ না
আলোঃ কেন?
কিরনঃ ভাল লাগেনা তাই।
আলো তাকে এই কথাগুলো অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কিরন তাকে সদ্দোত্তর দেয় নি।
কিরন কিন্তু ঠিকই একজনকে ভালবাসে। তার ভালবাসার মানুষটিকে সে বলতে পারছেনা তার ভালবাসার কথা। সারাদিন তার মাথায় ঐ একটি চিন্তা কাজ করে কিভাবে সে তার ভালবাসার মানুষটিকে মনের কথাটি বলবে। ঐ চিন্তার কারনে সে তার কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় খারাপ করেছে। পরিবারের সবচেয়ে শান্ত ছেলেটি যেন আরো শান্ত হয়ে গিয়েছে। এদিকে এইচ এস সি পরীক্ষা দরজায় টুকা দিচ্ছে এই মুহুর্তে যদি পড়ালেখায় মন না বসাতে পারে তাহলে পরিবারের সব স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাবে এটা সে জানে তাই সে রাত জেগে অনেক পরিশ্রম করে নিজেকে পরীক্ষার জন্য তৈরী করল কিন্তু চুড়ান্ত ফলাফল ভাল হলো না। সে কোন মত পাশ করেছে।
কিরনের বাবা মা তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিল লেখাপড়ার জন্য। কিন্তু ঢাকায় এসেও কিরন ঐ মেয়েটিকে ভুলতে পারেনি । তাই সে ঠিক করল যা হোক আজ তার মনের মানুষকে তার মনের কথাটি বলবে। সে হঠাৎ করে বাড়িতে চলে গেল এবং অপেক্ষা করতে লাগল কখন সে আসবে। তার ভালবাসার মানুষটি আর কেউ নয় তা আলো। আলো যখন স্কুল থেকে ফিরে আসল তখন সে কিরনকে দেখল তাদের বাসার সামনে চায়ের দোকানে দাড়িয়ে থাকতে। কিরন তাকে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল।
কিছুক্ষন পর কিরন তার কাছে একটি কাগজ ধরিয়ে দিল এবং বলল উত্তর তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে। কিন্তু আলো কোন উত্তর দিচ্ছেনা দেখে সে আবার বলল কি সমস্যা কেন উত্তর দিচ্ছ না? সে বলল উত্তর রাতে পেয়ে যাবে।
রাতে আলো তাদের বাসার কাজের ছেলেকে দিয়ে কিরনের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে যা লেখা ছিল তা হলো “আমি তোমাকে ভালবাসি কিন্তু তোমার সাথে প্রেম করা এখন আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার আমার ভালবাসা আমাদের পরিবার কখনো মেনে দিবে না। আমি কারো সাথে প্রেম করে তাকে বিয়ে করব তা আমার পরিবার মেনে নিবে না। আর আমি কখনো আমার পরিবারকে কষ্ট দিয়ে তোমার সাথে চলে যেতে পারব না। তুমি ভাল থেকো, তোমার জন্য সব সময় আমার শুভকামনা থাকবে।”
ঐ চিঠি পাওয়ার পর দিন সকালে সে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় চলে আসে। রাতে তাকে আলোর বান্ধবী শিলা একটি মেসেজ পাঠায় যাতে লেখা ছিলো “আলো আপনাকে খুব ভালবাসতো এবং এখনও বাসে। সে আপনার কাছ থেকে আপনার মনে কথাটা অনেক আগে জানতে চেয়েছিলো. কিন্তু আপনি যেহেতু বলেননি তাই সে ভেবেছে আপনি হয়তো অন্য কাউকে ভালবাসেন এবং সেও বসে না থেকে অন্য একজনকে ভালবেসে ফেলেছে। এখন সে তাকে কষ্ট দিতে পারবেনা। আপনি ভাল থাকুন এবং আলোকে ভুলে যান।”
এদিকে কিরনের বাবা মা এই ব্যপারটা ধরতে পারে এবং তারা কিরনকে সরাসরি বলে দেয় আলোকে মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আলোকে যেন সে ভুলে যায়।
কিরন আলোকে ভুলতে পারেনি। সে আলোকে টার্গেট হিসেবে নিয়ে মন দিয়ে লেখাপড়া করে গেছে। ভার্সিটি লাইফে তার জীবনে অনেকেই এসেছে কিন্তু সে কাউকে পাত্তা দেয়নি সে মন দিয়ে লেখাপড়া করে ভার্সিটির সেরা ছাত্র হয়েছে।
সোর্স- http://www.shobdoneer.com/ferdous09/18354