আগরতলা ভ্রমণের আমার বেশি কিছু মনে নেই, যদিও ওটাই আমার জীবনের প্রথম এরোপ্লেন চড়া। আবছা আবছা তিনচারটে দৃশ্য মনে পড়ে। হোটেলের একতলায় কোল্যাপসিবল গেটের ওপারে সারাদিন শুয়ে আছে একটা বিরাট ঝুপসো কুকুর, কেশে কেশে ক্লান্ত আমাকে কোলে করে করিডরে সারারাত পায়চারি করছে রোগা পিসি, ডাক্তারখানায় ওজনযন্ত্রের ওপর অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি আমি, ভালোমানুষ দেখতে একজন বুড়ো ডাক্তার খসখস করে সাদা কাগজে কী সব লিখছেন। পরে জেনেছিলাম ওঁর নাম ডঃ গোবিন্দ চক্রবর্তী আর কাগজে উনি যেগুলো লিখছেন সেগুলো সব হামের ওষুধ। ওঁর পরামর্শেই বেড়ানো সংক্ষেপ করে আমাদের ফিরে আসতে হয়েছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনাটাও আমার মাথা থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এতদিন পরেও একেবারে স্পষ্ট যেটা মনে আছে সেটা হচ্ছে একটা ধুলোয় ধূসরিত পথ, পথের দুপাশ দিয়ে শনশন করে পেছনদিকে ছুটে যাচ্ছে গাছপালা-বাড়িঘর-বাড়ির গায়ে আল্পনাওয়ালা কঞ্চির বেড়া। সামনের সিটে বসেছেন ড্রাইভার আর বাবা, পেছনের সিটে মা আর পিসির মাঝখানে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে বসে আছি আমি। মা ধুলো থেকে বাঁচার জন্য আঁচল দিয়ে নিজের মুখমাথা সব ঢেকে বসেছেন, আমাকেও প্রাণপণে সে আড়ালের ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু আমি অবাধ্য হয়ে বারবার মুণ্ডু বার করে আকাশবাতাস দেখছি। চারদিকে একটা কানফাটানো ভটভট আওয়াজ, আর সঙ্গে মানানসই ঝাঁকুনি।
সেই সোয়া পাঁচ বছর বয়সের ওই ধূলিধূসরিত মধ্যাহ্নটিতে আমি বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, আমার সারাজীবনের প্রিয়তম বাহনটির সঙ্গে আমার দেখা হয়ে গিয়েছে। ওই গতি, ওই তেজ, সমাজসংসারসভ্যতার ওপর ওই ধুলো উড়িয়ে কান ফাটিয়ে মগজের ঘিলু ঝাঁকিয়ে ছুটে চলা --- চলতেই যদি হয় তবে জীবনের পথ ধরে এভাবেই ছুটে চলব আমি।
জীবনের পথে আমি ছুটেছি না হামাগুড়ি দিয়েছি সেটা কথা নয়। কথাটা হচ্ছে অটোর প্রতি আমার নিষ্ঠায় এখনও ফাটল ধরেনি। অটো এখনও আমার ফেভারিট বাহন। গায়ে হাওয়া লাগে, জ্যামে গোবদা গাড়িঘোড়ার ফাঁকফোকর গলে বেরোতে পারে, গোটা সিটে একলা বসে খোদাতালার আকাশবাতাস জনমনিষ্যি গরুছাগল বাসট্রাক দেখতে দেখতে পথ চলা যায়। সবের মধ্যে আছি, আবার নেইও। ভিড়ের মধ্য দিয়ে চলেছি, অথচ ভিড়ের চ্যাটচেটে ঘামটুকু গায়ে লাগছে না। এর ওপর যদি সে গাড়িতে এফ এম থাকে, তাহলে তো একেবারে সপ্তম স্বর্গ।
এক কথায় অটোকে আমি ভালোবাসি, অটোও আমাকে ভালোবাসে। অন্তত খারাপ বাসে বলে তো মনে হয় না।
এইটুকু বললে একটা ভালোবাসার গল্প হয় বটে কিন্তু ভালো গল্প হয় না। যতক্ষণ না গল্পে শর্ত, স্বার্থ, অধিকারবোধ, ঈর্ষা, সন্দেহ, হারাই-হারাই, পালাই-পালাই ইত্যাদি ভালো ভালো ভাব এসে জোটে ততক্ষণ ভালোবাসার গল্প আধাখ্যাঁচড়া। অসত্য। আর অসত্য গল্প কি কখনও ভালো হতে পারে?
অটোর সঙ্গে আমার ভালোবাসাটি ভালো আর তাই সে ভালোবাসা জটিলতাশূন্য নয়। সে এমন জটিলতা যার কথা প্রাণের বন্ধুর কাছেও খুলে বলা যায় না। রক্তের সম্পর্কের কাছেও না। নিজের কাছেই যায় না অনেকসময়। মনের ভার যদি হালকা করতেই হয় তবে যেতে হয় কোটরওয়ালা বুড়ো গাছের কাছে। গাছ না পাওয়া গেলে ইন্টারনেটের অচেনা অদেখা বন্ধুরাও চলতে পারেন।
অনেকদিন আগে এক বিদগ্ধ দাদা বলেছিলেন, পৃথিবীর কোনও দুটো লোকের মধ্যে মাত্র দুটো জিনিসে কক্ষনও মিল হয় না। এক, বুড়ো আঙুলের আঁকিবুঁকিতে, দুই, প্রেম করার স্টাইলে। এমনকি একটাই লোকের প্রেম করার স্টাইল স্থানকালপাত্রভেদে বদলে বদলে যায়। কোনও প্রেমের প্রতি সে নিঃশর্ত আনুগত্যে হাঁটু গেড়ে বসে, কারও ওপর দিবারাত্র সর্দারি ফলায়, কারও ওপর সর্দারি ফলাতে চেয়েও পারে না, উল্টে নিজেই নাকের জলে চোখের জলে হয়।
অটোর সঙ্গে আমার প্রেমটা এই তৃতীয় গোত্রের।
অথচ এ রকমটি ছিল না জানেন। প্রথম যখন আমি নিয়মিত অটো চড়তে শুরু করি সেটা ক্লাস ইলেভেন হবে। শ্রীরামপুর স্টেশনে নেমে স্কুল পর্যন্ত যেতে অটো বা তিন নম্বর বাস ধরতে হত। বাসের ভাড়া অটোর থেকে কম ছিল আর আমি তখন বেকার ছিলাম, কাজেই সেদিক থেকে দেখলে আমার বাসে চাপাই যুক্তিসঙ্গত ছিল। তাও অযৌক্তিক অটো আমি কেন চড়তাম, সেটা আপনাদের বলছি। মোটে ছ’টি চড়নদার জোগাড় হলেই অটো ছেড়ে দিত, কিন্তু তিন নম্বর বাস ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত যতক্ষণ না গোটা দেড়শো লোক উঠে বাসের পেট ফাটোফাটো হয়। বাসের অপেক্ষায় থাকলে রোজই আমার ফার্স্ট পিরিয়ড পেরিয়ে স্কুলে ঢুকতে হত, কাজেই বাবামা দয়া করে আমাকে দেড় টাকার জায়গায় তিন টাকা খরচ করার অনুমতি দিয়েছিলেন।
প্রেমের গোড়ার দিকের একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে অদূরদর্শিতা। তখন প্রেম বলতে শুধু প্রেমের উৎসটির কথাই মনে পড়ে। সে উৎসেরও যে উৎস আছে, তারও যে মাথা বাঁধা আছে অন্য কোনও খুঁটি বা গাছে, তারও যে বাড়িতে আছেন বদমেজাজি গুঁফো বাবা, ছিদ্রান্বেষী মা, স্বরচিত কবিতার বই গছানো মেসোমশাই --- সেটা কী জানি কেন কল্পনাতেই আসে না।
আমারও আসেনি। অটো নিয়ে তখনও আমার মোহাঞ্জন অটুট। আমার কাছে তখনও অটো মানে গতি, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ। সকালবিকেল লালপাড় সাদাশাড়ি ইউনিফর্মের মাড় দেওয়া কড়কড়ে আঁচল বিজয়পতাকার মতো ওড়াতে ওড়াতে বটতলার জ্যাম ছিঁড়ে সদর্পে আওনযাওন। আমি তখন শুধু দেখেছি তার হলুদকালো ডোরাকাটা নির্ভীক শরীর, শুনেছি তার কর্ণপটহবিদারী চাঁচাছোলা স্বর, খেয়েছি তার বিস্তৃত বাতায়নের হাওয়া। সে স্বর-শরীরের কিছুই যে তার নিজের নয়, তার ললাটের ঝলমলে ঝালর থেকে শুরু করে পশ্চাদ্দেশের টা টা বাই বাই, ফির মিলেঙ্গে, বুরি নজরওয়ালে তেরা মুহ্ কালা যাবতীয় শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ, অভিসম্পাতের মালিকানা যে অন্য কারও, স্টিয়ারিং যে শক্ত করে ধরে আছে অন্য একটা লোক --- সেটা আমার মাথাতেই আসেনি।
নেপথ্যের সেই সর্বশক্তিমান স্টিয়ারিং-ধারকটির পরিচয় আমি প্রথম পেলাম দিল্লিতে এসে। আর ঠিক তখন থেকেই আমার অটোপ্রেমে জটিলতার সূত্রপাত হল।
আগে অটোতে গটমটিয়ে চড়ে বসলেই হত, এখন আর ব্যাপারটা অত সোজা রইল না। প্রেমের বাবা কিছু একটা গোলমাল আঁচ করে টেলিফোন তুলে এনে নিজের ঘরে বসালেন। এতদিন রাতবিরেতসকালদুপুরে ফোন করলেই ওদিক থেকে কাম্য কণ্ঠের মধুর সম্ভাষণ শুনতে পেতাম, এখন তার নাগাল পাওয়ার আগে এক বস্তা কৈফিয়ত দিতে হয়। কাঁহা যাইয়েগা? কিতনা দিজিয়েগা? মিটার চলেগি, লেকিন আপকো দুগনা দেনা পড়েগা।
ধৈর্য ধরে প্রতিটি উত্তর দেওয়ার পরও সেগুলো তাঁর মনোমতো না হলে তিনি ফোন নামিয়ে রাখতে পারেন। কারণের মতো কারণ না দর্শিয়েই। খুব চাপাচাপি করলে হয়তো বলবেন, আমার তোমার বাংলা উচ্চারণ পছন্দ হয়নি, ব্যস্। আর কিছু জানার আছে?
কাঁহা যাইয়েগা? ___ রোড? আরে ম্যাডাম, ইস টাইম উস রোড পে বহোত জাম হোতা হ্যায়। ___ মার্গ খালি রহেগা, যানা হ্যায় তো বতাইয়ে।
এই না বলে গাড়ি নিয়ে তিনি পাড়ি দেবেন। আপনার হাঁ হয়ে থাকা মুখের ওপর শুধু সি এন জি-র একগাদা কালো ধোঁয়া উড়বে। কানের ভেতর লাইন কেটে দেওয়ার পর প্যাঁ প্যাঁ আওয়াজটা মশকরার হাসি হাসবে।
এত বাধা পেলে যা হয়, প্রেম অবশেষে দরকচা মেরে যেতে শুরু করে। পরিস্থিতির ঘষা খেয়ে এদিকওদিকের পালিশ চটে যায়। বুকের ভেতর ক্ষোভের পলি পড়ে, সে উর্বর পলিতে নালিশের গাছ বাড়তে বাড়তে শেষে আস্ত একখানা বিষবৃক্ষ। কোথায় গোলমাল কেউই আঙুল দিয়ে দেখাতে পারছে না, কিন্তু প্রেমে বড় বড় ফাঁক পড়তে শুরু করেছে। দেখাসাক্ষাৎ আগের মতোই হচ্ছে, কিন্তু গোটা সময়টুকু জুড়ে প্রেমালাপের বদলে শুধু খিটিমিটি। এই করতে করতে শেষটায় অভিসার আর অভিসার থাকে না, যুদ্ধযাত্রায় পরিণত হয়। চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে, জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে, দরজায় চাবি দিতে দিতে মাথার ভেতর আসন্ন যুদ্ধের প্রস্তুতি চলে অনর্গল। ও যদি আমাকে এইটা বলে, আমি এইটা বলব। থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেব। কিছুতেই আমাকে ঠকাতে দেব না। চিৎকার করে নিজের মতটা জানিয়ে দেব। অনেক সয়েছি, আর সইব না।
বান্টি একটা কথা বলে, সেলফ্-ফুলফিলিং প্রফেসি। প্রেমের ক্ষেত্রে ভীষণ খাটে দেখেছি। রিহার্সাল দেব যুদ্ধের অথচ দেখা হলে প্রেম করব, এ জিনিস হয় না। মাঝরাস্তায় হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক যেন শ্রীগুরু বস্ত্রালয়ের ক্যালেন্ডারের নিমাই-নিতাই, এমন সময় দূর থেকে তাকে দেখতে পেলাম। হলুদ-কালোর বদলে এখন তার শরীর হলুদ-সবুজ। একমুহূর্তের জন্য যুদ্ধটুদ্ধ সব হাওয়া, বুকের ভেতর আবার অনেকদিনের বিস্মৃত একটা ঝর্ণা কুলকুল করে বইতে শুরু করেছে। এত সুন্দর কারও ওপর কী করে রাগ করে থাকে কেউ? তারও কি এমনটাই মনে হয়? আমার সামনে এসে থামে সে। অনেকদিন আগে যেমন দাঁড়াত, আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে। আমি তার খোলা জানালায় উঁকি মারি।
ভেতরে বাবা বসে আছেন।
কাঁহা যানা হ্যায়?
মিটার খারাব হ্যায়, নহি চলেগি।
বুকের ভেতরের ঝর্ণার ফাটল ‘চিচিং বন্ধ’ বলে যেন বন্ধ করে দেয় কেউ। নিমেষে সব খটখটে শুকনো। সারা সকালের মুখস্থ করা লাইনগুলো হুড়মুড় করে মনে পড়ে যাচ্ছে।
আমার মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে . . . শব্দ তো নয়, বুলেট।
কিঁউ নহি চলেগি? আপকা মর্জি হ্যায় কেয়া?
এই কর্কশ, দুর্বিনীত, ঝগড়ুটে গলাটা আমার? নিজেই চমকে যাই।
এই পরিস্থিতিতে একমাত্র রাস্তা হচ্ছে প্রেম থেকে বেরিয়ে আসা। তুমিও বাঁচো, আমিও বাঁচি। যত ক্লিশেই শোনাক না কেন, প্রেম আর আয়না, ভাঙলে জোড়া লাগে না। যত সেলোটেপই সাঁটা হোক না কেন। ফাটল ঢাকবে হয়তো, কিন্তু সেলোটেপে সেলোটেপে আয়নার চেহারা আরও কদাকার হবে বই কিছু নয়।
তবু লোকে সেলোটেপ সেঁটে থেকে যায়। কেন কে জানে। গোটা প্রেমপ্রক্রিয়ার মধ্যে এই জায়গাটাতেই আমার সবথেকে খটকা লাগে। এই শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার সময়টায়। চোখের সামনে খোলা রাস্তা দেখেও সাধ করে এই ধ্বংসস্তুপের ভেতর পড়ে থাকাটায়। কেন? শুধু কি বিগত প্রেমের মুখ চেয়ে? নাকি অভ্যেসে? নাকি শঙ্কায়? আর যদি কেউ ভালো না বাসে? আর যদি কারও মন ভোলাতে না পারি? আর যদি নতুন করে কবিতার লাইন, আর্টফিল্মের ডায়লগ মুখস্থ না হয়?
তার থেকে হয়তো এই ধংসস্তুপই ভালো।
আমার আর অটোরও সে রকমটাই হয়েছে। প্রেম আর নেই, তার ছেড়ে যাওয়া ফোকরে বাসা বেঁধেছে বিপন্নতা।
তবু এখনও কোনও কোনও শুক্রবার সন্ধ্যেয় অন্যরকম একটা হাওয়া দেয়। সপ্তাহের ক্লান্তি আর আসন্ন ছুটির স্বস্তি মিলেমিশে বুকের মধ্যে কেমন একটা শান্তির আকাঙ্ক্ষা টের পাই। অনুক্ত সন্ধিপ্রস্তাবে সই করি দুজনেই। আজ ঝগড়া করব না, কেমন? সিটে আলতো করে গা ছেড়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি। লাখ লাখ মানুষ, গাড়ি, লালসবুজ আলোর দপদপানির নিচ দিয়ে স্রোতের মতো বয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ঢেউয়ের মাথায় ফসফরাসের মতো ঝিকিয়ে উঠছে প্রেম। আশপাশের জগৎ থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে নেওয়া দুটো মানুষ, একে অপরে ডুব দিয়েছে। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। বুঝতে পারি, অটোও দেখছে।
এমন সময় হঠাৎ চারদিকে চাঞ্চল্য। প্রেমিকযুগলের চটকা ভেঙে গেছে, আকাশের দিকে ঘাড় তুলে তাকিয়ে কী যেন দেখার চেষ্টা করছে। চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়িগুলো অস্থির হয়ে চেঁচামেচি লাগিয়েছে। হঠাৎ কীসের তাড়া লাগল সবার? সিগন্যালের দিকে তাকিয়ে দেখি তার রক্তচক্ষুর লাল গলতে শুরু করেছে। গলে গলে টুপটুপ করে পড়ছে জলের ফোঁটার মতো।
বৃষ্টি! দেখতে দেখতে জলের ফোঁটায় ঢেকে যায় চারদিক। ফুটপাথের কংক্রিট, গাড়ির ছাদ, প্রেমিকের হেলমেটহীন মাথা, আমার চেককাটা শার্টের হাতা। ভিখিরি বাচ্চাগুলো উল্লাসে চিৎকার করে জ্যামের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে ছুটছে। আমার মাথার ভেতরের ক্লান্তিটা কেটে যাচ্ছে বুঝতে পারি। বাড়ির জানালাটার কথা মনে পড়ছে। ঘরের আলো নিভিয়ে জানালার পাশে বসতে ইচ্ছে করছে এক্ষুনি। ভীষণ, ভীষণ ইচ্ছে।
একটা গান বাজতে শুরু করেছে কোথাও। হরিহরণের গলায়। ‘দেখো ক্যায়সে বেকরার ইস ভরে বাজার মে, ইয়ার এক ইয়ার কে ইন্তেজার মে।’
কোথাও নয়, গানটা বাজছে আমার খুব কাছে। অটোর ভেতর। আমার পিঠের কাছে রাখা স্পিকার জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ‘এক হাসিনা ইধর দেখো ক্যায়সি বেচয়ন হ্যায়...’ ভেজা হাওয়ার ছাঁটে সারা গা শিরশির করে ওঠে। আমার প্রিয় গানটার কথা ওর মনে আছে! এতদিন পরেও? এত ঝগড়া পেরিয়েও? বাইরের বৃষ্টি আমার নাগাল পায় না, কিন্তু অটোর ভেতরে বসেই গানের বৃষ্টিতে আমি ভিজে চুবড়ি হয়ে যেতে থাকি।
খন্ডহরে বতাতি হ্যায়, ইমারত বুলন্দ থি।
সোর্স- http://abantor-prolaap.blogspot.com/2014/03/blog-post_26.html