মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৪৩- আমার হবু বউ দীপা

বিয়ের কিছুদিন আগে দীপার সাথে
যেদিন দেখা হলো, বড্ড আহ্লাদী
কন্ঠে সে বলেছিলো- "আচ্ছা রুহী
বিয়ের পর আমাকে কি আর পড়াবেনা?"
.
আমিও সাথে সাথে জানতে চাইলাম
কি পড়তে চায় সে, সে উত্তর দিলো
যে মেডিকেল এ পড়বে। যেহেতু
এসএসসি এইচএসসি তে তার ভালই
রেজাল্ট তাই কোচিং করে হয়তো
মেডিকেল এ চান্স নেওয়ার একটা
আশা করাই যায়।
.
আমার গলা জড়িয়ে আমার উত্তর
শোনার জন্য দীপা বলছে- উহু বলোনা
পড়াবে কি পড়াবেনা?
খাটাশের মত আমিও উত্তর দিয়ে
দিলাম যে- না, তুমি খুব ইচ্ছে করলে
ডিগ্রীতে পড়তে পারো।
অনেকগুলো অভিমান করে দীপা
সেদিন বাসায় ফিরে গেলো।
.
ফোন ধরছেনা, তাই ভাবলাম
মহারানীর অভিমান ভাঙ্গাতে না
পারলে তার আমার খুনসুটিগুলোর উপোস
থাকতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ
রওনা দিলাম দীপাদের বাসায়।
.
দরজা খুলে দিলো আমার হবু শ্যালিকা।
কাউকে কিছু না বলেই সোজা দীপার
রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। এরপর
ঠাস ঠাস দিপদাপ এর আওয়াজে ঘর
মুখরিত হয়ে গেলো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে
কাঁদতে কাঁদতে বুকে মাথা গুজে
বলতে লাগলো- তুমি আমাকে নাকি
খুব ভালবাসো, তাহলে আমার পছন্দ
অপছন্দের মূল্য দিতে হবে তো নাকি
বলো, বিয়ের পর আমার পড়ালেখায়
যদি তুমি স্বাধীনতা না দাও তাহলে
কোন দুঃখে তোমায় বিয়ে করবো
শুনি? আর তুমি কোন সেন্সে আমায়
ডিগ্রী পড়তে বলো, আমাকে ভাল না
লাগলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দাও,
আমাকে বিয়ে করতে তো কেউ জোর
করছেনা।
.
এতক্ষনে হবু বউয়ের কান্নাজড়িত
কথাগুলো শুনছিলাম আর আলতো হাতের
কিল ঘুষি গুলো হজম করছিলাম। দীপা
হয়তো ভাবছিলো আমার মন গলাতে
পেরেছে কিন্তু না আমার হৃদয় তার
ভাবনার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম- বিয়ের
পর তোমার পড়াশুনাই বন্ধ তবে হ্যা
তোমার জন্য তখন সাহিত্য, কাব্য,
ইসলামিক বই পুস্তক পড়া বাধ্যতামূলক। আর
আমি চাইনা আমার বউ আমার থেকে উচু
হোক। দুজনই অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত
হয়ে কথা কাটাকাটি করতে পারবনা,
বরং তুমি বাসায় আমার ফেরার
অপেক্ষা করবে খুশি হয়েও রাগী স্বরে
বলবে এত দেরী করলে কেনো?
তারাতারি ফ্রেস হয়ে নাও, তোমার
জন্য তোমার প্রিয় অমুক আইটেম রান্না
করেছি। দুজনই যদি পেশা নিয়ে ব্যস্ত
থাকি তাহলে রাতের আকাশে চাঁদ
টা দেখবে কে শুনি? দুজনই যদি সকাল
বেলা বেড়িয়ে যাই তাহলে আমায় ঘুম
থেকে ডেকে দিবে কে শুনি? কে
নাস্তা রেডি করে বলবে এই
তারাতারি আসো নাস্তা রেডি।
.
প্রায় পনেরো মিনিটের দীর্ঘ
লেকচার শেষে বললাম- যাও এই বিয়ে
ক্যান্সেল। এতক্ষন চুপচাপ শুনছিলো
দীপা যেমনি বিয়ে ক্যান্সেল এর কথা
বললাম তেমনি উঠে বলছে- না , আমি
সরি রুহী...
আমি সেদিকে কান না দিয়ে দরজা
খুলে বের হয়ে আসলাম, বাইরে দেখি
শ্বশুর শ্বাশুরী শালি বড় ভাইরা হা করে
আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পিছন
থেকে দীপা ডাকতেই আছে- এই
থামো রুহী, প্লিজ শুনে যাও, যেয়োনা
প্লিজ...
.
কারো কথা না শুনে হনহন করে চলে
আসলাম, ফোনটা সুইচ অফ করে রেখে
দিলাম।
.
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি
দীপার হাত চেপে ধরে আছি গালের
মধ্যে। জলদি করে হাত ছেড়ে দিয়ে
বললাম- তুমি কি করছো এখানে?
আম্মু এমন সময় এসে বলছে- কিরে বিয়ের
আগেই এমন ঝগড়া বিয়ের পর তাহলে কি
করবি তোরা?
বুঝলাম যে দীপা অনেক সকালে
আমাদের বাসায় এসেছে আর গত
দুদিনের সব কাহিনী আম্মুকে বলে
দিয়েছে।
.
আম্মুকে বললাম- যাও তো তুমি এখন আম্মু,
আর হ্যা দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ো
যেয়ো।
দীপা বলে উঠলো- এই আমি কিন্তু এখনও
তোমার বউ হইনি,
- দুইদিন পরে আর দুইদিন আগে বউ তো বউ
ই, এই বলে..........
.....................................................
এমন সময় চ্যানেল চলে গেলো
টেলিভিশনের পর্দা ঝিলমিল করতে
লাগলো.....।
.
লিখাঃ আমিম এহসান...