মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৪৬- ব্ল্যাংক টেক্সট

লেখা-জিয়াউল হক
...
রাতের সময়টা বেশ অদ্ভুতুড়ে!
একটাই তো সময় কিন্তু অজস্র মানুষকে
নিয়ন্ত্রণ করে। কাওকে কাঁদায়,
কাউকে কষ্ট দেয়, কারো মাঝে
জাগিয়ে তোলে পশুত্ব, আবার কাউকে
করে অসহায়, কেউবা আঁতকে ওঠে,
কারো স্বপ্ন নাড়ে আবার কাউকে
ফেলে দেয় ভাবনার সাগরে।
আমি ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খেতে
খেতে আনমনে হেঁটে চলেছি এই সরু
রাস্তাটা ধরে। এই খানিকক্ষণ হল
কালো চাদরে মুড়েছে আকাশটা। বেশ
অন্ধকার কিন্তু কিছু দূর পর পর
ল্যাম্পপোস্ট। শীতের রাত, তাই আলো
সীমিত। কবরস্থানটার পাশ দিয়ে
হোস্টেলে ফিরছি। হঠাৎ কানে কেমন
যেন কান্নার আওয়াজ পেলাম।
ভাবলাম, কাল রাতের ভুত এফ.এম এর
গল্পটা মাথা বেশ ভালো ভাবেই
চেপেছে। সামনে বাঁপাশে চোখ
পরতেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। একি!
মেয়েটা কে? এভাবে কবরের পাশে
দাঁড়িয়ে কাঁদছে কেন? হাজারো প্রশ্ন
আমায় সমানে গুতোচ্ছে।
...
-এইযে, শুনছেন?
-কে আপনি? কি চাই? (একটু কাঁপা
কাপাঁ কন্ঠে)
-না, মানে এই রাতের বেলায় আপনি
একা এখানে কেনো? কোনো সমস্যা
হয়েছে কি? (লক্ষ্য করলাম কবরটি আসিফ
মাহমুদ নামক কারোর)
- (হু হু করে মেয়েটি আবার কেঁদে ওঠে)
-আচ্ছা! বলবেন তো কি হয়েছে।
-আপনার কি দরকার? চলে যান এখান
থেকে।
-চলে যাব? আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি
চোখের পানিতে মুখ ধুয়া চালিয়ে
যান।
আমি পেছন ফিরে দু কদম আগাতেই
আবার কি ভেবে ঘুরে দাড়ালাম।
-আপনি চাইলেই আমায় বলতে পারেন।
কেউ রেখে চলে গেছে বা অন্যকিছু?
মুহূর্ত দুএকের জন্যে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর
ব্যাটারি ফুরিয়ে গেল নাকি!
এরপর নীল শাড়ীটার আঁচলে ডান
চোখের চোখের জল মুছে নেয় সে। এবং
শক্ত কন্ঠে বলে ওঠে "শুনবেন?"
এবার আমি একটু আঁতকে উঠি। মেয়েটি
আবার ভুতের গল্পের মত আমার ঘাড়
মটকাবে নাতো?!
ভয়ে বললাম, "আমি শুনছি, বলে ফেলুন"
"শুনুন তবে"
সেদিন আমরা তিন বান্ধবী
ভার্সিটির মাঠে বসে গল্প করছিলাম।
তো গল্প শেষে বাসায় যাবার জন্যে
যেইমাত্র উঠতে যাব, তখনই আমার জুতোর
হিল ভেঙে পরে যাই একটি ছেলের
গায়ে। যেমনটা ছিনেমায় ঘটে আরকি!
ছেলেটি আশ্চর্যজনকভাবে আমার উপর
প্রচণ্ড বিরক্ত হয় আর বলে উঠে,
-এইসব জুতো আপনার পায়ের জন্য না।
বাসায় চটিজুতো থাকলে ওটা পরবেন।
মানাবে বেশ ভালোই।
একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে
যায়। আমার খুব অপমান বোধ হচ্ছিল।
আমার বান্ধবীরা আমাকে বেশ
রাগাচ্ছিল। সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা
করেছিলাম, এর প্রতিশোধ আমি নেবই।
কেটে গেল কয়েক সপ্তাহ। ছেলেটির
কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ
দেখি আমার পাশের সারিতে কালো
শার্ট পরে থাকা ছেলেটি তো সেই
ছেলেটা। আমার ক্লাসে? সে
পুরোনো রাগ আবার জ্বলে উঠতে শুরু
করে।
ক্লাস শেষে ওই ছেলেটার বায়ো-
ডাটা জোগাড় করলাম। ছেলেটার নাম
আসিফ। যেমন হ্যান্ডসাম তেমন স্মার্ট।
ভার্সিটিতে বেশ ভালোই নাম আছে
তার। যাইহোক অনেক রাত হয়েছে।
ঘুমিয়ে পড়লাম সেদিন।
...
-এই ছেলে তুমি বিয়ে করেছ? গালে
হলুদ লাগিয়েছ যে! (ওর বন্ধুরা কি
নিয়ে যেন মজা করছিল। আমি ওএ
ইতস্তত করবার জন্যে বলেছি)
-হুম ওই যে, ওইটা আমার মেয়ে (ফোর্থ
ইয়ারের একটা আপুর দিকে তাঁক করে)।
ওর বড় আরো একটা ছেলে আছে।
-ইয়ার্কি করো কেনো এত?
-ও আচ্ছা! তাই? তাহলে তোমার
পরিচিত কেউ আছে?
-কেন?
-ওইযে! বিয়েটা সেরেই ফেলি।
ইদানীং যে হারে ভূমিকম্প হচ্ছে!
-উফফ! অসহ্য!
ক্লাসের সময় হওয়ার চলে এলাম আমি।
পুরো ক্লাসে আর মন বসল না আমার। কখন
যে প্রতিশোধের আগুন ভালোবাসার
রেণুতে পরিণত হল। বুঝতেই পারলাম না।
বুঝলাম, আমি আসিফের প্রেমে পরে
গেছি।
আমরা ধীরে ধীরে বন্ধু হহয়ে গেলাম।
এরপর অনেকবার অনেক ভাবেই ওর মন জয়
করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হলো
না।আসিফ ছেলেটা সত্যিই অনেক
বেশি ভালো। কিন্তু ও কখনই
রিলেশনশিপ করার জন্য সিরিয়াস ছিল
না। এক পর্যায়ে আমি আশা ছেড়েই
দিয়েছিলাম। খুব ভেঙে পরেছিলাম।
.......
হঠাৎ করেই ঘুম থেকে উঠে বসলাম।
চারিপাশ অন্ধকার। স্বপ্ন দেখছিলাম
না এটা নিশ্চিত ছিলাম। মোবাইলের
দিকে চোখ যেতেই আসিফের ছবি
ভেসে ওঠল ফোনে।
-হ্যালো, তারিন?
-না ভুত! এতো রাতে ফোন দিয়েছ
কেনো?
-আচ্ছা কতক্ষণ ধরে ফোন করেই যাচ্ছি,
পিক করছ না। এমন হয়ে বিয়ের পর কি যে
হবে।
-মানে? কি বলছ? স্বপ্নে আছ তুমি?
-না তারিন।সেদিন থেকে স্বপ্ন
সাজাচ্ছি যেদিন তোমায় প্রথম
দেখেছিলাম। এতদিন সাহস হয়নি।
কিন্তু আজ বলছি। আমি তোমায়
ভালোবাসি তারিন।
-সত্যি বলছ?
-হ্যা। একদম সত্যি। বিশ্বাস করো এতটুকুও
মিথ্যে বলছি না
-তাহলে এতদিন আমি যখন বলছিলাম
তখন গুরুত্ব দাওনি যে?
-আমি চাইছিলাম তোমায় আরো
ভালো করে বুঝতে। তুমি সত্যিই কি
আমায় ভালোবাসো কিনা।
-আজ কি মনে হচ্ছে?
-জানি না। শুধু এতটুকু জানি যে, আমি
তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। তোমায়
আমি সত্যিই খুব বেশি ভালোবাসি
তারিন। বলো তুমি আমায়
ভালোবাসো না?
-না। বাসি না। তুমি আমাকে আগে
গুরুত্ব দাও নি। আমি তোমায়
ভালোবাসি না আসিফ। আমার থেকে
ভালো কাউকে খুঁজে নিও।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। মনে মনে
খুব বেশি আনন্দ হচ্ছে। আমার মনের
মানুষটিকে আমি কাছে পেতে
যাচ্ছি। আবার কষ্টও হচ্ছে। ওকে মিথ্যে
বলবার জন্যে।
"আমিও যে তোমায় খুব বেশি
ভালোবাসি বোকা আসিফ। একটু ক'দিন
এভাবে থাকো। বুঝো কাছের
মানুষটিকে দূরে ঠেলে দিলে কেমন
লাগে।"
সেদিন আর রাতে ঘুম হয়নি। ফোন অফ
করে রেখে সারা রাত আসিফের কথা
ভাবছিলাম। এরপর তিনদিন
ভার্সিটিতেও যাই নি। আসিফকে
মিথ্যে কষ্ট দেবার জন্যে।
.......
সেদিন রাতের ঠিক তিন দিন পর
সকালে আমার বাসায় আমার নামে
একটি বক্স আসে। ওটা আসিফ
পাঠিয়েছিল। ভেতরে একটা নীল
রঙের শাড়ী। নীল ওর প্রিয় রঙ। আর
একটা চিঠি। ওতে লিখা ছিল,
"প্রিয় আমার কলিজার টুকরাটা,
এত অভিমান করলে চলবে? আমি জানি
তুমি আমায় ভালোবাসো। কিন্তু আর
কষ্ট না দিলেই কি নয়? :') আমি তোমায়
নীল শাড়িতে দেখব আর শুনব যে, তুমি
আমায় ভালোবাসো। তাই শাড়িটা
পড়ে আজ বিকেল চারটায় লরেঞ্জ
ক্যাফেতে চলে এসো। আমি তোমার
অপেক্ষায় থাকব।
ইতি তোমার আস্ফু"
আমি ওকে আদর করে আস্ফু ডাকতাম।
.....
উফফ!! অনেকক্ষণ হয়ে গেছে ঘুমিয়েছি।
ঘুম থেকে উঠে ফোনে আসিফের
অনেকগুলো টেক্সট জমে ছিল। ওর সাথে
দেখা করতে যাইনি বলে বড্ড বেশি
রাগ করে ফেলেছে ছেলেটা। আমি
সেদিন তাকে কোনো রিপ্লাই দেই
নি। আমি যে অভিমান করেছি তার
সাথে!
পরদিন দুপুরের কথা,
আসিফ সকাল থেকে আর কোনো টেক্সট
করেনি। তাই আমি রাগ ঝেরে ফেলে
তাকে টেক্সট করলাম।
"আরে আমার বুদ্ধুটা আমিও তোমাকে
সত্যিই ভালোবাসি। এতটুকুও বোঝো
না?"
সাথে সাথে রিপ্লাই। "আমি বাসি
না"
আমি খুব রেগে গেলাম। এসব কি?!
আমি আবার টেক্সট করলাম "সত্যিই কি
আমায় আর ভালোবাসো না?"
সে আমাকে একটা ব্ল্যাংক টেক্সট
করেছে।
আমি রেগে গিয়ে তাকে ফোন করে
ইচ্ছেমত বকেছি। এমন কি এটাও বলেছি
যে, আমিও তাকে আর ভালোবাসি।
কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে আসিফ একটা
শব্দ পর্যন্ত কথা বলেনি।
ফোন রেখে দিলাম...
পরদিন আমি বুঝতে পারলাম আমার ভুল।
আসিফের ফোনে একটা টেক্সট করে
দিলাম। সেই নীল শাড়িটা পড়ে ছুটে
গেলাম লরেঞ্জ ক্যাফেতে। ওকে
এখানে আসতে বলেছি। "I LOVE U" বলব
বলে।
একি! ও কোথায়? এতক্ষণ হয় গেলো আসল
না যে?!
ওর মেস এ ছুটে গিয়ে শুনি গতকাল
রাতে ট্রাক দুর্ঘটনায় আসিফের মৃত্যু হয়।
বাসায় ফিরে আসি আমি। নিজেকে
কোন মতেই ক্ষমা করতে পারছি না
আমি।অজানা এক শক্তি আমাকে পরাস্থ
করতে ছুটে চলেছে আমারে পেছনে। শুধু
টেক্সটগুলো দেখছিলাম।
কিন্তু!!! ওটা আসলে ব্ল্যাংক টেক্সট
ছিল না। ওটার শেষে লিখা ছিল "I
LOVE U"
....
"আমি নিজেকে ক্ষমা করতে
পারিনি" -একথাটা বলতেই আমার
সামনের অচেনা মেয়েটা কোথা
যেন হারিয়ে গেল। তার গল্প শুনতে
শুনতে কখন যে, এত দূরে চলে এসেছি
টেরও পাইনি।হঠাৎ নিজেকে একটা
কবরের রেলিঙের ওপর আবিশকার
করলাম। ওটাতে লিখা ছিল,
নামঃ তারিন আক্তার
তারিখটা ছিল আজ থেকে ঠিক তিন
দিন আগের...