মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৪৭- সুখের হাতছানি

অনেক্ষন অপেক্ষা করার পরে আরিফ
লতিফ রহমান এর দেখা পেল। লতিফ
রহমান চেয়ারে বসার পরেই আরিফ বলল
-আমি আরিফ।
-ও আপনি আরিফ? কি মনে করে?
-আমার রেকর্ডিংগুলো একটু শুনে দেখুন।
-শুনেছি। আপনার গান ভাল। কিন্তু
বিনামুল্যে হবে না। এখম কেউ সিডি
কেনে না। সবাই ইন্টারনেট থেকে
গান ডাউনলোড করে শোনে। তাই
আমি পারবো না।
.
আরিফের প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু
পকেটে মাত্র চল্লিশ টাকা আছে।
চল্লিশ টাকায় খেলে বাসায় যাওয়ার
টাকা থাকবে না। বেপার না পেটে
ক্ষুধা না থাকলে হেটেই যাওয়া যায়।
.
চল্লিশ টাকায় ভাত হবে না বলে
আরিফ হেটে হোটেলের দিকে
যাচ্ছে। ওইদিকে কমদামী হোটেল
আছে। সেখানে অল্প টাকায় পেট ভরে
ভেত খাওয়া যায়। হোক সেটা বাসি
খাবার।
.
আরিফ বাড়িতে ফিরে মিতুকে বলল
-খেয়েছ?
-হ্যা।
-কোথায় খেলে?
-আজকে বস লাঞ্চের জন্য বলল। তাই ওর
সাথে লাঞ্চ করলাম।
-তাহলে তো খুব ভালই কেটেছে।
.
আরিফ ঘুমিয়ে ছিল। কারো কথার
আওয়াজ পেয়ে আরিফের ঘুম ভেঙে
গেল। সে শুনতে পেল
-তুমিও কম যাও। তুমিও তো অনেক কিউট
লাগে।
-......
-যাহ। দুষ্টু।
.
পরে আরিফ বুঝতে পারলো মিতু
মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে।
কিন্তু এইধরনের কথা কার সাথে?
.
কিছুক্ষন কথাগুলো শোনার পরে আরিফ
বলল
-এত রাতে কার সাথে কথা বলছো?
-না মানে বসের সাথে।
-এত রাতে কিসের কথা?
-কালকে একটা মিটিং আছে।তাই
কথা বলছিলাম।
-এখন ঘুমাও। সকালে কথা বলো।
.
আরিফ জানে নাবিলের সাথে কি
কথা বলছে? তবুও কিছু বলছে না।কারন
আরিফের মত ছেলের সাথে মিতু এখনও
আছে এটাই আরিফের জন্য অনেক।
.
আজ সকাল সকাল আরিফ বেড়িয়ে গেল।
আজ একটা কলেজে আরিফের অনুষ্ঠান
আছে। তাই আরিফকে তারাতারি
যেতে হবে।
.
গান গেয়ে আরিফ আজ অনেক টাকা
পেয়েছে। তাই আরিফ আজ মিতুর জন্য
অনেক কিছু কিনবে।
.
একটা শাড়ি কিনে আরিফ বাড়ির
দিকে যাচ্ছে আর অনেক কথা ভাবছে।
হয়তো মিতু শাড়িটা দেখে অনেক
খুশি হবে। খুশিতে আরিফকে জড়িয়ে
ধরে বলবে
-আরে আমার শাড়ি আছে তো।
তোমার নিজের জন্য একটা শার্ট
কিনলে পারতে।
-তোমাকে ভালবাসি বলেই তো
এনেছি।
-পাগল একটা।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আরিফ
বাসায় ঢুকে পরলো। বাসায় মিতুকে
খুজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। এইসময় মিতু
অফিস থেকে চলে আসার কথা। হয়তো
লুকিয়ে থেকে আরিফকে ভয়
দেখাচ্ছে।
.
মিতুকে খুঁজতে টেবিলের উপরে একটা
কাগজ পেল। কাগজটা হাতে নিয়ে
আরিফ পরতে শুরু করলো।
আরিফ, আমি তোমাকে ছেড়ে চলে
যাচ্ছি। আমি আমার বসকে বিয়ে
করছি।আমার অতিত জেনে সে
আমাকে বিয়ে করছে।
তুমি আমাকে বিয়ে করে কষ্ট ছাড়া
কিছুই দিতে পারো নি।আর আমার বস
আমাকে অর্থ দিয়ে সুখেই রাখবে........
.
আরিফ চিঠিটা পুরোপুরি না পড়েই
টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে
পরলো।
.
আরিফের ফোনে হঠাৎ মিতুর ফোন
আসলো।আরিফ ফোন ধরে বলল
-কি হয়েছে?
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তুমি
একটা কিছু করো।
-কি করবো এখন?
-আমাকে বিয়ে করবে।আমি তোমার
জন্য কাজি অফিসের সামনে দাড়িয়ে
আছি।
.
বিয়ে করে আরিফ মিতুকে নিয়ে
বাড়িতে আসলো। আরিফের বাবা
কিছুতেই আরিফের বিয়ে মেনে নিল
না। আরিফের মা অনেক বলাতেও লাভ
হলো না। আরিফকে বাড়ি থেকে
তাড়িয়ে দিল।
.
গিটার নিয়ে আরিফ বাড়ি থেকে
বেড়িয়ে আসে। মিতুর সাথে সংসার
বাধলো।একবেলা না খেয়ে থাকলেও
মিতুকে না খাইয়ে রাখে না।
.
আরিফের হঠাৎ পুরাতন কথাগুলো মনে
পরে গেছে। আরিফ বলল
-মিতু হায়রে তোর ভালবাসা!!!
.
গিটার হাতে নিয়ে আরিফ গান
গাচ্ছে। কারন গিটার আর গানই
আরিফের সঙ্গি।
.
আরিফের ইচ্ছা ছিল একদিন তার গান
বের হবে। গান আর মিতুকে নিয়ে সব
দুঃখ ভুলে যাবে। কিন্তু আরিফের কোন
ইচ্ছা পুরন হলো না। কারন গান বের
করতে যে টাকা দরকার সেই টাকা
আরিফের নেই।
.
আরিফ একবার ভাবলো তার বাবার
থেকে টাকা নিবে। কিন্তু পরে
আরিফের বাবা তাকে টাকা দিবে
না কারন সেদিন আরিফকে তার বাবা
রাগ অভিমান নিয়ে তাড়িয়ে
দিয়েছে।
.
আরিফ রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে।
হালকা বৃষ্টি পরছে। হঠাৎ মোবাইল
বেজে উঠলো। মোবাইল ধরে বলল
-হ্যালো।
-আমি মিউজিক কোম্পানি থেকে
বলছিলাম।
-হ্যা। বলুন।
-আমরা আপনার একক এলবাম বের করতে
চাই।
-বলেন কি!! টাকা..
-আরে ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না।
.
আরিফের আজ অনেক খুশি লাগছে। তাই
বৃষ্টির ভেতরে হেটে চলেছে। বৃষ্টির
সাথে আরিফের দুঃখগুলো ঝড়ে
যাচ্ছে।
.
একটা গাড়ি এসে কাদা পানি
আরিফের গায়ে ছিটিয়ে দিয়ে চলে
গেল।আরিফ বলল
-এই কেরে...
কিছু বলতে চেয়েও বলল না। কারন আজ
আরিফের সুখের দিন।
.
গাড়িটা পিছিয়ে এসে কাচ
নামালো। আরিফ ভেতরের লোকটিকে
দেখে অবাক হয়ে গেল।গাড়ির
ভেতরে বাবা বসে আছে।
.
পাশ কাটিয়ে চলে যেতে আরিফের
বাবা ডাক দিয়ে বলল
-দাড়া বাবা।
-......
-আমার সাথে কথা বলবি না? আমার ভুল
হয়ে গেছে। এবার বাড়ি চল।
-কিসের ভুল আমার খবর রেখেছ
কোনদিন?
-তোকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর
পরে আমি অনুশোচনায় ভুগছিলাম।
তোকে অনেক খুঁজেছি। কিন্তু পাই নি।
পরে জানতে পারলাম টাকার জন্য
তোর এলবাম বের হচ্ছে না। তাই আমি
সব টাকা দিয়ে এসেছি।
-তুমি!!
-হ্যা বাবা। এবার বৌমাকে নিয়ে
বাড়ি চল।
-তোমার বৌমা সুখে আছে থাকুক।
.
কয়েকমাস পরে.....
আজ কয়েকবছর পরে আরিফ অফিসে
এসেছে।
.
আরিফ হঠাৎ কাউকে দেখে বাইরে
এসে দাড়িয়ে আছে। আরিফের বাবা
বলল
-তুই এখানে দাড়িয়ে? বৌমাকে
আমাদের কোম্পানির ম্যানেজারের
সাথে দেখলাম।
-আমিও দেখেছি।
-তুই এখানে কেন?আর বৌমা....
-তোমার বৌমা এখন ম্যানেজারের
স্ত্রি।
-কি!!আমার কোম্পানির সামান্য
ম্যানেজার!!!
আরিফের বাবা আরিফকে সবকিছু বলল।
.
আরিফের বাবা আরিফকে মিতুকে
ফিরিয়ে আনতে চাইলেও রাজি হলো
না। কারন যে সুখের হাতছানি পেয়ে
ছেড়ে গিয়েছে তাকে আরিফের
প্রয়জন নেই।
.
আরিফ সবার সামনে যাচ্ছে না। সবার
সামনে আরিফকে পরিচয় করে দিতে
চাচ্ছে। আরিফ যাচ্ছে না। কারন
আরিফকে দেখে কারো হাসিমুখ মলিন
হতে পারে। আরো মলিন হবে যখন শুনবে
তার স্বামি আরিফের কোম্পানির
একজন সাধারন ম্যানেজার।
.
মিতু যে সুখের হাতছানি পেয়েছে।
সেটা নিয়েই থাক।
.
লেখা-- Pabnar Tarcera Balok