লিখাঃশাকিল বখতিয়ার
সাহসী মেয়ের গল্প
..................
মাহমুদ স্যার ক্লাসে ঢুকে হঠাৎ
থমকে দাঁড়ালেন। সামনের বেঞ্চ
পুরোটাই ফাঁকা। পুরো ক্লাসে
স্যার একবার চোখ ঘোরালেন।
সুমা আর রিমা একেবারে
পেছনের টেবিলে। কিন্তু
রিতাকে আজ ক্লাসে দেখা
যাচ্ছে না। স্যারের মাথা চক্কর
দিতে লাগল। যে মেয়ে কিনা
আট বছরের স্টুডেন্ট লাইফে আট
মিনিট ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল
না, সে কিনা আজ স্কুলেই
আসেনি। রিমার মুখ থেকে যখন
স্যার শুনলেন যে, রিতার বিয়ে
ঠিক হয়ে গেছে। তখনতো
স্যারের মাথা আরো হেঁট হয়ে
গেল। সেদিন ক্লাস না নিয়েই
স্যার চলে গেলেন।
গরিব বাবা-মায়ের বড় মেয়ে
রিতা। অসম্ভব মেধাবী।
প্রাইমারি থেকে শুরু করে এই
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের কেউ
তার থেকে প্রথম স্থান নামক
পদটি কেড়ে নিতে পারেনি।
এমনকি তার কাছাকাছিও
যেতে পারেনি। যারা
দ্বিতীয়-তৃতীয় হয়েছে তাদের
থেকেও সে সবসময় দশ-বারো
মার্কস বেশি পেত। পঞ্চম
শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
এবং উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয়
স্থান অর্জন করেও সে চমক
লাগিয়েছে।
যেভাবে সে কৃতিত্ব অর্জন করছে
সেভাবে কিন্তু সে সমাজ
থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না।
অথচ সমাজের লোকদের উচিত
ছিল দরিদ্র ও মেধাবী
ছাত্রীটির পড়ালেখার খরচের
সম্পূর্ণ ভার তাদের ঘাড়ে টেনে
নেয়া। মেয়ে মানুষ, পড়ালেখা
করে কী করবেÑ এই হীনমন্যতার
কারণেই সমাজের লোক নিশ্চিত
অধঃপতনে যাচ্ছে। মূলত মেয়ে
মানুষ নয়, দরিদ্র পরিবারে জন্ম
হওয়াই তার প্রতি সমাজের এই
হীনমন্যতা।
যে দিন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
পেয়ে গোটা উপজেলায়
সেকেন্ড হয়েছিল সে, সেদিন
মাহমুদ স্যারইতো তাকে ডাক্তার
হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর
সেদিন থেকেই সে তার হৃদয়ে
সেই স্বপ্নটুকু লালন করতে লাগল।
কিন্তু শুধুমাত্র গরিব হওয়ার দরুন
তার সে স্বপ্ন ভেঙে খানখান
হয়ে যাচ্ছে? সে ভাবে, মেয়ে
হওয়ায় কি সে বাকহীন হয়ে
পড়েছে? তার কি কিছু করার
ক্ষমতা নেই? এমনকি তার মতেরও
কি প্রয়োজন নেই।
সত্যি তাই, আজ বেশির ভাগ
মুসলিম পরিবারে মেয়েদের
মতামতকে হীন করে দেখা হয়।
বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের
মুসলিম পরিবারে। শুধু মুসলিম নয়,
হিন্দুদের অবস্থাও তদ্রƒপ।
আমাদের সমাজের লোকদের
কথা কী বলব? তাদের নিজেদের
যোগ্যতা নেই, আবার অন্য কারও
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে
সহযোগিতা করে না বরং তার
স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে
দাঁড়ায়। রিতার ক্ষেত্রেও তার
ভিন্ন কিছু ঘটছে না।
হারিকেনটা একটু ঢিম করে
রেখে সে তার বিছানায় শুয়ে
পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘুম
এসে গেল। সে হারিয়ে গেল
অন্য এক রাজ্যে। ঘুমের ভেতর সে
দেখতে লাগলো সে এক সুন্দর
অট্টালিকার একটা খাটের ওপর
শুয়ে আছে।
আর তার চার পাশে কয়েকজন
নারী দাঁড়িয়ে আছে। সে
শোয়া থেকে আস্তে আস্তে
উঠে বসলো। এবং জিজ্ঞেস
করলো ‘আমি এখানে কেন,
তোমরা কারা?
তাদের মধ্যে একজন মুখ খুলেন,
‘আমি তোমাদের মা।
তোমাদের বাবা আদমের (আ)
প্রিয় সঙ্গিনী, হাওয়া (আ)। আর
এরা হচ্ছে তোমার
হিতাকাক্সক্ষী। এখন তাদের
সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে
দিচ্ছি।
ইনি হলেন, খাদিজা (রা), যিনি
ছিলেন মক্কার ব্যবসায়ীদের
মধ্যে বিশিষ্ট জনদের একজন।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে
যাকে আরবের লোকেরা তাকে
তাহেরা উপাধি দিয়েছিল
যেমনি সত্য বলার কারণে
তোমাদের রাসূল মুহাম্মদ (সা)কে
আল আমিন উপাধি দিয়েছিল।
ইনি সেই মহিলা যে সবার আগে
ইসলাম গ্রহণ করেছেন আর ইসলাম
প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যার কৃতিত্ব
অসামান্য।
তার পরের জন হলেন হযরত আয়েশা
সিদ্দিকা (রা), যিনি ছিলেন
তোমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি
মেধাবী ও বুদ্ধিমান। হাদিস
বর্ণনাকারী সাহাবীদের মধ্যে
যিনি ছিলেন দ্বিতীয় স্থান
অর্জনকারী। রাসূলের মৃত্যুর পর
সাহাবীগণ (রা) যার কাছে
ফতোয়া, পরামর্শ নিতে আসতেন
এবং তিনি সুন্দরভাবে
বুদ্ধিমত্তার সাথে তার সমাধান
দিতেন।
তারপর যিনি হাস্যোজ্জ্বল
চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে
আছেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি
হলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রথম
মহিলা শহীদ যিনি নিজের
জীবনকে আল্লাহর রাহে বিলীন
করে দিয়েছেন, তবু বাতিলের
কাছে মাথা নত করেননি।
অথচ তুমি ভয় করছো যে, তুমি কিছুই
পারবে না। তুমি তো নারী। এসব
একদম ভাবা চলবে না।
তোমাদের ইসলামই
নারীদেরকে ডাক্তার হওয়ার
অনুমতি দিয়েছে। অনুমতি বললে
ভুল হবে, এটা অবশ্যই নারীদের
কর্তব্য যে, পর্দা রক্ষা করতে হলে
নারীদের জন্য নারী ডাক্তারই
উত্তম।
আরও জেনে রাখো! যদি তুমি
ইসলামের জ্ঞান বাদ দিয়ে
শুধুমাত্র দুনিয়াবি জ্ঞান অর্জন
কর, তাহলে তুমি একটা ফরজ লঙ্ঘন
করায় পরকালে কঠিন শাস্তির
সম্মুখীন হবে। কেননা ইসলামিক
জ্ঞান অর্জন শুধু পুরুষদের জন্য নয়,
নারীদের ওপরও ফরজ। এই বলে
তারা সবাই উধাও হয়ে গেল।
অট্টালিকাটি হাওয়ার সাথে
মিশে যেতে থাকল। আর রিতাও
নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎ একসময় তার ঘুম ভেঙে গেল।
জেগে দেখে তার শরীর ঘেমে
গেছে।
হারিকেনের আলোয় দেয়ালে
ঝুলানো ঘড়িটি স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে। তখন রাত দুটো বেজে
বিশ মিনিট। ঘড়ির কাঁটা অসহায়
হয়ে খসখস করে ঘুরতে থাকে। যেন
তার গন্তব্য খুঁজে পাচ্ছে না।
বাড়ি সবাই ঘুমে বিভোর হয়ে
আছে। এই সুযোগে রিতা আস্তে
আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল।
জোনাকিরা তাদের আলো
জ্বালিয়েই চলছে। যেন তাকে
তার সঠিক পথের দিশা দিচ্ছে।
আর ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এমনভাবে
ডাকছে যেন তাকে সাহস
জোগাচ্ছে। এগিয়ে যাও। আমরা
আছি তোমার সাথে। বুকে সাহস
সঞ্চার করে সে পা বাড়ালো
মাহমুদ স্যারের বাড়ির পথে। দশ
মিনিটেই পৌঁছে গেল
গন্তব্যে।
স্যার তো অবাক, এতো রাতে
তুমি। তোমার না বিয়ে? যাক
এসেছো যখন ভেতরে এসো। এই
বলে স্যার দরজা খুলে দিলেন।
ভেতরে ঢুকেই রিতা সে কী
কান্না। স্যার তার পিঠে হাত
বুলিয়ে সান্ত¡নার সুরে বললেন,
পাগলি মেয়ে এভাবে কেউ
কাঁদে? তোর মনের খবর আমি সব
জানি। দেখবি সব ঠিক হয়ে
যাবে, তুই আল্লাহর ওপর ভরসা
রাখ।
এ দিকে বিয়ের আয়োজন
পুরোপুরি সম্পন্ন কিন্তু রিতার
আম্মুর কান্নাজড়িত কণ্ঠে
আফজাল মিয়া যখন শুনতে পেল
রিতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে
না তখন তার অবস্থা এমন হলো যে,
যেন মাথায় আকাশ ভেঙে
পড়েছে।
আফজাল মিয়া কালবিলম্ব না
করে থানায় চলে গেল। থানায়
গিয়ে তো আফজাল মিয়া অবাক।
যে মেয়েকে খুঁজে বের করতে
সে থানায় জিডি করতে এলো,
সে মেয়েই নাকি তার বিরুদ্ধে
মামলা করেছে। ওসি সাহেব যখন
তার হাতে হাতকড়া পরালেন
তখনই সে অপমান সইতে না পেরে
অজ্ঞান হয়ে গেল।
এরপর আফজাল মিয়ার যখন জ্ঞান
ফিরল সে দেখতে পেল সে
হাসপাতালে একটা বেডে।
মাহমুদ স্যার তার মাথায় হাত
রাখলেন। সে বললো, ‘স্যার
আমারে মাফ কইরা দেন, আমার
ভুল হইয়া গেছে। আমি নিজের
কথা চিন্তা কইরা ম্যাইয়াডার
সর্বনাশ করতে গেছিলাম।’
মাহমুদ স্যার বললেন, ‘অভাবে
পড়লে হয়তো অন্য কেউও এ কাজই
করতো। যাক সে বিষয় বাদ দাও।
আজ থেকে ও শুধু তোমারই মেয়ে
নয়, মেয়ে আমারও। আমি একে
ডাক্তার বানিয়েই ছাড়ব।
স্যারের কথা শুনে রিতা যেন
আজ নতুন জীবন ফিরে পেল।
আনন্দে তার গন্ড বেয়ে
দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
সাহসী মেয়ের গল্প
..................
মাহমুদ স্যার ক্লাসে ঢুকে হঠাৎ
থমকে দাঁড়ালেন। সামনের বেঞ্চ
পুরোটাই ফাঁকা। পুরো ক্লাসে
স্যার একবার চোখ ঘোরালেন।
সুমা আর রিমা একেবারে
রিতাকে আজ ক্লাসে দেখা
যাচ্ছে না। স্যারের মাথা চক্কর
দিতে লাগল। যে মেয়ে কিনা
আট বছরের স্টুডেন্ট লাইফে আট
মিনিট ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল
না, সে কিনা আজ স্কুলেই
আসেনি। রিমার মুখ থেকে যখন
স্যার শুনলেন যে, রিতার বিয়ে
ঠিক হয়ে গেছে। তখনতো
স্যারের মাথা আরো হেঁট হয়ে
গেল। সেদিন ক্লাস না নিয়েই
স্যার চলে গেলেন।
গরিব বাবা-মায়ের বড় মেয়ে
রিতা। অসম্ভব মেধাবী।
প্রাইমারি থেকে শুরু করে এই
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের কেউ
তার থেকে প্রথম স্থান নামক
পদটি কেড়ে নিতে পারেনি।
এমনকি তার কাছাকাছিও
যেতে পারেনি। যারা
দ্বিতীয়-তৃতীয় হয়েছে তাদের
থেকেও সে সবসময় দশ-বারো
মার্কস বেশি পেত। পঞ্চম
শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি
এবং উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয়
স্থান অর্জন করেও সে চমক
লাগিয়েছে।
যেভাবে সে কৃতিত্ব অর্জন করছে
সেভাবে কিন্তু সে সমাজ
থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না।
অথচ সমাজের লোকদের উচিত
ছিল দরিদ্র ও মেধাবী
ছাত্রীটির পড়ালেখার খরচের
সম্পূর্ণ ভার তাদের ঘাড়ে টেনে
নেয়া। মেয়ে মানুষ, পড়ালেখা
করে কী করবেÑ এই হীনমন্যতার
কারণেই সমাজের লোক নিশ্চিত
অধঃপতনে যাচ্ছে। মূলত মেয়ে
মানুষ নয়, দরিদ্র পরিবারে জন্ম
হওয়াই তার প্রতি সমাজের এই
হীনমন্যতা।
পেয়ে গোটা উপজেলায়
সেকেন্ড হয়েছিল সে, সেদিন
মাহমুদ স্যারইতো তাকে ডাক্তার
হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। আর
সেদিন থেকেই সে তার হৃদয়ে
সেই স্বপ্নটুকু লালন করতে লাগল।
কিন্তু শুধুমাত্র গরিব হওয়ার দরুন
তার সে স্বপ্ন ভেঙে খানখান
হয়ে যাচ্ছে? সে ভাবে, মেয়ে
হওয়ায় কি সে বাকহীন হয়ে
পড়েছে? তার কি কিছু করার
ক্ষমতা নেই? এমনকি তার মতেরও
কি প্রয়োজন নেই।
সত্যি তাই, আজ বেশির ভাগ
মুসলিম পরিবারে মেয়েদের
মতামতকে হীন করে দেখা হয়।
বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের
মুসলিম পরিবারে। শুধু মুসলিম নয়,
হিন্দুদের অবস্থাও তদ্রƒপ।
আমাদের সমাজের লোকদের
কথা কী বলব? তাদের নিজেদের
যোগ্যতা নেই, আবার অন্য কারও
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে
সহযোগিতা করে না বরং তার
স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে
দাঁড়ায়। রিতার ক্ষেত্রেও তার
ভিন্ন কিছু ঘটছে না।
হারিকেনটা একটু ঢিম করে
রেখে সে তার বিছানায় শুয়ে
পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ঘুম
এসে গেল। সে হারিয়ে গেল
অন্য এক রাজ্যে। ঘুমের ভেতর সে
দেখতে লাগলো সে এক সুন্দর
অট্টালিকার একটা খাটের ওপর
শুয়ে আছে।
নারী দাঁড়িয়ে আছে। সে
শোয়া থেকে আস্তে আস্তে
উঠে বসলো। এবং জিজ্ঞেস
করলো ‘আমি এখানে কেন,
তোমরা কারা?
তাদের মধ্যে একজন মুখ খুলেন,
‘আমি তোমাদের মা।
তোমাদের বাবা আদমের (আ)
প্রিয় সঙ্গিনী, হাওয়া (আ)। আর
এরা হচ্ছে তোমার
হিতাকাক্সক্ষী। এখন তাদের
সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে
দিচ্ছি।
ইনি হলেন, খাদিজা (রা), যিনি
ছিলেন মক্কার ব্যবসায়ীদের
মধ্যে বিশিষ্ট জনদের একজন।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে
যাকে আরবের লোকেরা তাকে
তাহেরা উপাধি দিয়েছিল
যেমনি সত্য বলার কারণে
তোমাদের রাসূল মুহাম্মদ (সা)কে
আল আমিন উপাধি দিয়েছিল।
ইনি সেই মহিলা যে সবার আগে
ইসলাম গ্রহণ করেছেন আর ইসলাম
প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যার কৃতিত্ব
অসামান্য।
তার পরের জন হলেন হযরত আয়েশা
সিদ্দিকা (রা), যিনি ছিলেন
তোমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি
মেধাবী ও বুদ্ধিমান। হাদিস
বর্ণনাকারী সাহাবীদের মধ্যে
যিনি ছিলেন দ্বিতীয় স্থান
অর্জনকারী। রাসূলের মৃত্যুর পর
সাহাবীগণ (রা) যার কাছে
ফতোয়া, পরামর্শ নিতে আসতেন
এবং তিনি সুন্দরভাবে
বুদ্ধিমত্তার সাথে তার সমাধান
দিতেন।
চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে
আছেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি
হলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রথম
মহিলা শহীদ যিনি নিজের
জীবনকে আল্লাহর রাহে বিলীন
করে দিয়েছেন, তবু বাতিলের
কাছে মাথা নত করেননি।
অথচ তুমি ভয় করছো যে, তুমি কিছুই
পারবে না। তুমি তো নারী। এসব
একদম ভাবা চলবে না।
তোমাদের ইসলামই
নারীদেরকে ডাক্তার হওয়ার
অনুমতি দিয়েছে। অনুমতি বললে
ভুল হবে, এটা অবশ্যই নারীদের
কর্তব্য যে, পর্দা রক্ষা করতে হলে
নারীদের জন্য নারী ডাক্তারই
উত্তম।
আরও জেনে রাখো! যদি তুমি
ইসলামের জ্ঞান বাদ দিয়ে
শুধুমাত্র দুনিয়াবি জ্ঞান অর্জন
কর, তাহলে তুমি একটা ফরজ লঙ্ঘন
করায় পরকালে কঠিন শাস্তির
সম্মুখীন হবে। কেননা ইসলামিক
জ্ঞান অর্জন শুধু পুরুষদের জন্য নয়,
নারীদের ওপরও ফরজ। এই বলে
তারা সবাই উধাও হয়ে গেল।
অট্টালিকাটি হাওয়ার সাথে
মিশে যেতে থাকল। আর রিতাও
নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎ একসময় তার ঘুম ভেঙে গেল।
জেগে দেখে তার শরীর ঘেমে
গেছে।
হারিকেনের আলোয় দেয়ালে
ঝুলানো ঘড়িটি স্পষ্ট দেখা
যাচ্ছে। তখন রাত দুটো বেজে
বিশ মিনিট। ঘড়ির কাঁটা অসহায়
হয়ে খসখস করে ঘুরতে থাকে। যেন
তার গন্তব্য খুঁজে পাচ্ছে না।
বাড়ি সবাই ঘুমে বিভোর হয়ে
আছে। এই সুযোগে রিতা আস্তে
আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল।
জোনাকিরা তাদের আলো
জ্বালিয়েই চলছে। যেন তাকে
তার সঠিক পথের দিশা দিচ্ছে।
আর ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এমনভাবে
ডাকছে যেন তাকে সাহস
জোগাচ্ছে। এগিয়ে যাও। আমরা
আছি তোমার সাথে। বুকে সাহস
সঞ্চার করে সে পা বাড়ালো
মাহমুদ স্যারের বাড়ির পথে। দশ
মিনিটেই পৌঁছে গেল
গন্তব্যে।
তুমি। তোমার না বিয়ে? যাক
এসেছো যখন ভেতরে এসো। এই
বলে স্যার দরজা খুলে দিলেন।
ভেতরে ঢুকেই রিতা সে কী
কান্না। স্যার তার পিঠে হাত
বুলিয়ে সান্ত¡নার সুরে বললেন,
পাগলি মেয়ে এভাবে কেউ
কাঁদে? তোর মনের খবর আমি সব
জানি। দেখবি সব ঠিক হয়ে
যাবে, তুই আল্লাহর ওপর ভরসা
রাখ।
এ দিকে বিয়ের আয়োজন
পুরোপুরি সম্পন্ন কিন্তু রিতার
আম্মুর কান্নাজড়িত কণ্ঠে
আফজাল মিয়া যখন শুনতে পেল
রিতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে
না তখন তার অবস্থা এমন হলো যে,
যেন মাথায় আকাশ ভেঙে
পড়েছে।
আফজাল মিয়া কালবিলম্ব না
করে থানায় চলে গেল। থানায়
গিয়ে তো আফজাল মিয়া অবাক।
যে মেয়েকে খুঁজে বের করতে
সে থানায় জিডি করতে এলো,
সে মেয়েই নাকি তার বিরুদ্ধে
মামলা করেছে। ওসি সাহেব যখন
তার হাতে হাতকড়া পরালেন
তখনই সে অপমান সইতে না পেরে
অজ্ঞান হয়ে গেল।
এরপর আফজাল মিয়ার যখন জ্ঞান
ফিরল সে দেখতে পেল সে
হাসপাতালে একটা বেডে।
মাহমুদ স্যার তার মাথায় হাত
রাখলেন। সে বললো, ‘স্যার
আমারে মাফ কইরা দেন, আমার
ভুল হইয়া গেছে। আমি নিজের
কথা চিন্তা কইরা ম্যাইয়াডার
সর্বনাশ করতে গেছিলাম।’
মাহমুদ স্যার বললেন, ‘অভাবে
পড়লে হয়তো অন্য কেউও এ কাজই
করতো। যাক সে বিষয় বাদ দাও।
আজ থেকে ও শুধু তোমারই মেয়ে
নয়, মেয়ে আমারও। আমি একে
ডাক্তার বানিয়েই ছাড়ব।
স্যারের কথা শুনে রিতা যেন
আজ নতুন জীবন ফিরে পেল।
আনন্দে তার গন্ড বেয়ে
দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।