লেখা> মোঃ জাহিদুল হক সুবন।
.
"এখানে কি করছো তুমি?
.
খোলা আকাশের নিচে বসে আছে
মাহফুজ একটা বট গাছের সাথে হেলান
দিয়ে। জায়গাটা তার অনেক প্রিয়।
মনটা তেমন ভাল নেই। যখন মন ভাল
থাকে না এই জায়গায় এসে চুপটি করে
বসে থাকে। সকাল বেলায় বাবার
সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের
হয়ে এদিক ওদিক একটূ ঘুরাঘুরি করে এই
জায়গায় এসে বসে আছে। সকাল
থেকেই তেমন কিছু খায় নি। প্রায় দুপুর
হওয়া বাকি। আসলে যখন মন ভাল থাকে
না, তখন কোন কিছু খাওয়ার রুচি থাকে
না। একা বসে আছে ঠিক তখন সাবিহা
মাহফুজের সামনে এসে কথাটা
বলেছে।
.
"কি হলো চুপ করে আছ কেন? এখানে
একা একা কি করছো?
.
মাহফুজ তবুও চুপ হয়ে থাকে। সাবিহার
দিকে একনজর তাকিয়ে আবার
অন্যদিকে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে যায়।
.
"আশ্চর্য কথা বলবা না? এই কি হয়েছে
তোমার?
.
এই কথাটা বলে সাবিহা মাহফুজের
পাশে বসে। কাধে মাথা রেখে হাত
টুকু ধরে রাখে। সাবিহা জানে ওর
পাশে বসে একটু ছোয়া দিলেই ওর মন
ভাল হয়ে যাবে।
.
"না তেমন কিছু হয় নি। এমনি বসে আছি।
"কিছু একটা তো হয়েছে। না হলে তুমি
চুপচাপ কেন? সেই কখন থেকে তোমায়
খুজঁছি পাই নি। ফোন করলাম ফোন অফ।
তোমার বোন তিথিকে জিজ্ঞেস
করলাম ও বলেছে অফিসেও যাও নি।
বাবার সাথে রাগ করে নাকি বাসা
থেকে বের হয়েছ। তুমি কি এখনো
বাচ্চা। এমন কাজ করো কেন? আমি তো
জানি আমার পাগলটার মন ভাল না
থাকলে এইখানে এসে বসে থাকে।
বলো না কি হয়েছে?
.
মাহফুজ শুধু সাবিহার চোখের দিকে
তাকিয়ে থাকে। সাবিহাও তাকিয়ে
থাকে। চলতে থাকে তাদের
চোখাচোখি। এইভাবে অনেক্ষন দুজন
তাকিয়ে আছে। হঠাত্ মাহফুজ
সাবিহার চাদঁবদনখানি স্পর্শ করে
কপালে আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বলে...
.
"পাগলি আমি তোমায় অনেক
ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া
কাউকে বিয়ে করব না।
.
সাবিহা কথাটা শুনে হি হি হি করে
একটা হাসি দেয়। আর মাহফুজ সেই
মিষ্টি হাসিটার দিকে তাকিয়ে
থাকে।
.
"অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা আসছে
কেন? হু ... তোমার জন্য বিয়ে ঠিক
করেছে নাকি? হি হি হি।
.
মাহফুজ কিছুই বলল না। চুপ করে থাকল। ওর
চুপ করে থাকাতে সাবিহার মুখের
আভাটা একটু অন্য রকম হয়ে যায়।
সাধারণত এই সব ঘটনাগুলো মেয়েদের
মধ্যে বিরাজ মান। বাসা থেকে যখন
একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় তখন
মেয়েটা খুব হতাশ হয়ে যায়। তার প্রিয়
মানুষটাকে কি জবাব দিবে। অনেকে
পালিয়ে যায় তার প্রিয় মানুষটার
সাথে। তার প্রিয় মানুষটা তাকে বুকে
টেনে বলে... আরে বোকা মেয়ে আমি
আছি তো। ভয় পেও না। কিন্তু সাবিহা
আর মাহফুজের মধ্যে ঘটনা উল্টো। আচ্ছা
এখন কি সাবিহা মাহফুজকে শান্তনা
দিয়ে বলবে... এই মন খারাপ করো না,
আমি আছি। দুজনে কিছুক্ষন নিরবতা
পালন করল। মাহফুজ সাবিহার হাত
আকড়ে ধরে বলে...
.
"বাবা আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু
করেছে।
.
সাবিহার মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে গেল।
মূলত এইসব ডায়ালগ গুলা মেয়েরা
কাদঁতে কাদঁতে তার ভালোবাসার
মানুষটার কাছে বলে। সাবিহা একটু
ইতস্তবোধ করে বলল...
.
"ভাল তো বাবা মেয়ে দেখছে পছন্দ
হলে বিয়ে করে ফেলবা। মন খারাপের
কি আছে?
"তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা?
.
সাবিহা চুপ হয়ে যায়। মাহফুজের মা
নেই। ওর বোনের জন্মের দু বছর পরেই মা
ইন্তেকাল করে। বাবার আদর যত্নে দুই
ভাই বোন বড় হয়েছে। মায়ের
ভালোবাসা তেমন না পেলেও
মাহফুজের বাবা তা পূরণ করতে যথাযত
চেষ্টা করেছে। মাহফুজ কখনো তার
বাবার অবাধ্য হয় নি। আজ সকালে
নাস্তার টেবিলে মাহফুজকে একটা
ফটো দিয়ে বলে...
.
"দেখতো মাহফুজ মেয়েটা তোর পছন্দ হয়
কিনা?
"পছন্দ দিয়ে কি হবে?
"আরে বুঝিস না গাধা। আমাকে বল
মেয়েটা তোর পছন্দ কিনা?
.
মাহফুজ ব্যাপারটা বুঝে যায়। ফটো
হাতে নিয়ে বলে...
.
"দেখো বাবা তুমি এইগুলা কেন করছো
আমি বুঝতে পারছি। আমি বিয়ে করব
না।
"আরে গাধা তোর বিয়ের বয়স হয়েছে।
জানিস তোর মা বেচেঁ থাকলে এই
কাজ গুলা তোর মা করত।
.
মাহফুজ ফটোর দিকে কিছুক্ষন
তাকালো। তারপর বলল...
.
"আমি বিয়ে করব না।
.
কথাটা শুনে মাহফুজের বাবা একটু
অবাক হয়। যে ছেলে কোন দিন মুখের
উপর তর্ক করে নি সেই ছেলে আজ....। একটু
রাগান্বিত হয়ে বলল....
.
"কি বললি তুই? তুই বিয়ে করবি না, তোর
গাড় করবে তোর বাবা করবে।
"তুমি বিয়ে করলে করো। কিন্তু আমি
করব না।
.
এই বলে বাসা থেকে মাহফুজ বের হয়ে
আসে। সাবিহা চুপ করে আছে। কি
বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। বিষয়টা
পাশ কেটে বলল...
.
"সকাল বেলা বাসা থেকে বের
হয়েছো কিছু খেয়েছো?
.
মাহফুজ মাথা দিয়ে না সূচক ইশারা
দেয়।
.
"গাধা কোথাকার। রাগ করো আর যাই
করো অন্তত পেট তো শান্তি রাখবা।
চশমা খোলো।
"কেন?
.
এত কেন কেন করবা না। এই বলে
সাবিহা মাহফুজুজের চোখের চশমাটা
খুলে দেয়। তারপর হ্যান্ডব্যাগ থেকে
দুটো ছোট বাটি বের করে। একটাতে
কয়েকটা পরোটা আর আরেকটাতে
মাংস।
.
"এই হা করো।
.
সাবিহা জানে রাগ করলে মাহফুজ না
খেয়ে থাকে। তাই সঙ্গে নাস্তা
নিয়ে এসেছে। সাবিহা নিজ হাতে
খাইয়ে দিচ্ছে। এক অদ্ভুত ভাল লাগে
সাবিহার যখন মাহফুজকে নিজ হাতে
খাইয়ে দেয়। আর ভাবছে এই চশমা পড়া
হাবলা ছেলেটাকে এত ভালোবাসে
কেন? সাবিহা সব সময় চোখে কাজল
দিয়ে রাখে। ওর চোখে পানি জমতে
শুরু করেছে।
নিশ্চয় কাজল লেপটে কালো পানি
বের হবে।
.
"ফটোটা দেখো। এই মেয়েটাকে
কখনো আমার সাথে মানাবে না। তুমি
বলো এই মেয়েকে কি করে বিয়ে করব?
.
সাবিহা ফটো টা হাতে নেয় তবে
কিছু বলে নি। নিচের দিকে তাকিয়ে
থাকল। খাওয়া শেষ হলে ওড়না দিয়ে
মুখ মুছে দেয়। তারপর কিছু না বলে
সাবিহা উঠে হাটতে থাকে। মাহফুজ
বসে বসে তার চলে যাওয়া দেখছে।
ঝাপসা হতে থাকে সাবিহার চলে
যাওয়া দৃশ্য। সাবিহা রাগ ভাঙ্গাতে
এসে এখন নিজেই মন খারাপের আভা
নিয়ে চলে যাচ্ছে।
.
হঠাত্ মাঝ পথ থেকে ছুটে এসে
সাবিহা মাহফুজের সামনে দাড়ায় আর
শার্টের কলার ধরে উঠিয়ে গালে
চটাশ করে থাপ্পর মেরে বলে...
.
"এত নাটক কেন করলা?
.
মাহফুজ হা করে তাকিয়ে থাকে। চরের
চটে চশমাটা মাটিতে পড়ে যায়। আর
ভাবে এটা কি সেই মেয়ে যে
আমাকে একটু আগে খাইয়ে দিল। এটা
কি সেই মেয়ে যে নিজের ওড়না
দিয়ে মুখ মুছে দিল।
.
"ঐ চার চোখ কানা চুপ করে আছো কেন?
তুমি বিয়ে করবে না?
"না এই মেয়েকে আমি বিয়ে করব না।
আমায় চর মেরেছে। এই মেয়েকে
বিয়ে করলে আমার খবর আছে।
"বিয়ে করবে না তুমি?
.
আসল কথা হলো ফটোতে যার ছবি ছিল
সেটা আর কেউ না সাবিহার।
মাঝপথে গিয়ে যখন সাবিহা ফটোটার
দিকে চোখ বুলিয়ে নিজিকে দেখে
তখন সে থমকে যায়। আর অবাক হয়। কেন
এই চশমা পড়া হাবলা ছেলেটা এত
নাটক করল? মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে
তাকিয়ে কাদঁতে থাকে সাবিহা।
মাহফুজের পাশের এলাকাতেই
সাবিহারা থাকে। দেখতে শুনতে
ভালই। একটা ছেলে/মেয়ে যখন
এলাকায় বেড়ে উঠে তখন তাদের
চালচলন আচাড় ব্যবহার মানুষের নজরে
লাগে বিশেষ করে মুরিব্বদের চোখে।
সেই অনুযায়ী সাবিহাকে ভাল লাগত
মাহফুজের বাবার কাছে।
.
"আরে কি হলো কাদঁছো কেন?
"আমি কাদঁলে তোমার কি?
"আরে শোনো বাবা যখন নাস্তার
টেবিলে তোমার ফটো দেখালো
আমি ভাবতেও পারি নি এটা হবে। আর
আমি যদি সাথে সাথে রাজি হয়ে
বলতাম বাবা পছন্দ হয়েছে বিয়ে করব।
রশি রেডি রাখো না মানে মালা
রেডি রাখো গলায় ঝুলাতে হবে।
ব্যাপারটা কি রকম দাড়ায় বলো তো।
তাই এই নাটক করেছি।
"কচুর নাটক করেছো তুমি । অন্তত তোমার
বাবাকে বলতে পারতা যে,... বাবা
আমি ভেবে চিন্তে পরে বলব।.... এখন
যদি তোমার বাবা ভাবে এই মেয়ে
তোমার পছন্দ না। তখন যদি অন্য
মেয়েকে ঠিক করে?
.
মাহফুজ চশমাট তুলে চোখে দিয়ে
মাথা চুলকাতে থাকে। আর বলে....
.
"এখন কি আমাদের বিয়ে হবে না?
"নাহ। এই রকম গাধার সাথে বিয়ে হবে
না।
"এই আমি কি সত্যিই গাধা?
.
সাবিহা কিছু না বলে হাটতে থাকে।
আর মাহফুজ গাধার মত দাড়িয়ে থাকে।
আসলে সমাজে এই রকম গাধা গুলার
ভালোবাসাতে কোন হিংসে নেই।
বেশি কিছু চাওয়া নেই। ওরা গাধার
মতই ভালোবেসে যায়। হয়ত সাবিহা
আবার দৌড়ে এসে মাহফুজকে জড়িয়ে
ধরে বলবে আমার গাধাটাকে আমি
অনেক ভালোবাসি। আর মাহফুজ
কপালে আলতো করে ছুয়ে দিবে।
বেচেঁ থাক সব গাধাদের
ভালোবাসা।
.
"এখানে কি করছো তুমি?
.
খোলা আকাশের নিচে বসে আছে
মাহফুজ একটা বট গাছের সাথে হেলান
দিয়ে। জায়গাটা তার অনেক প্রিয়।
মনটা তেমন ভাল নেই। যখন মন ভাল
থাকে না এই জায়গায় এসে চুপটি করে
বসে থাকে। সকাল বেলায় বাবার
সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের
হয়ে এদিক ওদিক একটূ ঘুরাঘুরি করে এই
জায়গায় এসে বসে আছে। সকাল
থেকেই তেমন কিছু খায় নি। প্রায় দুপুর
হওয়া বাকি। আসলে যখন মন ভাল থাকে
না, তখন কোন কিছু খাওয়ার রুচি থাকে
না। একা বসে আছে ঠিক তখন সাবিহা
মাহফুজের সামনে এসে কথাটা
বলেছে।
.
"কি হলো চুপ করে আছ কেন? এখানে
একা একা কি করছো?
.
মাহফুজ তবুও চুপ হয়ে থাকে। সাবিহার
দিকে একনজর তাকিয়ে আবার
অন্যদিকে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে যায়।
.
"আশ্চর্য কথা বলবা না? এই কি হয়েছে
তোমার?
.
এই কথাটা বলে সাবিহা মাহফুজের
পাশে বসে। কাধে মাথা রেখে হাত
টুকু ধরে রাখে। সাবিহা জানে ওর
পাশে বসে একটু ছোয়া দিলেই ওর মন
ভাল হয়ে যাবে।
.
"না তেমন কিছু হয় নি। এমনি বসে আছি।
"কিছু একটা তো হয়েছে। না হলে তুমি
চুপচাপ কেন? সেই কখন থেকে তোমায়
খুজঁছি পাই নি। ফোন করলাম ফোন অফ।
তোমার বোন তিথিকে জিজ্ঞেস
করলাম ও বলেছে অফিসেও যাও নি।
বাবার সাথে রাগ করে নাকি বাসা
থেকে বের হয়েছ। তুমি কি এখনো
বাচ্চা। এমন কাজ করো কেন? আমি তো
জানি আমার পাগলটার মন ভাল না
থাকলে এইখানে এসে বসে থাকে।
বলো না কি হয়েছে?
.
মাহফুজ শুধু সাবিহার চোখের দিকে
তাকিয়ে থাকে। সাবিহাও তাকিয়ে
থাকে। চলতে থাকে তাদের
চোখাচোখি। এইভাবে অনেক্ষন দুজন
তাকিয়ে আছে। হঠাত্ মাহফুজ
সাবিহার চাদঁবদনখানি স্পর্শ করে
কপালে আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বলে...
.
"পাগলি আমি তোমায় অনেক
ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া
কাউকে বিয়ে করব না।
.
সাবিহা কথাটা শুনে হি হি হি করে
একটা হাসি দেয়। আর মাহফুজ সেই
মিষ্টি হাসিটার দিকে তাকিয়ে
থাকে।
.
"অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা আসছে
কেন? হু ... তোমার জন্য বিয়ে ঠিক
করেছে নাকি? হি হি হি।
.
মাহফুজ কিছুই বলল না। চুপ করে থাকল। ওর
চুপ করে থাকাতে সাবিহার মুখের
আভাটা একটু অন্য রকম হয়ে যায়।
সাধারণত এই সব ঘটনাগুলো মেয়েদের
মধ্যে বিরাজ মান। বাসা থেকে যখন
একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় তখন
মেয়েটা খুব হতাশ হয়ে যায়। তার প্রিয়
মানুষটাকে কি জবাব দিবে। অনেকে
পালিয়ে যায় তার প্রিয় মানুষটার
সাথে। তার প্রিয় মানুষটা তাকে বুকে
টেনে বলে... আরে বোকা মেয়ে আমি
আছি তো। ভয় পেও না। কিন্তু সাবিহা
আর মাহফুজের মধ্যে ঘটনা উল্টো। আচ্ছা
এখন কি সাবিহা মাহফুজকে শান্তনা
দিয়ে বলবে... এই মন খারাপ করো না,
আমি আছি। দুজনে কিছুক্ষন নিরবতা
পালন করল। মাহফুজ সাবিহার হাত
আকড়ে ধরে বলে...
.
"বাবা আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু
করেছে।
.
সাবিহার মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে গেল।
মূলত এইসব ডায়ালগ গুলা মেয়েরা
কাদঁতে কাদঁতে তার ভালোবাসার
মানুষটার কাছে বলে। সাবিহা একটু
ইতস্তবোধ করে বলল...
.
"ভাল তো বাবা মেয়ে দেখছে পছন্দ
হলে বিয়ে করে ফেলবা। মন খারাপের
কি আছে?
"তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা?
.
সাবিহা চুপ হয়ে যায়। মাহফুজের মা
নেই। ওর বোনের জন্মের দু বছর পরেই মা
ইন্তেকাল করে। বাবার আদর যত্নে দুই
ভাই বোন বড় হয়েছে। মায়ের
ভালোবাসা তেমন না পেলেও
মাহফুজের বাবা তা পূরণ করতে যথাযত
চেষ্টা করেছে। মাহফুজ কখনো তার
বাবার অবাধ্য হয় নি। আজ সকালে
নাস্তার টেবিলে মাহফুজকে একটা
ফটো দিয়ে বলে...
.
"দেখতো মাহফুজ মেয়েটা তোর পছন্দ হয়
কিনা?
"পছন্দ দিয়ে কি হবে?
"আরে বুঝিস না গাধা। আমাকে বল
মেয়েটা তোর পছন্দ কিনা?
.
মাহফুজ ব্যাপারটা বুঝে যায়। ফটো
হাতে নিয়ে বলে...
.
"দেখো বাবা তুমি এইগুলা কেন করছো
আমি বুঝতে পারছি। আমি বিয়ে করব
না।
"আরে গাধা তোর বিয়ের বয়স হয়েছে।
জানিস তোর মা বেচেঁ থাকলে এই
কাজ গুলা তোর মা করত।
.
মাহফুজ ফটোর দিকে কিছুক্ষন
তাকালো। তারপর বলল...
.
"আমি বিয়ে করব না।
.
কথাটা শুনে মাহফুজের বাবা একটু
অবাক হয়। যে ছেলে কোন দিন মুখের
উপর তর্ক করে নি সেই ছেলে আজ....। একটু
রাগান্বিত হয়ে বলল....
.
"কি বললি তুই? তুই বিয়ে করবি না, তোর
গাড় করবে তোর বাবা করবে।
"তুমি বিয়ে করলে করো। কিন্তু আমি
করব না।
.
এই বলে বাসা থেকে মাহফুজ বের হয়ে
আসে। সাবিহা চুপ করে আছে। কি
বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। বিষয়টা
পাশ কেটে বলল...
.
"সকাল বেলা বাসা থেকে বের
হয়েছো কিছু খেয়েছো?
.
মাহফুজ মাথা দিয়ে না সূচক ইশারা
দেয়।
.
"গাধা কোথাকার। রাগ করো আর যাই
করো অন্তত পেট তো শান্তি রাখবা।
চশমা খোলো।
"কেন?
.
এত কেন কেন করবা না। এই বলে
সাবিহা মাহফুজুজের চোখের চশমাটা
খুলে দেয়। তারপর হ্যান্ডব্যাগ থেকে
দুটো ছোট বাটি বের করে। একটাতে
কয়েকটা পরোটা আর আরেকটাতে
মাংস।
.
"এই হা করো।
.
সাবিহা জানে রাগ করলে মাহফুজ না
খেয়ে থাকে। তাই সঙ্গে নাস্তা
নিয়ে এসেছে। সাবিহা নিজ হাতে
খাইয়ে দিচ্ছে। এক অদ্ভুত ভাল লাগে
সাবিহার যখন মাহফুজকে নিজ হাতে
খাইয়ে দেয়। আর ভাবছে এই চশমা পড়া
হাবলা ছেলেটাকে এত ভালোবাসে
কেন? সাবিহা সব সময় চোখে কাজল
দিয়ে রাখে। ওর চোখে পানি জমতে
শুরু করেছে।
নিশ্চয় কাজল লেপটে কালো পানি
বের হবে।
.
"ফটোটা দেখো। এই মেয়েটাকে
কখনো আমার সাথে মানাবে না। তুমি
বলো এই মেয়েকে কি করে বিয়ে করব?
.
সাবিহা ফটো টা হাতে নেয় তবে
কিছু বলে নি। নিচের দিকে তাকিয়ে
থাকল। খাওয়া শেষ হলে ওড়না দিয়ে
মুখ মুছে দেয়। তারপর কিছু না বলে
সাবিহা উঠে হাটতে থাকে। মাহফুজ
বসে বসে তার চলে যাওয়া দেখছে।
ঝাপসা হতে থাকে সাবিহার চলে
যাওয়া দৃশ্য। সাবিহা রাগ ভাঙ্গাতে
এসে এখন নিজেই মন খারাপের আভা
নিয়ে চলে যাচ্ছে।
.
হঠাত্ মাঝ পথ থেকে ছুটে এসে
সাবিহা মাহফুজের সামনে দাড়ায় আর
শার্টের কলার ধরে উঠিয়ে গালে
চটাশ করে থাপ্পর মেরে বলে...
.
"এত নাটক কেন করলা?
.
মাহফুজ হা করে তাকিয়ে থাকে। চরের
চটে চশমাটা মাটিতে পড়ে যায়। আর
ভাবে এটা কি সেই মেয়ে যে
আমাকে একটু আগে খাইয়ে দিল। এটা
কি সেই মেয়ে যে নিজের ওড়না
দিয়ে মুখ মুছে দিল।
.
"ঐ চার চোখ কানা চুপ করে আছো কেন?
তুমি বিয়ে করবে না?
"না এই মেয়েকে আমি বিয়ে করব না।
আমায় চর মেরেছে। এই মেয়েকে
বিয়ে করলে আমার খবর আছে।
"বিয়ে করবে না তুমি?
.
আসল কথা হলো ফটোতে যার ছবি ছিল
সেটা আর কেউ না সাবিহার।
মাঝপথে গিয়ে যখন সাবিহা ফটোটার
দিকে চোখ বুলিয়ে নিজিকে দেখে
তখন সে থমকে যায়। আর অবাক হয়। কেন
এই চশমা পড়া হাবলা ছেলেটা এত
নাটক করল? মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে
তাকিয়ে কাদঁতে থাকে সাবিহা।
মাহফুজের পাশের এলাকাতেই
সাবিহারা থাকে। দেখতে শুনতে
ভালই। একটা ছেলে/মেয়ে যখন
এলাকায় বেড়ে উঠে তখন তাদের
চালচলন আচাড় ব্যবহার মানুষের নজরে
লাগে বিশেষ করে মুরিব্বদের চোখে।
সেই অনুযায়ী সাবিহাকে ভাল লাগত
মাহফুজের বাবার কাছে।
.
"আরে কি হলো কাদঁছো কেন?
"আমি কাদঁলে তোমার কি?
"আরে শোনো বাবা যখন নাস্তার
টেবিলে তোমার ফটো দেখালো
আমি ভাবতেও পারি নি এটা হবে। আর
আমি যদি সাথে সাথে রাজি হয়ে
বলতাম বাবা পছন্দ হয়েছে বিয়ে করব।
রশি রেডি রাখো না মানে মালা
রেডি রাখো গলায় ঝুলাতে হবে।
ব্যাপারটা কি রকম দাড়ায় বলো তো।
তাই এই নাটক করেছি।
"কচুর নাটক করেছো তুমি । অন্তত তোমার
বাবাকে বলতে পারতা যে,... বাবা
আমি ভেবে চিন্তে পরে বলব।.... এখন
যদি তোমার বাবা ভাবে এই মেয়ে
তোমার পছন্দ না। তখন যদি অন্য
মেয়েকে ঠিক করে?
.
মাহফুজ চশমাট তুলে চোখে দিয়ে
মাথা চুলকাতে থাকে। আর বলে....
.
"এখন কি আমাদের বিয়ে হবে না?
"নাহ। এই রকম গাধার সাথে বিয়ে হবে
না।
"এই আমি কি সত্যিই গাধা?
.
সাবিহা কিছু না বলে হাটতে থাকে।
আর মাহফুজ গাধার মত দাড়িয়ে থাকে।
আসলে সমাজে এই রকম গাধা গুলার
ভালোবাসাতে কোন হিংসে নেই।
বেশি কিছু চাওয়া নেই। ওরা গাধার
মতই ভালোবেসে যায়। হয়ত সাবিহা
আবার দৌড়ে এসে মাহফুজকে জড়িয়ে
ধরে বলবে আমার গাধাটাকে আমি
অনেক ভালোবাসি। আর মাহফুজ
কপালে আলতো করে ছুয়ে দিবে।
বেচেঁ থাক সব গাধাদের
ভালোবাসা।