মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৫০- অশ্রু

"বৃষ্টিতে ভিজা একটা অন্যরকম অনুভূতি তাই না?
.
আজকে সকাল থেকেই টুপটুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। অন্যান্য
দিনের চেয়ে আজকের আবহাওয়া অন্যরকম। তারচেয়ে
আজকের বৃষ্টিটাও অন্যরকম। ঝিরি ঝিরি করে পড়ছে।
অন্যদিন বৃষ্টির সাথে ধমকা বাতাস বয়ে বেড়ায় আজ
সেটা হচ্ছে না। কেন যেন আজকে ইচ্ছে হলো বৃষ্টিতে
ভিজতে তাই ভিজতেছি। তবে একা নয়। পিচ্চি
ছেলেদের সাথে। ঠিক তখনি একটা মেয়ে ছাতা মাথায়
দিয়ে এসে ঐ কথাটা বললো... বৃষ্টিতে ভিজা একটা
অন্যরকম অনুভূতি তাই না?...
.
আমি কিছুই বলি নি। চুপ করে থাকলাম। আর ঐ পিচ্চি
ছেলেগুলার সাথে ছেলে মানষী করতে থাকলাম। কাদাঁ
ছুড়াছুড়ি করতে থাকলাম।
.
"হি হি হি। অদ্ভুত আপনি। কি আনন্দে পিচ্চি ছেলেদের
সাথে বৃষ্টিতে ভিজছেন।
.
মেয়েটি যখন হি হি হি করে হাসলো তখন এক নজর
তাকালাম। বর্ষণমুখর দিনে এমন একটা মেয়ে চিনা নেই
জানা নেই আমার সাথে কথা বলছে। মনে হচ্ছে খুব
পরিচিত। আমি তো জানি মেয়েরা নিজে গায়ে পড়ে
কথা বলতে আসে না। তবে এই মেয়েটা মনে হচ্ছে একটু
অন্যরকম।
.
"বৃষ্টিতে কখনো এইভাবে ভিজেছেন?
"বৃষ্টিতে ভিজেছি অনেক। তবে এইভাবে আপনার মত
ভিজি নি। জানলার পাশে দাড়িয়ে দু হাত বাড়িয়ে
বৃষ্টির জল স্পর্শ করছিলাম ঠিক তখনি আপনাকে দেখতে
পাই এই ছেলেগুলার সাথে বৃষ্টিতে ভিজছেন। কেন যেন
কৌতহল জাগল খুব কাছ থেকে আপনাদের আনন্দটুকু
উপলব্দি করার। তাই ছাতা মাথায় দিয়ে চলে এসেছি।
.
মেয়েটি এক টানা কথাগুলা বলে শেষ করলো।
.
"কি নাম আপনার?
"জ্বি আমি সুবন।
"এইভাবে ছেলে মানষী করে বেড়ান? জানেন আপনারা
যা পারেন তা আমরা পারি না।
.
আমি মেয়েটির কথা বুঝলাম না। কি বুঝাতে চেয়েছে
মেয়েটি?
.
"আমি কিছুই বুঝি নি।
"এই যে ছেলেরা একটা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে
পারে আমরা মেয়েরা তা পারি না। আমাদের
প্রত্যেকটা কাজে জবাবদিহি করতে হয়।
"তা অবশ্য ঠিক।
"জানেন আমারো এখন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু...
.
মেয়েটি পুরো কথাটা শেষ করলো না। অসম্পূর্ণ ভাবেই
কথাটা রেখে দিল।
.
"কিন্তু কি?
"ঐযে স্বাধীনতা নেই।
.
আমি আর কিছু না বলে দু হাত বাড়িয়ে চোখ দুটো বন্ধ
করে আকাশের দিকে মুখ করে রাখলাম।
.
"বৃষ্টিতে কখনো কেদেঁছেন?
.
মেয়েটির কথায় আবার শরীরটা নারা দিয়ে সোজা
হলাম।
.
"না কাদিঁ নি। আপনি কেদেঁছেন?
"হ্যাঁ অনেকবার কেদেঁছি।
"আপনার কি ভীষন দুঃখ?
"কেন বলুন তো?
"আমি তো জানি যারা বুকে কষ্ট নামের শব্দটাকে চাপা
দিয়ে হাসি খুশিতে চলাফেরা করে তারা নিরবে
বৃষ্টিতে কাঁদে।
.
এবার মেয়েটি চুপ হয়ে গেল। আমার বুঝতে বাকি রইলো
না।
.
"আপনার নাম জানা হয় নি।
"স্নিগ্ধা
"ভিজবেন বৃষ্টিতে?
"বাসায় বকা দিবে।
"তাহলে ঠিক আছে ভিজার দরকার নেই।
.
আমি আবার ছেলেগুলার সাথে দুষ্টামি করতে থাকলাম।
ঠিক কিছুক্ষন পর মেয়েটি ছাতা বন্ধ করে আমার পাশে
দাড়াল আর বললো...
.
"আমি ভিজবো বৃষ্টিতে। একটু কাদঁবো।
.
আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। আর মনে মনে ভাবতে
লাগলাম মেয়েটি কি সত্যি কাদঁবে?
.
"কেন কাদঁবেন?
"মন হালকা করার জন্য।
"কি এমন কষ্ট আপনার?
"থাক না ঐসব কথা। এখন যে কাদঁতে চাই আমি।
.
সবার জীবনে কিছু না কিছু কষ্ট থাকে। কেউ প্রকাশ
করে আর কেউ প্রকাশ করে না। আর যারা প্রকাশ করে
না। তারা নিরবে রাতে বালিশ ভিজায়। বৃষ্টি এলে
বৃষ্টিতে কান্না করে।
.
"চলেন আমিও কাদঁবো আপনার সাথে।
"আপনি কেন কাদঁবেন?
"আমারো ইচ্ছে হচ্ছে।
"আপনারো কি কষ্ট আছে?
.
আমি চুপ হয়ে গেলাম। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। ঐযে
বললাম কেউ প্রকাশ করে আর কেউ প্রকাশ করে না।
আমিও সেই দলের একজন। আমি বললাম...
.
"চলেন কাঁদি। আর পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করুন।
"হ্যাঁ চলুন।
.
এরপর দুজনেই দু হাত মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে
স্মৃতি গুলা স্মরণ করে কাদঁতে থাকলাম।
.
প্রায় অনেক্ষন পর স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞেস করলাম...
.
"মন হালকা লাগছে আপনার?
"হ্যাঁ অনেকটা।
"আরো হালকা করতে চান?
"কিভাবে?
"দু হাত মেলে এবার চিত্কার করে বলুন আই হেইট ইয়ু।
.
স্নিগ্ধা মেয়েটা আমার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে
থাকলো। মনে হচ্ছে কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না।
আমি নিজেই দু হাত মেলে চিত্কার করে বলতে
লাগলাম.. আই হেইট ইয়ু.. ১বার ২বার এইভাবে অনেকবার
বললাম। এরপর পাশ থেকে শব্দ শুনতে পেলাম...
.
"আই হেইট ইয়ু.... আই হেইট ইয়ু... আই হেইট ইয়ু....
.
আমার দেখাদেখি স্নিগ্ধাও বলতে লাগলো। আমি
শুনতে লাগলাম। মেয়েটি থামছে না। কাদঁতে কাদঁতে
বলছে থামার নাম নেই। একপর্যায়ে মাটিতে বসে উচ্চ
সুরে কাদঁতে লাগলো হাতের মাঝে মুখ গুজে। কাদুঁক
মেয়েটা। আজ যে কাদাঁর দিন। না আর কিছুই বলবো না
মেয়েটিকে। আমি হাটা দিলাম আর গাইতে থাকলাম....
ও আমায় ভালোবাসে নি অসীম এ ভালোবাসা ও বুঝে
নি....
লেখা> মোঃ জাহিদুল হক সুবন।