আজও প্রতিটি বৃষ্টির দিনে আমি ছাদে গিয়ে দাঁড়াই ।
ওপাশের খোলা ছাদটার দিকে তাকিয়ে বারবার পলক
ফেলি । বৃষ্টিফোঁটারা আমার মোটা গ্লাসের
চশমাটাকে ঘোলা করে দেয় । শার্টের হাতায় চশমটা
মুছি । তারপর আবার তাকাই । আবার চশমাটা ঘোলা হয় ,
আবার মুছি , তারপর আবার তাকাই ।
মাঝেমাঝে কেউ একজন পেছন থেকে ডাকে , আমি
প্রতিবারই চমকে উঠি ।
.
"আবারো একা একা বৃষ্টিতে ভিজতেছ ! কতবার বলেছি
আমাকেও ডাকবে ! আমরা একসাথে ভিজব । কে শুনে
কার কথা । যাও . . . তোমার সাথে কথাই বলবো না । তুমি
আমাকে একটুও ভালোবাস না ।"
.
আমি রিমির দিকে তাকাতে পারি না । অন্যদিকে
তাকিয়ে থাকি , কিংবা মাথা নিচু করে রাখি । এই
মেয়েটি আমাকে ভিষন ভালোবাসে । কিন্তু মেয়েটি
জানে না , তার ভালোবাসার প্রতিদান আমি কখনোই
দিতে পারবো না । আমার সমস্ত ভালোবাসা , আবেগ ,
অনুভূতি ওপাশের ছাদটায় বন্ধী হয়ে আছে ।
.
সদ্য শাড়ি পরতে শেখা ষোড়শী এক তরুনী আনমনে ভিজে
চলেছে । তার সরু কোমরে যেন ভরা শ্রাবণের ঢেউ
উঠেছে , গোলাপরাঙা দু'টি ঠোঁটে যেন কামনার আগুন
লেগেছে । এই অঝোর বর্ষায় সেই আগুন দাউ দাউ করে
জ্বলছে । জ্বলছি আমি , জ্বলছে আমার ভিতর-বাহির ,
আমার পুরো পৃথিবী ।
. .
রিমি মেয়েটা বড় অভিমানী । যখন-তখন আমার সাথে
মান-অভিমানের খেলা খেলতে চায় । মেয়েটা চায়
আমি গিয়ে তার মান ভাঙ্গাই । কাঁধে হাত রেখে
মিষ্টি করে দু'টো কথা বলি । আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে
হয় , কিন্তু পারি না । অদৃশ্যে এক শিকলে হাত-পা বাঁধা
আমার ।
.
আমার ডায়েরি জুড়ে শত শত কবিতা । রিমি গভীর
মনযোগে একেকটা কবিতা পড়ে , চুপিচুপি ঘুরে বেড়ায়
কবিতার অলিগলিতে , নিজেকে খুঁজে ফিরে বারবার ।
কই ? রিমি নামের কেউতো এখানে নেই । তবে কেউ
একজন আছে । যার বয়স ষোল কি সতেরো হবে । যার নাম
কখনো মেঘবালিকা , কখনো সূর্যমুখী , কখনো চৈতালী ,
কখনো বৈকালী , কখনো সুহাসিনী , কখনোবা
মায়াবিনী ।
রিমি ঐ নামগুলোর ছায়ায় নিজেকে খোঁজার চেষ্টা
করে । মাঝে মাঝে আমাকে প্রশ্নও করে ।
"আরে বোকা এগুলো সব কাল্পনিক চরিত্র।"
আমার চিরায়ত এই সহজাত জবাবে রিমি মাথা দোলায় ।
যেন সব বুঝে ফেলেছে । তারপর আবার কি যেন ভাবনা
এসে ওকে ঘিরে ধরে । এভাবেই চলছে ।
.
এবারের বর্ষাটা বড় দীর্ঘ । শেষই হতে চায় না । সাত বছর
আগের সেই বর্ষাটাও এমনই ছিল । আমি এভাবেই
ওপাশের ছাদটায় তাকিয়ে ছিলাম । মেয়েটা সেই কখন
থেকে ভিজে চলেছে । চোখ দু'টো টকটকে লাল । হঠাত্
বিয়ের খবরে সে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে । আমিও
নিরুপায় । বিয়ে করার মত বয়স , সামর্থ্য, সাহস কোনটাই
ছিল না আমার । তাকে ফিরিয়ে দেয়াটাই ছিল সহজ পথ
। আমি সে পথেই হাঁটলাম ।
কিন্তু সে হাঁটলো নতুন এক পথে । হারিয়ে যাওয়টাই
যেখানে গন্তব্য । আমি বুঝিনি , সে আমাকে বুঝতেই
দেয়নি । তার আগেই সব শেষ । নিচে তাকিয়ে দেখি
নিথর দেহটা পড়ে আছে । বর্ষার জল আর রক্তের ঢল
মিলেমিশে একাকার ।
.
.
রিমি যে কখন এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই
করিনি । আমি বুঝতে পারছি সে আমার সাথে ভিজতে
চাইছে । চোখে তার রাজ্যের তৃষ্ণা , স্পর্শে মাতাল
আহ্বান । আজ কিছুতেই সেই আহ্বান উপেক্ষা করতে
পারলাম না আমি । আচমকাই ওকে আমার ভেজা বুকে
টেনে নিলাম । মেয়েটা কিছুক্ষন আমার ঘোলা চোখে
তাকিয়ে ছিল , তারপর কেঁদেই ফেললো ।
"তুমি এত নিষ্ঠুর কেন বলতো ? আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে
ভিজলে এমন কি ক্ষতি তোমার ? তুমি জানো বৃষ্টি
আমার কতটা ভাল লাগার ? তুমি জানো তোমায় কতটা
ভালোবাসি আমি ?
.
রিমির গলায় আবার অভিমানের সুর । নিজের সমস্ত
শক্তি দিয়ে 'ও' আমাকে জড়িয়ে রাখতে চাইছে । সমস্ত
ভালোবাসা , আবেগ আর সবটুকু নারীত্ব দিয়ে আমাকে
দখল করতে চাইছে ।
কিন্তু আমার দৃষ্টি ওপাশের ছাদটার দিকে , বৃষ্টি-বন্দী
এক ষোড়শী তরুনীর দিকে ।
- -
লেখা : FA Tarek
ওপাশের খোলা ছাদটার দিকে তাকিয়ে বারবার পলক
ফেলি । বৃষ্টিফোঁটারা আমার মোটা গ্লাসের
চশমাটাকে ঘোলা করে দেয় । শার্টের হাতায় চশমটা
মুছি । তারপর আবার তাকাই । আবার চশমাটা ঘোলা হয় ,
আবার মুছি , তারপর আবার তাকাই ।
মাঝেমাঝে কেউ একজন পেছন থেকে ডাকে , আমি
প্রতিবারই চমকে উঠি ।
.
"আবারো একা একা বৃষ্টিতে ভিজতেছ ! কতবার বলেছি
আমাকেও ডাকবে ! আমরা একসাথে ভিজব । কে শুনে
কার কথা । যাও . . . তোমার সাথে কথাই বলবো না । তুমি
আমাকে একটুও ভালোবাস না ।"
.
আমি রিমির দিকে তাকাতে পারি না । অন্যদিকে
তাকিয়ে থাকি , কিংবা মাথা নিচু করে রাখি । এই
মেয়েটি আমাকে ভিষন ভালোবাসে । কিন্তু মেয়েটি
জানে না , তার ভালোবাসার প্রতিদান আমি কখনোই
দিতে পারবো না । আমার সমস্ত ভালোবাসা , আবেগ ,
অনুভূতি ওপাশের ছাদটায় বন্ধী হয়ে আছে ।
.
সদ্য শাড়ি পরতে শেখা ষোড়শী এক তরুনী আনমনে ভিজে
চলেছে । তার সরু কোমরে যেন ভরা শ্রাবণের ঢেউ
উঠেছে , গোলাপরাঙা দু'টি ঠোঁটে যেন কামনার আগুন
লেগেছে । এই অঝোর বর্ষায় সেই আগুন দাউ দাউ করে
জ্বলছে । জ্বলছি আমি , জ্বলছে আমার ভিতর-বাহির ,
আমার পুরো পৃথিবী ।
. .
রিমি মেয়েটা বড় অভিমানী । যখন-তখন আমার সাথে
মান-অভিমানের খেলা খেলতে চায় । মেয়েটা চায়
আমি গিয়ে তার মান ভাঙ্গাই । কাঁধে হাত রেখে
মিষ্টি করে দু'টো কথা বলি । আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে
হয় , কিন্তু পারি না । অদৃশ্যে এক শিকলে হাত-পা বাঁধা
আমার ।
.
আমার ডায়েরি জুড়ে শত শত কবিতা । রিমি গভীর
মনযোগে একেকটা কবিতা পড়ে , চুপিচুপি ঘুরে বেড়ায়
কবিতার অলিগলিতে , নিজেকে খুঁজে ফিরে বারবার ।
কই ? রিমি নামের কেউতো এখানে নেই । তবে কেউ
একজন আছে । যার বয়স ষোল কি সতেরো হবে । যার নাম
কখনো মেঘবালিকা , কখনো সূর্যমুখী , কখনো চৈতালী ,
কখনো বৈকালী , কখনো সুহাসিনী , কখনোবা
মায়াবিনী ।
রিমি ঐ নামগুলোর ছায়ায় নিজেকে খোঁজার চেষ্টা
করে । মাঝে মাঝে আমাকে প্রশ্নও করে ।
"আরে বোকা এগুলো সব কাল্পনিক চরিত্র।"
আমার চিরায়ত এই সহজাত জবাবে রিমি মাথা দোলায় ।
যেন সব বুঝে ফেলেছে । তারপর আবার কি যেন ভাবনা
এসে ওকে ঘিরে ধরে । এভাবেই চলছে ।
.
এবারের বর্ষাটা বড় দীর্ঘ । শেষই হতে চায় না । সাত বছর
আগের সেই বর্ষাটাও এমনই ছিল । আমি এভাবেই
ওপাশের ছাদটায় তাকিয়ে ছিলাম । মেয়েটা সেই কখন
থেকে ভিজে চলেছে । চোখ দু'টো টকটকে লাল । হঠাত্
বিয়ের খবরে সে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে । আমিও
নিরুপায় । বিয়ে করার মত বয়স , সামর্থ্য, সাহস কোনটাই
ছিল না আমার । তাকে ফিরিয়ে দেয়াটাই ছিল সহজ পথ
। আমি সে পথেই হাঁটলাম ।
কিন্তু সে হাঁটলো নতুন এক পথে । হারিয়ে যাওয়টাই
যেখানে গন্তব্য । আমি বুঝিনি , সে আমাকে বুঝতেই
দেয়নি । তার আগেই সব শেষ । নিচে তাকিয়ে দেখি
নিথর দেহটা পড়ে আছে । বর্ষার জল আর রক্তের ঢল
মিলেমিশে একাকার ।
.
.
রিমি যে কখন এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই
করিনি । আমি বুঝতে পারছি সে আমার সাথে ভিজতে
চাইছে । চোখে তার রাজ্যের তৃষ্ণা , স্পর্শে মাতাল
আহ্বান । আজ কিছুতেই সেই আহ্বান উপেক্ষা করতে
পারলাম না আমি । আচমকাই ওকে আমার ভেজা বুকে
টেনে নিলাম । মেয়েটা কিছুক্ষন আমার ঘোলা চোখে
তাকিয়ে ছিল , তারপর কেঁদেই ফেললো ।
"তুমি এত নিষ্ঠুর কেন বলতো ? আমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে
ভিজলে এমন কি ক্ষতি তোমার ? তুমি জানো বৃষ্টি
আমার কতটা ভাল লাগার ? তুমি জানো তোমায় কতটা
ভালোবাসি আমি ?
.
রিমির গলায় আবার অভিমানের সুর । নিজের সমস্ত
শক্তি দিয়ে 'ও' আমাকে জড়িয়ে রাখতে চাইছে । সমস্ত
ভালোবাসা , আবেগ আর সবটুকু নারীত্ব দিয়ে আমাকে
দখল করতে চাইছে ।
কিন্তু আমার দৃষ্টি ওপাশের ছাদটার দিকে , বৃষ্টি-বন্দী
এক ষোড়শী তরুনীর দিকে ।
- -
লেখা : FA Tarek