মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৩৭- মায়াবী প্রেম

লেখকঃ দিশাহীন বালক (জাবেদ)

মিষ্টি সকালে সূর্যের মৃদু আলোটা চোখ স্পর্শ করা মাত্রই ঘুম ভেঙে যায় আবিরের । ঘুম থেকে উঠে অন্তত একবার হলেও মোবাইল চেক করা এটাকে তার রীতিগত স্বভাব বলা যেতে পারে। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে চোখ পরতেই আবিরের চোখতো পুরো চড়কগাছ । অন্য কোন সময়তো এরকমটা হয়না । বেশ কিছু এসএমএস এসেছে তার মোবাইলে । প্রথম এসএমএস টা তার প্রিয় মানুষটার । অনেকটা কৌতূহল নিয়েই প্রথম এসএমএস টা open করল আবির । দেখা মাত্রই মনে পরে গেল যে আজ তার Birthday । আর সে কারনেই সবাই তাকে Wish করেছে । অবশ্য Birthday কথাটা সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল । হঠাত মোবাইলের স্ক্রিনে লেখা উঠল………………
Incoming Call Alpona….
আর হে বলাইতো হয়নি মেয়েটির নাম আল্পনা যাকে আবির সবকিছুর চাইতেও বেশী ভলবাসে । খুবই সহজ সরল একটি মেয়ে । সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল ওর চোখ দুটু , খুবই মায়াবি । প্রথম দেখাতেই আবিরের চোখ আটকে যায় মেয়েটির চোখে । মেয়েটির সাথে আবিরের প্রথম দেখা হয় ওর বন্ধু রিয়াদের বোনের বিয়ের সময় । আবির এবং রিয়াদ খুব ভাল বন্ধু । চলতি মাসের ২৩তারিখ রিয়াদের ছোট বোনের বিয়ে। অবশ্য রিয়াদের জোরাজোরির কারনে বিয়ের ২দিন আগেই ওবাড়িতে যেতে হয়েছিল আবিরকে । আর অপরদিকে মেয়েটি রিয়াদের বোনের বান্ধবী । সেও হয়ত তার ঘনিষ্ট বান্ধবীর Request ফেলতে পারেনি , তাই বিয়ের ১দিন আগেই চলে এসেছে । সবাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত কেননা আজ যে হলুদ সন্ধা । মেয়েদের প্রায় সবাই কনে সাজাতে ব্যস্ত । আর বন্ধু রিয়াদ সেতো এখন বিশাল ব্যস্ত লোক, তাই হয়ত আবিরকেও সময় দিতে পারছেনা । সোফার এক কোনায় বসে মোবাইল টিপছে আবির। এমন সময় একদল মেয়ে কনেকে নিয়ে যাচ্ছে স্টেজের দিকে । মোবাইল থেকে মুখটা সরিয়ে তা একমনে দেখে যাচ্ছে আবির । হঠাত আবিরের চোখ আটকে যায় একটি মেয়ের চোখে । আবির যেন নিজের চোখ ফেরাতে পারছেনা , খুব কষ্ট করে নিজের চোখকে সংযত করল । নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবছে “হয়ত এটাই সেই মেয়ে যাকে আমার মন খুজছে” । পরমুহূর্তে আবির আবার তাকাল কিন্তু এতখনে তারাও স্টেজে চলে গেছে । কেন যেন আবিরের বারে বারে সেই মেয়েটার কথাই মনে হচ্ছে । উঠে দাঁড়াল এবং চিন্তা করলো যেভাবেই হোক এই মেয়েটার সাথে কথা বলার একটা ফন্দি আটতে হবে । হঠাত একটা ফন্দি এলো তার মাথায় ভাবল দেখা যাক Apply করে ফলাফলটা কি হয় । সোজা স্টেজের দিকে গিয়ে শুরু করলো মেয়েটাকে খোঁজা । অবশ্য অতটা কষ্ট হলোনা খুজতে , নাবিলার(বন্ধুর বোনের নাম) পাশেই দেখা গেল মেয়েটাকে । ভাবল নাবিলাই একমাত্র পথ মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য । অবশ্য নাবিলার সাথে আবির ভালই ফ্রি ছিল । কেননা রিয়াদের সাথে প্রায়ই তাদের বাসায় যেত আবির চাচি ও নাবিলার সাথে আলাপ আলোচোনা হতো । তাই নাবিলাকেই Select করলো সে তার এই ব্যপারের হাতিয়ার হিসেবে।
সারাক্ষণ নাবিলার পাশেই দেখা গেল মেয়েটাকে। একসময় নাবিলাকে ডাকল আবির.........

:-কি হয়েছে আবির ভাইয়া বল ?
:-না, তেমন কিছুনা । তো তোমার বন্ধুরা সবাই এসেছে ?
:-হুম সবাই । তো তোমার সাথে ভাইয়াকে দেখছিনাযে ভাইয়া কোথায় ?
:-ওতো একটা কাজে বাইরে গেল । আচ্ছা নাবিলা ঐ মেয়েটা কে ?
:-ওর কথা বলছ , ওর নাম আল্পনা । আমার খুব কাছের বান্ধবী । এক ক্লাসেই পড়তাম । দাড়াও পরিচয় করিয়ে দেই ।
পরমুহুরতেই নাবিলার ডাক “এই আল্পনা, একটু এদিকে আয়তো “।
“আসছি” আল্পনার প্রতিউত্তর
:-কি হয়েছে বল ?
:-তোকে পরিচয় করিয়ে দেই । উনার নাম আবির, আমার ভাইয়ার খুব ভাল বন্ধু ।
.....................
:-Hi …. আমি আল্পনা ।
:-Hlw …. আমি আবির।
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলার মাঝে Friendship টা করে নিল আবির । সেদিন তাদের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি । আবির কিছুটা হালকা অনুভব করছে আল্পনার সাথে কথা বলতে পেরে ।
পরের দিন সকালে বের হতেই আল্পনার সাথে দেখা ......।
:-Good Morning আল্পনা ।
:-Good Morning .
:-ভাল আছেন ?
:-হুম... ভাল । আপনি ?
:-ভাল । তো পড়ালেখা ?
:-এইতো Inter First Year. আপনি ?
:-Second Year. তো বাসায় কে কে আছেন ? .........
এভাবে কথা বলতে বলতে তারা একে অপরের খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায় । অবশ্য তাদের সম্পর্কটা ততদিনে আপনি থেকে তুমিতেও চলে আসে । আস্তে আস্তে বিয়ের দিনগুলো শেষ হয়ে যায় এবং যার যার বাড়িতে যাবার সময় হয়ে আসে । আজ সকালে সব Guest রা চলে যাবে । চলে যাবে আল্পনাও । তাই হয়ত আবিরের মনটা একটু খারাপ । যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে আবির এবং আল্পনার দেখা .........
:-Hi আবির ।
:-Hi . চলে যাচ্ছো তুমি ?
:-হ্যাঁ চলে যাচ্ছি । ভাল থেকো , আর এইটা আমার নাম্বার মনে পরলে কল দিও ।
:-Ok Thanks. ( আবির ভাবে এত মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি )
:-Bye আবির ।
:-Bye ভাল থেকো ।.....................
চলে যায় আল্পনা আর এদিক দিয়ে আবিরও সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় ।
বাসায় ফিরে সারাক্ষণ শুধু আল্পনার কথাই মনে হতে থাকে আবিরের । ৩ দিন পেড়িয়ে গেল । এক রাতে আবির ভাবল আল্পনাকে একটা কল দেওয়া যাক । যেই ভাবা সেই কাজ ।
ওপাশ থেকে...............
:-হ্যালো ... কে বলছেন ?
:-আবির ।
:-ওহ ... আবির ? ভাল আছো তুমি ? আর আমার কথা মনে পরল তাহলে ?
:-হুম ভাল আছি । আর হ্যাঁ মনে পরল তাইতো কল দিলাম । তুমি কেমন আছো ?
:-হুম ভাল । তো বাড়ির সবাই ভাল আছে ?
:-ভাল । তোমার ?........................
এভাবেই তাদের মধ্যে কথা আদান প্রদান হতে থাকে এবং একে অপরের কাছে অনেক কিছুই শেয়ার করে। একটা সময় তারা দুজনেই একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পরে এবং ভালোবেসে ফেলে । কিন্তু কেউ কাউকে বলার সাহস পায়না বন্ধুত্ব হারাবার ভয়ে । তার কিছুদিন পর একদিন রাতের ফোনালাপ ......
:-হ্যালো আল্পনা ।
:-হ্যাঁ বল ।
:-কালকে একটু লেকের ধারে আসতে পারবে ?
:-কেন ?
:-দরকার আছে । আসতে পারবে ?
:-Ok আসব । ...............
আগে থেকেই একটা লাল গোলাপ এবং একবুক সাহস নিয়ে লেকের ধারে বসে আল্পনার অপেক্ষা করছে আবির । আজ তার মনের কথাটি বলবে তার প্রিয় জনকে । আল্পনাকি তাকে গ্রহন করবে নাকি ফিরিয়ে দিবে, এগুলোই ভাবছে সে । ওইতো আল্পনা আসছে । .........

:-তো কি খবর আবির ?
:-এইতো ভালো । তোমার ?
:-ভালো । তা কি জন্য ডাকলে ?
:-তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল ।
:-বলো ।
:-আগে তোমাকে কথা দিতে হবে যে কথাগুলো শোনার পর তোমার উত্তর যা ই হোক না কেন তুমি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারবেনা ।
:-আচ্ছা ঠিক আছে । তা কি এমন কথা ।
( পেছন থেকে গোলাপটা সামনে এনে ) আল্পনা আ ... আ... আমি তোমাকে ভালবাসি ।.........
কথাটা বলার পরপরই আবির তার বাম গালটায় কিছুটা গরম অনুভব করছিল ।
:-এই কথাটা বলতে এতদিন লাগল ? ( কান্নাজড়িত কন্ঠে আল্পনার প্রতিউত্তর )
:-না... ভেবেছিলাম তুমি কি না কি মনে কর ।
:-আরে হাদারাম আমিও যে তোমাকে অনেক ভালবাসি । ......
সেদিনের মত খুশি মনে হয় আর কোনদিন ছিলনা ।
.........................................................
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ফোনের ওপাশ থেকে .........
Happy Birthday To You …..
Many many thanks to you.
:-কেমন আছো ?
:-তুমি কাছে নেই কিভাবে ভাল থাকতে পারি বল ?
:-হয়েছে ... আর না বললেও চলবে । তা আজ আবার কোন Party হবে নাকি ?
:-সেটা সন্ধায় । তুমি আজ ৯:০০ টায় একটু লেকের ধারে এসোতো ।
:-কেন ?
:-এসো । Bye ….
অপর পাশ থেকে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফোন কেটে দেয় আবির । কারন আল্পনা আসবে এ সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি গ্যারান্টি আর কেউ দিতে পারবেনা ।
লেকের ধারে বসে আছে দুজন । আল্পনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবির ।
:-কি হল এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো ?
:-স্বপ্ন ... স্বপ্ন দেখছি ডিস্টার্ব করোনাতো ।
:-স্বপ্ন দেখছো ?
:-হ্যাঁ ।
:-আজবতো জেগে থেকেই বুঝি স্বপ্ন দেখা যায় ?
:-হ্যাঁ যায় ... ইচ্ছে করলেই দেখা যায়, তবে সবাই পারেনা ।
:-কেন ? সমস্যাটা কোথায় ? তুমি পারলে অন্যরা পারবেনা কেন ?
:-কারন সবারতো আর তোমার মত Girlfriend নেই ।
:-হয়েছে ...... আচ্ছা আবির তুমি সারাজীবন আমার পাশে থাকবেতো ?
আল্পনার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আবির বলল ...
:-অবশ্যই থাকব, যেভাবে এখন আছি এভাবেই সারাটা জীবন তোমার পাশে থাকব ।
আবিরের কথায় অনেকটা স্বস্তিবোধ করে আল্পনা । কিছুটা ভেজা চোখে এক অতৃপ্ত চাহনিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে । এ প্রহর যেন শেষ হতে চায় না ।

উৎসর্গঃ গল্পটা যখন লিখেছিলাম তখন উৎসর্গ করার মতো কেও ছিলনা তাই করিওনি, কিন্তু আজ করছি একটা পেয়ারা গাছের পেত্নীকে।