লেখা___আনিসুর রহমান।
ইয়াক.....
কেন যে ছেলেরা এইসব জিনিস খায়
আমি ঠিক বুঝতে পারিনা..!!!
আচ্ছা কি এমন আছে এই সিগারেটে
যে আপনি পিঙ্ক কালারের ঠোঁটটাকে
এভাবে কালো করে ফেলছেন ????
আপনার গার্লফ্রেন্ড কিছু বলেনা
আপনাকে???
" এক নাগাড়ে মেয়েটিই সব কথা বলে
গেলো "
হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ এমন
ভাবে কথা গুলো বলে ফেলাতে তার
আন্সার দেওয়ার জন্যে মীর প্রস্তুত
ছিলনা।
কিছুটা লজ্জাও পায় সে....!!!
মেয়েটি এখনো থুথু ফেলেই যাচ্ছে।
আসলেই ব্যাপারটা ঠিক হলোনা।
কিন্তু কি করবে সে???
এতক্ষণ সাথে সিগারেট ছিলনা তাই
খেতে পারেনাই, ঢাকা থেকে
চিটাগাং আসার মাঝপথেই বাসটা
নষ্ট হয়ে যায়।
ভাগ্যিস পাশেই একটা ছোট চায়ের
দোকান ছিল।
তাই কোন মতে ঘোরের ওপরেই সে
সিগারেট টা নিয়ে এই পাশে এসে
যায়।
ফলে মেয়েটিকে খেয়াল করতে
পারেনাই....
-- ওহ স্যরি.....
আসলে আপনাকে খেয়াল করিনাই..
( বলেই সিগারেট টা মাটিতে ছুঁড়ে
মারে )
অবশ্য সিগারেট টা সে অনেকটা রাগ
করেই ফেলে দেয়।
ইচ্ছা হচ্ছিল মেয়েটির গালে কষে
দুইটা থাপ্পড় দেওয়ার জন্যে।
তাই অন্তত থাপ্পড় না দিলেও কিছু
বলতে যাবে এমন সময়, মেয়েটি
অন্যদিকে তাকিয়ে আছে.....
প্রথম বারের মতো মীর সেই মেয়েটির
দিকে একটু ভালো করেই তাকালো।
চোখের পাপড়ি গুলো বার বার পড়ছে
মেয়েটার, সামনে সারিবদ্ধ গাছ গুলো
দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায় আর
গ্রীষ্মের নীল আকাশের সাথে যেন
সামনের দৃশ্যটি মিলে মিশে একাকার
হয়ে যাচ্ছে....
মেয়েটি তার আপন মনেই সেই দৃশ্যটি
উপভোগ করছিল, আর মীরের চোখ এখনো
মেয়েটির চোখের পাতার দিকে.....
কি অদ্ভুত মায়াবী চোখ...
মনে হচ্ছিল সে তার মায়াবী চোখে
সেদিকে তাকিয়ে আছেই বলে দৃশ্যটা
এত সুন্দর লাগছে...
-- আচ্ছা একটা কথা বলবেন???
হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে মেয়েটি
মীরকে প্রশ্ন করে উঠে...
-- অম অ ও হ্যা.... জ্বী বলুন.....!!!
-- হিহিহিহি.......
আ আ আপনি এভাবে কথা বলছেন
কেন???
হাহাহাহা......
মীর অনেকটা হ জ ব র ল অবস্থায় পড়ে
যায়, কারণ মেয়েটি হয়তো বুঝে
গেছে, মীর এতক্ষণ তার দিকেই
তাকিয়ে ছিল....
মেয়েটাকে দেখতে যথটা
সাদাসিধা মনে হয়েছিল, তার আচরণ
কিন্তু পুরোটাই ভিন্ন...
বেশ দুষ্টো প্রকৃতিএ মেয়েটা।
মীর অবশ্য বিষয়টা বেশ উপভোগ করছে
বটে।
-- জ্বী বলেন কি বলবেন???
-- ও হ্যা... বলছি।
আমি জানতে চাইছি আপনি যে অনেক
সিগারেট টানছিলেন, এতে কি কি
লাভ হয়েছে শুনি????
-- অবশ্য লাভ তো কিছুটা হলেও
হয়েছে...
আর এটা যেহেতু আমি লাইক করি, সো
পজেটিভ দিকটাই আমি বেশি
দেখবো।
-- যেমন????
-- এই যেমন...হুম.....
এটাতে আলাদা একটা ফিলিংস পাই
যেটা আর কোথাও পাইনা। আর খেতে
ভালই লাগে...
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে.....
এই যেমন আপনার মতো সুন্দর, কিউট একটা
মেয়ের সাথে কথা বলার সুযোগ
পেলাম....!!!
-- ইয়ে মানে... ঠিক বুঝলাম না????
"মেয়েটা অবশ্য মীরের নীরবতা দেখে
আন্দাজ করতে পারেনি সে মোটেও
বোকা নয় সেটা,"
-- মানে হচ্ছে.... আপনি কি আমার
সাথে এভাবে নিজ থেকে কথা
বলতেন? যদি না আমি সিগারেট না
খেতাম আর সিগারেট এর টপিক না
উঠতো???
-- আজিব তো....!!!!
আপনি তো দেখছি ভালই কথা
প্যাঁচাতে পারেন....
কথায় বুঝা যাচ্ছে মেয়েটি মীরের
ওপর রেগে গেছে...
তাই সে আর কিছু বললনা।
মেয়েটা বাসের দিকে হাঁটা দিল....
*****
ধ্যাত....
অপরিচিত একটা মেয়ের কথায়
সিগারেট টা ফেলে দিতে গেলাম
ক্যান???
ইচ্ছা হচ্ছে নিজের চুল নিজেই টেনে
ছিঁড়ে ফেলতে।
গাড়ি এখনো ঠিক হয়নি...
ততক্ষণে একটা চা খেয়ে নেওয়া
যাবে।
-- মামা চা দেন তো একটা.....
চায়ে দু/তিন চুমুক দিতেই প্যান্টের বাম
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট
টা বের করে আবারো একটা ধরিয়ে
নিল।
অনেক আগে থেকেই তার অভ্যাস
চায়ের সাথে সিগারেট না হলে যেন
তার চলেই না।
*****
প্রায় দেড় ঘন্টা পর গাড়ি ঠিক হলে
সকল যাত্রী উঠে যে যার ইচ্ছা মত
বাসে বসে পড়ল।
মেয়েটিও ওঠে গেছে অনেক আগেই....
জলন্ত অর্ধেক সিগারেটটা ফেলতে
ইচ্ছা হচ্ছেনা মীরের।
তাই সব যাত্রী উঠার পরেই সে উঠবে
বলে মন স্থির করল।
গাড়ি অলরেডি স্টার্ট দিয়ে
দিয়েছে...
মীর এখনো বসার সিট পায়নি, তাই
আস্তে আস্তে পেছনের দিকে চলে
যাচ্ছিল।
পুরো বাসে যে যার মত বসে পড়েছে
কিন্তু আর একটা সিট খালি আছে মাত্র
সিট দেখা মাত্র মীর সেদিকেই ছুটে
যায়।
কিছুক্ষণের জন্যে তার অস্থিরতা যেন
থমকে গেল,
মুহূর্তেই তার মনে অদ্ভুত আনন্দ ঢেউ
খেলে গেল।
আরে....
পাশেই তো মেয়েটা বসে আছে।
-- বসতে পারি প্লিজ?
-- হুম...
হাতের আইফোন ফাইভ এস দেখেই
মেয়েটির ফ্যামিলি স্ট্যাটাস
সম্পর্কে মীর একটু আধটু ধারনা করেই
ফেলল।
কিন্তু বড় লোকের মেয়েদের সাথে আর
এই মেয়ের সাথে অনেক তফাৎ।
তার মাঝে কোন রকম ইগো এখনো
মীরের চোখে পড়েনি।
*****
সেই কখন থেকেই মেয়েটি মোবাইলে
ক্লেশ অব ক্লান গেইমটি খেলেই
যাচ্ছে।
মুখে এক প্রকার বিরক্তিরচাপ স্পষ্ট
দেখা যাচ্ছে।
-- আচ্ছা সে কি আমার ওপর রেগে
আছে??
নাকি ফাইজলামি একটু বেশি করে
ফেলেছি?? শিট...
আমিও না....
এখন কি করা যায়???
ভাবতে থাকে মীর....
এমন অবস্থায় নিজেকে কেমন জানি
অপমানিত লাগছে,
কিছুটা রাগ ও উঠতেছে বটে।
-- ধ্যাত উঠেই যাই বরং।
-- আংকেল.....
( পাশের সিটের বয়স্ক লোকটাকে ডাক
দেয় মীর )
-- আপনার যদি আপত্তি না থাকে
আপনি এই সিটে আসবেন প্লিজ..
আমি আপনার সিটে বসবো।
এই কথাটা শোনার সাথে সাথেই
মেয়েটি একটু উত্তেজিত হয়ে উঠে।
-- থামেন....!!!
এই সিটে বসলে সমস্যা কি আপনার????
-- না মানে...
আমার মনে হচ্ছিল আপনি আমার ওপর
কিছুটা বিরক্ত।
তাই নিজ দায়িত্বে কেটে পড়ার
চেষ্টা করছিলাম আর কি।
-- ইয়াক....!!!
কি গন্ধ... আবারো খাইছেন নিশ্চয়
পারেন ও বটে....
আপনার গার্লফ্রেন্ড কিভাবে সহ্য করে
এসব।
-- হাহাহাহা....
থাকলেই তো????
-- হুহুহু....
সব ছেলেরা একই ক্যাটাগরির ক্যান???
সুন্দরী কাউকে দেখলেই
গার্লফ্রেন্ডের কথা বলতে চায়না....
-- না.... আমি সত্যিই বলছি...
আর সত্যি বলতে কি আমার স্কুল কলেজ
লাইফেও গার্লফ্রেন্ড বাদ দিয়ে কোন
মেয়ে ফ্রেন্ডও ছিলনা।
ভার্সিটিতে এসে দু একটার সাথে
ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে, তারা আমার স্কুল
ফ্রেন্ড ছিল।
খুব লাজুক টাইপের ছেলেদের হয়তো
কোন মেয়ে ফ্রেন্ড থাকাটা কঠিন
একটা বিষয়।
কিন্তু আপনাকে সুন্দরী কে বলছে???
-- কেন???
আমার কাছের মানুষরাই তো বলেছে।
-- হাহাহাহা....
সমস্যা তো ঐখানেই....
ওরা কাছের মানুষ তাই বলেছে হয়ত।
আর কোন কথা না বলে মেয়েটি
আবারো হাতে মোবাইল নিয়ে নেট
কানেকশন অন করে গেইম খেলা শুরু করে
দিল।
আবারো ফাইজলামিটা একটু বেশিই
করে ফেলল মীর...
*****
-- আচ্ছা..... হুম....
আ আপনার নামটা তো জানা হলো
না????
নীরবতা ভেঙ্গে ভয়ে ভয়ে
জিজ্ঞাসা করে ফেলল মীর...
-- কেন??
নাম দিয়ে কি করবেন????
-- না মানে... অনেক কিছুই তো বলে
ফেললাম। বাট এখনো নামটা জানা
হলো না...
কেমন জানি না....???
-- হু...
নিশি।
-- হুম নিশিরাত তো হওয়ার কথা এখন ১২
টা ছুঁই ছুঁই....
-- ধ্যাত আমার নাম বললাম নিশি....
অলওয়েজ ফাইজলামি করেন ক্যান???
-- ওহ স্যরি...
আসলে আমি বুঝতে পারিনি।
খুব সুন্দর.....
আমি মীর।
তা যাবেন কোথায়???
-- হুম নামের মাঝেও ফাইজলামি
জিনিসটা দেখা যাচ্ছে আপনার।
মামার বাসায় যাচ্ছি...
জি ই সি নামবো...
-- হাহাহা তাই নাকি??
আমিও তো সেখানেই নামবো.....
-- ও আচ্ছা....
আবারো অপ্রত্যাশিত নীরবতা....
মীরের ইচ্ছা হচ্ছিল আরো কিছুক্ষণ কথা
বলতে...
কিন্তু টপিকস নাই...
অবশ্য পুরো পথ জুড়ে অনেক কথায় বলা
হয়ে গেছে দুজনার মধ্যে...
সো কোন টপিকস থাকারও কথা না...!!!
রাত ১ বেজে ১৫ মিনিট, গাড়ি
তাদের গন্তব্য স্থানে এসে পৌঁছেছে।
এখন যে যার বাসায় ফেরার পালা।
উভয়ের মুখে বিষণ্ণতার একটা চাপ....
মীরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু
বেশিই লক্ষণীয়।
কারণ এর আগে কখনো কোন মেয়ের
সাথে সে এত কম সময়ে এত আপন হতে
পারেনি।
তাদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাস
আবারো ছুটে চললো...
পুরো রাস্তাটায় ফাঁকা।
চারদিক নিস্তব্ধ..
মাঝে মাঝে দু একটা কুকুকের ভয়ানক
আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।
নিশিকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে সে খুব
ভয় পাচ্ছে।
এইরকম পরিবেশটা আসলেই ভয় পাওয়ার
মতো।
তার ওপর আবার ওর মামা নাকি খুব
অসুস্থ।
মামা ছাড়া এমন কেউ নেয় যে এসে
ওকে মামার বাসায় নিয়ে যাবে।
পাশে এখনো মীর দাড়িয়ে আছে।
সে চুপচাপ নিশির অস্থিরতা দেখছে।
কিছু বলতে গিয়েও কোথায় যেন
আটকে যাচ্ছে সে।
আসলেই তো...
কি বলবে সে????
সে তো নিশির কেউ না....
সে তো চাইলেই বলতে পারবেনা যে,
-- আমার বাসা কাছেই...
আপত্তি না থাকলে আমার বাসায়
যেতে পারেন। বাসায় আমার মা
আছে... হয়তো এখনো জেগে আছেন।
নাহ কিছু একটা তো করতেই হবে,
এভাবে একা একটা মেয়েকে রাস্তায়
রেখে যাওয়া ঠিক হবেনা।
কিন্তু কি করা যায়??
রাস্তার পাশেই একটা টঙের দোকান
এখনো খোলা।
সিগারেট ধরাতে যাবে এমন টাইমে
পেছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠে...
-- আবার.......!!!!
-- ইয়ে না মানে....
আ আ আমি তো রিক্সা খুঁজছিলাম,
রিক্সা...
-- হুহ বুঝছি...
-- আচ্ছা বাই।
আমি যাচ্ছি....
-- যাচ্ছি মানে???
এত রাতে একা একা কোথায়
যাবেন????
-- কোথায় আবার মামার বাসায়..!!!
-- ওকে দাঁড়ান!!!
আমি রিক্সা পাই কিনা দেখি।
-- মানে কি???
আ আ আপনি??
মানে আপনি ক..... কোথায় যাবেন????
-- দেখুন.....
বেশি সাহস দেখাতে যাবেন না...
আমিই আপনাকে রিক্সা করে পৌঁছে
দিব...
আপনার কোন ভয় নাই।
আর যদি আপত্তি থাকে রিক্সা দুইটা
নিব, তাও আপনি না কইরেন না....
এত রাতে এখানে অনেক ধরনের দুর্ঘটনা
ঘটে যেতেই পারে।
নিশি কিছু বলতে চেয়েও পারেনা....
আসলে ও এতক্ষণ সাহস করে মীরকে
বলতে পারছিলনা যে,
-- প্লিজ আমাকে পৌঁছে দিন, একা
যেতে ভয় লাগছে।
নাহ ছেলেটাকে যতটা কেয়ারলেস
ভেবেছিলাম, ততটা সে না।
-- এই যে কোনটাতে উঠবেন???
-- মানে??? রিক্সা দুইটা কেন??? পাগল
নাকি আপনি???
-- কি জানি??
আম্মু তো আমাকে তাই বলে সবসময়।
-- আন্টি অবশ্য সত্য কথায় বলেন....
-- হাহাহা....
হয়েছে আন্টিকে আর সাপোর্ট দিতে
হবেনা। আন্টি একাই যথেষ্ট।
তা কোন রিক্সায় উঠবেন তাড়া উঠেন,
আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আপনাকে পৌঁছে
দিয়ে, বাসায় এসে আবার সে
লেভেলের ঘুম দেওয়া লাগবে।
-- হুহ,, অনেক্ষণ ধরে কথা বলে যাচ্ছেন।
এবার একটু চেপে বসুন।
হ্যা দুইজনই এক রিক্সাতেই....
মধ্যরাতের এমন ফিলিংসটা অবশ্য বলে
বুঝানোর মতো নয়।
হালকা মৃদু বাতাস বয়ছিল....
নিশি বার বার হাত দিয়ে তার
কপালে চলে আসা চুলগুলো সরিয়ে
দিচ্ছে।
মীরের বার বার মনে হচ্ছিল,
-- ইশ রাস্তাটা যদি রাত ১ বেজে ১৫
মিনিট, গাড়ি তাদের গন্তব্য স্থানে
এসে পৌঁছেছে।
এখন যে যার বাসায় ফেরার পালা।
উভয়ের মুখে বিষণ্ণতার একটা চাপ....
মীরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু
বেশিই লক্ষণীয়।
কারণ এর আগে কখনো কোন মেয়ের
সাথে সে এত কম সময়ে এত আপন হতে
পারেনি।
তাদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাস
আবারো ছুটে চললো...
পুরো রাস্তাটায় ফাঁকা।
চারদিক নিস্তব্ধ..
মাঝে মাঝে দু একটা কুকুকের ভয়ানক
আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।
নিশিকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে সে খুব
ভয় পাচ্ছে।
এইরকম পরিবেশটা আসলেই ভয় পাওয়ার
মতো।
তার ওপর আবার ওর মামা নাকি খুব
অসুস্থ।
মামা ছাড়া এমন কেউ নেয় যে এসে
ওকে মামার বাসায় নিয়ে যাবে।
পাশে এখনো মীর দাড়িয়ে আছে।
সে চুপচাপ নিশির অস্থিরতা দেখছে।
কিছু বলতে গিয়েও কোথায় যেন
আটকে যাচ্ছে সে।
আসলেই তো...
কি বলবে সে????
সে তো নিশির কেউ না....
সে তো চাইলেই বলতে পারবেনা যে,
-- আমার বাসা কাছেই...
আপত্তি না থাকলে আমার বাসায়
যেতে পারেন। বাসায় আমার মা
আছে... হয়তো এখনো জেগে আছেন।
নাহ কিছু একটা তো করতেই হবে,
এভাবে একা একটা মেয়েকে রাস্তায়
রেখে যাওয়া ঠিক হবেনা।
কিন্তু কি করা যায়??
রাস্তার পাশেই একটা টঙের দোকান
এখনো খোলা।
সিগারেট ধরাতে যাবে এমন টাইমে
পেছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠে...
-- আবার.......!!!!
-- ইয়ে না মানে....
আ আ আমি তো রিক্সা খুঁজছিলাম,
রিক্সা...
-- হুহ বুঝছি...
-- আচ্ছা বাই।
আমি যাচ্ছি....
-- যাচ্ছি মানে???
এত রাতে একা একা কোথায়
যাবেন????
-- কোথায় আবার মামার বাসায়..!!!
-- ওকে দাঁড়ান!!!
আমি রিক্সা পাই কিনা দেখি।
-- মানে কি???
আ আ আপনি??
মানে আপনি ক..... কোথায় যাবেন????
-- দেখুন.....
বেশি সাহস দেখাতে যাবেন না...
আমিই আপনাকে রিক্সা করে পৌঁছে
দিব...
আপনার কোন ভয় নাই।
আর যদি আপত্তি থাকে রিক্সা দুইটা
নিব, তাও আপনি না কইরেন না....
এত রাতে এখানে অনেক ধরনের দুর্ঘটনা
ঘটে যেতেই পারে।
নিশি কিছু বলতে চেয়েও পারেনা....
আসলে ও এতক্ষণ সাহস করে মীরকে
বলতে পারছিলনা যে,
-- প্লিজ আমাকে পৌঁছে দিন, একা
যেতে ভয় লাগছে।
নাহ ছেলেটাকে যতটা কেয়ারলেস
ভেবেছিলাম, ততটা সে না।
-- এই যে কোনটাতে উঠবেন???
-- মানে??? রিক্সা দুইটা কেন??? পাগল
নাকি আপনি???
-- কি জানি??
আম্মু তো আমাকে তাই বলে সবসময়।
-- আন্টি অবশ্য সত্য কথায় বলেন.... লম্বা
হতো.....
তাইলে হয়তো আরো কিছু সময় নিশির
সাথে থাকা যেত....
"আসলে মানুষ এমন একটা প্রাণী যারা
এমন কোন মুহূর্তের একবার সম্মুখীন হয়
তারা অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চায়,
মীরের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে"
মনে হচ্ছিল পুরো পৃথিবীটা আসলেই
কতো সুন্দর।
আমাদের শুধু নিজের মতো করে
সাজিয়ে নিতে জানতে হয়......
একটা সময় পর নিশি তার মামার বাসার
সামনে এসে পৌঁছলো।
মীর চুপ করে আছে....
এমন একটা মুহূর্তে এসে মীরের মনে
হচ্ছিল....
নিশির সাথে মনে হয় অনেক কথায়
বলার ছিল....
কিন্তু সে কিছুই যেন বলতে পারলোনা।
নিশি চলে যাচ্ছে, মিষ্টি একটা
হাসি দিয়ে পেছনে একবার তাকিয়ে
হাত দেখিয়ে বাই বললো.....!!!
রিক্সায় আর ছড়তে ইচ্ছা হচ্ছেনা তার।
পকেটে এখনো একটা সিগারেট রয়ে
গেছে...
বেশ কিছুক্ষণ পকেটে থাকার ফলে
সেটা একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা হয়ে আছে,
অনেক্ষণ পর আবারো খেতে লাগলো।
ধোঁয়া গুলো আকাশের দিকে ছুঁড়ে
মেরে।
সোনালী চাঁদটার দিকে তাকিয়ে
রইল কিছুক্ষণ।
চাঁদটাও কেমন একটা ইনোসেন্ট ভাব
নিয়ে তাকিয়ে আছে মীরের দিকে।
রাস্তাটা যেন শেষই হতে
চাইছিলনা.....
*****
-- তারপর কি হলো????
নিশির সাথে কি আর দেখা
হয়েছিল???
" ফাহমিদার কথা শুনে কল্পনার রাজ্য
থেকে আবারো বাস্তবতায় ফিরে এল
মীর,
অবশ্য নিশির কথা ভাবার সময় কখনো
তার মনে হতোনা যে সে কল্পনা
করছে। বার বার মনে হতো নিশি যেন
তার বাস্তবতায় এসে ধরা দিচ্ছে "
-- নাহ......!!!
"একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো মীর"
-- কেন??? তুমি ওর মামার বাসায় আর
যাওনাই...
-- গিয়েছিলাম, কিন্তু দেড়ি হয়ে
গিয়েছিল।
হঠাৎ করে আমার আম্মু বেশ অসুস্থ হয়ে
পড়ায় আমি আমি মা কে নিয়ে ব্যস্ত
ছিলাম।
আর তখনো ওর কথা মনে পড়তো, কিন্তু ও
আমাকে বলেছিল ওর মামার বাসায়
এক সপ্তাহ থাকবে। তাই আমার একটা
আশা ছিল।
-- তারপর???
-- তারপর আর কি??
৪/৫ দিন পর আম্মু সুস্থ হয়ে উঠলে আমি
সাথে সাথেই তার মামার বাসায়
চলে যাই,
কিন্তু লাভ হয়নি।
-- কেন??? ও ছিলনা।
-- নাহ....!!!
ঐ যে বলেছিল ওর মামা খুব অসুস্থ....
দারোয়ান বলেছিল ও আসার দু একদিন
পর নাকি ওর মামার অবস্থা আশঙ্কা জনক
হয়ে পড়ে...
তাই বাধ্য হয়ে পুরো ফ্যামিলি
মাদ্রাজ চলে যায়।
বাংলাদেশে ফেরার পর হয়ত তারা
ঢাকাতেই থেকে যায়, তাই তাদেরও
আর কোন খুঁজ পেলাম না।
-- ও....
পরে আর কোন চেষ্টা করছিলা????
-- বিশ্বাস করো....
আমি নিজেও খুব অবাক হয়ে
গিয়েছিলাম যে, যে মেয়েকে আমি
চিনিনা, জানিনা, তার সাথে শুধু ৩/৪
ঘন্টার আড্ডায় আমি কেমন জানি হয়ে
গেছিলাম, মনে হচ্ছিল ও ছাড়া পুরো
পৃথিবীটাই যেন অর্থহীন....
পরে আমি ঢাকায় একটা জব নিই।
অবশ্য জব নেওয়ার মেইন উদ্দেশ্য ছিল
ওকে খুঁজে বের করা।
কিন্তু আমার কপালে সে নাই,,, তাই
হয়তো একদিনের স্মৃতি গুলোই আমাকে
খুঁড়ে খুঁড়ে খায়।
-- হুম....
বুঝলাম...!!!
তোমাকে না দেখলে আমি জানতামই
না যে, একটা ছেলে একটা মেয়ের
জন্যে এত কিছু করতে পারে।
সো তোমার সম্পর্কে অনেক কিছুই
জানা হয়ে গেল...
এবং নির্দ্বিধায় আমি এই বিয়েতে রাজি।
'মীর হেসে উঠে....
ফাহমিদার বাসায় আজ মীরের মা
বাবাও এসেছেন।
অনেক বুঝিয়ে ছেলেকে বিয়েতে
রাজি করাতে পেরেছেন। অবশ্য
মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই তাঁরা
দেখে আসছেন, হাজার হলেও বন্ধুর
মেয়ে বলে কথা।
আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিয়াইতে কনভার্ট
করার কথা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন তাঁরা।
ছেলে যদি মত দেয় তাইলে বিয়ের
দিন তারিখ আজকেই ফাইনাল করে ফেলবেন তাঁরা "
-- আসলে তোমার ব্যাপারটা ছিল "
লাভ এট ফার্স্ট সাইড " যেটাকে বলে
সেটা....!!!
-- আমার অবশ্য এসব বিষয়ে ধারনা নাই।
তবে এইটুকু জানি, মেয়েটিকে আমার
খুব ভালো লেগেছিল....
-- হু....
লেগেছিল... কিন্তু এখন থেকে ভাল
লাগার ব্যাপারটা কি আমার ক্ষেত্রে হয়না????
প্রয়োজনে আমি তোমার সেই চঞ্চল
নিশি হবো.....!!!
যার চোখের পাতায় তুমি তোমার স্বপ্ন
সাজাতে, যার হাসিতে তুমি তোমার
প্রাণ ফিরে পেতে, যার মিষ্টি শাসন
তোমাকে বদ অভ্যাস ছাড়তে বাধ্য
করেছে......
কি????
একটা চান্স কি আছে আমার
জন্যে...?????
" গাল দুটো ফুলিয়ে মুখে ইনোসেন্ট
একটা ভাব এনে ফাহমিদা, মীরের
কাছে একটা সুযোগ চায় "
প্রতি উত্তরে একটা হাসি দিয়ে
ফাহমিদাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে মীর...
ফাহমিদাও পরম তৃপ্তি নিয়ে মীরের
বুকে মাথা রাখে....
মানুষের জীবনে মাঝে মাঝে এমন
কিছু মুহূর্ত আসে, যা খুব ক্ষণস্থায়ী কিন্তু
সে গুলো ব্যাখ্যা হয় খুব দীর্ঘস্থায়ী....
!!!!!