মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ৩৩৩- শ্রেয়সী আমার...

লেখা__মি.বুঝ বালক(The Old Bachelor)

.....
রাতের নিস্তবতায় ঘুমিয়ে গেছে
শহর,ঘুমিয়ে
পরেছে সব ভাল আত্মারা।হয়ত জেগেআছে
কেউ কেউ শ্রেয়ার মত মন্দভাগ্যের খোলস
নিয়ে।ছাদের একটি কোণে দাড়িয়ে নক্ষত্তের
কষে পড়া দেখছে শ্রেয়া আর নিজেকে
আলো ছায়ার মেলায় হারিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
মানুষের জীবন কতটা বিচিত্র হতে পারে তা
নিজেই জানে না,যদিনা নিজে তার সামনা সামনি হয়।
সবাইকে ভাল রাখার চিন্তায় আজ শ্রেয়া নিজেই ভাল
নেই।সব কিছু ছেরে আজ দুরে এই খালার বাসায়
থাকতে হচ্ছে।পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকে
বিয়ে করে সবার মন রক্ষা করতে চেয়েছিল যার
প্রতিচ্ছবি ফুটে আছে তার সারা শরীলে।
ব্যাংকের বড় অফিসার,বাড়ি,গাড় ি আছে সব দেখে
শুনেই বিয়ে দেয়া হয়েছিল।সুখেই থাকবে
শ্রেয়া ভাবত পরিবার,কিন্তু হয়েছে তার ঠিক
উল্টো।এতটাই বাজে ভাবে ওকে ভাল রাখা
হয়েছে চিন্তাও করতে পারে না। আসলে সব মা
বাবারাই চান যে তাদের মেয়ে যেনো সুখে
থাকে,কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্রে বুঝতে চাননা ঠিক
কোথায় মেয়েটার সুখ।মানুষ কষ্টে
থাকলে সব আগে মনে পড়ে তার অতীতের
ভাললাগার সময়কেই। আজ শ্রেয়ারও খুব মনে পড়ছে ২
বছর আগের অতীতকে,খুব ইচ্ছে করছে ফিরে যেতে সেই সময়টাতে।।ঠিক তখনই
গীটারের তারের সাথে একটা মায়াবী সূরের
আওয়াজ ভেসে এলো,,,
"আমার সবটুকু বিশ্বাস যে দিয়েছে
ভেঙ্গে,তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই,সে যে
দিয়েছে আমার অন্ধ চোখে আলো,যার
বিশালতার মাঝে আমি একটুকু পাইনি ঠাই ,তাকে
কৃতজ্ঞতা জানাই সে যে দিয়েছে
আমায় মহা শূন্যে আশ্রয় । আমার সব অপূর্ণতা যেন
হয়,আমার শূন্য পথের পথিক শ্রেয়তম আশীর্বাদ।''
গানটা শুনে নিজের অতীতকে খুব কাছ থেকে
দেখে ভাবতে থাকে শ্রেয়া।গানটা আনাফের খুব
প্রিয় ছিল।কিন্তু অর ভয়ে গাইত না।
আনাফ ছিল সেই ছেলে যাকে ভালবাসত
শ্রেয়া,আসলে তা ছিল
ভালবাসার থেকেও বেশি কিছু।একজন
আরেকজনকে নিজেদের থেকে বেশি
ভালবাসলেও সময় তাদের এক হতে দেয়নি।
এখনও মনে আছে শেষ দিনের
কথা,আনাফ এসেছিল বিদায় নিতে,চলে যাবার
সময় শুধু একবার
থাকিয়ে ছিল আনাফ,শ্রেয়া জানে
তখন কাঁদছিল
ছেলেটা তারপরও তার কিছু করার ছিল
না,তাকে ফিরে যেতেই হবে।শুধু মন থেকে
বলেছিল ''ভাল থাকিস আমার প্যাঁচাটা,তোকে
খুব মিস করব''আজ এতো দিন পর অর কথা মনে হতেই
কষ্টে নীল হয়ে যায় শ্রেয়া কেনো এমন
হল তার সাথে।ভাবতে ভাবতে আবার স্রোতের
মতো ঝড়ে পরল আরো কয়েকফুটা নুনা জল।
ঠিক তখনই পিছন থেকে শ্রেয়ার চোখ
হাত দিয়ে ধরে নিতা কিন্তু ও নিজেই
অবাক হয়ে যায় শ্রেয়া কাদছে।নিতা শ্রেয়ার
খালাত বোন।
_আপু তুমি আজও কাঁদছ অইসব মনে করে?
তোমাকে না বললাম সব ভুলে যেতে?
মানুষ কি
না পারে বলো।
_নারে আমি অইসব ভেবে কাঁদছি না।
একটু মা
বাবাকে মনে পড়ছিল উনাদের ছেড়ে
এখানে
থাকছি তাই ।আচ্ছা বাদদে ,একটা কথা
বলতো এই
যে গান গাইছে কে ও?
_ওওও...তুমি আনাফ ভাইয়ার কথা
বলছ,ঊনি আমাদের
নীচ তলায় থাকেন অনেক দিন।কোন
একটা
প্রাইভেট ফার্মে জব করেন।খুব ভাল
একটা
ছেলে।জানো আপু শুনেছি উনি একটা
মেয়েকে অনেক ভালবাসতেন কিন্তু
মেয়েটি
উনাকে ছেড়ে চলে যায়।আমি উনাকে
পছন্দ
করতাম কিন্তু কোনদিন চোখ তুলে
থাকাননি আমার
দিকে।আমি বলার পর উনি আমাকে
বললেন
''সবাইকে ভালবাসা যায় না,আর
যাকে ভালবাসা যায়
থাকে ছেড়ে ভুলে থাকা যায় না।''
কথাটা শুনে অনেকটা চমকে উঠে
শ্রেয়া।কারণ
এই কথাটা আনাফ ওকে বলত সব সময়।
অনেকটা
অন্যমনস্ক হয়ে যায় শ্রেয়া,সম্বিত হয়
নিতার
ডাকে।
_আপু কি হল চুপ হয়ে গেলে কেনো?
আবার
কান্না করবে নাকি?
_আরে না চল কাল দেখবনে কেমন
ছেলেকে আমার ছোট্ট আপুটা পছন্দ
করেছিল।তখন আবার একটা গানের কলি
ভেসে
এলো......
''তবুও স্বর্গ দারে একা থাকব তার
অপেক্ষায়,যেন
আমার অভ্যর্থনা তাকে করে
অনুতপ্ত,জানি তখনও
সে আমার হবে না, তবুও এই
অপ্রাত্যিটাই যেন
আমায় করে পরিপূর্ণ।''
রুমে এসেও আজ জেগে আছে
শ্রেয়া,আজ
বুঝি আর দুচোখে ঘুম নামবে
না,জানালার পাশে
দাঁড়িয়ে আবার নিস্তব্দ রাস্তা
দেখতে থাকে।আজ
অনেকদিন পর সৃতির জানালা খুলে
দিতে মন চাইছে
শ্রেয়ার,ব্যাগ থেকে খুঁজে বের করল
পুরনো সেই ডাইরীটা।কিছু লিখতে
গিয়েও
থেমে যায়।
_নিতা সব দেখে,শ্রেয়া ভেবেছে ও
ঘুমিয়েছে কিন্তু ও জেগেছিল।কাল
সকালেই
দেখতে হবে কি আছে
ডাইরিতে_ভাবে নিতা।
প্ল্যান মত সুযোগ বুঝে পুরো ডাইরী পড়ে
নেয় নিতা,অবাক হয়ে যায় ও,এমন
ভালবাসাও বুঝি
আছে?দুই পরিবারের সম্পর্ক ঠিক রাখার
জন্য
ভালবাসার মানুসটাকে ছেড়ে
যাওয়া আবার তাকে
বুঝতে না দেয়া যে কি কারনে এই
ছেড়ে
যাওয়া।অনেক কিছু লেখার সাথে
একটা ছবিও পায়
নিতা,যেটা ছিল আনাফের।বুঝতে
বাকি রইল না তার।
খুব খুশি হল এই ভেবে শ্রেয়া আপুর
কান্নার দিন
বুঝি শেষ হয়ে আবার আনন্দে ভাসতে
যাচ্ছে।যা
করার তাকেই করতে হবে।ভেবে বের
করে
কাল দিন পর অর জন্মদিন।আর ওই দিনই
দুজনকে
দেখা করিয়ে দিতে হবে।
_ভাবা কথা মত তার জন্মদিনে
আনাফকে দাওয়াত
করল নিজেই ।শ্রেয়া আর আনাফের
সম্পর্কের
সব কথা নিতা তার মা বাবাকে বলে
দেয় এবং তার
প্লানের কথাও,তাই ঘরোয়া পরিবেশে
সব
আয়োজন করা হয়েছে জন্মদিনের
অনুস্টান।
আনাফ বসে আছে নীচে ড্রইং
রুমে,কথা
বলছিল নিতার বাবার সাথে।হঠাৎকরে
নিতার মা বলে
উঠলেন_শ্রেয়া মা,নিতার জন্মদিনের
কেকটা নিয়ে আয়তো।
নামটা শুনেই চুপসে যায় আনাফ,ভাবে এ আমার
শ্রেয়া নয়তো,আবার ভাবে আমার
শ্রেয়া হবে
কি করে,ওতো হারিয়ে গেছে আরর হয়ত সুখেই আছে।
কিছু একটার আওয়াজ শুনে মাথা তুলে থাকিয়ে
কিছুক্ষনের জন্য হৃদস্পন্দন থেমে যায়
আনাফের,সামনে যে তার শ্রেয়াই
দাঁড়িয়ে আছে,আর সেও তার দিকে থাকিয়ে
আছে।এ অবস্থায় শ্রেয়া কি করবে বুঝতে না
পেরে কেকটা ফেলে রেখে দৌড়ে ছাদে চলে যায়।
এ কি হল,ও কখনও ভাবেনি আনাফের
সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে।
_অন্যদিকে আনাফ ভাবে এ কাকে দেখছে
আনাফ,তার শ্রেয়া যে আর শ্রেয়া নেই।ভাবনায়
ছেদ পড়ে নিতার কথায়।
_খুব অবাক হচ্ছেন তাই না ভাইয়া?হ্যাঁ এ
তোমারই শ্রেয়া।মানুষ নামের পশুটা খুবলে খুবলে এই
অবস্থা করেছে।আজকে আমার
জন্মদিনের সব
চেয়ে বড় উপহার হবে যদি তোমাদের
আবার
এক সাথে হাসতে দেখি।আমি সব
জেনেছি
তোমাদের সম্পর্কে।শ্রেয়া আপু এখনও
তোমাকেই ভালবাসে ভাইয়া।আর এখন
আপু নিশ্চয় ছাদে আছে যাও।
আর থেমে থাকতে পারেনি
আনাফ,অনেকটা দৌড়েই ছাদে চলে যায়।যে মানুষটার জন্য এত
অপেক্ষা সে মানুষটা যে আজ তারই
সামনে। ছাদের কোনে দাঁড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছে
শ্রেয়া।পিছন থেকে বলে উঠল আনাফ,
_অনেকতো কেঁদেছ,এখন থামো প্লীজ।
তুমি জানো তুমি কাঁদলে আমি ঠিক
থাকতে পারি না। আমি ভাবতেও পারিনি আমার
শ্রেয়সীকে এভাবে দেখতে হবে।
শ্রেয়াঃ_কেন এসেছ?আমাকে দয়া
দেখাতে?
_ভালবাসায় কখনও দয়া হয় না
শ্রেয়া,ভালবাসায় শুধুই
ভালবাসা হয়,আর কিছুনা।
_প্লীজ আনাফ তুমি চলে যাও,আমি আর
আমার
জীবন সব নষ্ট হয়ে গেছে,আর কিছুই
বাকি নেই।আমি তোমাকে আর তোমার
জীবনকে নষ্ট করতে চাইনা।
_ব্যাস আর বলতে হবে না,সেদিন
ফিরিয়ে দিয়েছিলে কিছু বলিনি আজ তোমায় না নিয়ে আমি
যাচ্ছি না।একবারতো চেয়ে দেখো
তোমার প্যাঁচাটাকে।দেখবে না?ঠিক আছে
তুমি যদি না চাও আমি চলে যাচ্ছি,এ কথা বলে আনাফ
ঘুরতে যাবে ঠিক তখনই ঘুরে দাঁড়িয়ে দৌড়ে
আনাফের বুকে জায়গা নেয় শ্রেয়া।আমাকে ক্ষমা
করে দাও আনাফ,আমি আজ সত্যি নিঃস্ব হয়ে
গেছি।আর আমার নিঃস হয়ে যাওয়া তোমাকে
দেখাতে চাইনি কখনো।
_এই পাগলী কে বলেছে তুই নিঃস্ব?
আমি আছি কি
জন্য?আমি ভাবতেছি প্লান অনুযায়ী
ফুটবল টিম গঠনের কাজ যত তারাতারি সম্ভব শুরু
করা প্রয়োজন,এমনিতে অনেক দেরী হয়ে
গেছে।কি বলো? পেছন থেকে নিতা বলে ঊঠল,ওয়েট
ওয়েট। দুজনকে মিলিয়ে দিলাম আমি কই
আমাকে ধন্যবাদ দিবা তা না করে তারা ফুটবল টিম
নিয়ে প্লান করছে। আর আমার কি হবে এখন?
আনাফঃসমস্যা নাই তোমাকে আমাদের ফুটবল
টিমের মহিলা কোচ বালিয়ে দেবো।
এই বলে এক সাথে তিন জন হেঁসে উঠল।
..................................
সত্যি ভালবাসা জীবনে থাকলে অন্যকিছু
প্রয়োজনটা কম হয়,জীবনে ভালবাসা
থাকলে অনেক সময় ভালবাসা খেয়েও বেঁচে
থাকা যায়। ভাল থাকুক সেই ভালবাসাগুলো।