লেখাঃ আনিসুর রহমান
গোধূলি বেলা শেষে পশ্চিমাকাশের
লাল সূর্যটা আস্তে আস্তে হারিয়ে
যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে দক্ষিণ দিক থেকে আসা
দমকা হাওয়া ফারিয়ার চুল উড়িয়ে
দিচ্ছে।
পূর্ব আকাশে একটু একটু করে ঘন কালো
মেঘ জমতে শুরু করেছে।
হয়তো আজ আকাশেরও মন খারাপ তাই
প্রথম দিকে বেশ গম্ভীর হয়ে আছে একটু
পরই কেঁদে দিবে.....
ফারিয়া এখনো রাস্তার দিকেই
তাকিয়ে আছে,
পুরো রস্তাটা খালি বাইকের স্পিড ৮০
কি.মি বেগে তুলেই আসিফ আস্তে
আস্তে ফারিয়ার চোখের পলকের
বাইরে চলে যাচ্ছে....
*****
মুখে কোন কথা বেরর হচ্ছেনা
ফারিয়ার,
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে এই টাইপের
ওয়েদার সে খুব উপভোগ করে কিন্তু
কেন জানি আজ সব কিছু অসহ্য লাগছে
তার।
মন খারাপ থাকলে বাড়ির ছাদে নিজ
হাতে গড়া রোজ গার্ডেনের দিকে
তাকালেই তার মন ভাল হয়ে যেত।
এখন তাও অসহ্য লাগছে....
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর, হাতে কয়েক
ফোঁটা পানির স্পর্শ অনুভব করল সে।
মুখটা আকাশের দিকে তুলল সে,
যাক আজ অন্তত একজন তার পাশে আছে।
খোলা আকাশের সাথে তার কত মিল...
নয়লে তার সাথে আকাশও কাঁদছে কেন
আজ ????
নাহ....
কেউ একজন যেহেতু তার সাথেই আছে
সো চোখের কোণে জমে থাকা পানি
গুলো ধরে রেখে কি লাভ,
সেগুলো আপন মনে অজর ধারায় ঝরে
পড়ছে....
*****
রাত ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট।
কিরে মা??? কি হয়েছে তোর? এমন
গম্ভীর ভাবে বসে আছিস কেন?? আজ
তো সারাদিন কিছু খাস নাই।
অন্তত ডিনারটা করতে আই।
" পেছন থেকে হঠাৎ করে মায়ের কন্ঠ
শুনে একটু আঁতকে উঠে ফারিয়া।
-- এই তো মা। একটু পর খেয়ে নিব, তুমি
খেয়ে ঘুমিয়ে পড়, আমি এই পার্ট টা
শেষ করে খেয়ে নিব।
-- হুহ, আমি জানতাম তোকে ডাকতে
এসে লাভ নাই। কারণ গল্পের বই পড়তে
বসলে,দুনিয়া চলে গেলেও তোর খবর
থাকেনা...
-- হিহিহি। মা তুমি না...
আচ্ছা যাও আমি আসছি।
গল্প পড়ার অভ্যাসটা ফারিয়ার সেই
ছোট বেলা থেকেই।
আর এখন যে বইটা পড়ছে সেটা এই বছর
তাকে বার্থডে গিফট করেছিল তার
ভার্সিটির বেস্ট ফ্রেন্ড সিফাত।
ফারিয়ার রোমান্টিক গল্প পড়ে,
নিজেকে ঐ গল্পের নায়িকার
জায়গায় কল্পনা করতে খুব উপভোগ করে
সে।
আর তার এইসব ব্যাপার গুলো সিফাত খুব
ভাল ভাবেই জানে তাই সে তার
পছন্দের বই গুলো ফারিয়াকে গিফট
করে প্রায় সময়।
*****
ঘড়িতে রাত ২ বেজে ২০ মিনিট হতে
চলেছে,
সে তার আপন গতিতেই চলছে মুক্ত
ভাবে।
ঘুম নামক জিনিসটা এখনো পর্যন্ত
ফারিয়ার চোখকে স্পর্শ করেনাই।
গল্প পড়াকালীন সময় বিকালের
ব্যাপারটা কিছুক্ষণ ভুলে থাকলেও এখন
সব কিছু জানি খুব নিখুঁত ভাবে তার
চোখের চার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে.....
*****
সম্পর্কটা ছিল দেড় বছরের, শুরুটা খুব সুন্দর
ছিল আসিফ আর ফারিয়ার।
আসিফের সাথে তার প্রথম পরিচয়
হয়েছিল তার বন্ধুর বড় ভায়ের মেহেদি
নাইটেই।
যখন তার বান্ধবীরা প্রেম নামক
জিনিসটাতে হাবুডুবু খেত তখন তার
বেশ অসহ্য লাগতো ব্যাপার গুলো।
কিন্তু কখনো ভুলেও কল্পনা করেনি সে
নিজেই অন্য কাওকে নিজের জীবনের
এভাবে জড়িয়ে নিবে....
কিন্তু জড়িয়ে নেওয়া হল আর কই????
হাজার স্বপ্ন দেখিয়ে আসিফ তার
জীবন থেকে আজ চলে গেল....
"ধ্যাত সব ছেলেই এক !!!"
*****
অনেকদিন পর ভার্সিটি এসে মনটা
একটু হালকা লাগছে তার।
প্রিয় মুখগুলোর সাথে একে একে দেখা
হতে লাগলো।
পুরো ভার্সিটি একবার রাউন্ড দেওয়ার
পরও সিফাতের দেখা মিললনা।
তাই একা একাই মাঠে বসে আছে সে।
আজ আর ক্লাস করা ইচ্ছা নাই....
"হঠাৎ পেছন থেকে মাথায় একটা
থাপ্পড় অনুভব করল সে"
পেছনে ফিরেতেই...
-- হারামি ??? তুই তাইলে বাঁইচা আছস??
আমি তো আরো তোর চালিশার জন্যে
ওয়েট করছিলাম।
কথার স্পিডেই বুঝা যাচ্ছে,
সিফাত এতদিন তাকে কতটা মিস
করেছিল এবং তার ওপর যে রেগে
আছে সেটা।
"ফারিয়া কিছু বলতে যাবে তখন
থামিয়ে দিয়ে আবারও বলতে শুরু করল
সিফাত"
-- শুন তোর সাথে কোন কথা নাই...!!!
এতদিন ফোন অফ রাখছিলি ক্যান??
ফেইসবুকে ম্যাসেজের রিপ্লাই দিস
নাই ক্যান?? হোয়াটসাপে অনলাইনে
ছিলিনা ক্যান?? ইমোতে কল
দিছিলাম বাট পাইনাই ক্যান ????
তুই জানস, লাইব্রেরীতে তোর সাথে
বসে একসাথে এসাইনমেন্ট করতে করতে
অভ্যাস হওয়ার কারণে, তোর
অনুপস্থিতিতে আমি দুইটা এসাইনমেন্ট
জমা দিতে পারিনাই, কারণ এসবে
আমার মন বসতো না.....!!!
" একটানা এত কিছু বলার পরও আরো কিছু
বলতে যাবে এমন সময়...."
-- ইইইইইইইইইইইইই !!!!!
আরে তুই থামবি???
কয়টা প্রশ্নের আন্সার দিব একসাথে ???
আর একটা...
-- কি????
-- বাসায় জানে ??
-- বাসায় জানে মানে? কোন
বিষয়ে???
-- এই যে তুই পাগল হয়ছিস এটা বাসায়
জানে????
-- কিইইইইই বললি হারামি...???????
দাঁড়া......
-- এ এ এ অ্যাইইইই....
লাগছে তো চুল ছিঁড়ে যাবে।
-- হুহ, ছিঁড়ুক।
-- আচ্ছা বাবা, এই কান ধরলাম.....
" যত দোষ করুক না কেন.... ফারিয়া
মায়াবী কন্ঠে আবদার করে কিছু
চায়লে সেক্ষেত্রে আর না করতে
পারেনা সিফাত "
-- হুহ ছাড়লাম.... চল ক্লাসে যাই।
-- না রে...
-- মানে কি??? এতদিন পর এসেও ক্লাস
করবিনা?
-- আরে করলাম তো দুইটা করসি, আর
ভাল লাগছেনা,
চল আজ ঘুরতে যাই।
অনেকদিন হল দুইজন একসাথে রিক্সায়
ছড়েছি।
-- হুম.....
" সিফাতের সামান্য আপত্তি করার
ইমোশন দেখে ফারিয়া অনেকটা জোর
করেই তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়
"
-- মামা যাবেন ???
-- কই যাবেন আফা???
-- আপনি যেখানে নিয়ে যান....
"ফারিয়ার আবোলতাবোল কথা শুনে
সিফাত হাসতে থাকে"
এতদিন যেন সে ছিল নিষ্প্রাণ......
আজ তার প্রাণ পাখি আবার তার
কাছে ফিরে এসেছে।
রিক্সা ছুটে চলেছে,,,
পিটের ওপর ছড়িয়ে থাকা ফারিয়ার
সিল্কি চুল গুলো বার বার সিফাতের
মুখে এসেই পড়ছে।
সে ফারিয়ার সাথে এভাবে ঘুরতে
বের হলে খুব নার্ভাস ফিল করে।
পাশে একটা ডানা কাটা পরীর
সামনে এমন অবলা মানব সন্তান যেন
বেমানান।
একটু দূরত্ব বজায় রেখে বসার চেষ্টা
করেও পারলনা।
ফারিয়া তার হাত ধরে আছে,
"কিরে হারামি এভাবে ঘামছিস
কেন???
আর সরে যাচ্ছিস যে???"
-- ওহ স্যরি চুল খোলা ছিল খেয়াল
করিনাই।
হিহিহি,, কয়েকটা খেয়ে ফেলেছিস
বুঝি মুখের এই অবস্থা হল ক্যান????
" হাতনেড়ে কথা বলার অভ্যাস আছে
ফারিয়ার, তার কোন কথায় যেন
সিফাতের কানে ঢুকছেনা।
সে শুধু ফারিয়ার হাত আর ঠোঁট নাড়ার
স্টাইল উপভোগ করছে.....!!!!
এমন একটা মেয়েকে খুব কাছথেকে
পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার
বলেই মনে করে সিফাত।
-- এই মামা থামেন...
-- কিরে কি হল আবার???
অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে
সিফাত।
-- চল না, আমি কখনো টঙ এর দোকানের
চা খাইনাই,
আমার খুব ইচ্ছা ছেলেদের মতো খোলা
মনে একদিন টঙ এর দোকানের চা খাব....
-- হু,,, বুঝলাম...
পারিস ও বটে। সৃষ্টিকর্তাই ভাল
জানেন তোর হভু বরের কপালে কি
পরিমাণ দুঃখ আছে।
আমি ছাড়া আর কেউ এমন পাগলামি
সহ্য করবে বলে মনে হয়না।
-- হিহিহি....আরে বাদ দে তো
আজাইরা পেঁচাল, প্রয়োজন হলে
তোকেই বিয়ে করে নিব।
এখন চল চা খাই....
" ফারিয়ার এমন বাচ্চা বাচ্চা আচরণ
সিফাত খুব উপভোগ করে।
কিন্তু আজ কেমন জানি ভয় হচ্ছে তার
মনে।
মেয়েটার মাথা ঠিক আছে তো ???
নাকি মাথার সব মগজ ড্যামেজ হয়ে
গেছে??? "
-- মামা একটা গোল্ডলিফ দেন তো !!!
" এই নেন"
সিফাতের একটা বদ অভ্যাস আছে অবশ্য।
চা খাওয়ার পর সিগারেট ছাড়া তার
চলেনা।
-- মামা আমাকেও একটা দেন...
-- ঐক... পাগল হয়ছস নাকি??? তুই কেমনে
সিগারেট খাবি??
-- বা রে,, তুই যেভাবে খাচ্ছিস
সেভাবে.....
এখন থেকে যদি অভ্যাস না করি
তাইলে ভবিষ্যতে তোর সাথে থাকব
কেমনে???
" সিফাতের আর বুঝতে বাকি রয়লনা,
মেয়েটা আসলেই নাছোড়বান্দা, সো
মুখের আধ খাওয়া সিগারেট টা
ফেলে দিতে বাধ্য হলো সে"
*****
সূর্য অনেকটা ডুবেই গেছে স্পন্ধ্যা
ঘনিয়ে আসছে....
-- শোন, রাত হয়ে যাচ্ছে বাড়ি
ফিরতে হবে।
-- ওকে চল, আমি পৌঁছিয়ে দিচ্ছি।
-- না থাক,এমনিতেই সারাদিন অনেক
জালিয়েছি তোকে,আর এদিকেই তো
তোর বাসা, আমাকে দিয়ে আসতে
গেলে তোকে আবার উল্টা রাস্তায়
যেতে হবে।
তার চাইতে বরং আমি রিক্সা নিয়ে
চলে যায়।
-- ওকেই,,, তুই যা ভাল মনে করিস।
-- হুম.... তোকে এএএত্তগুলো থ্যাঙ্কস....!!!
অনেকদিন পর ভাল একটা সময়
কাটালাম।
-- তোকেও থ্যাঙ্কস এরকম একটা সুন্দর দিন
উপহার দেওয়ার জন্যে, ভাল থাকিস
বাই টেইক কেয়ার।
-- বা বাই.....
*****
সিফাতের নিজের হাতের লেখা
কয়েকটা কবিতা দিয়েছল
ফারিয়াকে সে।
ফারিয়া আগে শুধু একবার পড়েছিল
সেগুলো।
এজ কেন জানি বার বার পড়তে ইচ্ছা
হচ্ছে,
আর তার কবিতার নায়িকার সাথে
যেন নিজের অনেক মিল....!!!
মনে হচ্ছে সিফাত কবিতা গুলো
ফারিয়ার জন্যেই লিখেছে......
নাহ....!!!
-- আমার ধারনা ভুল ছিল, সব ছেলে এক
নয়...!!!
কেউ কেউ আছে যারা মানুষকে
কিভাবে ভালবাসতে হয় তা
শেখায়,ভাল রাখতে শেখায়, দুই
দিনের দুনিয়াকে নিজের বসে এনে
অনেক কিছুই করা সম্ভব শুধু মাত্র নিজের
পাঁচ আঙ্গুলের ফাঁকে প্রিয় মানুষটির
পাঁচ আঙ্গুল দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করে
দিলেই হবে।