মেনু

Drop Down MenusCSS Drop Down MenuPure CSS Dropdown Menu

সংকলন ২৮৯- সিগারেট তোমায় দিলাম আজ ছুটি

লেখা--- শাকিল রনি

১.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে অদ্য দিবসের শেষ
সিগারেটের শ্রাদ্ধ করছি আর ভাবছি।
না, আর না এটাই শেষ; আর সিগারেট
খাবো না। গত অনেক গুলো রাত
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘুমুতে যাওয়ার
আগে শেষ টান দিতে দিতে এই কথা
ভাবি। কিন্তু সকাল হলেই পা
আপনাতেই সিগারেটের দোকানের
দিকে চলে যায়। ফাইনাল সিগারেট
হয়ে যায় কোয়াটার ফাইনাল। কিন্তু
না, আর না।
অদিতি বলেছে- " আর যদি সিগারেট
খাও তাহলে তুমি আমার মাথা খাও।"
অদিতির মাথা কি করে খাই। কি হবে
এই ধুরছাই বিড়িবুড়ি না খেলে। না
খেলে মরে তো আর যাবোনা। অদিতি
যখন পছন্দ করেনা। থাক আরো খাবো
না। কাল থেকে আর একটাও না।
সিগারেট তোমায় দিলাম আজ ছুটি...
২.
- মামা ৫ টা সিগারেট দেন।
- কি সিগারেট?
- আরে মামা ভুইল্লা খাইলেন নিকি।
জানেন না কি খাই।
- অ। মনে পরছে। দাড়ি ফালাই দিছেন
তো আপনারে খিয়াল করতে পারি
নাই। নেন।
- না এখনো ভাল কইরা খিয়াল কইরা
উঠতে পারেন নাই। লাল না সাদা টা
দেন।
- নেন। চা খাইবেন?
- দেন এককাপ। লিকার কমাইয়্যা দুধ
চিনি বাড়াই দিয়েন।
৩.
( সেলফোনে রিং হচ্ছে)
- হ্যালো।
- হ্যালো। কি খবর। কি করো।
- এইতো দোকানে বসে চা খাচ্ছি।
- সিগারেট ও খাচ্ছো নিশ্চয়ই?
- হুম।
- তোমাকে না বলেছি না খেতে।
আবার তুমি সিগারেট খাচ্ছো। আমার
কথার কি কোন দাম নাই তোমার
কাছে।
- আরে বাপ। একবারে কি ছাড়া যায়
নাকি। আগে ১০ টা খেতাম আজ ৫ টা
কিনেছি।
- তুমি একটাও খাবা কেন? কেন তুমি
আমার কথা শুনো না?
- দেখো আমিতো বলেছি ছেড়ে
দিবো। আস্তে আস্তে কমাই।
- না আস্তে আস্তে না। তুমি আর একটাও
খাবা না। এখন যেটা আছে সেটাও
ফেলো। যদি আমাকে ভালবাসো
তাহলে এই মুহুর্তে তুমি সিগারেট
খাওয়া ছাড়বে।
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট
বের করে আরেকটা ধরালাম।
- কি হল কথা বলছো না কেন ফারাবি?
- এইতো আছি বল।
- বল মানে কি বলছি শুনো নাই?
- কি বলছো?
- কি বলছি মানে। আর সিগারেট
খাবেনা ব্যাস।
- আচ্ছা খেলাম না তারপর। তারপর কি
হবে শুনি।
- তারপর আবার কি। তুমি সিগারেট
খাবে না। ব্যাস। তারপর আবার কি
বুঝলাম না।
- একটু ধরো বিলটা দেই।
পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে
টাকা দিলাম। কি মনে করে মামা কে
আরো ৫ টা সিগারেট দিতে বললাম।
টং দোকান থেকে বের হয়ে একটা
রিকশা ঠিক করে উঠে পরলাম।
- হ্যাঁ বলো। হ্যালো...
- তুমি আরো ৫ টা সিগারেট কিনলে?
- হুম কিনলাম।
- তোমাকে কি বলেছি তোমার
মাথায় ঢুকে নাই।
- কি ঢুকবে?
- উফফফ তুমি কি বলতো। কেন এমন করছো
আমার সাথে।
- আশ্চর্য! কি করলাম আবার।
- দেখো তুমি যদি সিগারেট না
ছারো তাহলে ব্রেকআপ।
- আচ্ছা যাও ব্রেকআপ।
- মানে আমি বললাম আর তুমিও বললে।
- তো কি করবো। দিন রাত ২৪ ঘন্টা
তোমার প্যারা খাওয়ার চেয়ে
সিগারেট খাওয়া অনেক ভাল।
- কি বললা আমি প্যারা দেই। আমার
কথা তোমার কাছে প্যারা মনে হয়।
ওকে ফাইন। থাকো তুমি তোমার বিড়ি
নিয়ে। আর একটাও কল ম্যাসেজ কিচ্ছু
দিবে না আমাকে। আমি অসহ্য হয়ে
গেছি। কি ভাবো নিজেকে হ্যাঁ?
খবরদার আর একটাও কল দিবে না
আমাকে।
- আচ্ছা।
অদিতি ফোন রেখে দিলো। গল্প
উপন্যাস হলে অদিতি হয়তো কিছুক্ষন
পরে আবার কল দিতো। কল দিয়ে হয়তো
বলত- " কি ব্যাপার তুমি আমায় কল
দিলে না কেন। আমি রাগ করে ফোন
রেখে দিয়েছি, তুমি আমার রাগ
ভাংগাবেনা।" কিন্তু এটা গল্প
উপন্যাস নয়। রিকশা ঠিক করেছিলাম
রাজলক্ষ্মী যাবো বলে। কিন্তু অফিসে
আজ যেতে ইচ্ছে করছে না।
রিকশাওয়ালা কে বললাম- "মামা
বামে যান। ৭ নং পার্কের সামনে।"
পার্কে গিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকি
সেই ভাল।
৪.
গল্প উপন্যাসের চরিত্র কে হার
মানিয়ে অদিতি কল দিলো। কল
রিসিভ করবো কি করবো না বুঝতে
পারছিনা। ভাবতে ভাবতেই কল টা
মিসডকল হয়ে গেল। প্রথম কল রিসিভ না
করলে পরের কল গুলো আর রিসিভ না
করতে খারাপ লাগে না। সেলফোনে
একটার পর একটা মিসডকল উঠছে দেখতে
ভালোই লাগছে।
অন্যকোন ব্যাপারে মেয়েদের ধৈর্য
যদি নাও থাকে এই রকম পরিস্থিতে
এরা ধৈর্যের পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+
পেয়ে কল দিয়েই যায়। কারণ টা
জানিনা না, যে কেন কল দেয়। তবে
অদিতি আমাকে আরো একটু ঝারার
জন্যই হয়তো কল দিচ্ছে। সুন্দরী মেয়েরা
অবহেলা সইতে পারেনা। অদিতি
ধরেই নিয়েছে হয়তো আমি ওকে
অবহেলা করেছি। আমাকে আচ্ছা
মতোন কিছুক্ষন কথা শুনাতে না
পারলে এই মেয়ে আজ আর শান্তি
পাবেনা। কিন্তু এই সুযোগ অদিতিকে
আপাতত আমি দিচ্ছিনা। তবে আমি
অপেক্ষা করছি অদিতির ঝাঁঝালো
একটা ম্যাসেজের জন্য।
পার্কের সামনে আইস্ক্রিম পাওয়া
যায়। একটা ললি নিয়ে সিগারেট
ধরালাম। আহ আইস্ক্রিমের সাথে
সিগারেট। অসাধারণ। ধোঁয়াটা পুরো
ঠান্ডা হয়ে যায়। এখনো একের পর এক
কল দিয়েই যাচ্ছে অদিতি। হঠাৎ কি
মনে হতেই সেলফোন অফ করে দিলাম।
নিশ্চিত এই মেয়ে আগ্নেয়গিরি হয়ে
ফুটছে এখন।
সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরঘুর করে
কাটালাম। এক প্যাকেটের উপরে
সিগারেট উড়িয়েছি আজ। হোটেলে
রাতের খাবার খেয়ে আরো ১০ টা
নিয়ে বাসায় ফিরলাম রাত ১১ টার
দিকে। লম্বা একটা শাওয়ার না
নিলেই নয়। যাই। একটা বিড়ি টেনেই
শাওয়ার নিতে যাই।
৫.
রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ফোন অন
করতেই অদিতির একগাদা ম্যাসেজ।
শেষ যে ম্যাসেজটা দিয়েছে সেটা
পড়ে আগের গুলো আর পড়তে ইচ্ছে
করছেনা। এই ম্যাসেজের ফিলিংসটুকুই
ধরে রাখি। অদিতি আমার সাথে
খারাপ ব্যাবহার করেছে বলে ক্ষমা
চেয়ে বিশাল ম্যাসেজ করেছে। অনেক
গুলো লাভ শেইপও আছে। আগের
ম্যাসেজ গুলোর কোন একটা যে
ঝাঁঝালো ম্যাসেজ হবে এটা
নিশ্চিত। কিন্তু কোনটা সেটা তো আর
জানিনা। তাই অন্য ম্যাসেজ ওপেন ই
করলাম না।
কিছুক্ষন পরেই অদিতির ফোন এলো।
আহা কি ভালোই না লাগছে
রিংটোনটা শুনতে।
- হ্যালো।
- হ্যা...লো।
- হুম বলো।
- সরি তো। প্লিজ ফারাবি কিছু মনে
কোরো না। আসলে মেজাজটা কেন
যে এমন ধরে গিয়েছিলো। ধ্যাৎ।
- আরে ব্যাপার না ইটস ওকে। রাতে
খেয়েছো অদিতি?
- না খাইনি।
- যাও খেয়ে আসো। আমি ওয়েট করছি
তোমার জন্য।
- না খাবো না। তুমি আমায় আজ কষ্ট
দিছো।
- আচ্ছা যাও পোসাই দিবো। আগে
খেয়ে আসো না হলে কিছুই দিবো না।
- সত্যি দিবে তো?
- হ্যাঁরে পাগলী সত্যি দিবো। আগে
খেয়ে আসো প্লিজ।
- আচ্ছা। ঐ ঐ শুনো। তুমি খেয়েছো তো।
- হ্যাঁ খেয়েছি।
- আমাকে ফেলেই খেয়ে ফেলেছো
ফারাবি।
- আচ্ছা আর খাবো না।
- ঠিক তো।
- হ্যাঁ ঠিক। অদিতি প্লিজ এবার যাও।
খেয়ে আসো। আমি ওয়েট করছি
তোমার জন্য।
- আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি রে বাবা।
অদিতি ফোন রাখতেই অদ্য দিবসের
শেষ সিগারেট টা খেতে বারান্দায়
গেলাম। হালকা বাতাস ছেরেছে।
ফুরফুরে লাগছে খুব। সিগারেটে টান
দিচ্ছি আর ভাবছি, কি হবে এই ধুরছাই
বিড়িবুড়ি না খেলে। না খেলে মরে
তো আর যাবোনা। অদিতি যখন পছন্দ
করেনা। থাক আর খাবো না। কাল
থেকে আর একটাও না। সিগারেট
তোমায় দিলাম আজ ছুটি...